গল্প
ধুনি জ্বালা অদ্ভুত উপকথার ভেতর ডুবে যেতে যেতে উপল
হাতড়াতে থাকে মনের ভেতরটা। আজ বহু বছর পর সেই ক্লাস ফাইভে পড়তে যে মাসীকে দেখেছিল
নীলচে স্কার্ট ব্লাউজে এ কি সে-ই?
এই মহিলার বয়স কত হবে আন্দাজ করতে পারেনা উপল, মায়ের
চেয়ে বহু বছরের ছোট বোঝাই যাচ্ছে। আর দেখার পর থেকেই কেমন অদ্ভুত শিহরণ জাগছে।
বাব্বা: কি সুন্দরী! সেই মাসী যাকে আবছা মনে পড়ে। বিরাট বাড়ীর পাকা বারান্দায় বসে
সেভেনে পড়া সেই মাসী এক ধামা পাটিসাপটা ভেজেছিল। সকলে দেখছিল অবাক হয়ে,সেই
দেখা আর এতদিন পর মা র মৃত্যুই যেন আবার সবাইকে এক করে দিল। যে যত ই আপত্তি তুলুক, সব
নিয়ম কানুন শিকেয় তুলে স্টেশন দৌড়েছিল সোনু মাসীকে অটোয় চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে আসবে
বলে। আসলে উপল আর সৌপল দু ভাই একসঙ্গে মৎস্যমুখীর দিন খাবে মাছ দিয়ে তারপল অন্যেরা
বসবে। সকলের পেটের ভিতর ই ছুঁচোয় ডনবৈঠক দিচ্ছে। সুতরাং উপল স্টেশনে যাক বাড়ীর
মানুষেরা চায়নি। মার খুড়তুতো বোন সোনু ওরফে সোনালী মিত্র। বহুদিন দেখা নেই। ঐযে
ঘরের ভেতর শরীরের অঙ্গ হয়ে যাওয়া কম্পিউটার যন্ত্র,ইন্টারনেট
এখনতো হ্যান্ডসেট এ্যান্ড্রয়েডের আনুকূল্যে বহু দূর দূরান্তের যোগাযোগ কাছে এসে
পড়েছে। উপল যেদিন ফেসবুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে সোনুমাসীর প্রোফাইলে চলে এলো, সবচেয়ে
নজর কেড়েছিল সোনালী মিত্রের চেহারা। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের বিগ বস। আবার কি এক এন
জিও চালায় নিজের উদ্যোগে, বয়স ঠিকঠাক
কিছু নেই। তবে হতে পারে পঞ্চাশ অথবা চল্লিশ। এছাড়া ডিটেইল বায়োডাটা দেওয়া আছে। আর
খুঁজতে গিয়ে সোনালী মিত্রের বাবার ছবি চোখে পড়তেই মুহূর্তে দেরী হয়নি দাদুকে চিনে
নিতে। এ ছবিতো বাড়ীতেই আছে, এ রাঙাদাদুর
কত যে চিঠি জমিয়ে রেখেছে উপল, সৌপল দুজন
মিলে,চোখে দেখেনি কিন্তু ছবি দেখেছে। চিঠির
অদ্ভুত সুন্দর হাতের লেখায় ওদের দাদু বুকের মধ্যে চুপটি করে ঢুকে গিয়েছিল। আজ
এতদিন পর আবিষ্কার করেই ইনবক্সে এস এম এস পাঠায়। সোনু মাসী, চিনতে
পারছ, আমি তোমার শেলী দিদির ছেলে। তোমার
ফটোগুলো দেখে আর বিভিন্ন এ্যাক্টিভিটি, কারিকুলাম
ছবির সঙ্গে দেখে চিনে নিয়েছি তোমাকে। আমি উপল। সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে এক স্মাইলি। আর
এত আন্তরিকতা আর স্নেহ। উপল মুগ্ধ। আসলে উপলকে এ মাসী যখন দেখেছে উপলের বয়স
তিন চার। আর মাসীটিও স্কার্ট ব্লাউজ পরা
ক্লাস সিক্সের ছাত্রী। আর এখনকার মাঝবয়সী সুন্দরী সোনুমাসীর সঙ্গে সে মনের ভিতর
ছবির মত সেঁটে যাওয়া ছবির মিল নেই। উপলকে দেখেও চমকে যাবে নিশ্চয় ই সোনু। এসব
ভাবতে ভাবতেই উপল আজকের দিনের মা হারানো দু:খের অনুভূতি গুলো দূরে সরিয়ে রেখেছে। শ্রাদ্ধ
মিটে গেছে দুদিন আগেই। কামান হয়ে গেছে সেদিনই। সুতরাং নেড়া মাথার উপল সাদা টুপি
পরে এসেছে। সোনুমাসীর ফোনে এস এম এস ‘তুই কোথায়, আমি
ঢুকে গেছিরে....’। সোজা ঢুকে যায় উপল। ফ্লাইওভার পেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছেন
স্কাই কালারের শাড়ীটায়...ঐতো মাসী...চিৎকার করে হাত নাড়ে উপল। সব ভুলে যায় স্থান
কাল মানুষজন।....সোনু মাসী,এইযে এখানে...
-এমা তুইকি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে
আজ আটকানো বোধহয় উচিত হলোনা অন্য কাউকে বললেই হত।...তবে ভালোই করেছিস। আমিতো
শিলিগুড়ি মেইন রাস্তাগুলো ছাড়া কিছুই চিনিনা।
-চল চল। ব্যাগ দাও। প্রায় আড়াইটে। বেলা
গড়িয়ে গেছে। কি লেট বল। আজ ই এমন হল।
সবাই অপেক্ষায় তোমার জন্য।
সোনুর চোখে বেগুনী শেডের রোদ চশমা। বাইরে প্রকৃতিকে
খানিক ঝাপসা করেছে। উপল অটোতে লাগেজ ব্যাগ খানা চাপিয়ে দিতেই সোনু মাসী উঠে বসে। দুজনে
বাবুপাড়ার দিকে ছোটে।
দুই
উপল দরজা ঠেলে তড়িঘড়ি ঘরে ঢুকতেই শোরগোল। নানা কথায়
সোনালি চিত্রার্পিতের মত দাঁড়িয়ে পড়ে শেলীদিদির ছবির সামনে। মিষ্টির প্যাকেট,ফুলের
গুছি দিদির ছবির সামনে সাজিয়ে দিতে দিতে অস্ফুটে বলে,সেই
এলাম,দেখা হলোনা আর।ঘর আবার থমথমে।...উপল ই
হৈ হৈ করে ওঠে।
-বড়মাসী,মেজমাসী
তোমাদের আজ ই না ফেরার ট্রেন,খেতে বস। সোনুমাসী,তুমিও
হাত মুখ ধোও। আমার পাশেই বস।...কতদিন পর, এই আসি এই
আসছি করতে করতে শেলীদিদিটাই চলে গেল। দেখা হলোনা। বড্ড দেখতে চেয়েছিল শেষ
সপ্তাহটায়। আর এখন সোনালি বাথরুমে গরম জল শরীরে ঢেলে দিতে দিতেই বাথরুমের আয়নায়
যেন শেলীদির মুখ স্পষ্ট দেখে।...এলি সেই, বড় দেরী করে। ফিস
ফিস কানে। কেমন গরম লাগে ওর। তবু গভীর ভালোলাগা জুড়ে থাকে চেনা চেনা গন্ধ
বাতাসে।...আসলে শেলীর মুখ দেখে অনেকেই বলেছে এক্কেবারে রাঙাদাদুর মেয়ে সোনালীর মুখ
কেটে বসানো। হুঁ আয়না কি আর আজগুবি কথা বলে! ফটোর শেলীদির হাসি নিয়ে ওর প্রতিকৃতি
দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশের আয়নার কাচে। এখন আর শিরশিরিনি অনুভূতি হলনা। মনে হল সেই
বহু আগের কিছুদিনের মত কেউ ওর জন্য তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে আছে শরীর মুছে নেবে। নয়তো
ঠান্ডা লেগে যাবে।
অটোরিক্সা চেপে যখন স্ট্যান্ড থেকে ঐ একটুখানি রাস্তা
হিলকার্ট রোড ছাড়িয়ে গেল,পাশের সবুজ
মাঠের দিকে চোখ আটকে গিয়েছিল সোনুর। সঙ্গে সঙ্গে উপল চিনিয়েছিল, জান
মাসী, এ ক্লাব প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন। সবুজ
মাঠের ঘাসগুলোয় যেন কোন অতীত লুকিয়ে আছে সোনুর বুকের ভেতর। ঠিক তেমনি দৃষ্টি
নিষ্পলক।
-হ্যাঁরে উপল, শেলীদি সেই অভিমান বুকের
মধ্যে নিয়েই চলে গেল। সকলকে ঠিক এভাবেই একা হতেই হবে! কেন বল্ তো! দুজনের ই চোখ
ছল ছল করে।
উপলের মনে পড়ে মার কাতর মিনতি ছিল শেষদিন পর্যন্ত ‘আমাকে
মালদায় ফিরিয়ে নিয়ে চল'এই ভূমির দিকে
ফেরা,ফিরতে চায় কেনা! বুকের ভিতর খুব কষ্ট
হতে থাকে উপলের। চোখের জল ভাগ্যিস সোনুমাসী দেখতে পাচ্ছেনা। আসলে সোনুমাসীর
বেগুনী কাচের চশমার আড়ালের চোখ ও শুকনো ছিলনা। তার ও মনে পড়ছিল মায়ের শেষ বিছানার
কথা। যেদিন তার ছেলে আদরের চোখের মণি ছেলেটি মাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল ঘোর গ্রামজ
এলাকায় তার বোন মন্টি মাসীর বাড়ী। আসলে ভিটে ছাড়া করার চেষ্টার মত বড় অপরাধ বোধহয়
আর হয়না। না, ফিরে আনতে হয়েছিল মাকে। নিজে হাতে
সাজানো বাথরুম,নিজের বিছানায় শেষ কটাদিনের জন্য
অপেক্ষা করতে তাকে ফিরে আসতেই হয়েছিল। কিন্তু পুত্র বধূটির গুণপনা কেনা দেখেছে!
মার হাতে তৈরি নকশী কাঁথা,বিছানার ভাল
চাদর কিচ্ছুটি পায়নি মা। দেওয়াই হয়নি। সোনুই বা কি করতে পেরেছিল ঠিক তখন। কিচ্ছুনা।
বলতে গেলেই কেমন আতংক বাসা বাঁধত। এই বুঝি মাকে ফেলে রেখে চলে গেল ওরা।! অথচ মৃত্যুর
জন্য অপেক্ষা করে থাকা শকুনী ব ই তো নয় ওরা। দিন দিন মার হাতে গড়ে তোলা সংসার
তছনছ হয়েছে। সোনুকে সে বাড়ীর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে অবহেলা উপেক্ষায়। সোনু
কোন আইনের রাস্তা নেয়নি। নিলে ভাল হত অনেকেই বলেছে। সে রাস্তা ধরতে ইচ্ছে হয়নি। এ
শূন্য বাড়ী মা বাবা ছাড়া। ঐ ভয়ঙ্কর অন্ধকার প্রকোষ্ঠে গহ্বরের ভিতর ঢোকেনি
আর।.....চিন্তা জাল ছেঁড়ে। উপলের গলা। বাথরুমের দরজায় বারবার ধাক্কা,শব্দ।-কি
ব্যাপার সোনুমাসী, সবাই অপেক্ষা করছে যে, এসো। দু
ভাই অনুমতি নিয়ে খাওয়া শুরু করবে আজ। আজ মৎস্যমুখীতে উপলের মামা মামীরাও এসেছেন।
কাপড় বদলে খুব চটপট এসে বসে সৌপলের পাশে। সৌপলের স্ত্রী
ধৃতি মেয়ে নিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে। শেলীদির বড় বোন পুষ্পদিরও বয়স কম হলোনা। তিনিই
পরিবেশন করছেন।-সোনুমাসী, তোমার নিশ্চয়
ই লজ্জা করছেনা! -আসলে কি বলতো,লজ্জা কেন
হবে! কিন্তু কতগুলো বছর পেরিয়ে আবার একসাথে হলাম তাই ভাবছি। সবাই বদলে গেছে। এইযে
পুষ্পদির দুই ছেলে প্রাণ আর মন এত বড় হয়ে গেছে,ওদের
সংসার ছেলে মেয়ে...আমিতো ভাবতেই পারছিনা। পুষ্পদি বলে ওঠে,আমরাও
তো কত যুগ পরে তোকে দেখছি। কত বদলে গেছিস চেহারায় অন্যরকম ছাপ। সেই নিতু কাকার
কথাই মনে পড়ছে বার বার একই তো রক্ত,কতদিন দেখা নেই
বল্ তো। আমিতো এখন ও মালদাতেই আছি,তুই আসবি। মাথা
নাড়ে সোনু।
ইতিমধ্যে অনুমতি পেয়ে সৌপল উপল প্রথম মাছ মুখে দেয়,তারপর
অন্যেরা একে একে খেতে শুরু করে।
তিন
খাওয়া শেষ না হতেই ছোট্ট দু কামরার ফ্ল্যাটে ছুটোছুটি
হুড়োহুড়ি। সবাই আজই তিস্তায় বেরিয়ে যাবে। গোছগাছ চলছে ওর ই মধ্যে। অনেকদিনের
পুরোনো ছবি কথার ভিতর মনের ভিতর ঘুরপাক
খায়। আর এক বোন ফিরে যাবে বানারহাট। সে যাবে কাল। পুটুদি। কতদিনের সেসব কথা
শেলীদির ছবির সামনে বসে দুজনে স্মৃতিচারণ করে। সেই সেদিনের ওরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক
ওদিক ঘোরা ফেরার পর মাটি মুখো হতে চায় যেমন পাখিরা ফেরে সন্ধের আকাশের লাল রঙ
ঠোঁটে নিয়ে,ডানার পালকে নিয়ে খড়কুটোয় বানানো পাতার
ফাঁকে ছোট ঘরটুকুতে। কিন্তু পুটু, সোনু, পুষ্প
এদের সেই এক মাটি...কবে ছড়িয়ে গেছে। ওরা ফিরতে চাইলেও কে আর ফিরিয়ে নেবে! শেলীদিও
ফিরতে চেয়েছিল বাপের ভিটে মালদহতে। সেই সারাজীবনের ঘরখানায়। কিন্তু সৌপল ধৃতির
সঙ্গে থাকতে হবে বলে ওরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে শেলীদিকে নিয়ে এসেছিল শিলিগুড়িতে ওদের
কাছে। এখানে এ সুভাষ নগরের বাবু পাড়ার ফ্ল্যাটবাড়িতে। কতগুলো বছর সূর্য দেখেনি
বলছিল উপল। আসলে বয়স বাড়ে,মত গ্রাহ্য
করার মানুষ কমে যায়,বদলে যায়,কর্তৃত্ব
বদল হয়। বয়স্ক মা বাবাকে নিয়ে মেয়ে বা ছেলে মানুষ করে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ছেলে
ছেলের বৌ অথবা মেয়ের বাড়ীতেও ঠিক অমনি যদ্দিন প্রয়োজন অতিথি দেব ভব,নয়তো
মাটি আঁকড়ে টলমল পা যখন শক্ত,দৌড় শিখে যায়
সেও দিদিমা বা ঠাম্মাকে টাটা দিতে শেখে।
শেলীদিকে আর তার নাতনীর টাটা দেওয়ার প্রয়োজন হলোনা। প্রায়
পাঁচ ছয় বছর ধরে সৌপল আর ধৃতির ঘেরাটোপে নিজস্বতা হারিয়ে মজুমদার বাড়ীর মেয়েটা সেই
প্রিয় মালদার গৃহকোণ টুকু ভুলে গেল। তারপর হার্ট দুর্বলতা। একদিন হঠাৎ ই মাথা ঘুরে
পড়ে গেল। সেইযে বিছানা নিল,ডাক্তার
দেখিয়েও তেমন ফল ফলেনি,শেলীদির শেষের
কথায় শুধুই ছিল'আমায় মালদা নিয়ে চল’। উপল কয়েকবার
চেষ্টাও করেছিল। সৌপল ধৃতির তখন সুবিধে ছিলোনা। দুজনেই চাকরী করে। দুরন্ত তিতির
স্কুল ফেরৎ একা কি কান্ড যে করবে,এ ভাবনায়
শেলীদিকে ছাড়তে চায়নি। শেলীদির ও চিন্তিত
মুখ দেখে উপল হাল ছেড়েছে। তারপরতো এই অন্ধ গহ্বরে পাঁচটি মাস। সবার চিন্তা
মুক্ত করে দিয়ে চলেই গেল শেলীদি।
একটু ফাঁকা নির্জনতায় উপল মাথা নীচূ করে কথাগুলো বলছিল
সোনুমাসীকে। এত ফিটফাট সোনুমাসীর ভিতরখানা যে নরম তুলতুলে বুঝে নিতে কট হয়নি
উপলের। একেবারে একলা মানুষের ব্যক্তিত্ত্ব স্ফুরিত না হলে সে থাকতে পারেনা। এই
সোনুমাসীও ঠিক তেমনি। পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবন এক লহমায় ছেড়ে দিয়েছিল,একমাত্র
ছেলের অন্যয় প্রস্তাবে কিংবা কাজে আপোষ
করবেনা বলেই। ছেলে মায়ের স্বার্থপরতা খুঁজেছে,কিন্তু
সোনুমাসী তার দরিদ্র ছেলে মেয়েদের নিয়ে নিজের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছে। যাকে
অত্যন্ত যত্নে গড়ে তুলেছে সে, তাকে ছাড়েনি, ছাড়তে
পারেনি। চাকরীর বদলীর নিয়মে কলকাতা চলে গেলেও আর্থিক সাহায্য আর সহকর্মীদের বেতন
যুগিয়ে এখনো সে এনজিও চালিয়ে আসছে। সোনুমাসীল দৃঢ়তাকে উপল কুর্নিশ করে।-সকলেরই
নিজস্ব এক চেতনা ভালোলাগার জায়গা থাকা চাই উপল। আমি আমার সারা জীবন মায়ের জীবনতো
দেখেছিরে! অভিজ্ঞতা পাথর বানিয়ে দিয়েছে রে।
উপল খুব ধীরে উচ্চারণ করে,পাথর
তুমি হ ওনি মাসী। সেই টান সেই আত্মিকতা সেটা তুলে ফেলতে পারনি। তাইতো এলে...থ্যাঙ্কস্
টু কম্পিউটার ফেসবুক, যে তোমাকে ফিরিয়ে দিল। কথা বলতে বলতেই
কখন বাস স্ট্যান্ড এসে গেছে,দিদিরা অনেক
আগেই বেরিয়ে পড়েছে। কাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গেই থাকবে সোনালী। সন্ধে ঘনিয়ে আসছে,দূরে
পাহাড়গুলো মেঘের ঢালের মত আড়াল করছে সূর্যকে। সূর্য অদ্ভুত এক লাল রঙে খানিকটা
খাবলা টিপ যেন কারো কপালে পরিয়ে দিয়েছে। আজ সোনু মাসী তার এন জিও'সাথী'তে
মাল্লাগুড়িতেই থাকবে। বাগডোগরাগামী এক বাসে বসিয়ে দেয় উপল সোনুমাসীকে।
বহুদিন পর সোনালীর মুখে উপল অল্পবয়সী মার মুখ খুঁজে পেল।
হারানো সম্পর্কের অতল গভীরে যে এক প্রলয় সমুদ্র লুকোনো থাকে তা আজ সোনুমাসীকে দেখে
বুঝেছে। উপল ও ভুলে গেল সৌপল আর ধৃতির উপেক্ষা কিংবা মার অনুপস্থিতির কান্না যা
ভিতরকে ছিঁড়ে খুরে খান খান করে দিয়েছিল। হাত নেড়ে সোনু মাসী বলছে,...ভাল
থাকিস উপল,তোর অফিসের কাজের ফাঁকে এন জিও তে
আসিস। মাঝে মাঝে দেখবি বাচ্চাগুলোকে। দেখিস সব ফিরে পাচ্ছিস মনে হবে।
***উপল মাথা নাড়ে। হাত তুলে একটু এগিয়ে
যেতেই বাসটা অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। শুধু লালচে আলো দুটো তখন ও অদ্ভুত চোখের মত
উপলের বুকের ভিতর জ্বলতে থাকে। মনে মনে অন্যরকম প্রত্যয় জাগে তার।
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন