বৃদ্ধাশ্রম



রম্যরচনা


শীত বিদায় নিচ্ছে আর বসন্ত দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতির অপেক্ষায়। এমন মনোরম সন্ধিক্ষণে ভগবান বিষ্ণু স্বর্গের নন্দন কাননে লক্ষীর সাথে ভ্রমণ করছেন আর মর্তের মানুষদের কথা বলছেন।
মর্তের মানুষরা আজকাল ধর্মকর্ম একটু কম করছে তাই না প্রিয়ে”?
তা ঠিক বলতে পারবোনা তবে আমার পূজোতো খুব নিয়ম করেই করে। বেস্পতিবার তো সবাই খুব ভক্তির সাথেই পূজো করে, ফল মিষ্টি অনেক পাই
মা ঠাকরুন ঠিকই বলেছেন প্রভু,মানুষ এখন ধর্মকে সামনে রাখে। হয়তো পাপ বেশি করে তাই ধর্ম করে কিছুটা পুণ্য কামিয়ে নেয়চির-সাথি নারদ হঠাৎ পাশ থেকে বলে উঠলেন।
হা হা হা--- বেশ বলেছো হে,মরার জন্য বিষও খাবে আবার ওষুধ খেয়ে বাঁচতেও চাইবে”!
রাস্তার পাশে কতো মন্দির হচ্ছে প্রভু তা কি শুধুই দেখার জন্য!
নারদ তুমি এই ধূর্ত মানুষদের চেনোনি এখনো,ওরা মন্দির বানিয়ে জায়গা দখল করে নেয় তারপর নিজেদের ধান্দার জন্য ঘর বাড়ি বানিয়ে নেয়। লক্ষী তোমার কি মত”?
আমি আজকাল মর্তের ফ্যাশানের দিকেই বেশি লক্ষ রাখছি প্রভু। নিজেকে একটু প্রাচীন মনে হচ্ছে। আমি একটু বদলাতে চাই নিজেকে
অবাক করলে প্রিয়ে,শেষকালে নিজেকে বদলিয়ে আমায় কি ওই মানুষদের মতন ডিভোর্স দেবে?
এ মা,ছি ছি একি কথা বলছেন আপনি,তার চেয়ে চলুন ওই মর্ত-বাসিদের মন্দির,আশ্রমগুলো ঘুরে আসি। দেখে আসি ধর্মের নামে কতটা খাঁটি আর কতোটা মেকি ওরা।
মহর্ষি নারদ পাশ থেকে বলে উঠলেন,“নারায়ণ নারয়ণ,মা জননী ঠিকই বলেছেন। মর্তের আশ্রম আর মন্দির গুলো চলুন ঘুরেই আসি
 নারদকে সঙ্গে নিয়ে লক্ষী নারায়ণ চললেন মর্তের উদ্দেশে। প্রভু একটু সাবধান! আমরা এখন থেকে মানুষের মতোই থাকবো কোনও দৈবী সুবিধা নেবনা
সে কথা আর বলতে! অসুবিধে আর কি,তবে আমরা ঘুরতে এসেছি তো তাই অনেক হাঁটতে হবে এইটাই কষ্ট
প্রভু মর্ত-বাসি এখন বড়লোক,প্রায় সকলের কাছেই গাড়ি আছে। আমরাও একটা গাড়ি নিয়ে নেবো আপনার কষ্ট হবেনালক্ষ্মী নারায়ণকে নিশ্চিন্ত করলেন।
কিছুক্ষণর মধ্যেই তিনজন দেব দেবী মর্তে চলে এলেন মধ্যবয়সী মানুষের রূপ ধরে। তখন সবে ভোর হচ্ছে। চারিদিক শান্ত। ভগবান বিষ্ণু লক্ষ করলেন অনেক নারী পুরুষ দৌড়চ্ছে। তিনি প্রশ্ন করলেন,“কি ব্যাপার,মানুষ কোথায় যাচ্ছে এমন শান্ত ভোরে দেবতার অর্চনা না করে?
মিষ্টি হেসে দেবী লক্ষী বললেন,“প্রভু এ হচ্ছে শরীর চর্চা। যা করে মানুষ পায় মেদহীন শরীর
বা,কিন্তু দেবী আমিতো শরীর চর্চা না করেই মেদহীন আছি
নারায়ণ নারায়ণ,প্রভু আপনার সাথে কি কারও তুলনা হয়বিগলিত কণ্ঠ মহর্ষি নারদের।
কিছুক্ষণ হাঁটবার পরেই একটা ছোটো মন্দির। ভেতরে পূজারী পূজার আয়োজনে ব্যস্ত।
দেখছেন তো প্রভু কত ভক্তিনারদ শ্রী হরিকে দেখালেন!
ভুল নারদ,লোকটা কুঁড়ে। তাই ধর্মের আড়ালে নিজের খাওয়া চালায়। সকাল সন্ধ্যে ঠাকুরের নামে যা পায় তাই দিয়ে দিন চালায়।
লক্ষী দেবী ভগবান বিষ্ণুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন,“দেখুন প্রভু ওই একটা আশ্রম। বাইরে দাঁড়িয়ে অনেক ভক্ত জন। চলুন প্রভু গিয়ে দেখি”
কৌতূহলের সাথে নারায়ণ দেখলেন তারপর পা বাড়ালেন যাবার জন্য। কাছে গিয়ে দেখলেন বেশ কিছু বৃদ্ধ আর বৃদ্ধার ভিড়। এমন সময় নারদ বললেন,“প্রভু এ এক নতুন আশ্রম ----- ‘বৃদ্ধাশ্রম
নারায়ণ মাথা চুলকে চিন্তা করতে লাগলেন ----- ‘এই নামে তো কোনও দেব দেবী নেই, মানুষ তাহলে কি অন্য গ্রহের দেবতাদেরও পূজো করে!
বিনীত স্বরে লক্ষী বললেন,“প্রভু আপনিও কি তাই ভাবছেন যা আমি ভাবছি,মানুষ নিশ্চয়ই অন্য গ্রহের দেবতার পূজোও করে’
চলোতো প্রিয়ে,দেখেই আসি কিরকম দেবতা,কি তার নাম গানবলেই এগিয়ে চললেন। দেবী লক্ষী ও মহর্ষি নারদ অনুসরণ করলেন শ্রী বিষ্ণুকে।
আশ্রমের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তিন মধ্যবয়সী একটু ইতস্তত ভাব নিয়ে।
বৃদ্ধা-বাসের অফিসঘরের জানলা দিয়ে সুজয় তিনজনকে ঢুকতে দেখেই তাড়াতাড়ি বাইরে এল। এই বয়স্ক মানুষদের ওপর সুজয়ের বিরাট শ্রদ্ধা কারন তার জন্মের দুমাসের মাথায় তার বাবা মা এক বাস দুর্ঘটনায় মারা যায়। তাই সে প্রতি বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার মাঝেই নিজের বাবা মাকে খুঁজে পায়। আর খুঁজে বেড়ায় সেই প্রশ্নর উত্তরকে---- সন্তান কি ভাবে আপন বাবা মাকে ঘর থেকে বার করতে পারে’?
আসুন,আসুন আপনারা। আপনাদেরও নিজের তৈরি ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে হল”!তা হোক দুঃখ করবেননা, এখানেও আপনাদের ছেলে মেয়ে আছে,সমবয়সী বন্ধু পাবেন,মনের আনন্দে থাকবেন। ওই যে কবিগুরু বলেছেন--------তাই লিখে দিল বিশ্ব নিখিল দু বিঘার পরিবর্তেনিজের কৃতিত্বে নিজেই হেসে উঠল সুজয়।
কিন্তু কথাগুলো শুনে এই তিনজনের মাথা একটু টলমল করে উঠল। বলতে গেলে পুরো বিষয়টাই ওদের বোধের বাইরে।
সুজয় বুঝল এতবড় দুঃখটা এখনও হয়তো ঠিক হজম করতে পারেননি তাই এমন উদভ্রান্ত অবস্থা। তিনজনকে সম্মানের সঙ্গে এনে বসাল। হারুকে বলল চা দেবার জন্য। তারপর মোটা রেজিস্টার খাতাটা খুলে বলল,“বলুন কাকু আপনাদের নাম
বিষ্ণু ভগবান একটু ইতস্তত করে বললেন,“এই-টা-কি কোনও আশ্রম? কোন ধর্ম মেনে এখানে পুজো বা নাম কীর্তন হয়”?
সামান্য হেসে সুজয় বলল,“কাকু, এইটা সত্যিই আশ্রম। তবে এই আশ্রমের দেবী দেবতা হচ্ছেন সেই মানুষরা যাঁরা নিজেদের চিন্তা না করে সর্বস্ব দিয়ে সন্তানদের মানুষ করতে চেষ্টা করেছিলেন। নিজরা না খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছেন। নিজেরা রোদে পুড়ে জলে ভিজে সন্তানকে আরামের জীবন দিতে চেয়েছেন। তাই আজ নিশ্চিন্ততা,সুখ,আরাম তাঁদের জীবন থেকেও চলে গেছে। আমি সেই মানুষদের হারিয়ে যাওয়া আরাম বা সুখকে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করি
তোমার বাবা মাও কি এই আশ্রমেই থাকেনঅসীম কৌতূহলে লক্ষী জিজ্ঞেস করলেন সুজয়কে।
একটা ব্যথা ঝিলিক দিয়ে গেল সুজয়ের সামনে দিয়ে। মুখটা নামিয়ে বলল,“নিষ্ঠুর ভগবানের ঘরে-তো বিচার নেই। দু মাসের শিশুর থেকে বাবা মা কেড়ে নেয় আর পঞ্চাশ বছরের বুড়োর কাছে বাবা মা রেখে দেয় ঘর থেকে তাড়াবার জন্য
কর্মফল তো ভোগ করতেই হবেভগবান বিষ্ণুর অবিচল কণ্ঠস্বর।
রাখুন আপনার কর্ম। অজ্ঞান শিশুর কাছে মা থাকাটাই আসল কর্ম আর ধর্ম। আমি ভগবানে বিশ্বাস করিনা। আমি এইসব অসহায় মানুষের মাঝেই আমার বাবা মাকে পাই। আমার সমস্ত সম্পত্তি আমি এই আশ্রমের কাজে লাগিয়েছিএকটু চুপ করে থেকে হাত দুটো জোড় করে বলল,“এইভাবে উঁচু গলায় আপনাদের সাথে কথা বলে আমি অন্যায় করেছি। কাকু বলুন,আপনারা তিনজনেই কি থাকতে এসেছেন”?
ঠিক তা নয় মানে--- থাকব কি না এখোনো বুঝতে পারছিনা
ভগবান বিষ্ণু চুপ করতেই নারদ বলে উঠলেন,“আচ্ছা এই রকম আরও আশ্রম কি আছে”?
নিশ্চয়ই,শহরের আধুনিক জীবনে অনেক আগে থেকেই প্রচুর টাকার বিনিময়ে বয়স্ক মানুষদের থাকার ব্যবস্থা আছে,অনেকটা হোটেলের মতো। কিন্তু অল্প পয়সার বিনিময়ে বা বিনা পয়সায় সরকারের সাহায্য নিয়ে যে আবাস গুলো তৈরি হয়েছে এই ঘরছাড়া মানুষ গুলোর জন্য, সেগুলোকেই আমরা বৃদ্ধাশ্রম বলি। আর এই বৃদ্ধাশ্রম এখন শহরতলি ছাড়িয়ে গ্রাম গঞ্জেও পা বাড়িয়েছে
আচ্ছা ঘর ছেড়ে কেমন আছে এখানে,মানে সুখে আছে তোলক্ষী দেবী প্রশ্ন করলেন।
কাকিমা চলুন না ভেতরে সব ঘুরে দেখবেন। ঘর ছাড়া এই মানুষগুলোর সাথে কথা বলে নিজেই বুঝবেনসুজয় ওদের নিয়ে চলে এলো ভেতরে। সবাই সবার ক্ষমতা ও বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করছে। তবে টিউশনটাই বেশি। ছোটো থেকে উঁচু ক্লাসের গরীব বাচ্চারা এখানে পড়তে আসে। ঘুরে ঘুরে সব দেখে আর অনেকের সাথে কথা বলে তিনজনেই খুব খুশি। অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধার একই উত্তরবাড়ির নিত্য অশান্তির থেকে অনেক ভালো আছে তারা। বাড়ির কথাও তারা মনে করতে চায়না আর কোনোদিন ফিরতেও চায়না।
কিন্তু তার মধ্যেও কয়েকজন আছেন যাঁরা ভুলতে পারছেননা বাড়ির স্মৃতি। তেমনই একজনের সাথে পরিচয় করাল সুজয়। মিতালি গুহ রায়,দারুণ কবিতা লেখেনমিতালির সাথে একটু কথা বলে বুঝতে পারলেন-- মা তার ছেলের জন্য অস্থিরদেবীর আগ্রহে মিতালি তুলে দিলেন তাঁর কবিতার খাতা। খাতাটা খুলে দেখলেন প্রতিটি কবিতা চোখের জলে ডুবে আছে। আর্ত চিৎকার করছে মুক্তির জন্য।
সুজয় বলল,“মিতালি মাসিমা বাংলার অধ্যাপিকা ছিলেন। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে বহু কষ্টে ছেলে মানুষ করেছিলেন। সেই ছেলে বড় চাকরী করে নিজের পছন্দের মেয়ে বিয়ে করল। বৌ মাসিমাকে ঘর থেকে বার করল এই বলে যে এমন আনকালচার্ড শাশুড়িথাকলে তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। প্রতি মাসে একটা অঙ্ক এসে যায় কিন্তু মানুষ আসেনা।
ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলেন তিনজনে ফিরে যাবার উদ্দেশ্যে। এমন সময় নারদ ইশারা করে লক্ষী দেবীকে দেখালেন দুরে গাছ তলায় এক বৃদ্ধ ঈজেলের সামনে দাঁড়িয়ে আঁকছেন তাও বাঁ হাতে। সুজয়কে জিজ্ঞেস করতেই বলল,“উনি একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। গুলি লেগে ডান হাতটি কাটা যায়। তবে তার জন্য ওনাকে কারও সাহায্য নিতে হয়না,বাঁ হাতেই সব করেন। খুব সুন্দর পেন্টিঙ্গ করেন। আর সেই পেন্টিঙ্গ বিক্রির প্রতিটা টাকাই দুঃস্থ বাচ্চাদের জন্য খরচা করেন
উনি কেন ঘর ছাড়লেন”?
বৌ-এর কথা শুনে ছেলে প্রায়ই দিন বাবাকে বলত,‘এ সংসারটা এখন তার, অতএব তার বৌ যেটা পছন্দ করেনা সেটা বাবা যেন না করেঅনেক চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলনা। একদিন বৌ-এর চোখে জল দেখে ছেলে বাপকে অনেক কথাই বলল আর রাগের বশে হাতটাও ওপরে উঠেছিল ছেলের। মন্মথ বাবু মা মরা ছেলেকে অনেক আদরে মানুষ করেছেন তাই কোনও কিছু না বলে নিজের সামান্য জিনিষ নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। আসানসোল স্টেশনে বসেছিলেন যে কোনও একটা ট্রেনের জন্য। আমিও আমার কর্মের গুনে ওই সময়ে প্লাটফর্মে ছিলাম কলকাতা ফিরব বলে। অতিরিক্ত রাগে খুবই উত্তেজিত ছিলেন তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আমি গিয়ে নানা কথায় একটু অন্যমনস্ক করে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাবেন। যখন উনি বললেন নির্দিষ্ট কিছু নেই এমনি ঘুরতে বার হয়েছেন আমি তখন ওনাকে এই আশ্রম সম্বন্ধে বললাম এবং আরও বললাম যে উনি যদি একটু সাহায্য করেন আমায়। রাজি হলেন আর চলে এলেন এই আশ্রমে।
দেবী লক্ষীর মন বিচলিত হয়ে উঠল এমন নিষ্ঠুর কথা শুনে। যে সন্তানকে বাবা অনেক ত্যাগ স্বীকার করে নিদারুণ কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে স্নেহ মমতার আড়ালে বড় করল সেই সন্তান বৃদ্ধ বাবার ওপর হাত তুলতেও পারে। নারায়ণেরও মন ভারি হয়ে উঠল। তিনি নারদকে বললেন,“এই নতুন প্রজন্ম এতো নিষ্ঠুর কেন? নিজের বাবা মার জন্য এদের প্রাণে এতোটুকু শ্রদ্ধা নেই কেন”?
প্রভু এই প্রজন্মের সন্তানরা অনেক কিছু হাতের মাঝে পেয়ে যায় বিনা পরিশ্রমে। এদের বাবা মা-রা দিন রাত্রি পরিশ্রম করে এদের চাহিদা পূরণ করে। তাই এরা বাবা মা কে যন্ত্র ভেবে নেয়। ভেবে নেয় এই যন্ত্রের আবিষ্কার হয়েছে ওদের চাহিদা পূরণের জন্যই। আর তারপর যখন নিজেদের হাত পা তৈরি হয়ে যায় তখন ঠোক্কর দিয়ে এই অবাঞ্ছিত যন্ত্রকে ওরা সরিয়ে দেয়। অনেকটা পক্ষীকুলের মতোই আচরণ প্রভু
অপার বিস্ময় নিয়ে ভগবান বিষ্ণু শুনলেন সব। তারপর বললেন,“নারদ, শুনতে পাই মানুষ বলে-- সব ভগবানের সৃষ্টিসত্যিই কি তাই! এইরকম নিষ্ঠুর বুদ্ধির সৃষ্টি কি ভগবান করতে পারে? আশ্রম আর তার সেবক দেখে মন ভরে গেছে। চল ফিরে যাই
তিনজনে আশ্রম থেকে বার হবার রাস্তায় পা বাড়ালেন। সুজয় জিজ্ঞেস করল,“চলে যাচ্ছেন আপনারা”?
আমরা এখন যাচ্ছি তবে তোমায় আশীর্বাদ করে যাচ্ছি বাবা,‘মানুষ হয়ে বাঁচো,মানুষর জন্য এমনভাবেই বাঁচোদেবী লক্ষী সুজয়ের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
সুজয় বুঝল এনারা ঘুরতে এসেছিলেন। মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠল প্রণাম করার জন্য। ভক্তির সাথেই প্রণাম করল তিনজনকে।
শ্রী বিষ্ণু সুজয়কে বললেন,“তোমায় আশীর্বাদ করার ক্ষমতা আমার নেই। তুমি কর্মের দিক থেকে অনেক বড়
আনন্দের দুরন্ত কালবৈশাখী কে বুকে চেপে সুজয় হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে রইল।
তিনজন ভগবান এগিয়ে চললেন ভক্তকে পেছনে ফেলে। একই প্রশ্ন তিনজনের মাথায়। 
এ কেমন ধর্ম মানুষ নিজের জন্য বানিয়ে নিয়েছে! যারা তাদের পালন পোষণ করে বড় করল তাদেরকেই ঘর থেকে বার করে দিল! তৈরি হল বৃদ্ধাশ্রম। ব্যথা ভরা মন নিয়ে তিনজনে ফিরে চললেন সুখের স্বর্গে। যেখানে দুঃখের,কষ্টের প্রবেশ নিষেধ!
বিশ্রাম শয্যায় বসে ভগবান বিষ্ণু দেবী লক্ষীকে জিজ্ঞেস করলেন,“প্রিয়ে তুমি কি এখনও মর্তের ফ্যাশানের দিকে আকৃষ্ট”?
না প্রভু,বৃদ্ধাশ্রম দেখার পর শুধু ফ্যাশান কেনো,মানুষের কোনো কর্মের প্রতিই আর কোনো আকর্ষণ নেই আমার। যে আধুনিকতা সমাজে বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করে দেয় তেমন আধুনিকতাকে ঘৃণা করি আমি। আমি প্রাচীনই থাকতে চাই

পৃথা ব্যানার্জী: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন