ভালবাসা



গল্প

জুহি সুন্দরী, শিক্ষিতা, বড় আদরে মানুষ হয়েছে সে। তাই বিয়েও হয়েছে বড় ঘরে। আরো একটি যোগ্যতা আছে তার -- একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের হায়ার ক্লাসের টিচার। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই জুহি বুঝতে পারে তার স্বামী মানসিক বিকারগ্রস্ত। তার কাছে যৌনতা এবং তা পূরণ হওয়ার পর জুহির ওপর শারীরিক অত্যাচার --- এটাই ছিল যশের আনন্দ, পাশবিক আনন্দ!! জুহিকে স্কুলে ঠিক ভাবে কাজ করতে দিতনা। বিকেল তিনটে বাজলেই স্কুল থেকে জুহিকে নিয়ে আসবে। অনেকদিন জুহির ক্লাস শেষ হতোনা। কিন্তু যশ টেনে হিঁচড়ে ওকে বাড়ী নিয়েই যাবে। বাড়ীতে গিয়ে সেই যন্ত্রণাময় পরিস্থিতি। জুহি  বাথরুমে ঢুকে চুপচাপ বসে থাকতো যশকে এড়াবার জন্য। তখন সে কি রুদ্রমূর্তি যশের!!! বাথরুমের দরজা বীভৎস আওয়াজ করে ঠেলত;জুহিকে এখনই বেরোতে হবে। জুহির বড় অসহায় লাগে, কান্না পায় ....প্রত‍্যেকটি বিকেল, প্রত‍্যেকটি রাত তার কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠছিল। বাড়ী তে জানিয়েছিল!! তারা এসব শুনে হতচকিত হয়ে যায়তাও বাড়ীর লোকেরা বলে  অনেক ছেলেদেরই নতুন বিয়ের পর এমন ইচ্ছা থাকা স্বাভাবিক। জুহি একটু মানিয়ে নিক। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন! এটাই স্বাভাবিক?

************************************************

রাত তিনটে! সারা পৃথিবী নিশ্চুপ  কিন্তু জুঁই কেন কাঁদে? সর্বাঙ্গে যন্ত্রণা! শরীরে অজস্র কালশিটের দাগ! এই মাঝরাতে গরম জলে স্নান করল জুঁই, যদি যন্ত্রণার অনুভূতি কমে;বড় নরম স্বভাবের, অন্যায় একদম পছন্দ করেনা, তবে ঝাঁঝালো প্রতিবাদ করতে পারেনাতাই তো স্কুলে জুঁই থেকে জুহি হয়ে গেল যখন মা স্কুলে গিয়ে জানিয়েছিলেন ওর নাম জুঁই, কিন্তু ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে ইংরেজী বলার টানে সবার কাছে জুহিই হয়ে গেল। ভালো লাগেনি, কিন্তু মেনে নিয়েছিল সেই মেনে নেওয়ার ফলেই হয়ত আজ তাকে মাসুল দিতে হচ্ছে আত্মহত্যা করার সাহসও তো হচ্ছে না নামেই বেঁচে আছে 
                  
*********************************************

আজকে ক্লাস টুয়েলভের সায়েন্স সেকশনে তুমুল ঝামেলা  রিয়া আর রাজের মধ্যে সামনেই  স্কুল ফাংশন, কিন্তু রাজ ঠিক করে প্র্যাকটিসই করছে না খালি রিয়ার সাথে ফাজলামি করছে যখন তখন রিয়াকে প্রপোজ করার আ্যাক্টিং করছে, খালি লাভবার্ডদের মত কথা বলছে! রিয়ার কাছে অসহ্য লাগে এসব! ওর মধ্যে রাজের জন্য কোনো কিছু আলাদা অনুভূতি নেই! সেটা বার বার বলা সত্ত্বেও রাজ সেই একইরকম ব্যবহার তার সাথে করে চলেছে রিয়ার ভীষণ অসহ্য লাগছিল, তাই জোরে একটা ঘুসি মেরে দিয়েছে রাজের মুখে, আর ঘুসিটা লেগেছে সোজা রাজের নাকে! একেবারে রক্তারক্তি কান্ড হেডমিস্ট্রেস রীতা সেনের ঘরে রিয়া ও জুহির ডাক পড়েছে। জুহি রিয়ার ক্লাসটিচার, তাই জুহিই সব দায়ভার নিয়ে রিয়াকে এবারের মত মাফ করার জন্য রীতাদিকে অনুরোধ করে আর রিয়াও বলে যে ওকে রাজ অকারণে বড় বিরক্ত করত এবং সেটা অনেকদিন ধরে করেই যাচ্ছিল

************************************************

জুহি রিয়াকে নিয়ে রিহার্সালরুমে গিয়ে বসে রিয়ার কাছে জানতে চায় ব্যাপারটা এত সিরিয়াস হল কি করে? রিয়া তখন  বলে কোনোরকম অনুভূতি রাজের প্রতি তার নেই কিন্তু রাজ সেটা বোঝার চেষ্টাই করতে তাইতো না। সে টমবয় টাইপের। ওসব প্রেম ট্রেম তার আসে না। আর কোনো ছেলে দেখলে  কোনোরকম কিছু ফিল সে করেনা।  তার ভালো লাগে না। তারপর রিয়া জুহিকে বলে  "ম্যাম, আপনি দিনে দিনে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছেনসেই প্রাণবন্ত, হাসিখুশী, উচ্ছল জুহি ম্যামকে কেন আমি খুঁজে পাচ্ছি না আজকাল! আমার, আমার বড্ড কষ্ট হয় ম্যাম আপনাকে এত মনমরা দেখলে আমার বড় কষ্ট হয় কি হয়েছে আপনার ম্যাম? একদিন দেখলাম স্যার আপনাকে কেমন টেনে নিয়ে যাচ্ছেন"

ওদের এই আলোচনার মাঝেই  স্কুলের গেটকিপার হাঁফাতে হাঁফাতে এসে জুহিকে বলে  যে জুহিকে যে সাহেব রোজ নিতে আসেন তিনি আজও এসেছেন;জুহিকে ডেকে দিতে বললেন শুনে জুহি যেন কেমন ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। সেটা দেখে রিয়ার মনে কেমন খটকা লাগে আর জুহিকে বলে  যে সে হঠাৎ করে এত ভয় পেয়ে গেল কেন? কিন্তু জুহি সেসব শুনলো না! পড়িমড়ি করে ছুটে বেরিয়ে গেল ...... রিয়াও ছুটলো  "ম্যাম, ম্যাম "বলে ডাকতে ডাকতে .....

***********************************************

রিয়ার ঘুম আসছে না। জুহি ম্যামের কথা মনে পড়ছে আজকের দিনে এমন হয়! বিয়ের পরে কি আমূল পরিবর্তন! পোষাকআষাকেও কেমন পরিবর্তন এসেছে! শাড়ী ছাড়া ম্যাম আর কিছু পরেন নাতাও সবসময় গায়ে আঁচল কি যেন ঢাকার চেষ্টা সব সময় বড় কষ্ট হয় রিয়ার! আজ ম্যাম যখন ওর কাঁধে হাত রাখে, রিয়ার কি যে ভালো লাগছিল! মনে হচ্ছিল হাতটিকে নিজের হাতে নিয়ে ধরেই রেখে দেয়! ভাবতে ভাবতে রিয়া নিজের মনেই হেসে ফেলেএ যেন কোনো প্রেমিক প্রেমিকার প্রেমের দৃশ্য! আস্তে আস্তে রিয়া ঘুমিয়ে পড়ে

************************************************

জুহিও যেন ধীরে ধীরে কোন বিষাদের দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ভয় ভীতি তাকে ক্রমশ গ্রাস করছেনাহলে বিকেলে যশ এসে গেছে শুনে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে অত ভয়ে দৌড়ে  বেরিয়ে আসতো না ভয় পেয়েছিল এই অপেক্ষার জন্য আজ আরও অত্যাচারের মাত্রা না বেড়ে যায় কিন্তু তা কি আর এড়ানো গেল! বড় একা, বড় একা লাগে জুহির! মা বাবাকে বলতেও তার আর ইচ্ছে করে না জুহি বুঝতে পেরেছে যশেদের বাড়ীর লোকের বিরুদ্ধে, যশের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে সে জিততে পারবে না  কারণ আজ সোজা পথে সত্যের জয় হয় না উপায় বোধহয় একটাই - নিজেকে শেষ করে ফেলা!

************************************************

রিয়া এখন খুব খুশী জুহি ম্যাম তার সঙ্গে এখন ভালো করে কথা বলে আর ম্যামের সঙ্গ রিয়ার এতো ভালো লাগে! সেই প্রথম দিন থেকে রিয়া যেন জুহির প্রেমে পড়ে গেছে সবসময় সুযোগ খুঁজতো কিভাবে ম্যামের কাছে থাকা যায় তারপর জুহির যখন বিয়ে হয়ে যায়, তখন কতদিন, কত রাত রিয়া কেঁদেছে, মনে হত ওর জীবন থেকে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি হারিয়ে গেল ম্যামের হাতটি ধরলেই রিয়ার এক অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি হয় রিয়া তার মন থেকে জুহিকে সরাতে পারে না তাই এখন যখন ও জুহির কাছে থাকতে পারছে, কথা বলতে পারছে - রিয়া যেন সুখের সাগরে ভাসছে!!

*************************************************

আজ টিফিন টাইমে জুহিকে রিয়া বলে "ম্যাম, চলুন, একটু বাগানের বেঞ্চে গিয়ে বসি। আপনার ভালো লাগবে" বলে রিয়া যেই জুহির হাত ধরে টানে জুহি " আহ " বলে চেঁচিয়ে ওঠে রিয়া তখন" সরি, সরি " বলে ওঠে  আর তখনই ওর চোখে পড়ে জুহির হাতের আঁচল সরে যাওয়া জায়গাটা;দেখে আঁৎকে ওঠে রিয়া! কনুইয়ের কাছ থেকে খানিকটা জায়গায় বড় লাল কালশিটের দাগ হয়ে আছে! ও বলে "ম্যাম, আপনি মানুষ না কি? কিভাবে সহ্য করছেন এই মারাত্মক যন্ত্রণার জীবন?" বলে নিজে কেঁদে ফেলে আর দেখে জুহিও কাঁদছে!

তখন রিয়া জুহির গালে হাত দিয়ে জল মোছাতে যায়রিয়া তখনই এক অদ্ভুত  শিহরণ অনুভব করে জুহির গালে হাত দিয়ে! এ যে এক অন্যরকম অনুভূতি! রিয়ার মনে হচ্ছে ম্যামকে জড়িয়ে ধরে আদরে ভরিয়ে দেয়, ওর সব দু:খ দূর করে দেয় আর কাছছাড়া করতেই ইচ্ছে করছে না ম্যামকে!!

***********************************************

স্কুল এক্সকারসান ট্রিপে এসে জুহি যেন এক নতুন জীবনের স্বাদ পেল;যে স্বাদ ও ভুলেই গেছিলএখন যে খালি মৃত্যুর কল্পনাই করে ও একমাত্র মৃত্যুই ওকে দেবে এই দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ। তবে রিয়া না থাকলে ও সাহসই পেতো না যশকে বলার তাও কত শর্ত মেনে পেয়েছে এই মুক্তির স্বাদ। আর রিয়া জুহির পিছনে ছায়ার মত ঘুরছে। জুহিকে আনন্দ দেওয়ার নানারকম প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে মেয়েটি সারাদিন সবাই ভীষণ মজা, আনন্দ করে কাটালো জুহির মনেই হলনা যে ও এখানে এসেছে  টিচার  হিসেবে

*************************************************

আজ অনেকদিন পর এমন একটি শান্ত, স্নিগ্ধ রাত আবার এল জুহির জীবনে জুহি শুয়ে শুয়ে ওর স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি  জীবনের কথা ভাবছে, হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল জুহি একটু ভয় পেয়ে যায়। আবার আওয়াজ হল। তখন জুহি সাহস করে দরজা খুলে দেখে রিয়া দাঁড়িয়ে আছে রিয়া বলে "ম্যাম আমার ভয় করছে ভীষণ, সুসি শুয়ে পড়েছে, আমার ঘুম আসছে নাআর আপনার ঘরের আলো জ্বলছে দেখে ম্যাম এখানে এলাম। "জুহি তখন রিয়াকে বলে যে কোনো দ্বিধা করতে হবে না, ও নিশ্চয় আসতে পারে

তারপর দুজনে জমিয়ে গল্প করতে শুরু করে রিয়া হঠাৎ জুহিকে জিজ্ঞাসা করে ম্যাম আপনি পড়াশোনা শিখেছেন, চাকরী করেন, তারপরেও এই জঘন্য জীবন মেনে নিচ্ছেন কি করে? জুহি চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর বলে সে কিছু বুঝে উঠতে উঠতেই এই যন্ত্রণার করালগ্রাসে জড়িয়ে পড়ে, আর এই নরক থেকে বেরোবার রাস্তা জানা নেই, এমন করেই একদিন মৃত্যুকে ও আপন করে নেবে

এই আলোচনার মধ্যেই রিয়া জুহিকে জিজ্ঞাসা করে জুহির হাতের সেই কালশিটের কথাজুহি এড়াতে চায় কিন্তু পারেনারিয়া জোর করে জুহির আঁচল সরিয়ে দেয় আর আঁৎকে ওঠে! দেখে  হাতে, পিঠে কি বীভৎস সব কালশিটের দাগ;রিয়া দেখে কেঁদে ফেলে আর হঠাৎ করে জুহিকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে;জুহিও রিয়াকে সরিয়ে দিতে পারে না। ওর দু:খে, কষ্টে কেউ এমন যে কষ্ট পায়নি, কেউ যে বুঝতে চাইনি।

রিয়া ও জুহি একে অপরকে আঁকড়ে ধরে! রিয়ার মধ্যে কোনো জড়তা ছিলনা, কিন্তু জুহির একটু অস্বস্তি হচ্ছিল রিয়া যখন প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরেআস্তে আস্তে রিয়া জুহির কপালে, গলায় আদর করতে থাকে জুহির ভালো লাগছে কিন্তু সহজ হতে পারছে না। রিয়া যে একটি মেয়ে কিন্তু রিয়া যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে; ও আস্তে আস্তে জুহির ঠোঁট স্পর্শ করে, জুহি বারণ করে কিন্তু ধীরে ধীরে মেনে নেয় জুহি ভাবছে একটি মেয়ে আর একটি মেয়েকে কিভাবে এমন করে দৈহিক সংস্পর্শে এসে রোমান্স করতে পারে? জুহি তো জীবনে এমনটা কল্পনা করতে পারেনি কিন্তু রিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে ও জুহির প্রেমে বিভোর! ওর স্থান কাল পাত্রের হুঁশ নেই আজ রিয়া জুহির পুরো শরীরটাকে চাইছে, স্পর্শ করতে চাইছে, আদর করতে চাইছে! যেনো এমন সাথীই খুঁজছিলো রিয়া!  জুহি ভাবছে রিয়া কি আর পাঁচটা মেয়ের মতই স্বাভাবিক?

***********************************************

ভোরের মৃদু, নরম আলোর হাল্কা রশ্মি জুহির মুখে এসে পড়াতে জুহির ঘুম ভেঙে যায় বিছানা ছেড়ে জুহি ওঠেনা পাশ ফিরে রিয়াকে দেখতে থাকে! কত মিষ্টি, সরল লাগছে মেয়েটাকে! কিন্তু কাল রাতে যা হল! দুটি মেয়ে এমনভাবে দৈহিক, মানসিক ভাবে এক হয়ে গেল কি করে?

রিয়ার আদর, স্পর্শ - সব কিছু তো ওর স্বামীর কাছে আশা করেছিল!  জুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারপর আস্তে আস্তে উঠে বাথরুমে যায় স্নান করতে আজ স্নান করতে গিয়ে হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়েজুহি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেনা; ওর মুখে কেমন একটা প্রশান্তি, উজ্জ্বল ভাব যেন ধরা পড়েছে।। নিজেকে বিভোর হয়ে দেখতেই থাকে এমন সময় বাথরুমের দরজায় জোরে ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজে জুহি ভয়ে চমকে ওঠে, তারপরই ধাতস্থ হয়ভাবে রিয়াই হবে। কল বন্ধ করে রিয়াকে বলে যে ও স্নান করতে গেছে, একটু পরেই বেরোচ্ছে রিয়া বলে "আচ্ছা, এত সকালেই স্নান!"

************************************************

ব্রেকফাস্টের পরে সবাই আজ কাছেই একটি হাট বসে সেখানে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে ঘরে চলে যায় রিয়া জুহির সাথে ওর ঘরে চলে আসে আর জুহিকে বলে কাল রাতের ওই ব্যবহারের জন্য  সে দু:খিত জুহিও বলে সেও  রিয়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না দুজনে কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারে না তারপর রিয়াই শুরু করে, বলে  যে সে কোনো ছেলের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেনা  ও বরাবরই মেয়ে বন্ধুদের সাথেই থাকতে পছন্দ করত যদিও সে এই কো এডুকেশন স্কুলেই বরাবর পড়ে এসেছে, অনেক ছেলেই ওর সাথে প্রেম করতে চাইত কিন্তু ওর অসহ্য লাগত একটি মেয়ে বন্ধুকে ও খুব ভালবাসতো কিন্তু মেয়েটির বাবা অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেলে মেয়েটির সাথে রিয়ার যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়তারপর আস্তে আস্তে যখন রিয়া পরিস্থিতির সাথে নিজেকে সামলে তুলছে তখনই জুহি টিচার  হয়ে ওদের স্কুলে আসে; আবার রিয়া কেমন করে যেন জুহিকে পছন্দ করতে, ভালবাসতো শুরু করে রিয়ার মুখে সব শোনার পর জুহি বলে এটা তো কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, রিয়া একটি মেয়ে, ওর তো ছেলেদের প্রতিই আকর্ষণ থাকা উচিত তারপর একটু দ্বিধান্বিত হয়ে রিয়াকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে যে রিয়া কি জানে ওর মত চিন্তাধারার মানুষদের সমাজ সহজে মেনে নেয়না

রিয়া গম্ভীর মুখে বলে সে জানে সে কি  - সে সমকামী! তার জন্য রিয়া কোনো লজ্জাবোধ করেনা সে তো কোনো অপরাধ করেনি তার মানসিক গতিপথ যেমন সে তেমন ভাবেই চলছে! জুহিকে বলে যে জুহির স্বামী যে রোজ তার ওপর অত্যাচার করছে তাতে সমাজ কি বলছে? কি সাহায্য করেছে সমাজ জুহিকে? রোজ রোজ কি দুর্বিষহ যন্ত্রণার মাঝে জীবন কাটাচ্ছে জুহি; কেউ চেষ্টা করেছে বা চিন্তা করেছে জুহির সুখের কথা? ধীরে ধীরে রিয়া উত্তেজিত হয়ে পড়ে  আর জুহিকে ধরে ভীষণ জোরে ঝাঁকিয়ে দেয় আর বলে "কাল তুমি খুশী হওনি, কিছুক্ষণের জন্যও নিজের জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলি ভুলে যাওনি? তুমি তো স্বাভাবিক মানুষ! তাহলে তোমার কি করে ভালো লেগেছিল আমার আদর? উত্তর আছে কিছু তোমার কাছে? ভালবাসা লিঙ্গ ভেদ জানে না  শুধুই ভালবাসতে জানে...জুহি ভাবে রিয়ার কথায় তো কোনো ভুল নেই

************************************************

জুহির বাড়ী ফিরতেই ইচ্ছে করছে না  সেই তো বিভীষিকাময় জীবন আবার ট্যাক্সি থেকে নেমেই বারান্দায় জুহির চোখ পড়ে, দেখে যশ রকিং চেয়ারে বসে চেয়ারটাকে কি ভীষণ জোরে দোলাচ্ছে! জুহি বুঝতে পারে তার ওপর কি মারাত্মক ঝড় আসতে চলেছে! আজ  জুহি রুখে দাঁড়াবেইজুহি আর ভয় পায়না,  সে জানে রিয়া তার সাথে আছে

**সমাপ্ত**

শর্মিষ্ঠা ভৌমিককপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন