দীর্ঘ কবিতা
মুগ্ধতা
ছড়িয়ে যেতে যেতে
বহূদূর
চলে গেলে, ওই দিগন্ত পর্যন্ত
অতটা
দূরে কী করে পৌঁছে বলো মানবীয় চোখ আমার?
তুমি
বললে, ‘যা বলার অন্তর থেকে বলো।’
আমি
বললাম, অন্তরে বিশ্বাস নেই কবির।
বিশ্বাস
ভাঙতে ভাঙতে, অন্তর টুকরো হতে হতে
যখন
অবশেষ কিছু থাকে না
তখনই
না একজন মানুষ কবি হয়।
এসব
কথা শুনে তুমি খুব হাসলে। বললে,
-কবিরা
প্রিয়ার সৌন্দর্য বর্ণনায়
যত
উপমা, উৎপেক্ষার ব্যবহার করেÑবাস্তবে তার অর্ধেক
ভালোবাসলেও
প্রিয়াদের পৃথিবী ভরে উঠত স্বর্গের সুষমায়।
-একজন
কবিকে দেয়ার মতো কী আছে একজন নারীর
কবিকে
তাই কল্পনা করে নিতে হয় সমান্তরাল আরও অসংখ্য নারী।
ঘর-সংসার-পৃথিবীর
কী আছে কবিকে দেয়ার মতো
কবিকে
তাই কল্পনা করে নিতে হয় সমান্তরাল আরও ঘর-সংসার-পৃথিবী।
-কবি
যখন একজন পুরুষ তার জন্মের জন্য নারীর প্রয়োজন
‘বিন্দু থেকে তার সিন্ধু’ হওয়ার জন্য নারীই প্রথম অবলম্বন।
-পুরুষ
ছাড়া নারী তো ধুধু মরুভূমি সমান।
কৃষিজ
জমির মতো পুরুষের কর্ষণেই ফলবতী হয় নারী।
-এরপরও
পুরুষের কারণেই নারী বিপথগামি।
-সত্যকে
করব না অস্বীকার। কিন্তু কবির ভেতরের হাহাকারও তো সত্য।
তার
দুর্দমনীয় তৃষ্ণা, অজানা জগতের প্রতি আকর্ষণ
কেবলই
যে তাকে গৃহত্যাগী হতে প্রলোভিত করে তাও কি সত্য নয়?
-কবি
মানেই যদি হয় রাক্ষুসে ক্ষুধা, সন্নাস-বৈরাগ্য,
কবি
মানেই যদি হয় অজানা চিরন্তনের জন্য হাহাকার
তাহলে
কবির জন্য নারীর ভেতরে এত তোলপাড় কেন হয়?
-কারণ, একমাত্র কবিই পারে মনের মাধুরী দিয়ে তাকে সাজাতে,
যেমনটি
সে চায়।
-মুগ্ধতা
ছড়িয়ে যেতে যেতে
বহুদূর
চলে গেলে, ওই দিগন্ত পর্যন্ত
অতটা
দূরে কী করে পৌঁছে বলো মানবীয় চোখ আমার?
-কবিরা
না অন্তর্যামী, মানবীয় চোখের দোহাই কেন দিচ্ছ তবে?
-ভুল, কবিরা মোটেও অন্তর্যামী নয়
কখনো
সখনো তাদের দৃষ্টি অন্তর্ভেদী হয় বটে।
কবিরা
আসলে বিক্ষুব্ধ জনতার অসংঘবদ্ধ অংশ
তারাও
লড়াই করে, এমনকি প্রতি মুহূর্তে
কিন্তু
একা, তার একাকিত্বই তাকে কল্পনাবিলাসী করে
তোলে,
দান
করে বৈরাগ্য।
-কবির
কল্পনা নারীর জন্য সুখকর কিছু নয়, কল্পনা দিয়ে জীবন চলে
না।
-তবু
কল্পনাই কবির ঘর।
কল্পনা
দিয়েই কবি তার ঘরে আগুন লাগায়
আর
সেই আগুনে পতঙ্গের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে নারী।
-আর?
-আর, সারাজীবন ধরে যা কবি চেয়েছে গভীরভাবে, পায়নি,
পাবে
না কোনোদিনÑতাই সে সাজিয়ে নেয় কল্পনার রূপালঙ্কারে।
কবি
বিরক্ত, প্রচলিত সত্যের সঙ্গে প্রকৃত সত্যের
ব্যবধানে
কবি
ভীত, চারপাশে নষ্টদের দৌরাত্ম্যে
কবি
ক্লান্ত, অদৃশ্য শিকলে বন্দি থেকে থেকে।
প্রচলিত
ধারণা সবার ঘর আছে, সবাই খায়, স্বপ্ন
দেখে
কিন্তু
বাস্তবতা অনেকেই রাস্তায় রাত কাটায়, না খেয়ে থাকে, স্বপ্নচ্যুত,...
কবির
কিছু সত্য আরও কঠিন,
কবিরা
আসলে পরাজিত মানুষÑ
শিশু
যখন কেবল হামাগুড়ি দেয় তার অবস্থা ভাবো,
হাত-পা
ছুঁড়ে ক্রন্দন করা ছাড়া কিই-বা করার থাকে তার?
এমনই
কবির প্রতিবাদÑ
শক্তির
দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পরিণত হয় ব্যর্থ হাহাকারে।
-ওপর
থেকে নির্দেশ রয়েছে কল্পনাবাদিতার পথ পরিহারের।
আল্লাহ, বেহেস্ত ও দোজখে অধিকাংশ কবিরই বিশ্বাস নেই
অনেকেই
মৃত্যু পর্যন্ত থাকে সন্দেহের দোলাচলে।
-অস্বীকার
করব না। কবিরা কখনো কখনো নিয়ম ভাঙে, রুখে দাঁড়ায়।
একাই
একজন কবি পরিণত হন একটি বিক্ষোভ মিছিলে
একাই
একজন কবি পরিণত হন সহস্র ডিনামাইটে।
গাজী
সঈফুল
গাজী সাঈফুল ইসলাম: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন