মাহাত্ম্য ও অন্যান্য কবিতা








কবিতা


মাহাত্ম্য 

বিকেল একটা পাখির ঠোঁট ধরে ধরে উড়ছিল
পাতা ফুল ফল মাটি ছায়া  বটগাছও
অগুনতি রোদ ডানা মেলে দিচ্ছিল বাতাসে
পুকুরের ছায়া জলে নির্জলা মেঘ

মায়াবী দুপুর ঝুপ করে এক চুনোপুঁটি
ঠোঁটে তুলে উড়ে বসল সূর্যের ডালে

জল অস্থির হয়ে ঢিল ছোড়ে নীরবতার শূন্যে
জ্বলে ওঠে পাড়ায় পাড়ায় মনসাগীতির ধূপ
বস্তির এঁদো বাতাস কানে কানে ঢেউ তোলে
এবারে বৃষ্টি কম সোনা
এদিকে আর এসো না

জল খাবে কম বেল খাবে বেশি,শীতলে বসো
বেলের মাহাত্ম্য  জানতে বেলতলা খুঁজে এসো

                 
        
 



মাতৃস্মৃতি

দিনরাত খাটা-খাটুনির পর
মায়ের বিশ্রাম ওই বাবার পদতলে
আক্ষেপ করে মা বলেছিল
মেয়েদের ভাগ্য এভাবেই লিখেছেন
অতীতের ঈশ্বর

বাঘের হলুদ চোখের গর্জন দেখেছি
বাবার লোভী চোখে
মা কোনোদিন ভয় পেত না
অভাবের সংসারে

মা নিশ্চিত, বাবাই তার আসল ভরসার ক্ষেত্রভৃমি



             



সেতারে ভোর

সন্ধ্যার আলো ডুবলে আকাশটা খুব রেগে ওঠে
কাড়িকাড়ি কার্বন-ভুষো হাতে নিয়ে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় পৃথিবীর মুখে

পৃথিবীর আলো দেখে ভোরের ইচ্ছে করে
সূর্যের সব রঙ গায়ে মেখে ফেলতে
বসন্ত উড়ছিল বলেই কোকিল ডাকতে পারে
গান এসে বাসা বাঁধে

এসকলই  মায়াবী চলন বলন, শুনে
বিশ্বাসই হয়নি রাতচোরা পাখির
ঠোঁটে এক টুকরো জোনাকির ছানা
এনেছিল বাসায় তা দেওয়ার তাগিদে

সময় বাজে মশকরা করে 
হাভাতেদের সাথে
এবার সত্যিই ভোর বাজবে সেতারের ঠোঁটে


      
   



 ব্যক্তিগত পরিসর

কীভাবে চাঁদ নির্জন আকাশে একফালি
রাতের কোমল বিছানা পেতে  উপোসি বাতাস
ছোঁয় শিশির শরীর

নিত্যশক্তি ভরের বেদনা হাতে তুলে ধুসকালি
মেখে বাতাসে ঢেউ তোলে,উদ্বাস্তু যন্ত্রণা বোঝে

ফিরে যেতে চায় মূর্খ বসন্তে ফোটা ফুলে
বিষাদজল,ভরে ওঠে মৌলিক এক সকালে

ধূসর অপরাহ্ন ভেজা চোখ ভগ্ন নদীকূলে
নিঃস্বতা ফিরে পায়,মুগ্ধতা স্মৃতি মোহজালে

শান্তির বার্তা নিয়ে বাজে দেওয়ালের স্পর্শধ্বনি
ঈর্ষা-আগুনে পোড়ে ঘাস ব্যক্তিগত পরিসর খোঁজে

                      
     
 



সভ্যতা আর এক কাঁকড়া বিছা

সভ্যতা প্রত্যহ কামড় খেয়ে চিবিয়ে ফেলে সূর্য
কালো হয়ে হয়ে নেমে আসে অন্ধকার
হাতের ফলকচিহ্ন এপিটাফে শোকগাথা এঁকে
জেগে ওঠে বাঁশির আওয়াজ,ছিঁড়ে যায় ধৈর্য

আদিম কাঁকড়া বিছা পুচ্ছটি তোলে,দৌড়ায়
নিমফুলের গায়ে ভীষণ জ্বর,নিরুত্তর তাপে
আচ্ছন্ন অঘোর পৃথিবী,জীবন্ত সারি সারি লাশ
মনুষ্যত্বের বিকিকিনি চলে মৃত্যুর উপত্যকায়

ধর্ম সভ্যতার চাবি,গোপন শোষণের মস্ত মুখোশ
মানুষের জন্য ধর্ম হলে,খুনে রক্ত ঝরে কার ?
উন্মত্ততা আর বিভস্যতা চোখ পীড়িত করে ,
সেই ধর্মে নেই বিশ্বাস যার সেই তো অবতার

নম্রতা,সহিষ্ণুতা,মানবতা,প্রেম,সেবা সুরাসুর
প্রকৃতই ধার্মিকতা,জিঘাংসা,রিরংসা হোক দূর

নাসির ওয়াদেন: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন