রম্যরচনা
বিছানায়
পাশ ফিরতে ফিরতে সতীনাথ
বলে,ওঃ আর পারছি না।ভগবান আর কেন? এবার তুলে নাও! ঘরের
মধ্যে আলনায় কাপড় রাখছিল কমলা। শুনেই ফোঁস করে, কেন তুলে নেবার কথা কেন? সব সখ মিটে গিয়েছে বুঝি? সতীনাথ ব্যাজার মুখে
বলে, সব সখ কি কারো মেটে? তাহলে তো সব হয়েই যেতো !
-- কিসের কি হয়ে যেত?
-- ঐ যে গীতায় বলেছে না,বাসাংসি জীর্ণানি
.........মানে পুরাতন বস্ত্র ত্যাগের মতো আত্মাও এক দেহ ছেড়ে
অন্য দেহে আশ্রয় নেয়।
-- তাতে কি হলো?
সতীনাথ
সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে,কিছুই হয়নি। ঐ যে বললে না সব সখ মিটে গিয়েছে। আলনা থেকে সরে এসে
কমলা বলে,বলবো না? ছ্যাঃ ছ্যাঃ ছ্যাঃ
......তোমার জন্যে লোকের কাছে মুখ দেখাতেও লজ্জা করছে আমার। বলি ভীমরতি...... ভীমরতি একেই বলে। ষাট বছরের
বুড়ো উনি কিনা
আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতো সেলফি
তুলতে গিয়েছেন?
--
না না, বুড়ো বোলো না, বুড়ো বোলো না
-- নাহ বুড়ো বলবো না ! ষাট বছরের লোককে বুড়ো বলবো না তো কি ছুঁড়ো বলব?
-- বয়েসটা নিয়ে তুমি বরাবরই আমায়
খোঁটা দাও। তোমার মুখেই শুনেছি তোমার মাও নাকি আমার বয়েস নিয়ে বলতেন !
--
বলতেনই
তো। যেটা সত্যি কথা সেটা বলতে তো লজ্জা নেই।
আড়
চোখে কমলাকে দেখে বলে,সে
তিনি বলতেই পারেন। তবে সব সত্যিটাই সত্যি নয়।
-- তার মানে?
--
মানে
এই যে আমি ষাট বছরের একটা মানুষ হতে পারি কিন্তু আমি মনে মনে
ভাবি আমি আটাশ।
-- তা ভাববে না, আটাশ কেন একেবারে আঠারো ভাবো না !
--
না
না সেটা হবে না তাহলে আন্ডার এজ হয়ে
কেস খেয়ে যাবো
যে!
--
আচ্ছা
সত্যি তোমার লজ্জা হয় না?
--
কিসের
লজ্জা?
--এই বয়েসে এসে তুমি এখনো এসব কথা
বল। বয়েস হয়েছে কোথায় সেই রকম আচরণ করবে তা নয়............
সতীনাথ গলাটাকে একটু খাদে নামিয়ে বলে,কিন্তু আমি যে তা
পারিনা কমলা! আমার ভেতর থেকে কে যেন বলে, ওরে তুই এখনো নওযোয়ান............... তুই
চালিয়ে যা।
--
আর
সেই চালিয়ে যেতে গিয়ে বাড়ীশুদ্ধু লোকেদের যে জ্বালিয়ে দিচ্ছ তার বেলা?
কমলার
চোখে চোখ রেখে সতীনাথ বলে,আমি কি আর ইচ্ছে
করে করি?কমলা চোখ পাকিয়ে বলে,আবার বাজে কথা বলছ! ইচ্ছে করে
নয়? তোমার বয়েসী কোন লোকটা
সেলফি তুলতে যাচ্ছে একবার
বল দেখি? ছিঃ ছিঃ ছিঃ। বড় খোকা কথাটা শুনেই জানতে চাইলো,কি করে হল মা? তাকে তখন কি করে বলি যে তোর বাবা সেলফি তুলতে গিয়ে আছাড় খেয়েছে!
মিথ্যে করে বললাম,ঐ
টবের গাছে জল দিতে গিয়ে পা স্লিপ করে পড়েছে।
--
তখন
বড় খোকা কি বললে?
-- বলবে আবার কি,আমাকেই দোষারোপ করে
বললে মা তোমরা এই বয়েসে বাবাকে এসব করতে দাও কেন?
আমি দোষের ভাগী হলাম।
সতীনাথ
মোলায়েম করে বলে,সে নাহয় স্বামীর জন্যে প্লট
একটু এদিক ওদিক করেই দিলে ............।।
-- একটু? সেই বিয়ের পর থেকেই
তুমি একটা না একটা অঘটন ঘটিয়েছ আর
আমাকেই সেই হ্যাপা সামলাতে হয়েছে। এবার সতীনাথ
কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বলে,আসলে আমার যে সিংহ রাশি। আমি এ্যাডভেঞ্চার
ভালোবাসিসব সময় মনের মধ্যে একটা
এ্যাডভেঞ্চারের টাট্টু ঘোড়া
টগবগ টগবগ করে ছুটেই চলেছে। মাঝে মাঝে তাকে বলি,আরে থাম থাম। অনেক
হয়েছে আর না ......কিন্তু কে কার কথা শোনে!
একটু দম নিয়েই আবার ছুট ছুট ছুট।
--এই সব আদিখ্যেতার কথা বোলো না তো,শুনলে পিত্তি জ্বলে
যায়! টাট্টু ঘোড়া ছোটাচ্ছে ...... এবার টাট্টু ঘোড়ার পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে ঘরে
ফেলে রাখবো।
--ইসস ! অমন কথা বলে না,আমি না তোমার স্বামী। তোমার ধর্ম হল আমায়
সাহচর্য দেওয়া,উৎসাহ দেওয়া!
--ছোট বৌমা
ঠিকই বলে।
--কি বলে তোমার ছোট বৌমা?
--যেটা সত্যি সেটাই বলে!
বিছানায়
একটা চাপড় মেরে সতীনাথ বলে,হ্যাঁ সেই সত্যিটাই আমি শুনতে চাই। বল্............
--কেন শুনে গিয়ে তার সঙ্গে ঝগড়া করবে?
--ঝগড়া! আজ পর্যন্ত
এই সতীনাথ কারুর সঙ্গে ঝগড়া করেছে? আমি সে ছোকরা নই।
কমলা
মুখটা ভেঙ্গিয়ে বলে,উঁ, ছোকরা! ষাট বছরের ছোকরা!
সতীনাথ
উকিলের ভঙ্গিতে বলে,কাম টু দা
পয়েন্ট! আসল কথায় এসো। কি বলে ছোট বৌমা সেটাই বল।
-- বলে বাবাকে একবার কোন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো
দরকার।
তড়াক
করে পাশ ফিরে বলে,কি
সাইকিয়াট্রিস্ট?
কেন আমি
কি পাগল?
--তোমার কার্যকলাপ তো সেটাই বলে। এই সেদিন পেয়ারা পাড়তে
পাশের ঘোষবাবুদের পাঁচিলে উঠলে।
--আহা পেয়ারাগুলো পেকে গিয়ে পাখিতে খাচ্ছিলো। তাছাড়া সেগুলো বেশ
উঁচুতে ছিল তাইতো
পাঁচিলে
উঠেছিলাম।
--আচ্ছা বেশ তাও না হয় মানলাম। তারপর তুমি কি করলে? পেয়ারা পেড়ে ওই অতো উঁচু পাঁচিল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিচে নামলে। পড়েই মাটিতে গড়াগড়ি
----ডাক্তার বলল লিগামেন্ট ছিঁড়েছে। পাক্কা সাত হাজার খরচ করালে! ওই
টাকায় তো আরব থেকে পেয়ারা আনিয়ে নেওয়া যেতো।
হেসে উঠে সতীনাথ বলে,ভুল বললে। আরবে খেজুর হয় বটে পেয়ারা হয়না। সে
যাকগে......আসল কথা কি জান ...আসল কথা হল
কনফিডেন্স। সেদিন ঐ কনফিডেন্স এর সঙ্গে
শরীরটা তাল মেলাতে পারলো না...এক্সিডেন্ট হয়ে গেল।
--এমন এক্সিডেন্ট তুমি বছরে কটা
করে ঘটাচ্ছ বলতো? সেই
বিয়ের পর থেকেই দেখছি! শাশুড়ি মা বলতেন,সতীনাথ আমার বরাবরই ডাকাবুকো! কিন্তু তারও তো একটা
সীমারেখা আছে,শেষ আছে? নাকি এমনি করে চলতেই
থাকবে ...চলতেই থাকবে! বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে
কোন ঝামেলা নেই অথচ তোমাকে নিয়েই
সবাই ব্যতিব্যস্ত! আমার লজ্জা করেনা বুঝি? যখন আশপাশের লোক পাড়ার লোক জানতে চায় কি করে এমন হোলো
গো ............আমায় তখন গল্প ফাঁদতে
হয়,মিথ্যে বলতে হয়! বলতে
বলতে গলার স্বর ভারী হয়ে আসে কমলার। তার মুখের দিকে তাকিয়ে
সতীনাথ আর্দ্র কণ্ঠে বলে,আমাকে নিয়ে তোমার অনেক জ্বালা তাইনা কমলা? একটু নিবিড় হয়ে আসে
কমলা। বলে,দ্যাখো
অমন করে বোলোনা। তুমি আমার স্বামী। চিরকাল
আত্মীয় স্বজনের মধ্যে তোমাকে নিয়েই আমার গর্ব .........সব কাজে তুমিই এগিয়েছ চিরদিন ............ তাই সকলেই তোমাকে ভরসা করে ...... আমি জানি .........আমিও মনে
মনে গর্ব অনুভব করতাম। আমার বান্ধবীদের
স্বামীদের দেখতাম তো,পঞ্চান্ন
পেরিয়েই কেমন ম্যাদামারা হয়ে গিয়েছে কিন্তু তুমি .........সেই আগেকার মতোই ......
কিন্তু কি জানোতো, সব কিছুরই একটা শেষ থাকা দরকার .........রুপু টুমকাইদের এখন যেটা মানায়,তোমার কি সেটা করা
মানায়?
ওরা
নানারকম ছবি তুলে বন্ধুবান্ধবদের দেখিয়ে মজা করে তাই বলে কি সেটা তোমায় মানায়? তুমি ও ছবি কাকে দেখাবে
বল? সতীনাথ লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলে,কাকে আর দেখাবো? আমার আর দেখাবার কে আছে? তোমাকেই দেখাতাম।
স্বর নরম করে কমলা বলে,কেন ঐ ছবি না দেখলে আমি
কি তোমার
বিষয়ে কিছু জানতাম না বুঝি? তুমি কেমন মানুষ
সেটা আমার থেকে কে আর ভালো জানে বল? বয়স হয়েছে এটা মেনে নাও। অকারণ বায়না তোমার !
--কিসের বায়না?
--বারে! বায়না নয়? তুমি সনটুকে বললে কি না স্মার্ট
ফোন চাই। এই বয়েসে তুমি ওইসব ফোন নিয়ে কি করবে? তোমার একটা সাধারণ ফোন হলেই
হোলো। নয় নয় করেও তো তোমার দুটো ফোন আছে।তা ছাড়াও আবার এই ফোনটা
পনেরো হাজার টাকায় কিনলে!
--সে তো আমার নিজের টাকায় কিনেছি। কারুর কাছে তো হাত
পাতিনি!
--হাত পাতার কথা হচ্ছেনা। কি দরকার ছিল ওটা কেনার? আর ঐ ফোনে সেলফি তুলতে
গিয়েই তো এই কাণ্ডটা ঘটালে। যদি আরও বড় অঘটন হতো?
--কি হোতো
সেটা ভেবে আর কি হবে। তা সনটু বললে বড় খোকা নাকি আসবে বলেছে?
--সেই রকমই তো বলেছে।আর তাতেই তো আমি
চিন্তায় পড়েছি। ফোনে না হয় যেমন তেমন একটা বুঝিয়েছি কিন্তু বাড়ি এলেই তো সবাই বলবে তুমি রোজ-ডে তে
গোলাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়েই এমন কাণ্ড করেছো। ছিঃ ছিঃ আমি তো এখন থেকেই
বড় খোকার মুখটা ভেবে লজ্জায় মরে যাচ্ছি!ছোট বৌমা তো হেসে হেসে বলল ---- বাবা বোধহয়
আবার প্রেমে পড়েছেন না হলে রোজ-ডে তে গোলাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে যাবেন কেন? ভাবো তো!
রেগে ওঠে সতীনাথ। বলে,ছোট বৌমাটা একটা এঁচোড়ে
পাকা মেয়ে। আমি তখনই তোমায় বলেছিলাম ......ঐ মেয়ে এ বাড়ীতে আনফিট। তখন তো তোমরা আমার
কথাকে পাত্তাই দাও নি! কমলা চোখে চোখ রেখে বলে,কেন সে খারাপটা কি? ব্যাঙ্কের
অফিসার.........দেখতে সুন্দর ......সবাইয়ের
সঙ্গে হেসে কথা বলে,সম্মান করে। আর কি চাই? ও.........
তোমার
সমালোচনা করলেই খারাপ তাইনা?
--ইয়াং মেয়ে............ মনে একটুও এ্যাডভেঞ্চার নেই
............ব্যাংকে সুদের হিসেব করে করেই এমন হয়েছে! গজ গজ করতে থাকে সতীনাথ। মেয়ে দেখতে গিয়ে ওর বাবাকে দেখেই আমি বুঝেছিলাম। তিনি নাকি দিনরাত্তির বই এর
মধ্যেই ডুবে থাকেন। আরে বাবা,বই এর মধ্যে ডুবে থাকা তো সহজ। কোন রকম নড়াচড়া নেই।
দিব্যি
আরাম চেয়ারে পাখার তলায় বসে ডুবে থাকা। কিন্তু আমি,এই সতীনাথ সান্যাল। একেবারে বাঘের বাচ্চা! ডুব
দিতে হলে একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরেই দেব,শুকনো বই এর পাতার মধ্যে নয়।
---এই হম্বিতম্বিটা এবার একটু কমাও।
বয়েস
হয়েছে!
---খবরদার,খবরদার বলছি বার বার বয়েস হয়েছে বয়েস হয়েছে বলে আমার
পালস ডাউন করে দিওনা। স্ত্রী হিসেবে কোথায় স্বামীকে সব সময় চাঙ্গা রাখবে তা
নয়,সুযোগ পেলেই মিটার ডাউন
করে দেবার ফন্দি!
কমলা
চোখ পাকিয়ে বলে,আবার সেই উল্টোপাল্টা
রকের ভাষা বের করছ?
----রকের ভাষা? শোন, এই আমি সতীনাথ সান্যাল
কোনদিন কারুর রকে বসিনি।
----বসতে পারবেও না, তোমার তো ক্ষুর লাগানো
আছে,সুস্থির হয়ে বসতে তুমি
জান?
---সেটা নিজের বিবেক কে
প্রশ্ন করো। সুস্থির হয়ে বসেই দীর্ঘ আড়াই ঘনটা ধরে মন্ত্র পড়ে তোমায় বিয়ে করেছিলাম।মনে আছে?
কমলা মুখটা বেঁকিয়ে বলে,থামো,এটা সবাই করে। এটা কি মনে রাখার মতো
কথা? পাঁচজনকে এই কথা বললে
তারা তোমাকেই পাগল বলবে ।কি না স্থির হয়ে বসে উনি বিয়ে করেছেন! আরে বাবা স্থির
হয়ে না বসে লোকে কি ঘোড়ায় চেপে ছুটতে
ছুটতে বিয়ে করে?
পাগল পাগল,তুমি দিন দিন পাগলই হয়ে
যাচ্ছ!
মাথা
নাড়তে নাড়তে সতীনাথ বলে,বুঝেছি। তোমার মতলব বুঝতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হচ্ছেনা।আমাকে পাগল প্রতিপন্ন করে তোমাদের মতামত দিয়ে আমাকে জব্দ করতে চাও তো? সেটি হচ্ছে না।
---আস্তে কথা বলো। অনেক রাত হয়েছে বৌমারা
সব শুনতে পাবে।
---পাক শুনতে। আমি তো আর লভ সিন প্লে করছি না।
বাস্তব
পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি।
---সেটা তুমি করছ না,সেটা করছি আমি। কতদিন বলেছি বয়েস
হয়েছে একটু আধটু ফুলগাছ লাগাও,গাছের পরিচর্চা
করো,যেটা এই বয়েসে মানায়
সেটাই করো। তা নয় শুধু
বারফাট্টাই হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা। এই বয়েসে তুমি যদি এমন করো তাহলে টুমকাইরা কি করবে? ষাট বছরের বুড়ো বারো
বছরের নাতি নাতনিদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছ?
---হ্যাঁ দিচ্ছি। ঐ একটা গান আছে না
.........কি যেন ......... ও
হ্যাঁ......বয়েস বাড়ে বাড়ুক তবু মনের বয়েস বাড়তে দিও না।
-------আমারই ভুল হয়েছে তোমার সঙ্গে কথা বলা।
আমি চললাম।
----
চললে মানে? আমার সঙ্গে বসে দুদণ্ড
কথা বলতেও কি ইচ্ছে করে না তোমার?
ঘুরে
দাঁড়িয়ে কমলা বলে,কথা
বলা মানেই তো ঝগড়া করা আর আলতু ফালতু কথা শোনা! আমার দরকার নেই।তুমি যেমন আছ তেমনি
থাকবে এটা বেশ বুঝতে পারছি। বেশ আসুক বড় খোকা -------
--আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি
...... আমার দাদু নলিনাক্ষ সান্যাল বাঘের লেজ টেনে ধরেছিল আর সেই বংশের
ছেলেরা কেন এমন হল। আজ বুঝতে পারছি তোমার মতো মায়ের জন্যেই ছেলে দুটো অমন ম্যাদা
মারা ভীতু হয়েছে। আর সেই জন্যেই চেয়েছিলাম
ছেলেদের জন্যে দুটো চাবুক বৌমা আনবো যাতে
তারা এই বংশের গাধা দুটোকে পিটিয়ে ঘোড়া করতে পারে। কিন্তু দ্যাখো কি
চাইলাম আর কি হল! ডেঁপো বৌমা সাহসী
শ্বশুরের পিছনে সাইকিয়াট্রিস্ট লেলিয়ে দিচ্ছে!
কমলা
সতীনাথের সমনে এসে আঙুল তুলে বলে, বাজে কথা বলবে না। পাড়ার সবাই এমনকি আমাদের সব
আত্মীয়রা পর্যন্ত বৌমাদের প্রশংসা করে।
---ওটাই কি জীবনের সব? এ্যাডভেঞ্চার না থাকলে জীবনে আর থাকলো কি? এই সেবার তোমরা
চারদিনের জন্যে দীঘা গেলে ............ছোট বৌমা আমাকে পাখীপড়া করে পড়িয়ে গেল
ফ্রিজের এই তাকে এই আছে ঐ তাকে সেই আছে ...... এটা আজ ওটা কাল ............
একেবারে যেন ডাক্তারের পথ্যি!
---তবেই ভাবো সে তোমার কথা কতো ভাবে?ভাবে বলেই তো এতো
বন্দোবস্ত!
--- বন্দোবস্ত না ছাই!একটা মানুষ একা বাড়ীতে থাকবে
তার অমন ফাঁসির খাবারের আয়োজন কিসের?
---- তুমি একা থাকবে বলেই তো করা।
... কেন বাজারে রেডিমেড খাবার পাওয়া যায় না বুঝি? এইতো বাড়ির পাশেই আরসালানের
বিরিয়ানি হচ্ছে......খানা খাজানায় কত রকমের খাবার......। চিন্তা আছে?
মাথা নেড়ে কমলা বলে,ও ...।ওইসব খাবার খেয়ে
একটা কাণ্ড হলে? গ্যাস ট্যাস হলে কে দেখত শুনি? তোমার ভালো করতে নেই। বুঝেছি তুমি বদলাবে না। তুমি চিরকাল আমাকে
লোকের মধ্যে ছোট করবে ...... অপদস্থ করবে। বলতে বলতে কমলা ঝর ঝর করে
কেঁদে ফেলে।সতীনাথ অপ্রস্তুত হয়ে যায়।
মুখে অমন হম্বিতম্বি করলেও মনে মনে চিরকাল কমলাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালবেসেছে। কমলার কাছে এসে দাঁড়ায়। একটা হাত কমলার পিঠে
রাখে।হাতটা পিঠে বোলাতে বোলাতে বলে, আমি তোমায় অপদস্থ করি,ছোট করি ...তাই না? আমি বুঝি তুমি সব সময়
আমায় নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকো পাছে কি না অঘটন
ঘটাই............ বেশ, তমি
যা বলছ এবার থেকে তাই হবে। অশ্রুভরা চোখে কমলা সতীনাথের মুখের দিকে তাকায়। আজ যেন নতুন করে সেই সেদিনের সতীনাথ কে ফিরে পায়। হাতটা তুলে সতীনাথের চিবুকটা তুলে ধরে। আহা লোকটার চোখে যেন সব
হারানোর দৈন্যতা! ধীরে ধীরে বলে,আমি যেটা বলছি সেটা তুমি একটু বোঝো। নিজের বয়েসটাকে অন্ততঃ
মান্যতা দাও!
--- অমনভাবে থাকলে কিন্তু আমি আর বেশি দিন বাঁচব না
কমলা।
আরও
নিবিড় করে কাছে টানে কমলা। বলে,কেন ভাবছ অমন কথা?আমরা তো সবাই তোমার
সঙ্গেই আছি। শুধু তুমি একটু শান্ত হও। মনে ভাবতে শেখো চঞ্চলতার যুগটা তুমি পেরিয়ে এসেছ।
কমলার চোখে চোখ রেখে সতীনাথ বলে,তাই না? সত্যিই তো
চঞ্চলতার যুগটা আমি পেরিয়ে এসেছি। এবার নতুনদের জায়গা ছেড়ে দেবার
পালা। বেশ তাই হবে ......তোমাদের আর চিন্তায় রাখব না কথা দিলাম। কমলা তার বুকে পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,ভুল বুঝ না লক্ষীটি .........আমি জানি তোমার এটা মানতে
খুব কষ্ট হচ্ছে.........কিন্তু এটাই সত্যি
...............এটাই যুগের ধর্ম ..................তাকে তো মানতেই হবে.........।
তুমি এবার ঘুমাও......আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি.........ঘুমাও।
জয়ন্ত বাগচী:কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন