ভ্রমণকাহিনী
অনেকদিনের
অভিলাষ যে স্কটল্যান্ড যাবো,গল্প কথার দেশে যেখানে জাতীয় পশু
"ইউনিকর্ন" ডাকিনি,কালাজাদুর দেশে,হ্যারি পর্টারের দেশে,শিক্ষা,চিকিৎসা বিদ্যার
পীঠস্থান,সর্বোপরি যেখানে নমনীয়
পাহাড় ভালোবেসে মেশে অম্বরে। বোনের কাছে আবদার যে যাবো
স্কটল্যান্ডে,ব্যাস্ত বড় সে,তবুও সময় করে মা আর
আমাকে নিয়ে তিনদিনের ট্যুরে চললাম স্কটল্যান্ড অভিমুখে। ১৭৭০ খ্রিস্টাদ্ধে
"এক্ট অফ ইউনিয়ন" পাস্ হলে,ইউনাইটেড কিংডম
অফ গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে স্কটল্যান্ডমধ্যে
ঢুকে গেলো। প্রপেলার
প্লেন করে এদিক ও ওদিক দুলতে দুলতে,এক ঘণ্টা পনেরো মিনিটেই আমরা বার্মিংহাম থেকে এডিনবরা
এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। এবার সোজা হোটেলে
ট্যাক্সি নিয়ে,হোটেলটা
একবারে শহরের মাঝে। যাওয়ার পথে বৃষ্টিতে ভালো
করে দেখা যাচ্ছিলো না। প্রাচীন বাড়িগুলো একেবারে সেইরকম আছে। পথ ঘাট পাথুরে। মাকে হোটেলে ঠিকথাক
ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা দুইজন চললাম শহরটাকে পর্য্যবেক্ষন করতে। হোটেলের পিছনে পাথরের
বাড়ি আর কিছুই দেখা যায় না। দুই বাড়ির মাঝে আছে এক পাথরের
সিঁড়ি। সিঁড়ি যখন আছে নিশ্চয়ই কোথাও যায়,তাই সিঁড়ি দিয়ে চড়েই কি বিস্ময়,আমরা পৌঁছে গেছি আমাদের
অভিপ্রেত সেই রাস্তায় মাঝে "দা রয়েল মাইল"। এটা হলিরুড প্রাসাদ
থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় এডিনবরা দুর্গে। এ রাস্তায় আছে পাব,শপিং সেন্টার,মিউসিয়াম,হ্যারি পর্টার শপ,হোটেল,আর যত দর্শনীয়
জায়গাগুলি। কি সুন্দর সুন্দর সব ভাস্কর্য্য। পৃথিবীর সব থেকে বেশি
লিস্টেড বিল্ডিং এখানে। এই পাথরে বাঁধানো
রাস্তায় চলতে চলতে সেই সময় পৌঁছে গেছি। বৃষ্টি পড়ছে তবে ঝিরিঝিরি,বেশ ঠান্ডা কিন্তু তাতে
বেড়ানো বন্ধ হবে না। এখন সন্ধ্যেও হয়নি,সময়ের ঘড়ি বলছে আটটা। একটা রেস্তোরাতে ঢুকে
গরম গরম ফিশ এন্ড চিপস এক অর্ডার দিলাম। এক পেট মাছ থেকে সাঁটিয়ে,আলু ভাজা গুলো গার্বেজে
ফেলে,মায়ের জন্যে প্যাকেড ডিনার নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। কাল ভোরে বেরুতে হবে হাইল্যান্ড ট্যুরে,টুরিস্ট বাসে। ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলাম,ওটা চা কফির সাথে সক্কাল
সক্কাল সেরে ফেলবো।
দুই
স্কটল্যান্ড
- যেখানে পাহাড় মেশে নীলিমায়
সেই
কোন ভোরে আমার ঘুম ভাঙলো! কি ভীষণ উত্তেজনা,হাইল্যান্ড ট্যুর যাচ্ছি আজ,বাসে বারো ঘন্টার ট্রিপ। স্নান সেরে তিন কাপ চা
ও ব্রেকফাস্ট বানালাম,রেডিমেড
ওটস,আপেল,কলা ও নাটস দিয়ে।
বিদেশে বায়না
চলবে না,ঐটাই খেতে হবে,সঙ্গে নলেন গুড়ের
সন্দেশ,কেক,বিস্কুট,কাজু,আপেল আছে। তড়িঘড়ি নিদৃষ্ট পিকআপ পয়েন্টে চলি। সব থেকে আগে পৌঁছিয়েই
ভুলভাল বাসে উঠে পড়ি। ওদের ঢাউস লোটবহর দেখে আমাদের সন্দেহ হল।
সাড়ে
সাতটায় কাউন্টার খুললে জিজ্ঞেস করে এবার ঠিক বাস! লোকজন আগেই উঠে গেছে,আমি কিন্তু জানালার ধার,বোন তার পাশে,মাকে অন্য জালনার সিট্
দিয়ে দিলাম,সহযাত্রী এক চৌনিক,বেচারাকে বারো ঘন্টা
মুখ বুজে থাকতে হবে!
বাস
চললো শহরের বাইরে,যাবার
পথে জে.কে রোলিংএর (J K Rowling)বাড়ি দেখলাম।
ক্রমে
লোকালয় বর্জিত স্থান দিয়ে বাস চলতে লাগলো,বৃষ্টি পড়ছে ,তাই এখানের সবুজ প্রকৃতি আরো সবুজ।
এখানকার বাস ড্রাইভারই আমাদের কন্ডাক্টেড ট্যুরের গাইড,তিনি অনেক ভালো ভালো কাহিনী
শোনান। ঘন্টা দুয়েকের একটু বেশি হলে,একবার বাসটি থামে আমাদের জন্য
যদি কফি বা অন্য প্রয়োজনে।
আজ স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত লেকগুলি দেখতে যাচ্ছি। এখানে লক (loch) বলে লেককে। ৬০০ বর্গ মাইল জায়গা জুড়ে
লেক আছে স্কটল্যান্ডে। প্রায় সাড়ে একত্রিশ হাজার লেক আছে,তার বেশির ভাগটাই হাইল্যান্ড
প্রদেশে। তার মধ্যে বিশ্বখ্যাত লেক হলো,লক নেস (Loch Ness) স্কটল্যান্ডের এই বিশাল গভীর মিষ্টি জলের সরোবর,২৩ মাইল লম্বা,৯৮০ ফিট গভীর আর সমুদ্রতট থেকে ৫২ ফিট উপরে অবস্থিত। একটি মনোগ্রাহি কাহিনী শুনলাম,যার জন্য এই লেকটি বিখ্যাত।
কথিত আছে,এই লেকে থাকে এক
মনস্টার বা দৈত্য থাকে,নাম নেসি (Nessie)।
ষষ্ঠ শতাব্দে,আইরিশ সেন্ট,কলম্বা (St.Columba)দলবল নিয়ে এখানে
এসেছিলেন। তখন এখানকার বাসিন্দারা বলে
যে,একজন লোক লেকের জলে
সাঁতার কাটছিলো আর লেকের দৈত্যটা লোকটিকে
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে জলের তলায় নিয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি তার এক শিষ্যকে
জলে নেমে সাঁতার কাটতে বলেন। যেই না দৈত্যটা শিষ্যটির কাছে এগোয়,সেন্ট কলম্বা হাত দিয়ে ক্রস
সাইন করে,দৈত্যকে হুঁশিয়ারি দেন
"ব্যাস,আর এগিয়োনা,ওকে স্পর্শ কর না,ফিরে যাও।"দৈত্যটি থেমে যায়,যেন ওকে কেউ দড়ি দিয়ে
পিছনে টেনে নিচ্ছে আর ও পালিয়ে যায়। এর পর থেকে কোনো অঘটন ঘটে নি। যদিও একজন অনেক শতক
পরে নেসির ছবি তুলেছিল বলে দাবি করে কিন্তু এর সত্যতা যাচাই হয় নি।
লেকের পার ঘেঁষে বাস চলে,মনোরম প্রকৃতি দু চোখ ভরে দেখি।এবার যাবো লক নেস
লেকে ক্রুইসে করে মধ্যযুগীয় আরকোয়ার্ট (Urquhart) কাস্টলের ধ্বংসাবশেষ
দেখতে। কথিত আছে সেন্ট কলম্বা সেখানেই বসেই ঘটিয়েছেন অলৌলিক
কান্ডটি।
বাস
থামলো কেউ কেউ যাবে না,তাদের হাঁটা ট্যুর করাবে,এক গ্রামে,কমপ্লিমেন্টারি। আমাদের ট্যুরটি বেশ ব্যয়সাধ্য। নেমেই এক পান্থশালা আছে,পাশেই ছোটো বাগান আর
দেখলাম নেসিকে কালো পাথরে বানিয়েছে। খানিকটা নেমে ব্রিজেরতলা দিয়ে জেটি,সবাই লাইনে অপেক্ষমান।
এলো জাহাজ
সরবে,আমরা জানালার ধারে বসে
উপভোগ করতে লাগলাম জলরাশি আর দূরের নীলচে সবজে টিলা গুলি। জাহাজ থামলে একে একে
নামলাম। দূরে দাঁড়িয়ে আছে দুর্গটি,শুধু টাওয়ারটি দৃশ্যমান আর পাশে ভগ্নদুর্গের শেষ চিহ্ন। একটু চড়াই ভেঙে,গেট দিয়ে ঢুকলাম। বাঁদিকে দেখলাম প্রাচীন কারাগার,অল্প একটু সরু সিঁড়ি
দিয়ে উঠে অন্ধকূপ,আর
জালনা মত একটু খোলা জায়গা জাল দিয়ে ঘেরা। ডান দিকে লেকটি। টাওয়ারে উঠে মন ভরে
গেলো,চারিদিকে জলময় প্রকৃতি,আর জল শেষের সীমানায়
অনুচ্চ নীলচে সবুজ পাহাড়। এরপর ফায়ার প্লেস,নিচের ঘোরানো সিঁড়ি,অলিন্দ দেখে যেতে হবে
উল্টো দিকের কাফে কাম মিউসিয়ামে। সেখানে বাস আসবে আমাদের নিতে। দুপুরের লাঞ্চ সারলাম
স্যান্ডউইচ আর ড্রিংক দিয়ে।
এবার
যাবো গ্লেনকো (Glencoe),পশ্চিম স্কটল্যান্ডের একটি
উপত্যাকা। গ্লেন উৎপত্তি আগ্নেহগিরি থেকে। গ্লেন নামটি এলো নদী কো
(Coe)থেকে,যা এখান থেকে বয়ে চলে। এতক্ষন বৃষ্টিটা
পড়ছিলো না। বাসে এলাম আর ঝপ করে নেমে এলো আকাশবারি। দূর! ঝাপসা হয়ে গেলো
প্রকৃতি,কে যেন স্পষ্ট
ছবিগুলোকে অদৃশ্য তুলি দিয়ে আবছা করে দিলো। গ্লেনকো ভ্যালিটার বিশেষত্ব হলো ছোটো পাহাড় গুলি মনে হয় যেন আকাশ থেকে
গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে ধরায় বুকে মিশেছে। আর যত্র তত্র ঝর্ণায়
ভরা,আকাশের কান্নার মত। কি নমনীয় প্রকৃতি,কি আন্তরিক আহবান। নামার উপায় নেই,বৃষ্টি আর বৃষ্টি। ইউ কের সব থেকে বড়
পর্বত হলো বেন নেভিস (Ben Nevis),বড় অভিমানী সে,সেই সে মেঘের চাদরে মুখ লুকালো আর তার কোনো পাত্তাই পেলাম না। এবার ফেরার পালা। রাস্তায় প্রচুর জ্যাম,এক্সিডেন্ট ছিল,ঘুর পথে ফিরলাম প্রায়
সাড়ে নটায়। চাইনিস
হোটেলে পেট পুজো করে আজকের মত হোটেলে ফিরলাম।
তিন
স্কটল্যান্ডের
রাজধানী: এডিনবরা- সাত পাহাড়ের দেশ
ঘুম
থেকে উঠলাম কালকের হাইলন্ড ভ্রমণের সুখ স্মৃতি নিয়ে। আজ শুধু পায়ে পায়ে
দেখবো এনডিনবুর্গ শহর,যেখানে
আনাচে কানাচে ইতিহাসের নির্বাক নিদর্শন। রোমান ব্রিটেন ভাইকিংরা
স্কটল্যান্ডে কত বার আক্রমণ করেছে। এডিনবরা তাই পাহাড়ের উপরে,শত্রুর আক্রমণ রোধ
করবার জন্যে। এখানে বাসে কন্ডাক্টেড সিটিট্যুর
করায়,তাকে বলে হপ এন্ড হপ
ট্যুর। সারাদিন ধরে বাসে যতবার
ইচ্ছে যেতে পারো,বাসে বসে ভাষ্যধারার সঙ্গে দুচোখ ভরে শহর দেখো কিংবা
যেখানে ভালো লাগে নেমে পড়,দেখে শুনে ঘুরে বেরিয়ে
আবার আরেকটা বাসে উঠে পড়। হোটেলের সামনে থেকে
একটু হেঁটে,সিটি
ট্যুর বাস স্টার্টিং পয়েন্ট,মাকে নিয়ে দুই বোন সহজেই উঠে পড়লাম টুরিস্ট বাসে। আমি ভালো করে সব কিছু
উপভোগ করবো বলে একেবারে দোতলা বাসের হুডখোলা জায়গায় বসলাম। বৃষ্টি হলে ?কুছ পরোয়া নেহি। ছাতার তলায় বসে দেখবো
শহরটি। যাত্রা
শুরু হলো প্রথমে হলিরুড প্যালেস,যা কুইন অফ স্কটের অফিসিয়াল রেসিডেন্স। তারপরে ৬৪০ একর ঘিরে
হলিরুড পার্ক আর স্কটিশ পার্লামেন্ট। সাইন্টিফিক মিউসিয়াম "ডাইনামিক
আর্থ"। একটু ট্রেক করলেই প্রাচীন আগ্নেহগিরি "আর্থার'স সিট"। যেতে আর পারলাম কৈ,বাসে বসেই দেখলাম যা
দেখার তবে মন ভরলো না। তারপর শহরের দিকে এগোলো বাসটি। দূরে সমুদ্র দেখলাম। এগিয়ে চললো "রয়েল
মাইল" রাস্তায়,যা
হলিরুড প্রাসাদ থেকে এডিনবরা কাসল অবধি পাথরে বাঁধানো রাস্তা। এখানেই স্কটল্যান্ড
মিউসিয়াম,চিলড্রেন্স মিউসিয়াম,হ্যারি পর্টার্স শপ,সেন্ট গিলেস
ক্যাথিড্রাল ইত্যাদি। মেডিকেল কলেজ যেখান থেকে কত আবিষ্কার হয়েছে। সব দেখি বসেই বসেই। এর পর আসে গ্রাস
মার্কেটে। গ্রাস মার্কেটের একটা ইতিহাস আছে - মধ্যযুগে এটা সরকারি বধ্যভূমি বা
ফাঁসি দেবার জায়গা ছিলো। মার্কেটের মাঝে একটা খোলা জায়গায়,একটা কালো গাছে, ফাঁসির ব্যবস্থা করা
হতো।অনেক আগে,সব পুরোরবাসীকে আহ্বান করা হতো "শোনো শোনো সবাই,শোনো বাচ্চা বুড়ো,ঠাকুমা দিদিমা,দাদু দিদিরা দাদারা,মাসিমা পিসিমা আর যে
আছো,সবাই শোনো আগামী - তারিখে - লোকের ফাঁসি বা গিলোটিন করা হবে সবাই
এসে উপভোগ করো ! "এই ভাবেই সর্ব সমুখে,দীর্ঘ ২ বছর কারাগারের আঁধারে থাকার
পর,রানী ম্যারি স্কটকে
গিলোটিনে দেওয়া হয়েছিল। একটি দোকান আছে "হাফ হ্যাংইট মাগী " যার গল্পটা হলো ৭২৪ সালে মার্গারেট ডিকেন্স
নামে এক মহিলাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল,তার জারজ সন্তানকে হত্যা করার জন্যে। ফাঁসিতে মারা যাবার পর
গাড়িতে,লাশ মার্গারেট চোখ খুলে
জেগে উঠে! আইনত এক অপরাধে দুবার ফাঁসি দেওয়া যায় না,সরকার তাই তাকে
দেয় ছেড়ে।
এবার
এলাম এডিনবরা দুর্গে তারপরে আবার সেই স্টার্টিং পয়েন্টে যাত্রা শেষ। বাস থেকে নেমে লাঞ্চ
খাওয়া হল মা খেলো তাঁর প্রিয় বার্গার ও আপেল পাই আর আমরা নানান রকম ফ্রাইড চিকেন
সঙ্গে কফি। এবার
মাকে হোটেলে গ্যারেজ করে আবার বাসে উঠি,এবার জায়গাটা ভালো লাগলেই নেমে পড়বো। নামি গ্রাস মার্কেট হেঁটে চলে বেড়াই। যাই এডিনবরা কাসলের
দিকে,কত কি চোখে পড়ে,স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত
ব্যাগপাইপার,এক মহিলার হাতে বসা
মস্ত প্যাঁচা,খুব সুন্দর আরো দেখি
শেকলবাঁধা লোক স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে,তরোয়াল নিয়ে লোকরা ফাইটিং করছে। দারুন লাগে দেখতে। এইসব কি বাসে বসে দেখা
যায়? চলি পায়ে পায়ে দুর্গের
দিকে,রাস্তা বেশ অপরিসর,গাড়ি যায় না তবে
দুর্গের সামনেটা বেশ বড়ো প্রান্তর। পথের ধারে কত ছোট পাবও আছে। এডিনবরা দুর্গটা দেয়াল
দিয়ে ঘেরা,সুরক্ষার জন্যে। একদিকে আছে এক লেক নাম
"নর লক"। পূর্বে শহরের যত আবর্জনা
এখানেই ফেলা হতো। এই কাসলে কত শত ইতিহাস জমে আছে সেই ম্যারি স্কট ,জেমস VI আরো কত কি। একটি গিফট শপ আছে
মুখেই। এবার
গন্তব্য সেন্ট গিলেস ক্যাথেড্রাল,স্কটিশরা বেশি
ভাগই প্রটেস্টান্ট তাই মেরি বা যীশুর মূর্তি নেই।
এডিনবরার
বাড়িগুলো পাথরের,লম্বা
সোজা আকাশে উঠেছে। অনেক জায়গায় দুটো বাড়ীর মাঝে ফাঁক নেই। স্কটিশ উইন্ডোগুলি
আয়তক্ষেত্রকার বা রেক্ট্যাঙ্গুলার আর বেশ
বড় বড়ো। তখনকার কর নিদ্ধারণ হতো কে কতটা
সূর্য্যের আলো উপভোগ করে তার উপরে। কর কমাবার জন্যে অনেক বাড়িতে
জানালাগুলো পুরোটা বা অর্ধেকটা কালো রঙ করেছে,যাতে বেশি আলো প্রবেশ না হয়। জলের ব্যবস্থা বা জল
নিকাশি ব্যবস্থার ছিল না। টয়লেট ছিলো কি? জালনা খুলে,বালতি ভরে,মানুষের শরীরের বজ্য
পদার্থ বা জন্তু জানোয়ারদের রক্ত,চামড়া,হাড় সব সটান রাস্তায় ফেলা হত। পরবর্তী সময়ে রাত দশটা
থেকে সকাল সাতটা অবধি ময়লা ফেলার সময়
নিদ্ধারণ করা হলো।এখন বাড়িগুলোর বাইরেটা পরিবর্তন করা যায় নি,কিন্তু ভিতরে আমূল বদলানো হয়েছে। আমি যেটা করতে চাই তা হলো (Dungeon
Tou),আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যুর,স্কটল্যান্ডের
অন্ধকারময় ইতিহাস দেখবো শুনবো,রাইড আছে,লাইভ এক্ট হবে,কি রোমাঞ্ছকর! ১৭৮৫
সালে,তৈরী হলো সাউথ
ব্রিজের নিচে। ৯টি আর্চ ও তার নিচে ছিল চেম্বার ভোল্ট। এগুলোর মধ্যে থাকতো
গরিব লোক,খুনে,সিরিয়েল কিলার,দেহোপজীবনীরা আর সমাজ
বিরোধীরা। এগুলো দেখাবে শোতে। বোনকে বলতেই ও বললো ওসব ভূত ডাইনি খুনেদের দেখাবে,যখন তখন লোকে ভয় দেখায়। একবার এইরকম এক শোতে
ওকে একটা কালো রঙমাখা লোক হঠাৎ ওর সামনে এসে হাত নাড়িয়ে ভয় দেখতে শুরু করলো তখন ও
প্রচন্ড রেগে ওকে বিশুদ্ধ বাংলায় জোরে বললো "এই কি হচ্ছে,যাও এখানে থেকে "
লোকটি বাংলা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পগার পার।ও এসব দেখবে না।
তাহলে
এখানে অনেক গাইডেড ওয়াক আছে যেমন হ্যারি পর্টার ওয়াক,ডার্কনেস ওয়াক,ইত্যাদি,রাতের বেলাও তাহলে
ওগুলো দেখি?
অনেক
কষ্টে নিমরাজি হলো। এটা
খুব গা ছমছমে ট্যুর,এনডিনবুর্গের
যত গলিঘুঁজিতে অন্ধকারের জগতের কথা,কুইন ম্যারির গোপন অভিসার, কবরখানার ভূত,ডাইনির সব ইতিহাস আজ
জানবো। "নর লক" লেকে ভর্তি
ছিল শবদেহ,
শহরের
আবর্জনা -ডাইনি সন্দেহ হলে পরীক্ষা হতো,"উইচ
ডাকিঙ "(Witch ducking) প্রথমে মহিলাকে ছুঁড়ে ফেলা হতো ওই লেকে,ডুবে গেলে সে ভালো,আর ভেসে উঠলে সে ডাইনি, তার অন্য আরো
মর্মান্তিক পরিণতি।শহরের প্রাচীরের মধ্যে অগুনিত মৃতদেহ,আর এই সুন্দর পর্বতটি নিচে
মৃতদেহের কবরখানা। কথিত
আছে যখন প্লেগ মহামারীর প্রকোপে এডিনবরা
শহর যখন ছেয়ে গেছে, তখন
রোগীদের বাড়িগুলোতে দেয়াল তুলে বন্ধ করা হতো যাতে ওরা বেরুতে না পারে। তাকে "ব্ল্যাক
ডেথ" বলা হতো।
ডার্কনেস
ট্যুরে যাবো,গাইডকে পাওয়া যাবে সেন্ট গিলেস ক্যাথেড্রালে লাল ছাতার নিচে। বিশাল বড়ো এক লাল
ছাতার আশেপাশে,কিছু ছেলে মেয়েরা ভিড়
করেছে,
আমরা গিয়ে
জড়ো হলাম। একটা সিড়িঙ্গে পানা লোক,একটা লেকচার দিলো,২পাউন্ড ওর ফিস মাথা পিছ। আমরা
ওর পিছু পিছু যেতে লাগলাম,ও সুরুৎ করে একটা সরু ঢালু রাস্তায় সেধিয়ে গেলো,পিছনে আমরা। খানিকটা গিয়ে,বোন বললো,অন্ধকার এরকম করে হঠাৎ
হারিয়ে গেলে?এবার দুজনেই আমরা
উল্টোদিকে হাঁটা লাগালাম।
স্কটল্যান্ডে
কিল্ট বা স্কার্ট,চেক
উলেন কাপড়ের যা পুরুষরা পরতো,খুব বিখ্যাত।একটু শপিং করলাম। তারপর হোটেলে গিয়ে
মাকে নিয়ে ডিনার খেতে বেরুলাম। আজ এক বাংলাদেশী লোকের
রেস্টুরা পেয়েছি,মা
ভাত খাবে। মা চিঙড়ি মাছ অর্ডার করলো,সাদা চিঙড়ি সেদ্দ এলো সঙ্গে খুব ছোট একবাটি ভাত।আমাদের চিকেনও অন্য
খাবার মোটামুটি ছিল। স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল
দেলিকেসি হলো "হাগ্গিস" (Haggis) ভেড়ার পাকস্থলীর মধ্যে
ওর যকৃৎ হৃদয় জিভ আর মশলাপাতি দিয়ে রান্না। ভাবলাম একবার মজা করে
বলি হাগ্গিস খাবে? কিন্তু
মার ওই ডিনারের পরে ঠাট্টা? আবার একটা পাব গেলাম মা জ্যাকেট
পটেটো আর আমরা চীজ ওমলেট খেয়ে হোটেল
ফিরলাম। কাল
সকালে প্লেন ধরে বাড়ি।
(সমাপ্ত)
দ্যুতি রায়:কপিরাইট
লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন