জীবন অব্যয়





দীর্ঘ কবিতা


ঘুম,রুবি আর নর্দমা
এই তিনটেই খুব তীব্রভাবে পাচ্ছে আমার একসঙ্গে
কোনটাকে আগে বেছে নেব ভাবতে ভাবতে
চোখ বন্ধ করে
বহুদিনের না দেখা কল্পনাকে দেখতে গিয়েছিলাম
না হল তাকে দেখা,না হল ভাবা
সজনে ডাঁটার মত
ঘুম আমাকে চিবাতে শুরু করল


মাত্র দশটা বছর আগেও
নর্দমা বলে জীবনে কিছু ছিল না
শব্দকোষেও নর্দমার গন্ধ পাইনি কখনো
তখনো আমার জুলফিতে কাঁচা নিমফলের রঙ
ওষুধের গুণে পরিপূর্ণ
জলে আর স্বপ্নে যত হুরিপরি ছিল
রামধনুরা ধার নিত
তাদের চোখের রঙ
রুবি অবশ্য কোনোদিনই
আমাকে অলংকৃত করার কথা ভাবেনি
নিজের রঙ আর রূপে মত্ত সেই চিকনবতীর গজগামিনী-ঢঙ
আমার সমস্ত রাস্তাকে নিয়ে গিয়ে হাজির করত কানাগলিতে
বৃষ্টিবিহীন বর্ষায় বন্যার্ত আমার নৌকো
নাব্যতার অভাবে হাঁটতে পারে না
শুকনো কাদার মধ্যে বসে বসে দেখি
তৃষ্ণার শরীরে হাজারো চর্মরোগের কারুময় জ্বালা



রুবি,নর্দমা আর ঘুম
কে কাকে কখন কীভাবে কেনইবা খোঁজে
অন্বেষণ, অন্বিষ্ট, অম্বেষণকারী কেউই জানে না
একজন আর একজনের সঙ্গে যেন
অবৈধতার বৈধতা দিয়ে বাঁধা আছে
সকলেই জানে মন্থনে বিষ
বিষে জ্বালা
দহনবিহীন এই জ্বালায় কেবল মৃত্যুর আস্ফালন
অমৃত থাকে না


তবু ডিজিটাল ঘড়ির মত অবিরাম
রুবি তার বিকর্ষণের বড়শি দিয়ে গেঁথে
আমাকে নর্দমায় নামায়
নর্দমায় আমি কিছু খুঁজি
কী খুঁজি জানি না
পাচ্ছি,কী পাচ্ছি না, বুঝি না
যন্ত্রচালিত আমার খোঁজ
নর্দমার গর্ভাশয় ঘেঁটে ঘেঁটে কান্না তুলে আনে
কান্নার স্তূপ ফেলে রাখে রাস্তার পাশে পাশে
রুবির রূপ আর গুণ নিয়ে যারা গবেষণা করে
দামি দামি ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে
রুবির বাড়ির দিকেই যেতে যেতে তারা থুতু ফেলে যায়
এইসব কান্নার স্তূপে

নর্দমা ঘাঁটতে ঘাঁটতে ক্লান্ত আমি একসময়
নর্দমাতেই ঘুমিয়ে পড়ি
শয়নে পদ্ম লাভ হয়




নর্দমা,ঘুম আর রুবি
ঘুমের একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে
হুবহু স্বপ্নের মত না হলেও
এক জাতীয় স্বপ্ন আছে তার কাছে প্রচুর
অপদেবতারাও যেরকম দেবতা
অমানুষরাও যেরকম মানুষ
ওগুলোকেও মানুষ সেভাবে স্বপ্ন বলে
কখনো সিঁড়ির মত সিঁড়ি
আকাশের মত আকাশ
পুকুরের মত পুকুর থাকে সেখানে
আবার কখনো ছেঁড়া জটপাকানো চুলের মত সিঁড়ি
কিংবা পায়রার ডানার মত
কখনো পলছাতুর মাঠের মত আকাশ
কিংবা ব্রহ্মপদ্মের মধ্যে ওং
কখনো কখনো ফুঁপিয়ে কাঁদা আগুনের মত পুকুর
সে ইচ্ছে করলে আমাকে রাজাধীরাজ
ইচ্ছে করলে ল্যাঙট ছিঁড়ে যাওয়া ভিখারী
কিংবা একই সঙ্গে শাহজাহান ও দব্রুপান্না

ঘুমের মধ্যে রুবি আমার সঙ্গে সারাক্ষণ
আমি রুবির কপালে টিকা
হাতে আংটি
কোমরে বিছে
রুবি আমার খিদের ভাত
লজ্জার কাপড়
চাদরের ওম

নর্দমা বলে কিছু থাকে না
ঘুমে প্রচুর কিংখাব প্রচুর মখমল
স্তূপাকার সাদা বাতাসা



ঘুম,রুবি আর নর্দমা
খুব তীব্রভাবে ছেড়ে যাচ্ছে আমাকে একসঙ্গে
আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
বিকল হয়ে যাচ্ছে সব স্নায়ু
আমার উঠোনের বট আর তুলসী
মারা যাচ্ছে একসঙ্গে
একসঙ্গে ভেঙে পড়ছে হিমালয় আর শুশুনিয়া
কোনো যন্ত্র আর আমাকে চালিত করছে না
কিছু খোঁজার জন্য
খোঁজ বলে কোনো ক্রিয়াপদ
ভূব্রহ্মাণ্ডে নেই আর

এতসব নেইএর মাঝে দাঁড়িয়ে
এইমাত্র নাসা থেকে খবর পেলাম
নাশ নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই
এই পৃথিবীর মত
আরও তিনটে পৃথিবীর খোঁজ পেয়েছে তারা অন্তরীক্ষে
সেসব পৃথিবীতে রুবির কোনো অভাব হবে না
প্রত্যেকেই রুবিকে
এবং রুবিও প্রত্যেককে পাবে খুশি মত

দিশারী মুখোপাধ্যায়: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন