বুকের মুদ্রা;আয়নায়



রম্যরচনা


এত তালা ঝুলছে চারদিকে,তবুও চুরি হয়ে যাচ্ছে সব,টাকা কড়ি  গহনাগাঁঠির সাথে সাথে চুরি হয়ে যাচ্ছে  সততা বন্ধুত্ব এমনকি প্রেমিকার যোনি পথ রাস্তাঘাটে আলো জ্বলছে, অপূর্ব দৃশ্যের সাথে দু ধারে  ফ্যাসানেবল্ গাছ নড়ছে বাতাসে,কেউ কেউ ওড়না উড়িয়ে অপেক্ষা করছে স্লাইড চুমুর, যদিও ডিপ্-কিসের হোর্ডিংটাই কয়েক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পুড়ে কয়েক ঘন্টা লোডশেডিং উপহার দিচ্ছে মফঃসললের বিছানায়  সেই সব ছবির দৃশ্যে কয়েকটা রাত গুঁজে দিলেই একেবারে মারকাটারি হয়ত তার কোনো ভিউ নেই কিংবা সেখানে কোনো সেন্সর বেড়াতে আসে না না আসুক ক্ষতি নেই তবুও চুরি হয়ে যাচ্ছে সব মনন

ছাতিম গাছের কাছে যেটুকু রোদ ছিল,তাকে ঘিরে ফেলেছে কয়েকজন জেলে। জল ছেঁকে মাছ ধরার জন্য নীল জাল বেয়ে যেটুকু রোদ আসে,তাতে পাতা কুরে খাওয়ার জন্য  ঘোড়াপোকারা রং হারিয়ে ফেলছে  ক্রমশ সাদা হতে হতে দীর্ঘ করছে তাদের দাঁত ঝাঁঝরা করছে পাতা কান্ডের হিসেবি দিনগুলো  জেলেরাও জলের নীল ছাঁকতে ছাঁকতে বৃদ্ধি করছে তাদের গড়ন, বৃদ্ধি করছে তাদের পুরুষাঙ্গ সাঁতার কাটছে অঢেল আর তুলে নিচ্ছে মাছের ছটপটানি  হাতের চেটোয় পিচ্ছিল লালা রসে শুধু বেদনা মানুষকে কাতর করে তোলেসবাই খুব যন্ত্রণার মাঝে  থাকে শোনো জীবনটা বড়ই  জটিল গো সবাই পিছল করতে পারে না সবাইকে পারতেও নেই তোমার মুরোদ নাই  - একথা শুনতে শুনতে জলে ডুব দিচ্ছিল ওরা তারপর সারা গায়ে মাখতে চায় মাছের রস।

তাহলে এখন কী করবে মধুসূদন?তিনিও  আমগাছ জামগাছ  ভুলে মিলিয়ে দিতে চায় লালা রস, চুমুর কথা কত না লেখালেখি হয়েছে, হচ্ছেও সুতরাং কে আর চায় আলাদা থাকতে তোমাকে ফাঁকি দিয়েও কোন লাভ হবে না ঠোঁটে,গলায়,চিবুকে যে ধুসরতা কাজ করে তাতে কতনা কত সন্ধে নিষ্কাম হয়ে যায়,তাতে ছোটখাটো অনুভবগুলিকে হত্যা  করে সাধন ভজন সেই  জন্যই ফুটো নৌকা ভেসে থাকে ঝিলের মাঝে  - বাতাস ধাক্কা মারে  জল তলে,সব কিছু আবছা অথচ কত না উজ্জ্বল এর নাম সন্ধিকাল কারও ঘুম হারাম হোক তা নিশ্চয়ই কেউ চাই না,চাই না কেউ আলো বাড়িয়ে দিক  - কেন না নিজের আলোয় নিজেকেই দেখতেই চাই বরাবর 

হঠাৎ করে একটা চন্দ্রবোড়া মাঠ ছেড়ে আলপথে হাঁটতে শুরু করল ঘাসের ডগায় জোনাকি পোকা আলোর ঝিকিমিকি ছেড়ে আকাশ দেখতে চাইল সেই ফাঁকে জ্বলে উঠল কুড়ি বাইশটা টর্চ,আর বাসক বনের ফাঁক জুড়ে পেটি মাতাল দের কোলাহল চন্দন ওরফে চনা মণ্ডলের বিছানায় তার ভরাট বউয়ের সাথে মধুসূদন  - ক্লিভেজ থেকে নাক তুলে দ্যাখে সন্ত্রাসী আলো কোনো মতে প্যান্ট গেঞ্জি নিয়ে দে দৌড়  - তার পেছনে মার শালা কে, মার মালা কে, কেটে নে, কেটে নে –‘সে ব্যাচারি দৌড়তে দৌড়তে পচা পুকুরের ভিতর কচুরি পানা মাথায় চাপিয়ে নিজেই শুনতে চাইছে নিজের নিঃশ্বাস।

চনা'র চোখে রাত তার সলিড বউটার কাছে অক্ষমতাগুলি ঝিলের জলের মতো স্থির কয়েকটা পানকৌড়ি কিংবা খড় হাঁস ডুবছে ভাসছে,ঠোঁটে আটকে যাওয়া রূপোলী মাছগুলি ছটপট করতে করতে ঢুকে যাচ্ছে পেটের ভেতর জলের অগোছালো কম্পনে দ্রৌপদীর অভীপ্সায় পাড়ের টান  ছলাৎ ছলাৎ কাঁপন জলের --। বুকেরও --। মাটি ক্ষয়ে গেলে দাগ রেখে যায় এখানেও তার বেনিয়ম নেই সেই দাগে ছায়া গুড়ি মেরে বসে আছে আর চামামাছ,আসলে মধু এই চামামাছ কুড়াতে চায় আর চায় সাবিত্রীর ক্লিভেজ নাক ডুবাতে

রাতে পাহারা দেবার কোনো কারন আছে কি? যদি পাহারাদার নিজেই মদখোর,ঘুসখোর, কিংবা মেয়েখোর হয়? সে তো আড়াল খুঁজবেই,তখন প্রশ্ন আসে তাকে কে পাহারা দেবে? হলও তাই,সকালে বিশ্বরূপ গড়াগড়ি খায়,তার পাশে শুয়ে আছে মদের বোতল আর ছেঁড়া ব্লাউজ কেউ কোনো উত্তর খোঁজে না,জানতেও চায় না শুধু এক গাড়ি পুলিশ টেনে হিচঁড়ে রাতের পাহারাদারকে নিয়ে যায় সবাই জানে - ওই পর্যন্ত,তারপর একই দিন একই রাত

ধরো,তুমি ভালো নেই তোমার মন-মেজাজের কাছে যাওয়ার মত কাওকে পাচ্ছো না তাই বেজায় তিতি তিরিক্ষি। পকেটে টাকা নাই তাও আবার ভেজা। তার ওপর রাত বাড়লে শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের আইঢাই মাসটা আবার জুলাই হলে তো প্যাচপ্যাচে গরম পলেস্তরা খসা থেঁতলানো দেয়ালের গায়ে সেঁটিয়ে যে ভরাট বউটার সাথে চুনুমুনু করবে তারও কোন উপায়ই নেই  ৪৪ বছরের পুরনো  ক্বরক্বর শব্দের কাছে মেশানো গরম বাতাস যদিও বামদিক ডানদিক উদোম খোলা মোরাম রাস্তায় এ ও সাইকেলের বেল বাজিয়ে চলে যায়  - পরে পরেই অন্ধকার আরও জমে ওঠে। ফ্যাকসা কালো রঙের কাপড়গুলো সরিয়ে  গতর পর্যন্ত যেতে না যেতেই হাঁপিয়ে ওঠে কয়েকটা রাত ঘোরা পাখি যাই বলো,তোমার আমার মত কেউ না কেউ ঘামতে থাকে।  ঘামে ভেজা চিটচিটে চামড়ায়  লেপ্টানো নিম্ন মধ্যবিত্ততা একছটাক বাতাসের জন্য  লোমকূপগুলো  খালি গোঙায়। জীবন বীমা-টীমার কোনো বালাই নেই  সঞ্চয়হীন কপর্দকহীন এবং ফ্যাকাশে হাতগুলি  দেয়ালে হাতড়ায় মসৃণতা।  

এই সবের জন্য কবিতা কখনো দায়ী নয়,এমনও বলতে পারি না জোর দিয়ে আসলে এ এক অজানা ধুকপুক এই আছে এই নেই যেন বিকেলের চায়ের ধোঁয়া ঘাম দেয় আবার মাইগ্রেনও কমায়। এসব বুঝে নি মধুসূদনের বউ বুঝতেও চায় নি,সে বলতেই থাকে সাহিত্যিক কবিরা এরকম হয়ই,কেননা মধু নাকি ছিঁটে ফোঁটা কবিতা লিখতো,পাড়ার মাইকে ডি জে বাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেক্রেটারি হতো সুতরাং সব দায় ওই কবি চরিত্র কিন্তু ওই অতৃপ্ত বউও একাগ্র চিত্তে শিব ঠাকুরের ব্রত করে দুধ,জল,ডাব ঢালে শিব লিঙ্গের মাথায় জলে ভেজা শরীরে দণ্ডী কাটতে কাটতে  লেপটে দ্যায় শরীর এটাও যে ভরা কবিতা সেটা মানে না কোনো দিনই কিছু প্রশ্ন তখন উই পোকা হয়ে যায় কুরে কুরে খায় অন্তরের স্থলভাগ অদৃশ্য ছোবলে তখন টান টান স্থির ছায়াচিত্র চোখ কোনো অঘটন দেখতে চায় না, দেখতে চায়  না চালচুলোহীন আমিত্ব জাহান্নম কোনো গন্তব্য হতে পারে  না আর কবিরা কখনো জাহান্নমের মাহেন্দ্রক্ষণ চায় না ঈশ্বর সাহায্য চাইলে কবিরা পারিজাতের পথ দেখায় মাত্র যা তার রস রক্ত; কবিতা

কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই পাতা থেকে টুপ টুপ জল ঝরার,কেবল গাছের বাকল ভিজে যায় সেই জলের দাগে;কিছু রেখা অজানা অচেনা জীবনের কাছ দিয়ে শিহরণ হয়ে এগিয়ে যায়  সেই অন্তর্লীন স্রোতের নামই কবিতা যা কোনদিন সৃষ্টি করা যায় না,সে আপনা আপনিই আসে ওই যারা বাঁচতে জানে,যারা বাঁচাতে জানে,বুঝতে পারে তারাই,তাদের মাঝে বিলুপ্ত রঙের কুয়ো প্রকট হতে হতে রামধনু হয়ে যায় এ প্রচেষ্টা চিরকালীন মানুষের; তারা চুরি হওয়া আটকায়  - রাতে জোনাকি ফোটায়  - নদীর ঘোলা জলে ডুবতে থাকে স্রোতের আনন্দে;যেন নাগা ঋষি

এবার টান টান সোজা চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে  চারপাশের  খালপাড় মানুষদের স্রোত হয়ে যাবার কথা ভাবতে থাকুন এখনও যারা  উনুন করার জায়গা পায় নি,প্রবেশ করে নি কাঁপনের ভিতর তাদের  বুঝতে অনতিদূর চারপাশটাকে ঘিরে চক্কর খাচ্ছে স্বপ্ন অথবা  দুঃস্বপ্ন  সেখানে কতনা অনুভূতির ভার! ভেতরটা হয়ে ওঠে অনেক ভারি সেই ওজনেই ডুবে যাওয়ার অতিক্রম করে - ডুবে যায়।  

পতন  কোথায়,পতন শুধু রঙের জন্য,শুধু ফুলের জন্য গড়িয়ে যাচ্ছে জল এর জন্য  মাটি রাস্তা বাসক ফুলের বেড়া,আর মুগ্ধতার জন্য হে অনির্বাণ,তোমায় কেউ শিখতে পারেনি,তুমিই তোমার রাত,তুমিই তোমার,দিন,তুমিই তোমার শরীর আমরা কেবল স্বেচ্ছাচারি, প্রচণ্ড প্রলয়,  একা

লক্ষ্মী কান্ত মণ্ডল: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



1 টি মন্তব্য:

  1. খুব ভালো মুক্তগদ্য। সমস্যা শ্যাওলার মতো ভেসে থাকে - এটুকুই পাবার জন্য জীবন।

    উত্তরমুছুন