কবিতা
আমার কবিতারা
নিজের কবিতার বইটা
বালিশের তলায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে
আদর করেছি তাকে
পাতা উল্টিয়ে অবাক হয়ে দেখেছি
কবিতারা হারিয়ে গিয়েছে কোথায়
কেবল বইয়ের ভেতরে ঘন হয়ে শুয়ে আছে
একটা কুমারী নদী আর পুরুষ পাহাড়
জঙ্গলের গন্ধ
জঙ্গলে গেলে একটা মনখারাপের গন্ধ পাই
ঝরাপাতার গায়ে বিন্দু বিন্দু লেগে থাকে বিষাদ
আর কিছু সোঁদামাটির মামুলি সোহাগ
এখানে বিষন্নতার রঙ হলুদ
মাকড়সা জাল বনে নিভৃত শাখায়
শহরের ফ্ল্যাটের কক্ষে শুয়ে
চোখ বন্ধ করলেই সেই গন্ধ অনুভব করি
জুড়িয়ে ওঠে শরীর
জানালায় তাকালে
স্পষ্টতই একটা গভীর অরণ্য দেখতে পাই
নিষিদ্ধ নুন
সারাদিন শুধু অনন্তের প্রতীক্ষা
পূর্বাভাস মেলেনা একবারও
সওয়ারহীন ঘোড়া ছুটে যায় দিগন্তের দিকে
এমনি অজানা ধুলোপথে
লিখে রাখি শেষের শুরুটা
তুমি কি মেলে আছো ডানা?
রাতদিন খুঁজে যাই ব্যথার ইতিহাস
সোজাসাপটা, আবেগহীন
এভাবেই বেড়া ভাঙে
চেখে দেখি তোমার শরীর, নিষিদ্ধ নুন
রাত বাড়লে ভিজে যায় গাঢ় ঘাস
জ্বলে উনুন
বিচিত্র
বালিঘড়ি উল্টো দিকে বয়
যা কিছু ভুল শেষ বারের মতো ছুঁয়ে দেখতে হবে
দীর্ঘ সফরের পর এইটুকুই তো উদযাপন
বেলা নেমে আসে দ্রাঘিমার বুকে
পিঁপড়েরা ফিরে আসে কোটরে কোটরে
অবিশ্বাসের দাগগুলো
ফোসকার মতো ঝুলে থাকে চিবুকে
কবেকার ভাঙা স্টেডিয়ামে জ্বলে ওঠে ফ্লাডলাইট
আজ তবে এখানেই
বন্ধু সেলুকাস আমায় অস্ত্র-শিক্ষা দেবেন
স্ফিংক্স
স্ফিংক্সের নাক ভেঙে দিয়েছিলো দুষ্কৃতির দল
সেই প্রাচীনকাল থেকে
ভাঙা নাক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিরামিড
জোড়া যায়নি সে আঘাত
তবুও হেলদোল নেই
অতন্দ্র প্রহরীর মতো জেগে আছে নর-সিংহ
অবলীলায় তাছিল্য করেছে ঐতিহাসিক ক্ষত...
দৃশ্যান্তর
বিরাট কিছু ভাবনা এখানে নেই
জানালা খুললে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়
উদাস হয়ে ওঠে চোখের পাতা
খেজুরগাছ থেকে লাফিয়ে পড়লো একটা কাঠবেড়ালি
তার শরীরে আদুরে রেখাগুলো জ্বলজ্বল করছে
পুকুরে ঘাই মেরে মিলিয়ে গেল বড় মাছ
মাছরাঙার ছায়া নড়ে ওঠে জলে
মেঘের ডাক কানে আসছে
ডুমুরগাছে ঝুলছে দড়ির দোলনা
আর পুরনো শানের ঘাটে
শ্যাওলায় জমে আছে আমাদের ছেলেবেলা
শোভন মণ্ডল: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন