কবিতা
রুপান্তর
ঘুম আমার দরজার সামনে
ধীর পায়ে আসে—টোকা দেয়।
আমি ভেতর থেকে সাড়া দিই না,
নারায়ণ শিলার মতো স্থবির হয়ে থাকি।
ঘুম আমার দুয়ারের সামনে
রোদে পোড়া পুরোনো পাপোষে
পা'দুটো ঘষে ঘষে
বিরক্তি জানায়
—আমি বুঝতে পারি বিরক্তির
কারন ।
ঘুম তার টোকা দেবার আওয়াজ বাড়িয়ে চলে
—
আমি
তবুও সাড়া দিই না কিছুতেই
যতক্ষন না দরজাটা ভেঙে পড়ে।
এবার একটা অদ্ভুত শব্দ আমি শুনতে পাই
যেটা কিনা
অনেকটা কড়াইতে অ্যালুমিনিয়ামের খুন্তি
ঘষার মতোই;
আবার পুরোপুরি তেমনও নয় শব্দটা...
—
আমি
বুঝতে পারি ঘুম
তার নিহিত অর্থটা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে!
মাছি
আমরা দুজন
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি
আমাদের চারপাশ ঘিরে
ফুলে উঠছে শুকনো বালির চর
আমাদের দুজনের হাতে
নদীর উৎস ছিল
আমাদের পায়ের পাতায়
জড়ো হয়ে এসেছিল ভর
আমরা যে যার বুকের দিকে
তাকিয়ে ছিলাম একদিন
আর ভূকম্প প্রবন একটি বিস্তৃত এলাকায়
রেখেছিলাম মরমী দূরবীন
আমরা দুজন
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি
আমরা দাঁড়িয়ে আছি
মুখোমুখি বহুদিন পর
আমাদের দুজনের চোখেই
দূরবীন
আমাদের মাঝে আহত আর পুরোনো একটা শব্দ
মাছির মতো ঘুরে ফিরে আসছে বারবার
আমরা পাত্তাই দিচ্ছি না তাকে
চালিয়ে যাচ্ছি কথা, দূরবীনে রাখছি চোখ
ভন ভন করে এগিয়ে আসছে ও
আর
আসছে যাচ্ছে
আমাদের দুজনের
কানের সামনে দিয়ে
আমরা বিরক্ত হচ্ছি
আর বুঝতে পারছি
সামনেই কোথাও
মিষ্টির দোকান আছে
বৃত্তকে প্রসারিত
করে মাছির ভনভন আরও বেড়ে গেল
আমরা ওকে তাড়ানোর জন্য
হাত ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম এবার
হাত ছোড়াছুড়িতে দূরবীনটাই
মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল
আমাদের মরমী দূরবীন —
দুজনের দুজনকে দেখার
সজাগ
আমরা কথা বলি আর
আমাদের মধ্যে কেউ থাকে চুপ শান্ত।
চুপ থাকে, কোন
কথা বলে না— শু
ধু চোখের পাতা সামান্য ওঠানামা করে
জনহীন লিফটের মতো।
আমরা অবিরাম কথা বলে যাই;
বলি দ্রোহপর্বের হলুদ ঘাস আর ছোট ছোট
মাছের
খুবলে খাওয়া চোখগুলো নিয়ে।
আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি, ঘামাই;
সিগারেট ধরিয়ে যে যার মতো
তুলে নিই মদের ঠান্ডা গ্লাস।
তারপর নেশার সীমানা পেরিয়ে ঘু
মিয়ে পড়ি যে যার মতো পরিচিত টিলার বুকে।
আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, সে কেবল ঘুমায় না।
চারাগাছ
বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন
ততদিন অল্প অল্প করে
জল দিতেন চারা গাছটায়।
আমরা ভাবতাম ছেলেমানুষী।
কিন্তু কখনো বলার সাহস পাইনি।
বহুদিন হল সে গাছের দিকে
নজর নেই কারো।
তারপর একদিন অন্ধকারের চিতায়
বাবাও
চলে গেলেন।
সাদা শাঁখা পলা ভেঙে মা বোঝালেন তিনি
বিধবা।
দিদির রুক্ষ্ম চুল বুঝিয়ে দিল
তার বাবা এ পাড়া ছেড়ে চলে গেছে
ঠিকানা বিহীন অন্য পাড়ায়।
সংসারে কেউ থাকে না চিরকাল,
থাকে মনের দেয়ালে পোঁতা
অনড় পেরেকের মতো কিছু স্মৃতি।
এই তো কিছুদিন আগে,
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি,
দেখি জানালার রড ধরে
ছেলেমানুষীর সেই চারাগাছটা
জ্বলজ্বলে চোখে উঁকি দিয়ে আছে!
পতন
মাঝে মাঝে হেরে যাওয়া ভালো;
ভালো পতনের অভিমুখ খুলে দেখা।
গড়াতে গড়াতে কুয়োতলার জল ;
ভালো মরচে ধরা বিষন্ন এই বুকের চাপকল।
মাঝে মাঝে কষ্ট নিয়ে রচনাধর্মী প্রবন্ধ
লেখাও ভালো।
ভালো বৃষ্টি ভেজা জানালার কাচ;
কাচে কেটে যাওয়া তোমার হাতের আঙুল;
আঙুলে জমানো নীল আর নোনা ধরা রক্ত।
মাঝে মাঝে পলকা একটা
সুতো হওয়া ভালো তোমার হেজে যাওয়া
জামায়।।
কৌশিক দাস: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন