লীলাখেলা



রম্যরচনা


ঈশ্বরের ভেতরে ঢুকেই দিল খুশ হয়ে গ্যালো আমার।
দেখতে পেলুম হৃদয় নন্দন বন। চূড়ান্ত আরণ্যক। পারিজাত ফুটে আছে থরে থরে।
তারাদের মূর্ছনা। ঝর্ণার গীতবিতান। চারদিকে সুমধুর অপ্সরাবৃক্ষের গাছ। স্ফটিকের অনুরণন।  মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। ফুল ফল দখিনা পবনের বন্দনা।
ঈশ্বরের ফুসফুস থেকে ভেসে আসা মধুর বাঁশী ... ও মাই গড! এ কী দেখি ...

একজন সেক্সি তানপুরা ততোধিক সেক্সি সলমা আর চুমকি জড়ানো বাতাস পরা।
এ অলিন্দ ও নিলয় ঘোরাঘুরি করছেন। আমাকে দেখেই হাত বাড়ালেন সেই অপরূপা রম্ভা

‘গুড মর্নিং ফ্রম দা রেস্পিরেটরি সিস্টেম অফ গড’

হাই বলব কী, আমি তো ডিউ টু নার্ভাসনেস, কথাই বলতে পারছি না ঠিক করে। অনেক কষ্টে সাহস সংগ্রহ করে, হাত বাড়িয়ে দিলুম। হাই তানপুরা! দিস ইজ দ্যা রত্নদীপা।

‘দ্যা রত্নদীপা’ শুনে হাসিতে ভিজে উঠলো রম্ভা তারপর কোমর দুলিয়ে বললো
গ্ল্যাড টু মিট। থাকো কিছুদিন এখানে। ঘুরে ঘুরে দ্যাখো ঈশ্বরকে। তিনিই আমার আমাদের প্রাণের বল্লভ ... মর্মসখা ... অন্তহীন হরিহে ...

বাহ! এই সেক্সিরম্ভা বেশ ফ্রেন্ডলি তো!
এবার একটু সাহসী হয়েছি। প্রশ্ন করলাম, তা এই বল্লভদা এখন কোথায় আছেন? বাঁশীর সুর শুনছি মনে হচ্ছে। হৃদয়ের আশেপাশেই আছেন বুঝি এখন ? ...
ঠিক ধরেছ ...রম্ভা উত্তর দিলেন,
এখন তিনি তাঁর প্রেমিকাকে আদর করে ঘুম ভাঙাচ্ছেন। চুমোতে চুমোতে ভোর-ভোর। জেগে উঠছেন রসিলাপ্রেম চরম নরম আর গরম প্রেমিকা। দ্যাখো, আমার ঠোঁট ভিজে যাচ্ছে নামগানে।  ধ্যান জড়িত তিনিই তো আমাদেরও প্রেমিকা গো!আমাদের সব্বার প্রিয় মিস দ্বারকা, শ্রীরাধিকা।

তানপুরার এমন খোলাখুলি কথা শুনে আমি তো প্রায় অক্কা। একটুকু লজ্জা টজ্জা কিছু নেইগো!
কৃষ্ণরসে টম্বুর চোখদুটি দুলে উঠলো তানপুরার, মৃদু খুশবু ছড়িয়ে তিনি বললেন,

তিনিই তো সব। আমরা কেবল লাখো হাজার, কানুর দ্বাররক্ষী। রাধাই আসল দরজা। তবে আমরাও প্রাণবল্ললভের ভাগ পাই। রাতে বিরেতে। কখনো মথুরায় কখনো মক্কায়। কখনো জলে কখনো মশালে ... আহা সেই স্বাদ, স্বাদু স্বমেহনের চাইতে অনেক বেশি ক্ষুরধার। খুরপি লাঙল কোদাল- সব একসাথে।
তিনিই শ্রেষ্ঠ কৃষক। আমরা তার ধানজমি। ফলনের আকাঙ্ক্ষায় বসে আছি গো। কবে যে তিনি আমার এতোটুকু দাবী করেন। এই স্বপ্ন দেখে দেখেই আমরা গোপিনীরা মরে যাই।
এবার আমি প্রশ্ন করি, কিন্তু রাধা, তিনি কৃষ্ণের মামি না ? এই সম্পর্কটা কি ঠিক? অবৈধ না?

চোখ টিপে রম্ভা ইশারা করলেন, শরীরে যদি শরীর মজে কে মামা কে তখন মামি। মায়ার ফেনায় মেশানো সকলি তখন বিষগরলের হাস্নুহানা।
ঠিক আছে ঠিক আছে ... বুঝেছি ... মিস রম্ভা। আমি আর সক্কাল সক্কাল এইসব কথা বাড়াতে চাই না।
যাই, একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি রম্ভাজী, পরে মামা-মামীর সাথে আলাপ করা যাবে। ওদের ঘুমটুম ভাঙুক ঠিক কোরে ...

উফফফ, এই রম্ভার হাত থেকে আগে পালিয়ে বাঁচি। বাপ্রে বাপ!সকাল সকাল কী সব হট কথাবার্তা তানপুরার। আর এদিকে আসছি না বাবা। এই বল্লভদা’র চোখে দেখি মামি ভামি রামি ...সকলি সমান।  যাই বাবা।  আপনি বাঁচলে বাপের নাম। সামনেই ইসোফেগাস! যাই ওদিকেই ...
হ্যাঁ, এই জায়গাটা বেশ খালি খালি। হাঁটি হাঁটি পা পা। ঈশ্বরের ভেতর কী  কী আছে দেখে যা।  ...
ও মা গো! সো স্যুইট। এই এতক্ষণে চেনাজানা একজন রম্যরচনার দেখা পেলুম। আমাদের পাড়ার
রামকৃষ্ণ! মানে আমাদের সবার চেনা রামকৃষ্ণ দাদা বসে আছেন। খাটো ধুতি । ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত।  ... আর ... আর ... তার সামনে এক মহিলা। ভয়ঙ্কর গেরিলা বিদ্যায় পারদর্শী মুখটি। ধরবো আর খাবো এই অ্যাটিটুড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

আর তার ড্রেস? মাই গুডনেস! ভয়ঙ্কর। ড্রেসই নেই।
আমি তো লজ্জায় মাথা নিচু। এ তো সানিকে লিওনেকেও বীট দিয়ে গেছে।
আমার মুখ দিয়ে হঠাৎ বেরিয়ে গেছে ...মাই মাই! এ কি সম্ভব? এমন পাব্লিক প্লেসে (হোক না তা ঈশ্বরের আপনা এরিয়া) মাত্র কয়েকটা কাটামুন্ডু ঝুলিয়ে ... সবই তো দেখা যাচ্ছে রে বাবা ... আঁতকে উঠেছি ... ফের বলে উঠেছি ... মাই মাই ...

চেঁচিয়ে উঠেছেন রামদা। অই মাই তো সব রে। ব্রহ্মাণ্ড যে এই দুধেই গড়া । তুই এক মহাপাপী... নরকের ছানাপোনা। বয়েসের গাছপাথর নেই। এইসব বলিস নে ... জিভ তোর খ’সে যাবে। চটি লেখা ছাড়। গীতা পড় ...কথামৃত পড়। মনে রাখ। মা বিনা গতি নাই ... মাই বিনা খানা নাই ...
মা ... মাগো মা ...
মাই দে তোর মাই দে মা
খাই দে মা খাই মা
তোর দুধ না খেলে
বড় কষ্টে থাকে আমার পিলে
খিদে আমার মেটে না ... না না না না
শ্যা
মা মা মা মা
রামকৃষ্ণ দাদার গান শুনছিলাম কথা না বাড়িয়ে। খুব একটা খারাপ লাগছিল না। মায়ের গন্ধও একটু পাওয়াও যাচ্ছিল। হঠাৎ চাপা গলায় আওয়াজ। ব্লাউজহীন এক মহিলা। খোলা চুল। সাদা শাড়ি, পাড়ের দিকে লালআভা।
এ সারদাকাণ্ড বউদি না? .. এত কাণ্ডের পর ... এ কী অবস্থা বিশ্বমায়ের ...
এমন অঝোরে কাঁদছেন যেন তিনি দেউলিয়া হয়ে আছেন বহুদিন ... আর বকছেন প্রলাপ ... হাহাকারে উঠলে উঠছে সারদাবউদির শোক।
কিছুই পেলুম না। সারা জীবনে কিছুই পেলুম না। অরগাজম কী জিনিস তা জানতে পারলুম না। স্বামী সোহাগ কাকে বলে, তাও জানা হল না। পৃথিবীর সকল প্রাণী, হাল্কা থেকে ভারী ... মেজো থেকে মাঝারি ... মেঘ থেকে মেঘদুত ... সব্বাই আমার মধ্যে কেবল মা’কেই দেখল রে রে রে রে ... কেনো কেউ আমাকে বউ ভাবলো না রে ...

কী কান্না সে কী ভয়ঙ্কর কান্না! আমিও উদাস হয়ে পড়লুম খানিক।
মায়ের রে রে রে টা এত দ্রুতবেগে আলাপ দিচ্ছিল যে ওনার পিঠে হাত রেখে বাড়িয়ে দিলুম গামা ... আই মিন রুমাল ...
ফোঁপানি থামিয়ে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করলুম। থামুন থামুন মা। আপনার বহু আগেই প্রোটেস্ট করা দরকার ছিল। আপনি এই অসহ্য যৌবনের জ্বালা সহ্য করলেন কি করে? আর করলেনই বা কেন ? কত মহিলা সমতি টমিতি আছে জানেন? সব্বাই আপনার পাশে দাঁড়াতো ঠিক ...

আপনি জানবেন,  আমার পূর্ণ সিম্প্যাথি আছে আপনার সাথে। বেধড়ক পিটুনি দিলে তবে রামদা'র অই ম্যা ম্যা বন্ধ হোয়ে বউ-বউ হবে। আচ্ছা বস, একটা কথা! ব... আপনি মাস্টা র বে... ..আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আবার নতুন স্বরে ফুঁপিয়ে উঠলেন সারদাকাণ্ড।

ওই ওইটাইতো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে রে। সমস্ত পৃথিবী আমাকে মা ডাকলো কিন্তু আমার সত্যিকারের মা হওয়া হল না রে।  দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে রে! আবার কান্না ...
ইসসস, আমার এমন কষ্ট লাগছিল। জড়িয়ে ধরে বল্লুম ... আমাকেই আপনার মেয়ে বলেই ভাবুন না ... মা সারদাকাণ্ড ...
মা উঠলেন ঝেঁঝিয়ে. পাগল? তোকে আমি মেয়ে ভাববো ?
আমি কি পাগল হয়ে গেছি? না ভীমরতি ধরেছে আমার? তোকে আমি মেয়ে ছেলে ছেলের বউ মেয়ের জামাই কিছুই ভাববো না ...

তোর যা সব চটিকবিতা ...চটিকাব্য ... ( উফফফ আমি তো পড়লেই হিটহট ...আর হিংটি ছট ফট করতে হয় রে আমার ...)
আর তোর ড্রেস? সে সব অতি অতি জঘন্য ... তুই বইমেলায় ৩৬-৩২-৩৪ গেঞ্জি পরে নাকি ঘুরেছিস? ছি ছি ছি ...

এইবার আমার মাথা গরম হয়ে গেল। শুনুন , মিসেস সারদাকাণ্ড! আমার ড্রেস নিয়ে কিছু বলবেন না। আপনার স্বামী যে মহিলার জন্যে অমন বেড়ালছানা হয়ে বসে থাকে আর মিউ মিউ করে আমার ড্রেস তার থেকে ফার ফার বেটার। আপনার দুঃখে সাথী হওয়াই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে ... আপনার মুখ তো ছবিতে বেশ সুবোধ বালিকা, বোঝা যায়নি তো আপনি এত মুখোরা। অই ম্যা ম্যা –ই আপনার উচিত শাস্তি ...

ফিরেই আসছিলাম। এক শ্যামাঙ্গী সুদর্শনা ছুটে এলো পাশের ঘর থেকে। মুহূর্তে ঘর যেন আলো। অপরূপ দেখতে! আর চুল? সে এক শোভা বটে। কোন বিউটি পার্লারে যায় কে জানে।
ভাগ্যিস, অনিন্দকে সাথে আনিনি। একে দেখলে এখুনি অনিন্দ এর প্রেমে পড়তো, সে আবার বরাবর লম্বা চুলের মেয়ে পছন্দ করে ...
অনিন্দকে সাথে আনিনি বলে যখন আমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি তখনি অই মহিলার পেছন পেছন .এক সুপুরুষ ...
দেখি দেখি ... কাছে যাই ... শুনি ওরা কী বলে ...

পাঞ্চালী পাঞ্চালী প্লী জ, আজ রাতে তুমি আমার সাথে তুমি আমার সাথে শোও ... গতকালও তুমি অর্জুনের সাথে শুয়েছ। আবার আজো? কেনো কেনো? লিসেন টু মি ... এই দ্যাখো তুমি চকোলেট ফ্লেভার পছন্দ করো না ?... তোমার পছন্দের ... এনেছি দ্যাখো ...

পাঞ্চালীর চোখ চকোলেট শুনে কেমন চকচক ...
ভাবছি ... এই ভদ্রলোকটা কে ...
সাইজ দেখে তো ভীম বলেই মনে হচ্ছে ... বারমুডা আর টি। হেব্বি মাসল তো! পকেট থেকে আবার একটা কী বের করছে রে বাবা। দেখি তো দেখি তো ...কী লেখা আছে প্যাকেটে ...
পে নে গ রা ... যা ব্ববা ... ভীমের আবার এইসব লাগে নাকি ...

আমি তো ভাবতেও পারছি না এই যার সাইজ তার পেনেগ্রা লাগছে। অবশ্য মহিলার চাহিদাও কম হবার নয় ... তিনি কী আর যে সে বসস! মাটি ফুঁড়ে উঠেছেন, এই চরমহট উর্বশী।
উফফফ ... আবার শুরু ...

আবার শুরু ভীমের কাঁদুনি ... একটা দশাসই পুরুষ এমন নাকিকান্না! আমি কল্পনাও করতে পারি না ... উফফফফ বিরক্ত করে মারছে তো।

প্লীজ প্লীজ পঞ্চু! গতবার তোমাকে করাতে পারিনি, জানি।  আরেকবার আরেকটি বার আমাকে সুযোগ দাও লক্ষ্মীটই। এতো তোমাকে সুখ দেব যে, এই সমগ্র ভূ-মেদিনী ভায়াগ্রা, সরি সরি ... নায়গ্রা হয়ে যাবে ...

না। গর্জে উঠেছে পাঞ্চালী। আজ আমি অর্জুনের সাথে। তুমি জানো কী, অর্জুন আজ বিকেলে চা অব্ধি খায়নি। শুধু শিলাজিতের ওপর আছে। আর শোনো, পেনেগ্রা ফেনেগ্রা ছাড়ো। ইউজ সামথিং ভেষজ, লাইক শিলাজিত। কাল তোমার সাথেই, পাক্ককা প্রমিস। আর শোনো, জাপানীতেলটাও একবার ট্রাই করতে পারো। আজকাল খুব অ্যাড দিচ্ছে ছোবলের। দেখেও তৃপ্তি ...

একটা ফাইং চুমু ছুঁড়ে পাঞ্চালী উড়ে গেলেন অর্জুনের দিকে ...
বেশ স্পীডেই গেলেন, দৌড় দেখে মনে হল, শিলাজিতের এফেক্ট বেশীক্ষণ থাকে না ...
একটা জিনিস বুঝতে পারলাম, ঈশ্বরের ভেতরটা তাহলে কেবল কনডোম আর পেনেগ্রা আর ভায়গ্রায় বন্দী ।সে থাক গে ... আমার কী ... যাই ...
... এবার ঈশ্বরের লিভারের দিকটা একটু ঘুরে আসি। ডাইজেস্টিভ সিস্টেমটা এই সাতসকালে মাল খালাসের পর পরিচ্ছন্ন থাকার তো কথা ...
ও মা খালি কোথায়? ... বেনারসি পরা নববিবাহিত এক বধু, সর্বাঙ্গে অলঙ্কার।
নতুন বউয়ের গন্ধ। যেন ফ্রেস ফ্রম ফুলশয্যা। সাপের মত ফোঁস ফোঁস করছে। রাগে লাল হয়ে আছে অমন সুন্দর মুখখানা ...আমি বল্লুম, তুমি কে গো মা ? ,আর যায় কোথায়,  রেগে ব্যোম একেবারে!

মা? আমাকে মা লাগছে দেখতে? জানো তুমি? আমার বিয়েটা এখনো সম্পূর্ণই হয়নি? এখনো আমার শিল ভাঙেনি। নথ ভাঙেনি। আমার বিয়ের রাতেই ... সর্বনাশ ... হয়ে গেছে ...

নথ তো অটুট সত্যি। কিন্তু মেয়েদের শরীরে শিল কোনটা?  তা ভাঙেই বা কি করে ? পরে জানা যাবে এই নথ/ শিল ভাঙা ব্যাপারটা কী... আপাতত ওকে একটু সাম্লাই।
ওকে ওকে রিলাক্স! কিন্তু তোমার সমস্যা কী, বুঝতে পারছি না ...
তুমি এখানেই এলে কী করে? তুমিও কি গদ্য লিখতে এসেছ? নাকি ঈশ্বরকে নিয়ে কবিতা কোনো?
গদ্য / পদ্য / প্রবন্ধ ...

মাই ফুট! আমি কিছুই লিখতে আসিনি। আমি বেহুলা। সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে। গতকাল ছিল আমাদের বাসররাত। যখন ও আমাকে বুকে নিচ্ছে ... চুমুও খাওয়া হয়নি, ঠিক তখুনি ... তখুনি ... কোথা থেকে একটা কালোকুষ্মাণ্ড সাপ।
মুহূর্তের মধ্যে আমার সব শেষ ... ফুঁপিয়ে উঠলো বেহুলা ...
আচ্ছা, এবার বুঝেছি।
কিন্তু ... কিন্তু স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে অমন করে এখানে বসে কেন? দাহ করো ... শ্মশানে নিয়ে যাও, এনাকে এ ভাবে ফেলে রেখো না রে ...আমার ভুলই হয়েছে এখানে আসা ... ফুঁসে উঠলো বেহুলা ...
চোখ মুছে ... উঠে দাঁড়িয়ে বেহুলা বলল, অই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেই তো আমার এই অবস্থা ... যখন ... ও আমাকে ছেড়ে গেছে ... আর আমি প্রবল কান্না করছি তখন অই ইশ্বর আমাকে এসে বলল ... এসো আমার সাথে , স্বামী ফেরত পাবে ...
তো আমি তাই এলুম ... স্বামীকে কাঁধে করে নিয়ে নিয়ে এলুম এই অব্ধি। আর এখন ঈশ্বর কি বলছে জানো ?
কি ?
বলছে ... আগে নাচ দেখাও, আমাদের সন্তুষ্ট করো, তারপর জীবিত স্বামী ফেরত নিয়ে যাও। জাস্ট ইমাজিন হিজ অডাসিটি। নাচ তো আসলে একটা মুখোশ।  আসলে ঈশ্বর কী চায় , চাইছে ... তা কি আমি আর বুঝি না? তুমি বুঝতে পারছ না কী চাইছে আমার থেকে?

কাঁদতে লেগেছে বেহুলা ... সত্যি কথা বলতে কি ...
আমারও চোখে জল এসেই ...
আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম ...
আমি ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে কিছুই বললাম না ...
সমস্ত কান্না হজম কোরে ঈশ্বরের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম থেকে বেরিয়ে এলাম ...

এত বিশাল এলাকা। একটার পর একটা সিস্টেম। সামনেই গল ব্লাডার। গর্তে মুখ বাড়িয়ে দেখি, বিভিন্ন সাজের প্রচুর পাথর জমানো। ওকে। এখান থেকেই তাহলে আমাদের গলব্লাডারগুলিতে পাথর সাপ্লাই ... হুম! মনে হল, বোমা মেরে এই পাথরবৃন্দকে উড়িয়ে দিই। কমসে কম একটা অপারেশন তো কম করতে হবে মানুষকে ...

ক্লান্ত হয়ে পড়ছি রীতিমত। পা ব্যথাও করছে,
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছি প্রায় ... বসবই বা কোথায়। এদিকটা এমন ঘিনঘিনে।
একেবারে নোংরা। চারদিকে কোলন আর ইনটেস্টাইন। নাড়িভুঁড়ি। মল ... আর মলের দুর্গন্ধ। এই সম্পূর্ণ পৃথিবীর গোটা/ পাতলা মল। মলে মলে মলাকার। কলকল করে বইছে কল্লোলিনী। অত সহজে, মলের ম্যাজিক থেকে কি পার পাওয়া যায়?

যাই দেখি, একটু নীচের দিকে। তলার দিকে একটু ঢুঁ মেরেই আসি। ব্যাটা তো পুরুষ ... যাই ... স্পার্মগুলো একটু নিজের চোখে দেখেই আসি ...খালি চোখে ঈশ্বরের পার্সোনাল স্পার্মরূপ দেখা কী মুখের কথা?

ইসসসস! বিছছিরি দেখতে রে বাবা! কেমন পোকা-পোকা ... অজস্র ... থোকা থোকা ... কিলবিল ... থকথকে খোকাসব। আমাকে দেখতে পেয়েই ... ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে আমার ওপর।  সব কেমন দল বেঁধে রয়েছে দ্যাখো,  আর ঘেউঘেউ করছে একদম ভাদুরে কুকুরের মত।
ভয়ই করছে আমার। একসাথে সব আমাকে কামড়ে, মাসরেপ কোরে দেবে নাতো!

বাপ্রে বাপ, পালাই। ওদিকটা দিয়ে পালাই। ঈশ্বরের তো আর ইউটেরাস নেই। ভারি ভারি ওভারিও নেই। খালিই থাকবে অই সব জায়গা।  ও মা, এ আবার কী। একটা কলসি উপুড় রাখা ...ইউটেরাস নাকি? এক জোড়া ওভারি গা ঘেঁসেই রয়েছে। সাদা সফেন সীমাহীন ডিম বেরিয়ে আসছে ... মানুষীর প্রাণ ...একই দেহে তবে পুরুষ আর নারী।

যখন যেমন তখন তেমন সাজ তবে এই ঈশ্বরের। মুখোশধারী কামিনা। কখনো অমল কখনো আমিনা। কখনো প্রোলেতারিয়েত কখনো আবার সুবিধেবাদী এলিট বুর্জোয়া ... বাহ! জমে ক্ষীর তো ... স্পার্ম আর ডিম্বাণুই তবে মিলিত সারাৎসার ...

হঠাৎ একটা ডিম্বাণু আর্তনাদ। বাঁচাও আমাকে বাঁচাও ... মাই গুডনেস!
দেখি একটা স্পার্ম ঝাঁপিয়ে পড়েছে একটা ডিম্বাণুর ওপর। ডিম্বাণুটা ... বয়েস আর কত হবে ... দু দিন কী তিন দিন। বুক টুক গজায়নি তেমন। তবু স্পার্মটা তাকে ছাড়ছেই না ... ছাড়ছেই না ...

 ওইটুকু একটা ফুটো ... তার ভেতরেই ঢোকাচ্ছে ঢুকছে ...
আমার ইচ্ছে করছিল, স্পার্মটার টুটি চেপে ধরি ...
ছাড় বলছি ছাড়। ওইটুকু একটা শিশু। তোদের এত খিদে! ওকে ছাড় বলছি ...

স্পার্মটা ঘাড় ঘুরিয়ে রক্তচোখ দেখিয়ে বলল ...তুই ফোট এখান থেকে। পরের জন্মে তোকে যদি হাড়কাটা গলিতে ঢোকাতে না পারি, তাহলে শালা ...... আমি ঈশ্বরবাপের ব্যাটা না!

পালাচ্ছি ... পালাচ্ছি ... ঈশ্বরের অ্যানাসের ভেতর দিয়ে ... ব্লাডারের ভেতর দিয়ে ... বেরোবার চেষ্টা করছি ...
ঈশ্বরের পেচ্ছাপে মাখামাখি হয়ে যাচ্ছি।
নোনাজল। আচারের টক টক। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ক্রমশ ...

নটেগল্পের মুড়ো এখানেই থামতে পারতো। কিন্তু থামলো না...
ঈশ্বরের স্রোত এক ধাক্ককায় এনে ফেলল আমাকে। এই রুচিশীল শান্তসুশীল পৃথিবীতে।
অবাক দেখলুম, চারদিক কেমন সুশোভন সুবাতাস। ধর্ষণহীন। জখমহীন।
মৃত্যুহীন মলয়ের নির্যাস,
এখানে বাকময় রামকৃষ্ণ। অমৃতদান করছেন।
এখানে কথাময় বিশ্বমাতা সারদা।যাকে একমনে পাঠ করছেন ভক্তবৃন্দ।
এখানে অন্নময় বিবেক। প্রসন্নতা বিতরণ চলছে।
প্রসাদের প্রাসাদ। চরণামৃতের সাথে চলছে অর্চনা। পূজাপাঠ।

আর তেজোময় শ্রীকৃষ্ণ।
প্রাণবল্লভ আমাদের বাঁশীসম্রাট তিনি।
জাঁহাপনা এই দিনদুনিয়ার।
তাবৎ পাঞ্চালীর শরীরে সরবরাহ করছেন
আলো আর দীপ্তির পোশাক।

নাচ ফুরিয়ে যাচ্ছে
নাচতে নাচতে একসময় নাচও ফুরিয়ে যাচ্ছে বেহুলার
পাশা খেলতে খেলতে খেলাও ঝরে যাচ্ছে কুরুক্ষেত্রের
এক ঋতু নিভে গিয়ে অন্য ঋতু আসছে দ্রৌপদীর
তবু পোশাক ফুরোচ্ছে না পাঞ্চালীর

আশ্চর্য! তাই না ?

রত্নদীপা দে ঘোষ : কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



1 টি মন্তব্য: