যাপনের পালাগান



দীর্ঘ কবিতা


সাতটি ঘোড়া  ছুটিয়ে  হয়তো এবার সপ্তর্ষি দেশ
পাড়ি দেবে সাতজন সহযোদ্ধা
আমরা কতিপয় মানুষ  আকাশচারীনি হবো
দুটো হাতে বাতাস ভাঙতে ভাঙতে
অজান্তে হাত দুটো ডানায় পরিণত হবে ।
 চাঁদের দেশে অসংখ্য গাড়ি ঘোড়া
যানজট সমস্ত  জীবন যান্ত্রিক, হয়তো
কন্যাকুমারী'র পরের জমিতে চাঁদে যাওয়ার
ভিসার আবেদন হায়! বিশ্বায়ন ।



 মানুষের তৈরী যন্ত্র মানুষ একদিন পৃথিবী
শাসন করবে আর অব্যবহৃত হতে হতে
অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একদিন লুপ্ত হবে ।
পৃথিবীর অনন্ত সৌন্দর্য মায়াচর থেকে
হারিয়ে যাবে মানুষ নামের জীব।
 কোনো এক নদীর গর্ভে বিলীন অবশেষে
আবার একটি সভ্যতা প্রত্ন হবে ।



মহাকাশ থেকে ঝুলন্ত চাঁদ জিতে নেওয়ার
বাসনায় মশগুল সময়
তার নীচে অভুক্ত মানুষের মিছিল
ফাটা বিলের রেখা থেকে আধিয়ার আগুনে
ঝলসানো শস্যখেতে উদাসী পথিক আমি ।
 আদর রাখি উসকো খুসকো
 হাওয়ার করতলে চুম্বন ঢেউ সই
কানে কানে বলে যায় শেষনাগ
রাধা নামের অনন্ত বৈষ্ণবী তুই ।




এসব না দেখার বাসনায়  সানগ্লাস ঢাকা
উচ্চ মানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে
শীর্ষস্থানীয় বিন্দুগুলো স্থির- ধৃসর।
ভালোবাসার দিগন্ত অস্পষ্ট নিভছে তার আগুন
ভোঁকাট্টা ঘুড়ির মতো লাট খেতে খেতে
আটকে যাবে অনিবার্য
বাঁশ গাছের শেকড় বাকড়ে
নাবালের দিকে নীচু হয়ে ,  রাস্তা কোথায়?



শীতল অববাহিকায় জমতে জমতে স্বপ্নগুলো
হন্যে হয়ে ঘুরছে ঘাতক চক্র দীর্ঘদিন - - -
কোনো প্রত্যাশা নেই একাই একটি
জীবন হতে পারে একটি প্রতিষ্ঠান ।
হতে পারে জয়ের পুব দিগন্ত
আজীবন নিরীহ প্রাণের কম্পাঙ্কের কাছে
মধুর সুরে বাজে  কৃষ্ণবর্ণ মেঘের গাম্ভীর্য
ডম্বরু বাজিয়ে সতর্ক বার্তা দিলেন পিনাকেশ।



কয়েক বছরের স্পর্শ কঠিন হৃদয় তোমার পকেটে
আমাকে বৃক্ষ জীবনে দিক্ষিত করেছে
ব্রহ্মাণ্ড মাথায় রেখে আলপথ বুকে
দুইবাহু তুলে গগনের শূন্যতা ঢাকার
পুরুষতান্ত্রিকতা খালবাঁধ অতিক্রম করলো ।
নির্লজ্জ মাতাল অবস্থায় অন্ধকার দৈত্যের
দাঁতে বিদ্যুতের ঝিলিক 
হিম রক্তের নাব্যতা গড়িয়ে পড়ে মাটির গভীরে ।



পাখি হয়ে উড়ে যাওয়া মূহুর্তে একতরফা
পছন্দ অপছন্দগুলো নদীর ঘোমটায়
অপ্রাপ্তির আকাশ ঘনায়মান
শুকতারা হয়ে থাকতে চায় সন্ধ্যাতারা ।
গ্রাম পরিচিতি গায়ে মেখে
শিশু গাছ আকাশ- বৃক্ষ হয়
ভয়ে পায় না কালো পাহাড়ের অপচ্ছায়া।



কয়েকটি নক্ষত্রের জলোচ্ছ্বাস
সাঁই সাঁই করে বাতাসে ভেসে যাচ্ছে
কলঙ্কিত উচ্চারণ ।
পথের দিশা পেতে দিগন্ত রেখেছে বুকে
নীল পাহাড়ের চরণ চুম্বন এঁকে
ডানায় সূর্য চন্দ্র জন্ম মৃত্যু গান গাইতে চায়
ছিপছিপে তন্বী নদী
বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা আশ্চর্য জলজ গন্ধ
তলপেটে আড়ষ্ট লজ্জা
চলেছে  লক্ষ্যের দিকে
সঙ্গমে কতদিন সিক্ত হয়নি মোহনা ।




মাঝেমধ্যে প্রলয় এসে ওলোটপালোট করে
প্রাত্যহিকী যাপনের ছন্দ।
অস্তাচলে যাওয়ার আগে আকাশ ও
শাঁখা পলার এয়োতি রঙ মেখে
ঠোঁট রাখে  ঝলসানো শস্যের উপর
পশ্চিম দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের মতো
নিবিড় সম্পর্ক গড়ে বালুচর।
শূন্যতার সিঁড়ি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর
এবার সমাপ্ত হবে প্রহর যাপনের পালা।

বনশ্রী রায় দাস: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন