প্রবন্ধ
কৃষিজ
ফসলগুলি উৎপাদিত হয় গ্রামে। শহর এতে পালিশ লাগায় বিজ্ঞাপন দেয় বাণিজ্য করে। আর এই বিপনন
কৌশলে ঢাকা পড়ে যায় শ্রমব্যবস্থার সাথে যুক্ত মানুষগুলির চেহারা। ঢাকা পড়ে যায় মাটির
গন্ধ এবং ঘামলাঞ্ছিত কৃষকের নিরন্ন মুখ। এই
ব্যবস্থাই চলে আসছে আবহমান কাল থেকে। শুধু কৃষির ক্ষেত্রে নয় এই একই কথা সাহিত্যেও প্রযোজ্য। বাংলা সাহিত্য কি পদ্য কি গদ্য
আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন এই সত্যেরই প্রতিফলন
দেখতে পাব। কোথা থেকে শুরু হয়েছিল চর্যাপদ,
পদাবলী, মনসামঙ্গল? গ্রামজীবনের প্রান্তিক ভূমি থেকে মানুষের অনুভূতির নির্যাস উঠে
এসেছিল। বাংলা গদ্যের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। শুধু
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নয় এক দৃঢ় স্তম্ভের উপর দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। বীরসিংহের এক গ্রামীন
পটভূমিই তৈরি করেছিল বাংলা গদ্যের তুমুল বিক্রম। বাংলা ছোটগল্পের সাথে গ্রামীনজীবনের
ওতপ্রোত সংযোগই গল্পের বুনিয়াদকে শক্ত করেছিল। শুধু তাই নয় বাংলা কথা সাহিত্যে গল্পে বা
উপন্যাসে যারা নিজেদের প্রাকরণিক দীপ্তি চিহ্নিত করেছেন তাদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ। খাতা
কলমে বঙ্কিমের 'যুগলাঙ্গরীয়', 'রাধারানী' প্রভৃতিকে বলা যায় বাংলা ছোটগল্পের প্রাথমিক
আভাস। যেখানে ছোটগল্পের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। আঙ্গিক এবং গঠন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার
চেষ্টা করা হয়েছে। পরবর্তীতে পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, স্বর্ণকুমারী
দেবী, নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত প্রমুখের হাত ধরে বাংলা ছোটগল্প সাবালকত্ব অর্জনের চেষ্টা করে গেছে। তবে বাংলা ছোটগল্পের যাকে বলে
Maturity বা পূর্ণতা সেটা বিকাশ লাভ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত 'দেনা-পাওনা' ছোটগল্পে, যদিও
আমরা জানি রবীন্দ্রনাথের প্রথম গল্প ছিল 'ভিখারিনী'।
রবীন্দ্রনাথ
ছোটগল্প রচনা করা শুরু করেন ত্রিশ বছর বয়সে। তাঁর ছোট গল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রেক্ষিত
বিশ্লেষণ করতে গেলে আমরা দেখব তখন তিনি শিলাইদহে ছিলেন। অর্থাৎ ছোটগল্প তাঁর আকস্মিক আবেগের প্রকাশ নয়। বা চলো ছোটগল্প লিখি নতুন কিছু করতে শিখি এরকম কোন হুজুক
নয়। তার বিখ্যাত ছোটগল্প 'পোস্টমাস্টার', যার
কিছুকাল পূর্বেই তিনি তাদের পূর্ব বঙ্গের জমিদারী দেখাশোনা করার ভার পেয়েছিলেন। এ কথা
বললে ভুল হবে না যে, পূর্ব বঙ্গের মনোহারী
প্রকৃতি-পরিবেশ মানুষ সংলগ্ন প্রতিবেশই তাঁকে গল্প লেখার ইন্ধন জুগিয়েছিল। বিশ্বসাহিত্যের
ছোটগল্পের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষায় তাঁকে আকার দেওয়ার ভাবনা তাঁর মধ্যে নিয়ত ক্রিয়াশীল
ছিল। পদ্মার উদ্দাম ভালোবাসা, চারপাশে সবুজের দিগন্তবিতৃত শ্যামলিমা, বোট হাউজের অপূর্ব,
অনন্য অভিজ্ঞতা, গ্রাম-বাংলার সবুজ-শ্যামল-নীরব প্রকৃতি, মানুষের সহজ অনাড়ম্বর জীবন
গল্পকার রবীন্দ্রনাথের সামনে জীবনের নতুন রূপ ও দর্শন তুলে ধরেছে।
রবীন্দ্রনাথের
ছোটগল্পের চরিত্রগুলো পুরোটাই কাল্পনিক নয়, এরা বাস্তবতার সাথে কল্পনার মিশেল। রবীন্দ্রনাথ
যতই পল্লীবাংলার মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠ পরিচয় পেতে থাকলেন, যত নিবিড় হতে থাকলেন ততই
তাঁর ছোটগল্পের রস দানা বাঁধতে শুরু করলো। জীবনের অনেক আপাত তুচ্ছ এবং অনাবশ্যক ঘটনাকে
তিনি ভিন্ন চোখে দেখতে লাগলেন, অনেক বৃহদার্থে। জমিদারীর গুরুদায়িত্ব নিয়ে আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে পূর্ববঙ্গে
নিঃসঙ্গপ্রায় রবীন্দ্রনাথের কাছে তাঁর ছোটগল্পগুলোই যেন ছিল পরম সঙ্গী, নির্জনতার বন্ধু
শুধু নয় প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠল। ছুটি গল্পে
গ্রামবাংলার জীবন্ত চিত্র যেমন ফুটে উঠেছে ফটিক চরিত্রের মধ্যে একজন গ্রাম্য
কিশোরের চঞ্চলতা মাটির গন্ধ সমেত উঠে এসেছে। দান প্রতিদান, সম্পত্তি সমর্পন, গুপ্তধন
গল্পেও গ্রামীন মিথ, লোকসংস্কারের পাশাপাশি উন্মুক্ত গ্রামজীবনের নানা দিগন্ত বিকশিত
হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক
শরৎচন্দ্র মুলত গ্রামকেন্দ্রিক প্রান্তজনের কথাই তুলে এনেছেন তাঁর সাহিত্যে। ঐতিহ্য
চেতনা ও নিম্নবর্গীয় মানুষের বাস্তব অবস্থানের সাথে তাদের জাগ্রত চিত্তবৃত্তির বিভিন্ন
দিক তুলে ধরেছেন। নাগরিক জীবনের ক্লেদ, ভণ্ডামি ও অন্তঃস্বারশূন্যতার বুদ্বুদ তিনি
সম্ভ্রমজনক দুরত্ব থেকে দেখেছেন কিন্তু তাঁর মধ্যে অনুপ্রবেশ করেন নি। যত সহজভাবে এবং
সাদরে গ্রামজীবন তাকে বরণ করেছিল তিনি নিজেও গ্রামজীবনের আধেয়কে নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন
তারই প্রতিফল তাঁর সাহিত্য। দেবানন্দপুরের গ্রামীন মৃত্তিকা থেকে উঠে আসার কারণেই সহজাত
সম্পর্কের উপলব্ধিতে জীবনবৃত্তের নানাবিধ অন্তর্বস্তু আলোর মতো স্বচ্ছ হয়ে প্রকাশিত
হয়েছে তাঁর ছোটগল্পে। লালু যেন আমাদেরই ভেতরের অন্তরাত্মা। অনুপমার প্রেম গল্প গ্রামজীবনের
পটভূমির উপর লিখিত। বড়দিদি, মেজদিদি তারা যেন
আমাদের চারপাশের চেনা পরিজন। সংবেদনশীল হৃদয়,
প্রখর জীবনজিজ্ঞাসা, বস্তুনিষ্ঠ অথচ অন্তর্ভেদী পর্যবেক্ষন তাঁর গল্পগুলিকে অনন্য করে
তুলেছে। মহেশ গল্পে গফুর এবং তার পালিত অবলা পশু মহেশের মধ্যে ভালোবাসার যে ধ্বনি এবং
জীবনরস পরিবেশিত হয়েছে এই গল্পে তা মহিমান্বিত করেছে সৃষ্টিকে।পল্লীসমাজের কেন্দ্রভূমিতে
বিরাজমান সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলির সার্থক রূপায়ন ঘটেছে তার অনুভাবনায়।
মুঢ়তায় আচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুর শাসনে লাঞ্ছিত নরনারীর অশ্রুসিক্ত জীবন গদ্যবাহিত
হয়ে প্রতিবিম্বিত হয়েছে তাঁর লেখায়।
চল্লিশের
দশকের ছোটগল্পগুলির ভেতর উঠে এসেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা যা সামাজিক জীবনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। গ্রামীন জীবনেও
তার ছায়া পড়েছিল। নেমে এসেছিল মন্বন্তর। নিরন্ন মানুষের প্রচ্ছায়া পড়েছিল সাহিত্যে।
ঘরে ঘরে খাদ্যের অভাব। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতবর্ষের রুগ্ন কঙ্কালসার চেহারা,
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং স্বাধীনতা উত্তর সময়ে দেশভাগের যন্ত্রনা, ব্রাত্য মানুষের
ঢল, পুনর্বাসনের সমস্যা। স্বাধীনতার প্রাক্কালে
যে আশা যে উদ্দীপনা ছিল তার নগ্ন ছবিটাও ক্রমেই
স্পষ্ট হতে থাকে।গ্রামীন বিক্ষত প্রান্তিক জীবনের অস্থিরতা উঠে এসেছে বনফুল, ননী
ভৌমিক, প্রবোধকুমার সান্যাল, সুবোধ ঘোষ, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, জগদীশ্চন্দ্র গুপ্ত, বিভূতিভূষণ
মুখোপপাধ্যায়, পরিমল গোস্বাম, সরোজ রায়চৌধুরী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী,নরেন্দ্রনাথ
মিত্র,নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের গল্পে
খনি অঞ্চলের মানুষই শুধু নয় গ্রামাঞ্চলের কাদাসিক্ত মানুষের আর্তনাদ অনুরণিত হয়েছে।
গ্রামবাংলার
প্রকৃতির পাশাপাশি মানবিক জীবনের স্পন্দন বিভূতিভূষণের সাহিত্যের উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য।
কবিতা এবং গল্পের অসামান্য মিশ্রণে নতুন এক ভাষারীতি তিনি তৈরি করলেন যা কথাসাহিত্যকে
আরও জীবন্ত করে তুলল। প্রবাসী’তে প্রথম গল্প
‘উপেক্ষিতা’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিভূতিভূষণের সাহিত্য জীবনের সূচনা। ভাগলপুরে চাকরি
করার সময় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘পথের পাঁচালী’
রচনা শুরু করেন এবং শেষ করেন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। মৌরিফুল, মেঘমল্লার, যাত্রাবাদল, কিন্নরদল
গল্পে গ্রামজীবনের বিভিন্ন কৌণিকতা প্রতিফলিত হয়েছে। তালনবমী, বিধুমাষ্টার, ক্ষণভঙ্গুর
গল্পে তুচ্ছাতিতুচ্ছ সাধারন ভাবনাকেও গল্পের
রূপ দিলেন। জীবনের নির্যাস ছেঁকে মাটির আলপথ থেকে তিনি তৈরি করলেন শিল্পের সমিধ। ফুলেশ্বরী
আলো এবং চাঁদের পাহাড়ও এক নৈসর্গিক প্রতিলিপি। বিভূতিভূষণ তাঁর দিনলিপিতে লিখেছেন –এই
জঙ্গলের জীবন নিয়ে কিছু একটা লিখব একটা কঠিন শৌর্যপূর্ণ ব্রাত্যজীবনের ছবি। এই বন,
এই নির্জনতা, পথ হারানো অন্ধকার, এই নির্জনে জঙ্গলের মধ্যে খুপরি বেঁধে থাকা। মাঝে
মাঝে গভীর বনের নির্জনতা ভেদ করে পথ হারানো অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে ঘোড়ায় করে ঘোরা।
এদেশের লোকের দারিদ্র্য, সরলতা, কলরব আর সন্ধ্যার অন্ধকারে ভরা গভীর বন ঝাউবনের ছবি,
এইসব। কথাশিল্পী বিভূতিভূষণের সাহিত্যকর্মে পল্লীর নিস্তব্দ মনোরম রূপ এবং নৈসর্গিক
রূপায়ন বাংলার আবহমান লোকজীবনের সতেজ এবং সপ্রতিভ চিত্র পাশাপাশি মানবজীবনের বিভিন্ন পরত নিম্ন মধ্যবিত্ত
মানুষের জীবনবিচিত্রা, সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
তাঁর প্রাথমিক
পর্বের সাহিত্য কবিতা দিয়ে শুরু হলেও কথাসাহিত্যিক হিসেবেই তারাশঙ্করের প্রধান খ্যাতি।
বীরভূম- বর্ধমান অঞ্চলের মাটি ও মানুষ, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবনচিত্র, নদী মাতৃক
জীবনের জাগরূক প্রত্যক্ষতা, স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য,
ব্যক্তির মহিমা ও বিদ্রোহ, সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের দ্বন্দ্বে ধনতন্ত্রের বিজয় ইত্যাদি
তাঁর উপন্যাস এবং ছোটগল্পের বিষয়বস্ত্ত হয়ে
উঠেছে। মানবচরিত্রের নানা নিগূঢ় রহস্য তাঁর
উপন্যাসে জীবন্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। নিজে
জমিদারবংশের সন্তান হয়ে কাছ থেকে দেখেছেন জমিদারির ক্রমবিলুপ্তমান ছায়া এবং নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব। দিকে দিকে কল-কারখানা
ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রমরমা অবস্থা। একদিকে
গ্রাম্য সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে শহরজীবনের বিকাশ। সমাজের এই পরিবর্তন তাঁর রচনায়
নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তারাশঙ্করের রচনার আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য-তিনি পরম
যত্নের সঙ্গে মানুষের মহত্ত্বকে তুলে ধরেছেন। শরৎচন্দ্রের পরে কথাসাহিত্যে যাঁরা সবচেয়ে
বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তারাশঙ্কর ছিলেন তাঁদের একজন। বেদে, পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার, বাগদী, বোষ্টম, ডোম ইত্যাদি সাধারণ মানুষের জীবনচিত্র তাঁর গল্পে
দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। ‘রসকলি’, ‘বেদেনী’, ‘ডাকহরকরা’ প্রভৃতি বিভিন্ন ছোটগল্পে।
জীবনের
গভীর সত্য নিষ্কাসিত হয়েছে বনফুলের গল্পে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিজ্ঞানচেতনামুলক,সামাজিক
ও রাজনৈতিক সমস্যামূলক প্রেম চেতনায় জারিত, সময়কেন্দ্রিক বিভিন্ন গল্পে তিনি মানবজীবনের
বহুরূপী সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বালজাক বা মোপাসা তন্ত্রের লেখক তিনি নন তিনি জীবন
ও শিল্পের রূপকার। অদ্বিতীয়া বা পরিবর্তন গল্পে দাম্পত্য জীবনাদর্শের চরম ট্রাজেডির চিত্র যেমন
ফুটে উঠেছে। গ্রামীন আনপড় অশিক্ষিত মানুষের
সাপ সম্পর্কিত অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কার নিয়ে দিবা দ্বিপ্রহরে গল্পটি নির্মিত
হয়েছে। নিম্নবর্ণের প্রান্তিক মানুষের আত্মসম্মান এবং মর্যাদাবোধ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে
তাঁর ছোটলোক এবং শ্রীপতি সামন্ত গল্পে।মানুষের
মন, তিলোত্তমা, নিমগাছ, অভিজ্ঞতা, মুহূর্তের মহিমা, নাম, ভিতর বাহির প্রভৃতি গল্প গ্রামকেন্দ্রিক বিচিত্র জীবনের কারুশিল্প।
চলমান সময়ের গভীর সত্যকে আলতা কাজলহীন প্রসাধনীবিহীন সরলবাক্যে বলিষ্ঠভাবে শিল্পরূপ
দিয়েছেন তিনি।
মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায় তার রচনায় মানুষের অন্তর্জীবন ও মনোরসায়নের বিশ্লেষণে পর্যবেক্ষনের
নিপুনতা প্রকাশ করেছেন। তার প্রথম দিকের রচনায়
বিশ্লেষিত হয়েছে মানুষের অবচেতন মনের অন্তর্লীন রহস্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর ও পঞ্চাশের মন্বন্তর পরবর্তী গল্প বা উপন্যাসে তার সমাজতান্ত্রিক বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি
মানবিক সত্তা উন্মোচিত হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সামনে অধস্থ মানুষের জীবন।
বিগত শতাব্দীর শুরুতে যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক বিভীষিকা পৃথিবী দেখেছে। গ্রামে নেমে এসেছে
দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া।তার ছায়া গল্প সেই সময়ের জ্বলন্ত প্রতিবেদন হয়ে ওঠে। ছোট বকুলপুরের
যাত্রী, নারানের নাত জামাই, কুষ্ঠ রোগীর বউ প্রভৃতি গল্পে বাস্তবের প্রতিবিম্ব ঝলসে
উঠেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নাগরিক জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তার নিখুঁত
চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার এ পর্যায়ের রচনায়। তিনি নিজে চরম দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছেন,
তা সত্ত্বেও তিনি সাহিত্যচর্চাকেই পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন।
রুক্ষ্ণ,
রূঢ় কণ্ঠেই মধ্যবিত্তের গল্প বলেছেন জগদীশ
গুপ্ত। পয়োমুখম, লঘু গুরু, চন্দ্রসূর্য যতদিন, পামর প্রভৃতি গল্পের মধ্যে দিশাহারা
মধ্যবিত্তের কঙ্কালসার রূপ ধরা পড়েছে।চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ঔপনিবেশিক পৃষ্ঠপোষকতার সুত্রে
অষ্টাদশ উনিশ শতকে যে মধ্যবিত্তের প্রসারতা লক্ষ্য করা গেছল তাদের অস্তিত্বপীড়া,বিভ্রান্তি
শাব্দিক মহিমায় প্রস্ফুটিত হয়েছে। পাশাপাশি বৃটিশ পুঁজির ছত্রছায়ায় লালিত এই মুৎসুদ্দিকুল
যাদের জীবন ও রুচিবোধ ছিল পরস্পরবিরোধীতায় আক্রান্ত।জগদীশ গুপ্তের গল্পে গ্রাম ও নগরের
এই কর্মবিমুখ, লোভী প্রগতিবিরোধী এবং স্থিতাবস্থাপ্রেমিক মানুষদের চরিত্র সুন্দরভাবে
চিত্রিত হয়েছে।
বাংলাসাহিত্যে
কল্লোল যে বিশাল প্রতিভাবানদের মিছিল সৃষ্টি করেছিল, তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন প্রেমেন্দ্র
মিত্র, তার অধিকাংশ গল্পেই মধ্যবিত্তের জীবনযন্ত্রণার নগ্ন ছবি চিত্রায়িত হয়েছে। প্রতিটি
গল্পে আমাদের চারপাশ থেকে নেওয়া। ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গ্রাম এবং নগরের মিলবন্ধন
দেখা যায়। গ্রামবাসিনী এক তরুণী যামিনী প্রতারিত হয়েছে নগরবাসী মানুষের মৌখিক সহানুভূতি।
‘অনাবশ্যক’ গল্পে গৃহকত্রী স্বর্ণময়ীকে আমরা
দেখি, তিনি একটা বাড়ির সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করেন। গল্পটিতে ভালোবাসার এক মোক্ষম শক্তির
বিজয়ের রূপ ধরা পড়েছে, হয়তো সংসারের এটাই নিয়ম, মানুষ একটা নিয়মের মধ্যেই চালিত হয়,
কেউ তার ইচ্ছে মতো চলতে পারেনা।তিনি কোনদিনই গ্রামীন ছিলেন না। তবু গ্রাম তাঁর সাহিত্যে
স্পন্দিত ‘সংসারসীমান্ত’ গল্পে দুটো চরিত্র প্রতীয়মান, একজন চোর অঘোর দাস এবং অন্যজন
পতিতা রজনী, মানুষই চোর হয় আবার এই মানুষই পতিতা হয়ে সমাজদেহের ক্ষতের সৃষ্টি করে।
মধ্যবিত্তের
যে কষ্ট যে হাহাকার, তারই রূপ বারবার উঠে আসে, বারবার রঙ পাল্টায় আবার নতুন হয়, মধ্যবিত্ত
ঘুরেফিরে আসে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন মেজাজে। যতোদিন মধ্যবিত্ত থাকবে, মধ্যবিত্তের
স্বপ্ন বা স্বপ্ন ভাঙার অথবা গড়ার ইঙ্গিত থাকবে, প্রেমেন্দ্রের গল্প ততদিন বেঁচে থাকবে
মানুষের মনে, অনুপ্রাণিত করবে নতুন পথের আলোকে। সতীনাথ ভাদুড়ি এবং অদ্বৈত মল্লবর্মনের
লেখায় রুরাল সাবঅলটার্ন মানুষের ডালভাতের জীবন তাঁদের নিজস্ব ভাষায় ও সংলাপে চিত্রিত
হয়েছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে মণি মুখোপাধ্যায়, তপোবিজয় ঘোষ, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল
গঙ্গোপাধ্যায় নাগরিক এবং পল্লীবাংলার চিত্র সুন্দর ভাবে তুলে এনেছেন। সেখানে অর্থনীতি
এবং সমাজ পরিবেশও উঠে এসেছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
গ্রাম থেকে মহানগরের বিভিন্ন চরিত্র তুলে এনেছেন তাঁর গল্পে। দেবেশ রায়, অসীম রায় বৌদ্ধিক
গল্প লিখলেও গাদ্যিক কথনশৈলীর মধ্যে কখনও কখনও নদীমাতৃক জীবনের ছায়া পড়েছে। এ মান্নাফের
গল্পে গ্রামীন সংখ্যালঘু মানুষের রোজনামচা চিত্রিত হয়েছে।
আশাপূর্ণা
দেবীর গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে গ্রাম এবং নাগরিক
নারীর মনের অন্তর্নহিত রসায়ন। চাবিকাটি দিয়ে তিনি গোপন সিন্দুক থেকে তুলে এনেছেন বিভিন্ন
চরিত্র। অন্যদিকে মহাশ্বেতা দেবীর গল্পে লোধা শবর এবং সাঁওতাল উপজাতি মানুষের দাঁতে
দাঁত চেপে টানটান বেঁচে থাকা এবং প্রতিদিনের
রুটি রুজির প্রশ্নগুলি তীব্রভাবে উচ্চারিত হয়েছে। দ্রৌপদী গল্পে দোপদী মেঝেনের হিম্মত
যে ভাষায় বিবৃত হয়েছে তাকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। বান, শিকার,সাঁঝ সকালের মা, মৌল অধিকার
ও ভিখারী দুসাদ গল্পে তাঁর প্রতিবাদী সত্তার মানবিক দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
সত্তরের
দশকে স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ভগীরথ মিশ্র, অনিল ঘড়াই, অমর মিত্র, সাধন চট্টোপাধ্যায়, কিন্নর
রায়, আফসার আহমেদ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় সৈকত রক্ষিত, সমীর রক্ষিত, ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়,
মানব চক্রবর্তী, নন্দ চৌধুরী আবদুর রউফ, গৌর বৈরাগী, জীবন সরকার, প্রমুখ সাহিত্যিকগন
গ্রাম এবং নাগরিক প্রান্তীয় জীবনের কথাচিত্র নির্মান করেছেন। এদের মধ্যে অনিল ঘড়াই
তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যজীবন অবহেলিত গ্রামীণ অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের উপযোগী করে লিখতে
পেরেছেন। একেবারে তাদের মুখের ভাষায়। লোধা জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়কেও তিনি তাঁর
সাহিত্যে মুক্তি দিয়েছেন। কাক, পরীযান, আগুন, জ্ঞানবৃক্ষের ফল, কটাশ জার্মানের মা প্রভৃতি
গল্পগ্রন্থে অরণ্যানীর চিরসবুজের ভেতর দুর্গম দুর্বিসহ জীবনে মাড়ভাতের লড়াইএর পাশাপাশি
কুষ্ঠ রোগ, ডাইনি, নজরদোষ এবং নেশাগ্রস্ত জীবনের অমোঘ প্রতিপাদ্য তিনি নির্মাণ করেছেন।
নলিনী বেরা এবং সৈকত রক্ষিতের গল্পেও গ্রামীণ মানুষ জীবন ও বিচিত্র জীবিকার কথা চিত্রিত
হয়েছে। সৈকত রক্ষিতের প্রতিটি গল্পগ্রন্থই নতুন নতুন ভাবনার সামনে এসে দাঁড় করিয়েছে
আমাদের। আঁকশি, গোভৈদা এরকম গল্প তাঁর পক্ষেই লেখা সম্ভব। নলিনী বেরার গল্পে জীবনজিজ্ঞাসার
বিচিত্র এবং নিরন্তর তাড়না মাটির তলদেশ থেকে সনাতনী গন্ধ নিয়ে উঠে আসে। শবর পুরাণ,
হোমোগার্ডের জামা, ভূতজ্যোৎস্না, তিরিয়ো আড়বাশি,শালমহুলের প্রেম, গত মরসুমের মরা ধুঁধুল,
সরলী বৃত্তান্ত গল্পসহ তাঁর সামগ্রিক কথাসাহিত্যেই
এই নজির মিলবে। নিজের লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন-” যে জায়গায় জন্মেছি তার ভূগোল
ভূপ্রকৃতি আবহাওয়া জলবায়ু মানুষজন সবই কেমন যেন অদ্ভুতুড়ে। সেখানকার নদনদী পাহাড় টিলা
বন- ডুংরি বট অশ্বত্থ আসন চল্লা শাল পিয়াশাল
আমার কাছে কথা বলে, হাঁটে।” এই চলাফেরা এবং এই কথাগুলিই তাঁর সাহিত্যের মুলসুর।এছাড়া
শচীন দাশ, বারিদবরণ চক্রবর্তী চিত্ত ঘোষাল,
উৎপলেন্দু মণ্ডল, অনিল ঘোষ,ঘনশ্যাম চৌধুরী
প্রমুখ সাহিত্যিকগন ভিন্ন ধারার মানবিক অভিমুখ খুঁজেছেন পল্লীর জনসমেশে।
পরবর্তী সময়ের গল্পকারদের মধ্যে বীরেন শাসমলের গল্পে আঞ্চলিক
জনজীবনের প্রতিভাস এবং গ্রাম্যভাষার শিল্পসম্মত প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় বাসিখাবার ও
জনৈক ভানু মন্ডলের কাহানী অথবা বারমাসিয়া গল্প সহ অগণিত গল্পে।জ্যোৎস্না কর্মকারের
গল্পে ছায়া পড়েছে পুরুলিয়ার রুখা সুখা প্রান্তিক মানুষের। টুনির বারোমাস এবং খিদে,
নকল বুঁদি, জলকন্যার নুনভাত গল্পে জ্যোৎস্না
নিপুন এবং নগ্নভাবে তুলে ধরেছেন এই অঞ্চলের অসম্পাদিত চিত্র। অজিত রায়ের গল্পেও রুরাল
জীবনের কারুভাষ ফুটে ওঠে স্মার্ট এবং সপ্রতিভ উচ্চারণে। তৃপ্তি সান্ত্রার
গল্পের মধ্যে গ্রামীন রূপরেখার প্রচ্ছায়া
তৈরি হয়েছে। তাঁর অধিকাংশ গল্পেই প্রান্তিক
গ্রামীন স্বর ধ্বনিত হয়েছে। কানাই কুণ্ডুর কাহিনীতে এত নিখুঁতভাবে পরিবেশিত হয়েছে গ্রামীনসমাজের
বীক্ষা যে পাঠক যেন ছবি খুঁজে পান। কমলেশ রায়ের নলিন সরেনের বাদ্যকাঠি সহ সমস্ত গল্পেই মানভূমের মানুষের বিভিন্ন দিগন্ত বর্ণিত হয়েছে।
সুবল দত্তের গল্পেও তারই সার্থক আভাস। গৌর কারক, বাসুদেব মালাকার, অংশুমান কর, দেবাশিস
সরখেল, বিতস্তা ঘোষাল, সত্য মন্ডল, সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়,ভবানী ঘটক, সাত্যকি হালদার,
গৌতম বিশ্বাস, মবিনুল হক, মুর্শিদ এ এম,শচীন বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না রশীদ, বলরাম বসাক, লীনা চাকী,
অহনা বিশ্বাস এরা সকলেই গ্রামীন জীবনের কথা তুলে ধরেছেন তাদের শিল্পভাবনায়। তৃষ্ণা
বসাক নাগরিক জীবনের পাশাপাশি তুলে আনেন দেহাতী জীবনের প্রতিচ্ছবি। পানিবাই, ল্যান্ডমাইন,
জলযাচক, মায়া সহ বহুবিধ গল্পের মধ্যে তারই প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। তন্বীর বিভিন্ন
গল্পেও গ্রামজীবন নিজস্ব সংলাপে লিপিবদ্ধ হয়েছে। সঙ গল্পটির কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ
করা যায়। শতদ্রু মজুমদার, ঝুমুর পাণ্ডে, তন্বী
হালদার, বিনোদ মণ্ডল, অমৃতেন্দু মণ্ডল, শরদিন্দু
কর, আয়েশা খাতুন, নীহারুল ইসলাম, সুমন মহান্তি,
আনসারুদ্দিন, আয়েশা খাতুন, সিদ্ধার্থ নাহা, বিপ্লব চক্রবর্তী, ভবেশ বসু, সুকান্তি দত্ত, সসীমকুমার বাড়ৈ, হাসান হাবিবের গল্পে
কখনও প্রচ্ছন্ন আবার প্রত্যক্ষভাবে এসেছে গ্রামের কথা। বিনোদ মণ্ডল তার আই লাভ মাই ইন্ডিয়া, ওদের চাদর
নেই, টব প্রভৃতি গল্পে মেদিনীপুরের প্রান্তিক স্বরগুলিকে তুলে এনেছেন।
এছাড়া
আরও উল্লেখযোগ্য ছোটগল্পকার যাঁদের কলমে গ্রামজীবনের ধ্বনি কলরোল মৃদঙ্গের শব্দের মতো
উচ্চারিত হয়েছে তাঁরা হলেন – বিশ্বজিৎ অধিকারী,
মৃনাল শতপথী, বিমল গুড়িয়া, টোকন মান্না, কাকলি ঘোষ, অসিতবরণ বেরা, বরুন মাইতি, গৌতম
মহান্তি, রামামৃত সিংহমহাপাত্র, সুব্রত চক্রবর্তী, সৌরভকুমার ভুঁইয়া, সুজয় চক্রবর্তী,
শাঁওলি দে, জয়দেব ঘোষ, হামিরুদ্দিন মণ্ডল, সুনীল কালিন্দী, দেবযানী কর সিনহা, পরিতোষ
সরকার, তপন তরফদার প্রমুখ। বিশ্বজিত অধিকারীর কিষ্ট দাসের দোকান, টোকন মান্নার আগাছা
গল্প এই সময়কালের লেখা হয়েও চিরকালীন। রামামৃত সিংহমহাপাত্রের ভালোবাসা গল্পগ্রন্থে
বাঁকুড়ার লাল মাটি থেকে রক্তমাংস নিয়ে উঠে এসেছে এক একটি চরিত্র।
নিজের
কথা নিজে লেখা উচিত নয় তবু দুকথা বলতেই হয় যে এই নিবন্ধকার নিজেও গ্রামজীবনের ধুলোবালি
এবং কাদালিপ্ত আলপথ থেকে তাঁর গল্প ও উপন্যাসে তুলে এনেছেন বিভিন্ন চরিত্র। পরিশেষে
একথা আমাদের মনে রাখতে হবে সেইসব বিভ্রান্তকারী সাহিত্যিক এবং শব্দমাফিয়াদের বৃত্তের
বাইরে রয়ে গেছে এক শৈল্পিক আদর্শ যা জনগনের সপক্ষে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকার
সপক্ষে উচ্চারিত হয়। উন্মোচিত হয় নতুন নতুন দিগন্তের দুয়ার। আজকের গ্রামচিত্র, গ্রামীন অর্থনীতিতেও অনেক বদল এসেছে, অনেক হেরফের
হয়েছে। ফলে গ্রামও আজ নানারকম বাঁকের সামনে এসে অজস্র তাৎপর্যে পরিপূর্ণ হওয়ার বিভিন্ন
সম্ভাবনা ব্যক্ত করে। এখানেও পুরানো স্থির অচল বিষয়কে নাকচ করবার প্রত্যাখান করবার
তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগে থাকে। তবু আজও গ্রামই বাংলা সাহিত্যের বাংলা ছোটগল্পের নিউক্লিয়াস।
ফ্ল্যাটবাড়ির কেচ্ছা, অবদমিত যৌনতা, কসমেটিক
রূপনির্মান, হিংস্র উল্লাস, যৌন বিকৃতি, লালসা অথবা নিরাশাচ্ছন্ন একাকীত্বের পরিচিত নাগরিক গল্প থেকে
জীবনের নিপুন মন্ত্রমুগ্ধতার স্বাদ এনে দেয় গ্রামীন গল্পগুলিই। যেখানে মাটির গন্ধ সেখানেই
জন্ম নেয় জীবন। জীবন না থাকলে শুধুমাত্র গল্পের কাঠামো নিয়ে বাচালতা হতে পারে, বাণিজ্য
হতে পারে,কিন্তু প্রাণের বার্তা থাকে না। আখ্যানের সীমারেখার ভেতর নতুন চিন্তা এবং
চেতনার সংযোগ সম্ভাবনা কর্ষণ করে চলেছেন লেখকেরা। অনাগরিক পৌর সমাজের বৃত্তের অনেক
বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা প্রান্তিক ব্রাত্যজীবনের মূল্যবান জমিজিরেত নিরেত করেই তুলে আনেন
গল্পবীজ,প্রাণবীজ। যা বাঁচিয়ে রাখে তামাম গল্পবিশ্বকে।
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় : কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন