দীর্ঘ কবিতা
ময়নাতদন্তের ঠান্ডা ঘর থেকে বেওয়ারিশ
লাশ হয়ে যখন বের হলাম
তখন মনুষ্য শরীরে এফোঁড়ওফোঁড় হওয়া সেলাই
দেখে
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আত্মাটা,
বললো",তোর গায়ে কত ঘেন্নার দাগ,
আবার
নতুন শরীর হবে, কেমন মজা"
দলাপাকানো শরীর বললো,
"হাসিস না - তুই তো অশরীরী
কিন্তু
তুই রক্তাক্ত বলেই তো আমি আজ উহ্য,
যন্ত্রনাটাকে দুজনেই আপন করেছিলাম তাই
এই মৃত্যুর নিশানে নতুনসাজা"....
তারপর যখন পুতিগন্ধী শরীরটা মাটি চাপা
পড়লো -
তখন ধুলোকাদা মাখা ওই মন্দবাস শরীর
রক্তাক্ত আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে
এসে দাঁড়ালো ঈশ্বরের সামনে l
বললো, "তুমি
পাষাণহৃদয় দেবতা নও, তুমি ভগ চিহ্নিত ভগবান নও,
তুমি সর্বশক্তিমান, তুমি ঈশ্বর, তুমি
সর্বইচ্ছাপূরণকারী শক্তি
আমায় পুনর্জন্ম দাও... আমার এ নারী জন্মে আমি রুদ্রানী
হবো "...
আমার এ আর্জিতে অট্টহাস্যে হেসেছিলে
তুমি -
পৃথিবীতে জল স্থল অন্তরীক্ষে সে হাসি
প্রলয় এনেছিল ;
কিন্তু আমি স্থির, অটল, অনড় চোখে তাকিয়ে
ছিলাম তোমার দিকে
এক গরাসে পান করেছিলাম সব ভয়
শুধু দানবদলনী হবো বলে l
তোমার তথাস্তু স্তবে
খুলে গিয়েছিলো পৃথিবীর সব দরজা -
আহ্নিকের দুরন্ত গতির সাথে তাল মিলিয়ে
আমার অভিষেক হলো নতুন ঘরে!
আমার অভ্যর্থনায় বেজে উঠলো শাঁখ,
হাজার ঝাড়বাতির আলো উঠলো জ্বলে,
নারীকন্ঠের কলহাস্য ধ্বনিতে অঙ্কিত হলো
কল্যাণচিহ্ন l
মনে মনে তোমায় প্রণাম জানালাম মহাকাল l
কিন্তু কৈশোরের অন্দরমহলে প্রবেশের সাথে
সাথেই বুঝলাম
তুমিও প্রতারণা করেছো!
গতজন্মে,
যে লোলুপ দৃষ্টি আর লুব্ধ কামনার শিকার
হয়ে আমি প্রনষ্ট হয়েছিলাম -
যে হিংস্র নখ আর দাঁত ছিঁড়ে খেয়েছিলো
আমার দেহের গোপন অঙ্গ,
সেই বাসনার তত্ত্বতলাশে প্রতিরাতে আমার
জন্মদাত্রীদের বলি হতে হয়
তাদের পরাক্রমের হাতে
কাঁটা ছাড়ানো মাছের মতো ভোগ্য হতে হয় তাদের লালসার I
তুমি প্রতারক কিন্তু কৃপণ নও,,
তাই শরীরে পূর্ণতা এসেছিলো সংগীতের মুদ্রায়,
অপার্থিব এক নীরব রাতের প্রসন্নতা
সেখানে ছিলো
কিন্তু বুকে ছিলো নাছোড়বান্দা জেদী উগ্র
তেজ
তাই তমিস্রা স্রোতের উজানে বইতে
চেয়েছিলাম বারবার l
কিন্তু
তুমি তো তা চাওনি ঈশ্বর!
তোমার বিধানে লেখা ছিলো -
কৈশোরেই আমার শরীরের বাঁধন ছিঁড়ে দেবে
ওই নেকড়ের দল,
প্রতিরাতের উদাসী সঙ্গম আমাকে নীল করবে,
আমার
ওষ্ঠপুট ফেটে বের হবে অপমানের
রুধিরধারা,
কোমল জ্যোৎস্নার মতো যোনিপথ কুঁকড়ে যাবে
যন্ত্রনায়,
অ সুখী এক তামাশা কেড়ে নেবে আমার প্রতিটি রাতের নিশ্চিন্ত নিদ্রা l
এই বোবা কালা অন্ধকার জীবন থেকে আবার
মুক্তির পথ খুঁজতে
যে ভোরকে আমার শেষের পাতায় লিখছিলাম -
সেই ভোরে দেখি -
অশীতিপর এক কুম্ভকার শিউলিতলায় বসে মাটি
তুলছে
আমায় দেখে প্রণাম করে বললো,
প্রতিমা গড়নে নাকি বেশ্যা বাড়ির মাটি
লাগে
তাই আমরা নাকি দেবী,
আমরাই নাকি সমাজের অসুরদলনী,
তার কাদামাখা দুটো হাত আমার দুটো গালে
রাখতেই
ঝমঝমিয়ে এক বৃষ্টি ধারা ধুয়ে দিলো আমার
সব ব্যথাভার
এইবার আমি তোমার সেই অট্টহাসির অর্থ
বুঝলাম -
নতজানু হয়ে বললাম,
তুমি স্বেচ্ছাচারী কিন্তু মিথ্যাচারী নও
l
আমি তো দুর্গা হতেই চেয়েছিলাম!
কাকলি দাশ ব্যানার্জী : কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কাকলির কবিতাটি পড়লাম । ভাল লাগল । বক্তব্য স্পষ্ট এবং অনিবার্য । ধন্যবাদ কবিকে ।
উত্তরমুছুন