চক্রব্যূহ






দীর্ঘ কবিতা

খুব বুঝতে পারছি,
আর কিছুদিনের মধ্যেই
আমি সম্পূর্ণ পাগল হয়ে যাবো।

ভোরবেলায় একটা স্বপ্ন দেখলাম,
দেখলাম দিল্লীর নবাব হুকুম করছেন-
            কে কোথায় আছো,
            সমস্ত ভূখন্ড ফুঁড়ে সবাই
            এক কলসী করে মিষ্টি        
            জল নিয়ে এসো হে।
           
রাণীমা বলছেন-
             যে যেখানেই থাকো,
             একটা একটা লাল জবা
             নিয়ে এসো তো প্রথম
             প্রেয়সীর রেণু মাখিয়ে।

রাজকুমারী হাঁকলেন-
             এই, কে আছিস,
             আমার জন্যে একটা নীল    
             নদী নিয়ে আয় তো,
             যেখানে কানু স্নান সারে
             গোপিনীদের মাঝে।

আচম্বিতে ঘুম ভাঙতেই দেখি
কাগজ ওয়ালা হাঁকছে-   
             চেন্নাইতে জলের জন্য রক্ত ঝরছে....
কবিরা বলছে-
             কবিতা আজকাল শুধুই ঈর্ষা ফেরি   
             করছে.....
 শ্রমিকরা বলছে-
              নদীর নীল জলে দেখো লাল হলুদ মরা    
               মাছ ভাসছে....

খুব বুঝতে পারছি,
আর কিছুদিনের মধ্যেই আমি
বেহেড মাতাল হয়ে যাবো।
আর ঠিক তখনই জগাই
আমাকে কলসীর কানা মারবে,
আর মাধাই আমাকে খুব চেনাবে,
হাতে ধরে দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ চেনাবে।

চেনাবে
       হাই উঠলেই গাছেদের কিভাবে রান্নায় বসতে     
       হয় শ্বাস নেওয়ার জন্য।
বোঝাবে
        সমস্ত শিকড় কেমন গান্ধারী সাজে জগতের   
         কিছুই চাক্ষুষ না করার জন্য।
দেখাবে
         সুঠাম কান্ডগুলো সব জেনেও কেমন বিকর্ণ 
         সাজে বেঘোরে প্রাণ দেওয়ার জন্য।

আমি চিৎকার করে উঠি মাঝে মাঝেই।
ঘেমে নেয়ে একশা হ'ই।
ডাকি,
মাআ্আ...
মাআআআআআ...
আমাকে জোরে একবার চেপে ধরো না বুকে।

আমার সব বোধ কেমন গুড়ো গুড়ো হয়ে
 হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে,
কে আছো,ধরোওও.. ওদের ধরো......

আর ঠিক তখনই দেখি চারপাশে
কত শত আত্মীয় পরিজন
ছুটে আসে উদ্ধারে।
দ্রোণ, দ্রোণি, কৃপ,কর্ণ,
শল্য, কৃতবর্মা,শকুনি,
বৃহদ্বল,ভূরি,ভুরিশ্রবা,
শল, পৌরব, বৃষসেন....

সবাই সবাই হাত বাড়িয়ে
আমায় কোলে নিতে চায়।

আর একা আমি কার কোলে
আশ্রয় নেবো?
ভেবে পাইনা...
শুধু প্রভূকে ডাকি,
হে পিতা আমাকে শান্ত করো,
আমাকে বিচক্ষণ করো।

দূরে তখনো দেখি তৃতীয়
পান্ডবের মস্তিষ্ক প্রক্ষালনে ব্যপৃত বাসুদেব।

ইউ তু ব্রুতাশ..... অসহ্য!
ষড়যন্ত্র! ধর্ম সংস্হাপনাও.....
খালি পাছা আদুরী কোমর দোলায়
দু মুঠো খই এর জন্যে....
গোপীনীদের জ্বালা বোঝো??

নিয়তি, ধীর পায়ে এগিয়ে দেয় অশ্বত্থমা হতে।
টাটা বিড়লা আদানী আম্বানী নীরব-এ মিটিমিটি হাসে।

আজ আমার চাষের মাঠে ইটের ভাঁটা,
বসত ভিটেয় মোবাইল টাওয়ার,....
ছেলের পকেটে আই-ফোন,
গিন্নির গলায় হেডফোন
আর সানগ্লাসের লেপ্টা লেপ্টি

আই কার্ডে ওরাং ওটাং-এর ছবি,
আধার কার্ডের বেশির ভাগ ঘর অন্ধকার।
ডেবিটের ঘর শূন্য,
ঝোলায় টুকি দেয়
দেশি বিদেশি একুশটা ক্রেডিট কার্ড।

অভিমন্যূ, তুমি চলো,
একপা একপা করে চলো,
চক্রব্যূহ প্রস্তুত। বুদ্ধিজীবী,
চলে এসো.... আট তলা
আঠেরো তলা আঠাশ তলা পেরিয়ে
উঠে এসো সোওজা ওপরে , 
দেখো আটান্ন তলায় তোমার অপেক্ষায়
সুরালোকিত ইন্দ্রপ্রস্থ কেমন মদিরা সাজিয়েছে....

দীপঙ্কর মুখার্জী: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন