রম্যরচনা
মা
ভাবেন আমি খুব লিখছি। উনি জানেন না আমি আসলে চিনির বস্তা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা,অলস একটি পিঁপড়ে। যাই হোক আমি
এই সুযোগ ছাড়ব কেন? আমিও
বেশ গম্ভীর হয়ে বক্তব্য দিই।‘চৈতন্যচরিতামৃত’ হাতে ধরে বলেন,“তুই শ্রী চৈতন্যদেব কে
নিয়ে কিছু লেখ না।” আমি
ভেতরে ভেতরে ল্যাজ গুটিয়ে ফেলেছি,কিন্তু দেখালাম না। “মা গো ঐ ব্যাপার টা বোল না।
চৈতন্যদেবের কথা মনে পড়লেই কেন কি জানি বিষ্ণুপ্রিয়ার কথা মনে হয়। খুব কষ্ট হয়। “মার চোখে জল। এই সব
সেন্টু দিয়ে পালিয়ে এলাম। আমি যে তাঁর ব্যাপারে কিছু জানি না। কিন্তু মধ্যে রাতে
খুব লজ্জা হল। অতএব কলির সেই ত্রাতার কাছে স্মরণাগত। মানে হোয়াটস্ আপ। আমাদের “যা খুশি তাই করি” গ্রুপ।
-চৈতন্যদেবের বউ সমন্ধে
আমাকে একটু জানাবে-বাসনা দি?
তার
নিচে কেউ এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর গুণগান দিয়ে পোস্টার পোস্ট করেছে। যাকে জিজ্ঞাসা
করলাম তিনি টাইপ করছেন। করেই চলেছেন। এর মধ্যে একজন খুব মিষ্টি হাসির ইমোজি দিয়ে
পোস্ট করল কেউ। বাসনা দি টাইপ করছে। এবার সেটা প্রকাশিত হল। “বিষ্ণুপ্রিয়া?”(এতক্ষণ ধরে টাইপ করে
একটা শব্দ । কিছু পাওয়া যাবে কিনা কে জানে)
“হ্যাঁ গো... একটু জানাও”
“আমার একটা বই আছে । পড়ে
নে না বাপু।
-“কি নাম?”
-
“অদৃশ্য
আলোকে ঝলমলে সেই মেয়েরা”দাম ২৫০ টাকা... প্রমিনেন্ট পাবলিশার।”
মনটা
দমে গেল। আবার ২৫০ টাকা ধ্বসে যাবে।
এর
মধ্যে অর্পিতার পাউট করা মুখের ছবি। “আমি চুল কাটলাম। খুব ইচ্ছে ছিল স্কিন হেড হবার। বর বারণ
করেছে।
”থরে থরে
লাভ সাইন,
চুমু, লুকিং গর্জাস হতে
লাগলো। আমার বিষ্ণুপ্রিয়া মধ্যে থেকে অদৃশ্য প্রায়। তারমধ্যে করবী হঠাৎ আমার
প্রশ্ন টার সাথে একটা হোহো হাসিওয়ালা ইমোজি পোস্ট করে। ছোট্ট মতন খিস্তি দিয়ে
লিখলাম,“হাসলি কেন?”করবী লেখে-“ নিমাই দার বউ কে নিয়ে
কিসের খোঁজ বে?”
বাসনা দি
টাইপিং। এরমধ্যে অন্যরাও সজাগ হয়েছে। অনেকেই চৈতন্যদেবের প্রতি হাতজোড় ইমোজি দিতে
শুরু করেছে। তার মধ্যে কেউ কেউ
-“হাউ স্যাড লাইফ”
-“অমন সুন্দরী আর অমন
সুন্দর হাসব্যান্ড। কিন্তু কেবল হরেকৃষ্ণ করবে বলে চলে গেল।”
-“এই নিবু ইস্কনে একদিন
চলে যা। সব পেয়ে যাবি। আর ওদের সাহেব সাধু গুলো কি হ্যানসাম্। আমার তো দারুউন
লাগে।”
বাসনা
দি টাইপিং। করবী লিখল, “কেষ্টকাকু
রাধা কে লেঙ্গি দিয়েছে,বুদ্ধদাদু আর আরও বুড়ো দাদু রাম সেও তো বউ ছেড়ে তাপ্পর
মহাপুরুষ হয়েছে বে! আমার নিমাই দার বেলায় দোষ দেখিস ক্যান। মহামানবী হতে বর ছাড়তে
হবে। যতসব আকাট রিলিজিয়াস ব্যাপার। তাই নিয়ে আবার ভাবনা চিন্তা।” বাসনা দি টাইপিং। অর্পিতা
এর মধ্যে দেখালো চুল কাটার সাথে পেডিকিওর ফ্রি। অবশেষে বাসনা দির লেখা সামনে এল। “দ্যাখ তোরা লেখাপড়া
শিখেছিস। যথেষ্ট বুঝিস। সব কিছু নিয়ে ঠাট্টা নয়। বিষ্ণুপ্রিয়া অবতারের স্ত্রী।
তিনি যথেষ্ট আধ্যাত্মিক শক্তির আধার। রাধা যেমন হ্লাদিনী শক্তি তেমনি। এতো পবিত্র
যে তাঁর মৃত্যুর পর দেহ পাওয়া যায়নি, ফুল হয়ে গিয়েছিল।”করবী রেকর্ডিং। “বলি ও বাসনা দি
বিষ্ণুপ্রিয়াদি কে নিয়ে নিমাইদা নীলাচলে
নিয়ে যেতে পারত তো। অসুবিধার কি ছিল? দুজনে মিলে ‘হরেকিস্ন’ করতো। রামকৃষ্ণ জেঠু তো সারদা জেঠিকে নিয়ে দিব্যি ছিল।
ষণ্ডাগণ্ডা বেশ কিছু সন্ন্যাসীরা মাকে যথেষ্ট যত্ন করেছে।” আমি অনেকক্ষণ কিছু বলতে পারছি
না। রেকর্ডিং করলাম, “আচ্ছা
তুই এমন কেন রে করবী। বড্ড সন্দেহ তোর । চৈতন্যদেবের তো মায়ের প্রতিও কর্তব্য আছে।
শচীমা একা থাকবে বুঝি? বিষ্ণুপ্রিয়া
ছাড়া কে দেখবে। অবতার হলেও তার কর্তব্য আছে তো?” খ্যাক খ্যাক হাসির ইমোজি দিতে
থাকে করবী। অর্পিতা জানাল,সস্তায় লিপ্স্টিক পাওয়া যাচ্ছে। অরেঞ্জ আর ডিপ গোলাপি
এবার পুজোতে ইন। বাসনা দি রেকর্ডিং। “ওরে ভগবানের লীলা আমরা
কি বুঝব?
সারা
পৃথিবীর মানুষ যাকে দুঃখের সময় স্মরণ করবে তাঁকে কি আর সামান্য সাংসারিক বন্ধনে
বেঁধে রাখা যায়?
উনি সব
বন্ধন ত্যাগ করেছেন পাপীদের রক্ষা করতে।”করবী রেকর্ডিং,“এহ্ উদ্ধার করেছেন। বিষ্ণুপ্রিয়াকে স্বাধীন করে দিয়ে
পারতেন। বিয়ে করারই কি দরকার ছিল। উনি তো প্রচুর ভক্তদের সাথে ‘হরেকৃষ্ণ’ গেয়ে নেচে বেশ যশ পেলেন
আনন্দও পেলেন। এর উল্টো দিকে বেচারি বিষ্ণুপ্রিয়া। বদ্ধজীবন তাঁর? না আছে আনন্দ। না আছে
জীবনের কোন মানে। অপেক্ষা করতে হবে। আবার ভালো বাসতেও হবে। যত আবদার। অসহ্য”। অর্পিতা রেকর্ডিং,“এই শোন না তোরা এতক্ষণ
ধরে কি সব বলছিস রে আমি না শুনছিলাম না। সরি রে। শোন না করবী,দ্যাখ রাগ করিস না।
বাড়িতে হাবিরা বেশিক্ষন না থাকাই ভালো। উহ্ বড্ড কাজ বেড়ে যায়। ঐ বাইরে থাকবে মাঝে মাঝে
আসবে। ওটাই ভালো। তারপর ব্যাপারটা
দ্যাখ উনি সারাদিন হরেকৃষ্ণ করবেন। খুব বিরক্তিকর। এইসব যারা করে তারা কোন কাজ
কর্ম করে না। সেই সব ব্যাপার গুলো চাপের। তার মধ্যে আবার সেন্সলেস হয় মাঝে মাঝে।
কি চাপ। সো আমার যেটা মনে হয়,এক সাথে থাকার চাইতে দূরে থাকা ভালো। রোজ রান্না করার
ঝামেলাটা নেই। একা একটু কার্ডরাইস বা ফ্রুটস্ খেলেই চলে যাবে।”
বাসনা
দি টাইপিং। করবী রেকর্ডিং। আমার ফোন পিক্পিক্।
[
ফোন হ্যাং
করে যাওয়ায় আমি এরপরের বক্তব্য জানি না ]
নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত:কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন