শূন্যদশক ও দাম্পত্য



প্রতিবেদন


অন্ধকারাচ্ছন্ন বনভূমি। শ্বাস সংকুল। একটি নারী ও একটি পুরুষ ছুটে চলেছে। দুজনের হাতেই ধারালো পাথরের টুকরোকাঠের ছুঁচলো শাখাখণ্ড। সামান্য পাতার আবরণ দেহে। ওরা লড়াই করে বাঁচে।কাঁচা মাংস পুড়িয়ে খায় সমবেত ভাবে। তারপর আসে রাত। এই পাথর যুগে সময়  স্থির।একটা নর আরেকটি নারীকে কাছে টানে। একটা নারী আরেকটি নর কে। ওরা শরীর আবিষ্কার করে,শরীরের খেলা করে। নারী অন্তঃসত্ত্বা  হয়। পছন্দের পুরুষটি রক্ষণাবক্ষেণ  করে। ফল ও খাদ্য  এনে দেয়। শিশুটি নগ্ন সেই মায়ের দুগ্ধ  পান করে। মানুষ  জৈবিক মানুষ  মায়াময়। ক্রমশ নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা টান তৈরি হয়। তখনও নারী ও পুরুষ স্বাধীন থাকে তার যৌনজীবনে কিন্তু  সন্তান এক সেতু নির্মাণ করে। একটা অস্পষ্ট  সম্পর্ক  তৈরি  হয়। নারী ও পুরুষ এক চিরন্তন সম্পর্কে আবদ্ধ মানবিকতায়যৌনতায়। "সম্পর্ক" শব্দটি আবিষ্কারের আগেসভ্যতার একদম সূর্য ওঠার ভোর থেকেই তাই নারী পুরুষ পরস্পরের পরিপুরক। ইসলাম ধর্মে বলেছে নারী পুরুষের আবরণ ও পুরুষ নারীর আবরণ। হিন্দু ধর্ম বলছে পুরুষ ও প্রকৃতি সৃষ্টির দুই সত্ত্বা .....অর্ধনারীশ্বর।

মনে হতে পারে হঠাৎ নারী পুরুষ,বিবাহ ও দাম্পত্যের মত একটি বিষয় কেন আমার মনে হচ্ছে প্রাসঙ্গিক? হয়ত এই জন্য যে শুন্য দশকে দাঁড়িয়ে যখন বিবাহ একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়,যখন শীতল দাম্পত্যের ব্যবধানের মাঝে বিড়াল পায়ে প্রবেশ করে তৃতীয় পুরুষ বা নারীভেঙে যায় সম্পর্ক পর পর,সময়রেখায় কোনো উৎকর্ষ রচনার জায়গায় চলতে থাকে বহুরৈখিকের আরাধনা তখন মনে হলো ফিরে যাই উৎসে। পাঁচ কোটি বছর আগের নব্য মানব সভ্যতার কালে এমন কোনো বিবাহ প্রথার খবর মেলেনা। সে ছিলো অবাধ যৌনতার যুগ এমনকি সম লিঙ্গেও ছিলো যৌনতার অভ্যাস। সাম্যের উত্স ক্ষণে নারী তার আহার সংগ্রহ করে নিত সন্তানসহ আপন শক্তিতেই। ক্রমশ ফলাহার ছেড়ে খাদ্যের অনটনে তারা হলো মাংসাশী। এই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে সন্তান পালন নারীর কাছে কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময় ক্ষ়ণিক দাম্পত্যের সূচনা। ক্ষণিক কারণ এই পারস্পরিক বোঝাপরা মাত্র কিছু ঘন্টার। নারী তার যৌনতার বিনিময় পুরুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিতো খাদ্যসামগ্রী। সবচেয়ে চমকপ্রদ কথা যথাযথ দাম্পত্যের সূচনার ভিত্তি হলো কৃষি। এই কাল সম্ভবত ১.৩০০কোটি বছর আগের কথা যখন জঙ্গল ত্যাগ করে মানুষ জমিতে আবাদ করতে বাধ্য হলো। কৃষি সভ্যতার ভিত্তি যার প্রভাব সুদূর বিস্তৃত। কৃষিকাজে পুরুষ বাইরের পরিশ্রমের কাজে লিপ্ত হতে থাকে ও নারী শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় গৃহে মাতৃত্ব প্রভৃতি কাজে সীমাবদ্ধ  হয়ে পড়ে। এসময়ই নারী পুরুষের  দাম্পত্য জীবন যাপনের সুখসময় শুরু। সন্তান পালনের দ্বায়িত্ব বোধ থেকে। তবে সেই দাম্পত্যের আয়ু সাধারনত চার বছর কাল মাত্র। এই যাপনকে বিবাহ হয়ত বলা চলে তবে তা অবশ্যই বহুগামি। অনেকের মতে বিবাহ প্রথম থেকেই একটি চুক্তি। সামাজিক চুক্তি একটি পরুষের এক নারীকে দাসী করে নেবার চুক্তি। ১৩৫০ খৃষ্টপূর্বে সম্ভবত সঠিক এক আধুনিক দাম্পত্য জীবন আকার পায় নারী পুরুষ সম্পর্কে। ক্রমশ সামাজিক বিধানে (প্রধানত খৃষ্টীয় আধিপত্যে) বিবাহ একগামিতার বৈধতা পায়। শিবপুরান,রুদ্রসংহিতা,মনুসংহিতা বা স্কন্দপুরাণ যাই দেখিনা কেন সব জায়গাতেই কন্যার বিবাহর বয়স ৭/৮ বছর,পাত্রের বয়স বছর ২৪ থেকে ৩০! এমন বিবাহকে উত্কৃষ্ট বলা হয়েছে। কাজে কাজেই স্ত্রী সেখানে স্বামীর স্নেহের  পাত্রী ছাড়া আর কিবা হতে পারতো !!

এই প্রসঙ্গে বৈবাহিক  ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য  কিছু  জানা কথা মনে করিয়ে  দেওয়া  যাক।
হিন্দু  ধর্মে  বাৎস্যায়ন আট প্রকার বিবাহের কথা উল্লেখ  করেছেন__
ক)ব্রাহ্ম  বিবাহ
খ)প্রজাপত্য বিবাহ
গ)আর্য  বিবাহ
ঘ)দৈব  বিবাহ
ঙ)আসুরিক  বিবাহ
চ)গন্ধর্ব  বিবাহ
ছ)পৈশাচিক  বিবাহ ও
জ)রাক্ষস  বিবাহ
এর মধ্যে প্রথম চারটি বিবাহ  হয় মন্ত্রক্রমে

বর্তমানে মূলত প্রজাপত্য বিবাহ র প্রচলন দেখা যায়। গান্ধর্ববিবাহ র সঙ্গে অধুনা। ‘লিভ ইন'এর অনেকটাই  মিল। লক্ষ্যণীয় এই আটরকম বিবাহ সম্পর্কে বিশদে পড়লে দেখা যায় নারীর অধিকারের কোনো অবকাশ নেই। বিশ্বকোষের প্রবন্ধকারের মতে একপ্রকার নিম্ন জাতির মধ্যে  "আসোরা" বিবাহ  প্রচলিত যাদের মধ্যে  নারী বেচা কেনা ও চলে।
 
ইসলামিক মতে  যে বিবাহ প্রথাগুলি পাওয়া যায়  সেগুলি __
ক)ওয়াজিব বিয়ে
খ)ফলজ  বিয়ে
গ)সুন্নত  বিয়ে 
ঘ)নিষিদ্ধ  বিয়ে

এর মধ্যে  ওয়াজিব  বিবাহ ই বহুল প্রচলিত ও অগ্রগণ্য। ইসলামিক বিবাহের বিশদে গেলে দেখা যাবে এখানে কিন্তু  নারী র অধিকারের বিষয়টি  বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। মনে রাখতে হবে হিন্দু  ধর্ম বিশ্বে প্রাচীনতম ধর্ম। এর দের হাজার বছর পর প্রবর্তন হয় ইসলাম ধর্ম স্বভাবতই তা অনেকটা আধুনিক । বিবাহ সম্পর্কে  আলোচনা এই লেখার বিষয় নয় তাই ভনিতাটুকু কেবল  প্রসঙ্গত লেখা। বিবাহ  হিন্দু ধর্মে  একটি চুক্তি  যেখানে দাম্পত্য শব্দ টির ব্যাপ্তি ও পরিসর অনেক বেশি। দাম্পত্য  একটি সংগঠন । উল্লেখ্য,কোনো কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে incest বা পিতা পুত্রীমাতা পুত্র বা তুতো ভাইবোনে দাম্পত্যও  প্রচলিত। দাম্পত্য  মূলত  যৌনতা র ওপর নির্ভরশীল। কথাটি শুনলে অপ্রিয় মনে হয়,মনে হয় অসাংস্কৃতিক উচ্চারণ  কিন্তু  আদিযুগ থেকে আজো দাম্পত্যের ভিত যৌনতা ।

প্রায় একশ বছর আগেও বাল্য বিবাহ  হোতো। বয়েসে অনেক বড়ো কুলীন পাত্র বহুবিবাহ ও করতেন। নববধূটি ঋতুমতী হয়নি তখনো। যতদিন  না হয় সে পিতৃগৃহে। এসব আমরা জানি। কিন্তু  এই পরিস্থিতিতে স্বামী স্ত্রী  সম্পর্ক  গড়ে ওঠা তথা দাম্পত্য জীবন  সেভাবে ছিলো না। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর সেজ নাতবৌকে শেষ বয়সে দুঃখ করেছেন স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গ পাওয়ার জন্য  তিনি কত ব্যাকুল অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন সঠিক  দাম্পত্য জীবন বলতে যা বোঝায় তা একমাত্র  জমিদারি দেখাশোনার কাজে জোড়াসাঁকোর থেকে দূর বোটে শিলাইদহে বসবাসের সময় পাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো। প্রায় উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে জোড়া সংসার ভেঙে  টোনাটুনির সংসারে  মাধুর্য  পুরোদমে ছিলো। স্বামী স্ত্রী র বন্ধুতা পরিপূর্ণ  দাম্পত্য  রচনা করতে সফল।

প্রাতিষ্ঠানিক বিবাহ ও শয্যা সঙ্গিনীর প্রতি এক প্রকার স্নেহ মিশ্রিত  ভালোবাসা গড়ে উঠতসন্তানাদির দ্বায়িত্ব,চাল ডালের হিসাব গড়ে তুলতে দাম্পত্য অনিবার্য সখ্য এনে দেয়। মাঝের সময়টা  দীর্ঘ । স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে দিনমানে একান্তযাপন নিষিদ্ধ প্রায়রুদ্ধদ্বার তো নয়ই বয়স্কদের সামনে তা অশোভন বিবেচিত। সব ধর্মের সমাজেই এই ব্যবধান সৃষ্ট হয় ফলে পুরুষ খুঁজে নেয় বহির্জগতে কথা বলার সঙ্গী আমোদনের সঙ্গিনী। গভীর রাতে গৃহস্থালী ও শ্বশুর শাশুড়ির পদ সেবা করে তবে নিঃশ্বব্দে শয্যায় সঙ্গমটুকু সারা প্রজননহেতু। স্ত্রী তখন শয্যাসঙ্গী শুধুই মর্মসঙ্গী নয় আর।  পুরুষতন্ত্র বেড়েই চললো বিশ্বময় পুরোহিতদের আধিপত্যও। নারী ক্রমশ কোনঠাসা। খিরকি থেকে সিংহদুয়ার ।

বিংশশতকে বিশ্বের নানা আন্দোলনবিপ্লব ও আবিষ্কার ঘরের ভেতরের প্রাচীরটা ভেঙে দিলো। এলিট পরিবারের নারীরা স্বামীর সঙ্গী হবার যোগ্য হতে জ্ঞানচর্চা শুরু করলোবিন্দু বিন্দু নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে লাগলো আপন গরিমা প্রতিষ্ঠা করতে। দাম্পত্যের বুনোট ঘন হলো কিছুটা। তবে তা দীর্ঘ নয়। ঠাকুরবাড়ির মতো এলিট পরিবারে স্ত্রী স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হলো কিন্তু দাম্পত্য জীবন?সেখানে বিস্তর ঘোলাজল বেগম রোকেয়া বা ভার্জিনিয়া উল্ফসিলভিয়া প্লাথ বা স্বর্ণকুমারী স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল কিন্তু মধুর এক দাম্পত্য প্রেমের অভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন। এটা অনস্বীকার্য যে মানুষ জৈবিকভাবে ও মননেও  বহুগামী। তাহলে দাম্পত্য কী? দাম্পত্য একটি ঘর। সেখানে বংশ পরম্পরা  সেখানে দ্বায়িত্ববোধ সেখানে  সুষ্ঠু  যাপন ও নিয়মিত  যৌনতা যা একজন মানুষ কে আশ্রয়  দেয়। কিন্তু  গোল বাঁধে যখন সেই দাম্পত্যের ঘরটিতে থাকে না জানলা,দরজা। আসা যাওয়া করে না মুক্ত  বাতাস,ব্যক্তি স্বাধীনতা তখন সেই দাম্পত্য  নামক সংগঠন এক কঠিন বন্ধন যেখানে হাঁসফাঁস করে স্বামী স্ত্রী। একে অপরের ওপর আস্থা শীল ও সহনশীল না হলে আগুন জ্বলে। প্রভাবিত  হয় সন্তান। শূন্য দশকের এটি একটি বড়ো সমস্যা।

স্পেশ? নাকি অতি স্পেশ! প্রাক বিবাহ পর্বে অবাধ যৌনতা হারিয়ে ফেলছে বিবাহোত্তর উত্তেজনা। আমরা আমাদের অধিকার বুঝে নিতে চাই । "বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী"  জয় পরাজয়ের খেলাটা আজ অন্দরমহল অবধি বিস্তৃত। যে প্রেমিক বিবাহের পূর্বে  উদারমনা সে বিয়ের পর হয়ে যায় ডমিনেটিং ও সন্দেহপ্রবণ। যে নারীটি বড়োদের শ্রদ্ধা করতে শিখে এসেছে সে নির্বিচার দুর্ব্যবহার করে বৃদ্ধ  অথর্ব  তার শ্বশুর শাশুড়ি কে। অবশ্য  উল্টো চাও যে হয় না তা নয়। কারণ জানা নেই আজকের এই শীতল দাম্পত্যের। তৃতী়য় কারো নিঃশ্বব্দ উপস্থিতি তো সেকালেও ছিলো । কত নভেলই লেখা হয়ে গেছে এই নিয়ে। তবে শূন্য দশকের দাম্পত্যের যে নিবিড় চিত্রপট তুলে ধরেছেন জীবনানন্দ দাশ তাঁর "মাল্যবান "উপন্যাসে তা আজ ভীষণ প্রাসঙ্গিক। স্বামী বা স্ত্রীর চাওয়া পাওয়ার ফারাকটা বেড়েছে বই কমেনি। তবে প্রসঙ্গত লেখকের ব্যক্তিগত জীবন নির্ভর পাঠক্রমের জন্য আজো মাল্যবান উপন্যাসটির প্রকৃত মূল্যায়ন হয়নি।

আজ বড়ো অস্পষ্ট দিন আমাদের। যাঁরা ডিভোর্স বা তালাকের পথে যেতে পারেননি তাদের দাম্পত্য ও যেন প্রাণহীন অভ্যাসের দাসত্ব। সামাজিক মুখরক্ষা আর সন্তান পালনের দায়। সৃষ্টিশীল মানুষদের ক্ষেত্রে আবার সুখী দাম্পত্য যেন বড়োই ম্যাড়ম্যাড়ে ব্যাপার। একটি ডিভোর্স,অবাধ নারীসঙ্গআকন্ঠ মদ্যপান কবির অলঙ্কার! এই ভ্রষ্টাচারের পথপ্রদর্শক অবশ্য সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই প্রায়। স্ত্রী উচ্চশিক্ষিতা অতয়েব তিনিই বা কেন সইবেন। উচিতও নয়। তাই চলতে থাকে দাম্পত্য ভাঙার খেলা জৈব সন্তান ও সারস্বত সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ হয় দুজনেই। স্ত্রী যদি নীল ছবি ত কবি রিসর্টে! এলিট দাম্পত্য ভাঙন দেখা যায়। মধ্যবিত্ত সীমাবদ্ধ সামাজিক বেড়া’র জন্য ভাঙেনা নামে কাটে। ফেসবুকে যুগল ছবি দিয়ে নিজেদের সুখী দম্পতি বোঝাতে ব্যস্ত।

গরীব মানুষ খেটে খাওয়া মানুষের দায় নেই ভণ্ডামি বা বনেদীয়ানার। তারা মারপিট করে। অন্য সঙ্গ করে কিন্তু ডিভোর্স নয়। ইসলাম কিন্তু বহূবিবাহ র পক্ষে নয় মোটেই। বরং নিরুত্সাহ করে। তালাক একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতেই দেওয়া চলে। একাধিক বিবাহকেও পরিস্থিতি সাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয় । সেকালে যেমন দূর বণিজ্যে অনেক কাল বিদেশযাত্রায় বনিক গেলে সাময়িক বিবাহ বা "মোতা বিবাহ "প্রথা চালু ছিলো। তবে  দেশ কালের লোকাচার,উপাচার ও সুবিধানুযায়ী এসব নিয়মের বিকৃতি ঘটে।  আসলে স্বাধীন জীবনে যা চাই করার নীতিগত অধিকার সবার। সত্য বলে সত্যই কিছু নেই।

শূন্য দশকের এসে কনস্যুমারিসম্,বাজার অর্থনীতির খোলা বাজার ঘরে ঘরে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে। ইন্টারনেটের খোলা হাওয়ায় ঘরের চেয়ে বাইরের আকর্ষণ  বেশি। পুরোনো  দাম্পত্যে  তাই স্বামী স্ত্রী’র  পরস্পর  যৌনতা অনীহা। দাম্পত্য ভেঙে যাবার ঘটনা বাড়ছে প্রগতিশীল শহুরে  মানুষদের মধ্যে  বেশি। এটা অপ্রিয়  হলেও সত্য  মানুষ  শেষ অবধি  জৈবিক।অতৃপ্ত  যৌনতা একটা বড়ো কারণ এই ভঙ্গুর  দাম্পত্য  জীবনে। যৌনতা  অনেক মতানৈক্য  মিটিয়ে  দেয়। এটা গোদা সত্য। একটা প্রশ্ন  জাগে মধ্যবিত্ত পরিবারে ও আজ ডিভোর্স  খুব সাধারণ ব্যাপার। একটু সাবমিসিভ,একটু অবনত একটু আত্মত্যাগের  বিনিময়ে সন্তান যদি আপাত সুখী নিটোল পরিবারে  পালিত হয় যুব সমাজের মধ্যে মানসিক বিকৃতি অনেকটাই রোধ করা যায়। বাকি ব্যক্তিগত  স্বাধীনতাটুকু বিবাহের মতোই অনুচ্চারিত থাকে সুন্দর  হয় সংসার তথা দাম্পত্য তবে সেই মননশীলতায় পৌঁছাতে  বোধহয় আরো কিছু সময় প্রয়োজন।

তবু একদিন নদী হবে ক্লান্ত। শেষের সেদিন হবে মর্মান্তিক যদি সেদিন আমার প্রাসাদ না হয়ে ওঠে উষ্ণ ঘর। পরিবার যার ভিত। দাম্পত্য যার স্তম্ভ। একটু অপরের দোষটুকু মেনে নেওয়া আর একটু নিজেকে নত করা,চাওয়া পাওয়া গুলো অর্থমূল্যে না বিচার  করা। হয়ত তাতে সুন্দর হবে সমাজ হয়ত বাঁচবে দেশ আর এই গ্রহটাও।

জয়িতা ভট্টাচার্য: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন