ভ্রমণকাহিনী
সময়টা
ছিলো জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ - ঢাকা থেকে আমেরিকা বেড়াতে যাবো গরমের ছুটিতে বাচ্চাদের
নিয়ে। উদ্দেশ্য দেশ দেখা এবং সেই সাথে বাচ্চাদের মামাবাড়ী বেড়ানো। ফ্লাইট হচ্ছে ঢাকা
থেকে ‘কাতার' হয়ে শিকাগো, তারপরের অংশে শিকাগো থেকে এমেরিকান এয়ারওয়েজে করে সেইন্ট
লুইস এয়ারপোর্টে নেমে গাড়ীতে চড়ে ছোটভাইদের বাড়ী পৌঁছানো। আমেরিকা ভ্রমণের বেলায় এটা
আমার দ্বিতীয় যাত্রা। প্রথমবার আমিরাত এয়ারোয়েজ এ- 'দুবাই' হয়ে 'ডালাসে' গিয়েছিলাম
এবং এতো খারাপ অভিজ্ঞতা এর আগে ছিলোনা। এবার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে কিছু ঘোর গেঁয়ো বাঙ্গালিপনা
দেখে অবাকও হয়েছি লজ্জাও পেয়েছি যথারীতি গোপনে। কারণ বলছি পর্যায়ক্রমে - প্লেন 'টেক
অফ ' করে - হযরত শাহ্ জালাল এয়ারপোর্ট ছেড়ে বেশ কিছুদূর চলে যাচ্ছে, তবুও অনেকেই মোবাইলে
কথা বলেই চলেছেন। এয়ার হোস্টেজ যথারীতি সীট -বেল্ট বাঁধতে বলার জন্য সবিনয় অনুরোধ করেই
যাচ্ছে লাউড স্পীকারে্র মাইক্রোফোনে, তাতেও কাজ হচ্ছে না। অতি উৎসাহে বাঙ্গালী বিদেশগামী
মানুষেরা দাঁড়িয়ে নিজের সাথে এর ওর ছবি তুলেই যাচ্ছে। কেউ দাঁড়িয়ে উৎসুক হয়ে উচ্চস্বরে
চেঁচিয়ে প্রতিবেশী বন্ধুর খোঁজ নিচ্ছে, ‘মকবুইল্লারে তুই কই বইছোত’? এয়ারহোস্টেজ ভাবলেন,
হয়ত বিদেশী ভাষা এই বঙ্গভাষীরা বুঝতে পারছেনা, এই ভেবে মহান বিদেশিনী - খাঁটি বাংলায়
ভাঁজ করা কন্ঠে - ঘোষণা দিয়েই চললেন ' ডইয়া কড়ে বশে পড়ুন - 'দইয়া কড়ে '! নাহ! নির্মম
জাতির কোন ‘দয়া' প্রদর্শন আপাতত করছেনা। মনে মনে হতাশ হই, কিন্তু কে শোনে কার কথা?
কোনোই পাত্তা নাই! পরে পাশের ভদ্র লোকের কড়া খাঁটি বাংলার অনুরোধে অগত্যা রফা হয়।
'কাতার'
এয়ারপোর্টে নেমে হুড়মুড় করে ছুটছে তারা নিজ দেশের ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে। শিকাগো
থেকে আমাদের ফ্লাইট ঘন্টা দুয়েক পরে ‘কানেক্টিং' হবে, এই ফাঁকে বাচ্চাদের খাইয়ে নিচ্ছি
মেগডোনালসের চট জলদী রেডী খাবার। আশেপাশে চোখ রাখতে সেই বাঙ্গালীপনার দৌরাত্ত এখানেও
চোখে পড়লো। ঢাকা থেকে 'হাজীর বিরিয়ানী ' কিনে নিয়ে এসে আত্মীয় স্বজন মিলে এয়ারপোর্টেই
সিটে পা' তুলে বসে খাচ্ছে। এদিক সেদিক পলিথিন খাবারের বাক্স, বিরানির বিশেষ ঘ্রাণ ছড়িয়ে
ছিটিয়ে ছড়িয়ে একাকার। ঢাকা থেকে তাঁরা আত্মীয়দের জন্য বিশাল মন নিয়ে বিরানির স্বাদ
চাখাচ্ছেন, বাড়ী নিতে নিতে নষ্ট হবার ভয়েই সেখানে বসেই স্বাদ আহরণ চলছে। লাইন ধরে ওয়াশ
রুমে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে যন্ততন্ত টিস্যু ব্যবহৃত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। পানির হ্যান্ড
শাওয়ার অপব্যবহার করে পুরো 'লবি' পানিতে থই থই করে ফেলেছে তারা। নিজের উপর যেন ক্যা্মন
একটা দায় এসে পড়ে অজান্তেই। মনে কষ্ট নিয়ে আমি বাঙ্গালী সরে পড়ি লজ্জায় নিরাপদ দূরত্বে।
সখের
শিকাগো’তে অবতরণ
'শিকাগো'
এয়ারপোর্টে অবতরণ করি বাচ্চাদের সাথে নিয়ে। বেল্টে' মালপত্র নিতে গিয়ে দেখি সেখানেও
বিরাট কাহিনী। বিমানে চলাচলের নিয়মনীতিতে খাবার পরিবহণের বেলায় কিছু বাঁধা ধরা নিষেধ
থাকে। বাঙ্গালী এ নিয়মকেও ডিঙ্গিয়ে যায়। চট্টগ্রামের এক ভদ্রলোক শুটকির পোটলা নিয়ে
রওনা করেছেন এমেরিকায়। 'চেক' করার সময়ে ব্যাগ তল্লাসী চললো, তাতে শুঁকে শুঁটকীর সন্ধান
পেয়ে গেছে বিজ্ঞ সায়মেয়’। ততোক্ষণে তারস্বরে ব্যাগের চারপাশে লাফাচ্ছেন কুকুর ডিটেকটিভ,
স্বজাতিয় আব্দার টেকেনা তার কাছে কোনমতেই। পোটলা খুলে তল্লাসি চলছে - কৌতূহলি হয়ে উঁকি
দিয়ে তাকিয়ে দেখি, মহান শুঁকটির পলিথিন ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে উৎকট গন্ধে ভরা লইট্টা আর
রূপচাঁদার শুকনো মমি দেহ। এদিকে এয়ারপোর্টের এই অঞ্চল পুরোটাই দম বন্ধ গন্ধে তীব্র
হয়ে উঠছে ক্রমাগত। ততক্ষণে আমার লাগেজ চলে এসেছে ট্রলিতে, সেগুলো টেনে টুনে তুলে নিয়ে
গেটের দিকে যাচ্ছি, উল্লেখ্য যে, আমার ব্যাগের ভিতরেও দেশী ঘানিভাঙ্গা সরিষার তেল,
ঘাওয়া ঘি, কুরবানির কালো গোশভুনা, মলা মাছের শুটকিও ছিলো, কিন্তু কপালের জোরে আর আমার
হাজবেন্ড মহাশয়ের পরিপক্ক হাতে মজবুত প্যাকিয়ের ফাঁক গলে সেসবের সুগন্ধের জানানি দিতে
পারেনি খাবারেরা, এ পর্যায়ে কুকুর ডিটেক্টিভও ফেইল মারে মনেহয়। আরেকটা কারণ আমার ব্যাগ
যখন বেল্টে আসছে, শিকাগো এয়ারপোর্টের অফিসাররা ব্যস্ত ছিলো ওই চিটাগনিয়া’ শুঁটকির গন্ধ
বন্ধকরার জন্য বেতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো কাজেই আমার প্রতি এতো মনোনিবেশও করতে পারেন নাই
তাঁরা। এরপরের পর্যায়ে আরেরিকান এয়ারলাইনে করে শিকাগো থেকে এস টি এল' অর্থাৎ সেন্ট
লুইসের পথে যাত্রা করি এবং ঘন্টা খানেক পরে সেন্ট লুইসে যেয়ে পৌছায়। এয়ারপোর্টে নামার
পর পরই রোমিং ফোনে ছোটভাই কল করে জানতে চায় আমাদের অবস্থান।
ছোটভাই
ফোনে জানায় কত নাম্বার গেটে সে অবস্থান করছে আমাদের জন্য। ওর গলা শুনতেই যাত্রার এই
অসহযোগীয় অভিজ্ঞতাও গা' সয়ে যায়। আমিও তো ‘বাঙ্গালিই! যারা কিনা প্রায় সর্বংসহা গোছের
বলে আমি মনেকরি। বহুদিন পরে ভাই, ভাতিজী ও ভাইয়ের বউয়ের চেহারা দেখে আনন্দে উৎফুল্ল
হয়ে উঠি। মিলনের আনন্দের সে উপলদ্ধি যে উপভোগ করতে পারে তাঁকে আর বলে বোঝাবার প্রয়োজন
নেই। সবাই মিলে অনেকদিনের জমানো কথা বিনিময় করতে করতে ছোটভাইদের বাড়ী মিজোরী বলোইনের
'টিমকা' রোডে যেয়ে উঠি।
পরের
যাত্রা - এমেরিকার বিভিন্ন কাছাকাছি 'স্টেটস' ঘুরে দেখার শখ।
এ কারণেই
ভ্রাতা পত্নি ও ভাতিজি সব যার যার কর্মক্ষেত্র থেকে পাক্কা ১০ দিন করে ছুটি মঞ্জুর
করিয়ে রেখেছে ভ্রমণের তারিখ নির্ধারণ করে। যাত্রার লক্ষ্য বাই রোডে' বিভিন্ন শহর দেখতে
দেখতে যাত্রা বিরতি করে করে মিজোরী, সেন্ট লুইস থেকে ফ্লোরিডার বীচ পর্যন্ত জীপ' এ
যাবো তারপরের যাত্রা এমেরিকান ক্রুজে করে সমুদ্র মোহনা ও বন্দরগুলো ঘুরে দেখে মেক্সিকো
পর্যন্ত পৌঁছানো। মিজরী থেকে ফ্লোরিডা মিয়ামি বীচ ১,৩৫০ মাইল দূরত্ব সড়ক পথে পাড়ি দিলে
পাক্কা একদিনের পথ, ভেঙ্গে ভেঙ্গে জিরিয়ে সুস্থে গেলে দুই দিন কেটে যায়। ‘বলোইন’ থেকে
ফ্রাঙ্কলিন কাউন্টি দিয়ে টেনেসি হয়ে আটলান্টা - জর্জিয়া -অর্লান্ডো পার হলে পৌঁছানো
যাবে 'মিয়ামি' বীচে।
পূর্ব
পরিকল্পনা অনুসারে কথা ছিলো, কার্নিভ্যাল এক্সটেসি ক্রুজের ভ্রমণ সেরে ফিরতি পথে যেতে
যেতে আমেরিকার বিভিন্ন শহর এবং গ্রামগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে যাবো ফ্লোরিডা থেকে সেন্ট
লুইস যাবার দিকে। আমার আবার বড় শখ, গাছ গাছালি ঘেরা মাঠ ঘাট - বন বনানীর প্রাকৃতিক
দৃশ্য আর ওদের প্রাণ প্রাচুর্য দেখা। এমেরিকার এক স্টেটস থেকে অন্যটাতে গাড়ীতে গেলে
অপরুপ সবুজ উপত্যকা, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে কিংবা খামারের দেখা মেলে। সেসব অচেনা রাস্তা
কিংবা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে বসে জিড়োনো, সেখানের নতুন অঞ্চল সম্পর্কে কছুটা হলেও,
সে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, একটু উৎসুক হয়ে জানাজানি করে নেবার ইচ্ছেতেই - এমন থেমে
থেমে আমাদের যাত্রা হবে। যথারীতি সেইমতো - আমার ছোট ভাই এবং তাঁর সহধর্মিণী এ কথা রক্ষার্থেই
মায়ামি বীচের গাড়ী পার্কিং এ জীপখানি রেখে আমরা সবাই উঠে যাই ক্রুজে।
ক্রুজের
ভাসমান ভ্রমণ
কার্নিভ্যালের
এক্সট্যাসি - এক ফ্যান্টাসি সমুদ্রজাহাজ
কার্নিভ্যালের
এক্সট্যাসি ক্রুজ কার্নিভ্যালের ফ্যান্টাসিপূর্ণ জাহাজ। প্রায় ৭0,000 টন ওজনে তৈরি।
বিভিন্ন বিনোদনমূলক ফ্যান্টাসি শ্রেণীর জাহাজ। প্রশস্ত বৈশিষ্টের ১৮৫ বর্গ ফুট মানের
কেবিন। ২০৫০ জন যাত্রী পরিবহণে সক্ষম। প্রায় ১৪ তলা বিশিষ্ট একটা ছোট্ট শহরের মতো।
যেখানে ৯ তলা পর্যন্ত ক্যাবিন, তার উপরে খাবার জায়গা, ২৪ ঘন্টায় সেখানে রান্না হচ্ছে
বিভিন্ন দেশের রেসিপিতে তৈরি চমৎকার স্বাদের সেসব খাবার।
ডাইনিং
অপশন দুটি বেশ বড় এবং মার্জিত। প্রধান ডাইনিং এ - ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সাজানো
ভোজন কক্ষ। কাছাকাছি রেস্টুরেন্ট বুফে তে, ২৪ -ঘন্টা পিজা, সেইসাথে ২৪ ঘন্টা রুম সার্ভিস
এছাড়াও কোন চার্জ প্রদান করাও যায়। একটি ‘সুশিবার’ সাধারণত সেখানে পাওয়া যায় ৫-৮
টা পর্যন্ত প্রতিটি সন্ধ্যায়। তবে সময়ের হেরফেরে পরিবর্তিতও হতে পারে।
কার্নিভ্যালের
এক্সট্যাসি জাহাজের উপরে জলক্রীড়া করার জন্য, দুই পুল, ছয়টি গরম- টাবের এবং তিন পানির
স্লাইড করা সুইমিংপুল। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডেক বেশ রকমের শিথিল। সমুদ্র
দেখার জন্য দারুন খোলা জায়গা ডকের চারিদিকে। শুল্কমুক্ত শপিং, অন্য সব রকম বিনোদনের
কার্যক্রম এবং যোগাযোগের বাইরের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য দিন জুড়ে আছে ইন্টারনেট ক্যাফে।
তা ছাড়াও ওয়াই ফাই '- জাহাজের সর্বত্রই পাওয়া যায়।
স্পা’
এবং ফিটনেসের পূর্ণ সেবা। থেরাপির জীম’ চিকিত্সার বাঁশ ম্যাসেজ, যেখানে বিভিন্ন আকারের
উষ্ণ বাঁশের কান্ড অপরিহার্য তেল জবজবে করে পাকানো যা কিনা ম্যাসেজে ব্যবহার করা হয়।
আউটডোর খেলাধুলা জগিং ট্র্যাক - সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত জিম’ যে ওজন মাপার এবং হৃৎপিণ্ডসংক্রান্ত
চেক আপের সরঞ্জাম সাজানো, সেইসাথে ফিটনেসের ক্লাসও নেয়া হয়।
রাতের
বিনোদন - নিশি বার, প্রায়ই ব্লুজ জ্যাজ, নাচ থেকে সবকিছু - লাইভ সঙ্গীত সমন্বিত লাউঞ্জ
পরিপূর্ণ। সেকেলে পিয়ানো বার এবং ডিস্কো’ যেখানে ভোররাত পর্যন্ত নাচ গান চলে। থিয়েটারের
নামকরা গায়ক গায়িকার গান ব্রডকাস্ট স্টাইলে উপস্থাপন করে প্রতিকক্ষে। একটি বড় ক্যাসিনো
গেম এই সমুদ্র জাহাজে রয়েছে।
বাচ্চাদের
ক্যাম্প কার্নিভ্যালের প্রখ্যাত 'কিডপ্রোগ্রাম’। সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে খেলার কার্যক্রম
হিসেবে চলচ্চিত্র এবং পিজা পার্টিতে দলগুলো মেতে থাকে। ২-১১ বছর বাচ্চাদের রাখে নিরাপদ
পরিবেশে। তের' ব অন্য বাচ্চাদের ভিডিও গেম টুর্নামেন্ট, দল ও অন্যান্য কার্যক্রম জন্য
তাদের নিজের বয়স পূরণের জন্য ফর্ম প্রদান করে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে। আমার ছোটছেলের
জন্মদিন ছিলো সে সময়ে, যথারীতি জাহাজের ডিনার পর্বের পূর্বে লাইডস্পীকারে ঘোষণা দেয়া
হলো, সাথে সুদৃশ্য সাজানো কেক’ নিয়ে এলো বিশেষ জন্মদিনের ড্রেসপরা ওয়েটারেরা। নেচে
গেয়ে তাঁরা জন্মদিনের অভিনন্দন জানালো। প্রিন্টকরা বার্থডে কার্ড উপহার দিলো। আমরা
সব্বাই এমন কি ডাইনিং হলের সব আরোহীরাও উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম আমার ছেলের জন্মদিনের উৎসবে।
জাহাজের ১৩ তলায় যাত্রীদের বিনোদনে যোগ হয়েছে ডেকের উপর একটি ' মিনি গলফ কোর্স ' মজা
করার জন্য এটা যোগ করা হয়েছে। এই জাহাজে চড়ে উপকূলীয় অঞ্চল ও মেক্সিকো দেখতে যাওয়া
হয়েছিলো।
মেক্সিকোর
মায়া সভ্যতা দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রা
বিভিন্ন
উপকূল ঘুরে ক্রুজটি কজুমেল মেক্সিকো পোর্ট এ নোঙ্গর করে। যাত্রা শুরু হয় জাহাজ থেকে
নেমে মেসোআমেরিকান প্রাক কলম্বীয় শহর টিয়োটিহকান’ প্রাচীন সভ্যতার নমুনা স্বরূপ ধ্বংসাবশেষ,
পিরামিড, ভগ্নাংশ ও ওদের ঘর দোর দেখতে যাওয়া। টিয়োটিহকানে মায়া সভ্যতার বিশাল চিহ্ন
- পিরামিড, গুহা, কূপ ইত্যাদি দেখতে মনস্থির করে গেলাম ক্রুজ জাহাজ থেকে নেমে গাড়ীতে
করে। মেক্সিকোর প্রদেশের দক্ষিণে চাপাস, তাবাস্কো এবং ইয়ুকাটান উপদ্বীপের কুইন্টানা
রোওকাম্পেছ। ইয়ুকাটান জুড়ে প্রসারিত করেছিল উত্তরাঞ্চলীয় মধ্য আমেরিকার অঞ্চল। যা
বর্তমানে গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভাডোর এবং পশ্চিমী হন্ডুরাস জুড়ে মায়া সভ্যতা
প্রসারিত করেছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে। টিয়োটিহকান' বৃহত্তর মেক্সিকো সিটিতে অবস্থিত,
এটা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। অফিসিয়াল নাম প্রি-হিস্পানিক টিয়োটিহকান শহর।লাতিন
আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এই প্রাচীন শহর।
আমরা যেয়ে
পৌঁছুলাম তখন মাঝ দুপুর প্রচন্ড গরম ৫১ বা ৫২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। পিপাসায় ডাব কিনে খাই
এবং নরম নারকেলের সাথে সরিষার কাসন্দ জাতীয় পেস্ট, লবন মরিচমাখানো খাবার, সেটার নিজস্ব
এক স্বাদে জিভে অনন্য স্বাদ এনে দিয়েছিলো। পরের বার এবার কিনতে চাইলে সে আর উপরি দাম
গ্রহণ করেনি। বোঝা গেলো মেক্সিকানরা শুধুই বান্ডিত' নয়, অতিথিপরায়ণও বটে। পিরামিডের
হাল হাকিকাত জানার জন্য একজন মেক্সিকান নেটিভ ড্রেসপরা, বল্লমধারী লোককে গাইড করে আমাদের
সাথে নিই। তাঁর নাকে মুখেও প্রাচীন গোত্রীয় লোকদের মতো করে সাদা কালো দাগে সাংকেতিক
পদবী আঁকা। অতিরিক্ত একটা বল্লম আমার হাতেও দিয়েছিলো ছবি তুলবার সময়ে বিশেষ কায়দায়।
সে জানালো এখানের নামী দামী সব লোক কাহিনী, রাজা রানী গল্পের আদলে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে
শুনিয়ে যাচ্ছিলো। জিজ্ঞাসা করলো কোন পিরামিডে আগে যাবো।
সূর্যের
পিরামিড আছে পাশাপাশি আছে চাঁদেরও পিরামিড।
একটি প্রাচীন
মেসোআমেরিকান মেক্সিকো উপত্যকার একটি উপ-উপত্যকায় অবস্থিত এই ভগ্ন শহর, মেক্সিকো থেকে
৪০ কিলোমিটার মতো দূরত্ব ছিল আধুনিক দিনের মেক্সিকো সিটি উত্তরপূর্বে। আজ সবচেয়ে স্থাপত্যের
দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেসোআমেরিকান প্রাক কলম্বীয় আমেরিকায় নির্মিত এসব পিরামিড।
সম্ভবত প্রথম সহস্রাব্দের খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধেই- টিয়োটিহকান প্রাক কলম্বীয় আমেরিকা
বৃহত্তম শহর ছিল। টিয়োটিহকান একটি রাষ্ট্র সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল। প্রায় ২৫০ খ্রিস্টাব্দ
পর্যন্ত ১০০ খৃস্টপূর্বাব্দে স্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। নির্মাণ অধীনে ক্রমাগত
প্রধান মিনার ৭ এবং ৮ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে একদা পর্যন্ত চলেছিল হয়তো, কিন্তু
তার প্রধান মিনার আর সমাপ্ত করা হয়নি।
এছাড়া
পিরামিডের ইতিহাস থেকে টিয়োটিহকান তার জটিল, যৌথ বা যৌগ পরিবার নিয়ে আবাসিক অবস্থান
নিয়ে ছিলো। বিশেষজ্ঞরা এও মনে করেন যে টিয়োটিহকান একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র ছিল। যেমন
এখানে মায়া, নাহুয়া, ওটোমি ও তোটোনাক জাতিগোষ্ঠীর সন্ধান মেলে।
শহর এবং
প্রত্নতাত্ত্বিক কি এখন মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সান জুয়ান টিয়োটিহকান পৌরসভা এলাকা,
প্রায় ২৫ মাইল মেক্সিকো সিটি উত্তরপূর্বে অবস্থিত. সাইটের মোট পৃষ্ঠ এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
১৯৪৭ সালে এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান মনোনীত করে। মেক্সিকোতে সর্বাধিক
দেখা প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটও বটে।
শহরের
মূল নাম অজানা হলেও মায়া অঞ্চল থেকে চিত্রলিপিতে গ্রন্থে দেখা যায় যে, ক্লাসিক যুগের
মায়া সভ্যতায় অন্যান্য পোস্ট ধ্রুপদী সেন্ট্রাল মেক্সিকোর জনবসতিপূর্ণ শহর ছিলো টিয়োটিহকান।
এর আদি ইতিহাস বেশ রহস্যময়, এবং তার প্রতিষ্ঠাতা উৎপত্তি অনিশ্চিত।
টিয়োটিহকান
মধ্যে বসবাসকারী মানুষের অন্তত কিছু জাপোটেক, মিক্সটেক আর মায়া জনগণ সহ যেসব অঞ্চলে
Teotihuacano সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত, থেকে অভিবাসিত হয়. টিয়োটিহকান বিল্ডার মেক্সিকো
বেসিনের জলা ভূমিতে থেকে তারা উচ্চতর নির্মান কৌশল, কৃষি উৎপাদনশীলতা চাষের পদ্ধতি
নৌকো দিয়ে শহরে খামার থেকে খাদ্য পরিবহন এসব কিছুই এই বৃহত্তম পিরামিড, সূর্যের পিরামিড
এলাকা ঘিরেই সম্পন্ন হয়েছে। এঁদের একটি একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি ছিলো ‘মায়া সভ্যতা’
ঘাঁটলে তা পরিস্কার বোঝা যায়। বিভিন্ন এলাকার সংস্কৃতি ও কৃষ্টিতে সমৃদ্ধ ছিলো তারা
এককালে। টিয়োটিহকান এবং মায়া অঞ্চলের কেন্দ্র মধ্যে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার
প্রকৃতি একটি দীর্ঘকালস্থায়ী গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছিলো থেকে শত শত বছর
ধরে।
যুদ্ধবাজদের
আধিপত্য ছিল এখানে। অন্যের 'বিদেশী' বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ, একটি নির্বাচনী সচেতনতা এবং
দ্বি-মুখী সাংস্কৃতিক আশ্লেষ অংশ ছিল এই এলাকা। তাঁদের সংস্কৃতিতে নতুন আবিষ্কারের
পরামর্শ দিয়েছিলো টিয়োটিহকানের অধিবাসীরা। যেমন টলটেক, এজটেক এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন
সাম্রাজ্য থেকে অন্যান্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথাবার্তাতেও অনেক মিল পাওয়া যায়।
এ থেকে বিশ্বাস করা যায় যে, টিয়োটিহকান উপর প্রাকধ্রুপদী এবং মায়ান বা মায়া সভ্যতার
একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিল অধিকাংশ মায়ার কেন্দ্রগুলোর এসব অঞ্চলে।
সূর্যের
পিরামিড থেকে চাঁদের পিরামিড দেখে বোঝা যায় - Teotihucan স্থাপত্যের স্থাপত্য শৈলী
মার্বেল ও গ্রানাইট ব্যবহার। স্বর্ণ ও মেয়েমানুষদের বিভিন্ন প্রসাধন, মৃৎশিল্পী, গহনা
ও কারিগরদের শিল্প, মূর্তিতত্ত্বে র দক্ষতা টিপিক্যাল প্রারম্ভিক ক্লাসিক মেসোআমেরিকান
ব্যবহার মনে করিয়ে দেয়। অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রশিল্পীদের কারুকার্য চিত্রলিপিতে শিলালিপিতে
রেনেসাঁ ফ্লোরেন্স, ইতালিয় চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
কিন্তু
কি ভাবে এই এতো সমৃদ্ধ এতো আধুনিক মনোভাবাপন্ন জনপদ অঞ্চলে ধ্বংস বয়ে এলো? ভাবতে ও
জজ্ঞাসা করতে থাকি। যে গল্প পুনরাবৃত্তি চলে আসে তা হলো -
৬ ষ্ঠ
শতকের প্রায় প্রারম্ভে টিয়োটিহকানে অন্যান্য অংশ, বিশেষ করে মায়া অঞ্চলে পতন নেমে
আসে। ১০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি, মায়া শহরগুলোর একটি ব্যাপক পতন ও পরিত্যক্ত অবস্থা
ঘটে যায়, যাকে প্রাকধ্রুপদী পতন বলা হয়। তাতে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং কিছু জলবায়ু
পরিবর্তনের সমর্থন মেলে। সুদীর্ঘ খরা, অপুষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায় মিউজিয়ামের বাচ্চাদের
কঙ্কালে। পরিবেশগত অবনতি মায়া অঞ্চলের জলবায়ু অনেক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। নিচু-অবস্থান
এলাকা হওয়ার ফলে মরুভূমির যাত্রীরা নিয়মিত প্রবল হারিকেন ঝড় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয়
ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। আভ্যন্তরীণ যুদ্ধবিগ্রহে একদা পুরো শহর পুড়িয়ে ফেলা হয়।
অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, বিদ্রোহ্, শাসক শ্রেণীর আক্রমণ ইত্যাদি তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিক
ধ্বংসাবশেষ গবেষনায় খুঁজে পাওয়া যায়। মেক্সিকোর প্রদেশের দক্ষিণে চাপাস, তাবাস্কো এবং
ইয়ুকাটান উপদ্বীপের কুইন্টানা রোওকাম্পেছ, এবং ইয়ুকাটান জুড়ে মায়া সভ্যতার ভৌগোলিক
সীমা মায়া অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। যা কিনা উত্তরাঞ্চলীয় আমেরিকার অঞ্চল - বর্তমানে
গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভাডোর এবং পশ্চিমী হন্ডুরাস জুড়ে মায়া সভ্যতাকে প্রসারিত
করেছিল।
এ ভগ্ন
শহরের বিভিন্ন ঘুরে ঘুরে দেখার মাঝে দুপুর গড়িয়ে এলো। প্রাচীন সভ্যতা দেখতে ও বুঝতে
-সেই সাথে এও বুঝতে পারলাম আমরা সবাই বেশ ক্ষুধার্ত। আশে পাশে তেমন বড় খাবারের দোকান
নেই, ছোট ছোট আঞ্চলিক খাবারের দোকান, তাতে মেক্সিকান ঝাল খাবার, এমনকি ঘোড়ার লাল টুকটুকে
মাংসের বার্গার সাজানো। অবশেষে সাথে বয়ে নেয়া খাবার আর মেক্সিকান ছোট ছোট মোরগ ফ্রাই,
ফিস ফ্রাই খেয়ে হয়রাণ হয়ে পড়ে সবাই। কেউ আর ফের ভাঙ্গা নিদর্শন দেখতে যেতে নারাজ, গরমে
নাজেহালও বটে। আমি একফাঁকে ঘামে চুপচুপ হয়ে যাওয়া কামিজ বদলে মেক্সিকান হ্যান্ডলুমের
দোকান থেকে সাদা ছাপমারা টিশার্ট কিনে পরে নিই। সেই টিশার্টে ছাপমারা যে ছবি ও কথা
লেখা ছিলো, তা পড়ে নিয়ে - ভাতিজী ও সাথে ছেলে মেয়েরা হেসে কুটিপাটি হলো। থাক নাইবা
বললাম সে গল্প। সবাই জানালো এবার আর নয় অন্যকোন দিন অন্যকোন সময়ে আবার পিরামিড দেখতে
আসা যাবে। এই ডিসিশান নিয়ে জাহাজমুখো হই দলবেঁধে টুরিস্ট গাড়ীতে চেপে।
জাহাজের
পাঁচ দিনের বাদশাহী ভ্রমণ সেরে ফিরতি পথে সেন্ট লুইস
গাড়ীতে
উঠি আমরা ৬ জন ( আমি,আমার পুত্র,কন্যা, ভাইয়ের কন্যা,স্ত্রী ও সে নিজে)।
রওনার
প্রাক্কালে ফ্লোরিডায় অবস্থানরত বন্ধু 'নওশাদ চৌধুরী' ও তাঁর স্ত্রীর আন্তরিক আতিথেয়তা
গ্রহন করি। উল্লেখ করার মতো যে, এই বন্ধুটি আমার ফেসবুকিয় বন্ধু। কিন্তু তাঁর আন্তরিকতা
ও আতিথিয়তা পরম পরিচিতকেও হার মানায়। যেমন ফ্লোরিডাতে নাম্বার পর থেকেই তাঁদের অতিথি
হবার জন্য পিড়াপীড়ি শুরু করে দেয়। ভাবীও একটু পর পর আমরা কতদুর পৌছুলাম তার খোঁজ খবর
নিতে থাকেন। অবশেষে তাঁদের বাড়ী উপস্থিত হয়ে দুপুরে বেশ স্বাদের খাবার সেরে মহা মাস্তিতে
গাড়ীতে চড়ি দিগবিজয়ীর দল।
যেতে যেতে
পথে ‘এলাবামার’ একাংশ হয়ে পাহাড় ঘেরা সবুজ বনানী ঘেঁষে খন্ড খন্ড মেঘের শীতল ঘোরাঘুরি
চোখে দেখতে দেখতে যাই। অদ্ভুত সুন্দর মেঘময় বিকেল, এমন বিকেলে মেঘেরা মনেহয় নেমে এসেছে
সবুজ প্রান্তরের মতো নিপাট বনের উপর। অপূর্ব বৃষ্টি ধোয়া সবুজের মাথায় হাত বুলানোর
মতো ভঙ্গিতে বনের গাছেদের উপর থোকা থোকা হয়ে নেমে আসছে। মনে হচ্ছে একটু উঁচুতে উঠে
গেলেই হাত দিয়ে ওসব মেঘেদের ছোঁয়া যাবে। এসব দেখতে দেখতে দুইপাশে ঘন বনের মাঝখান দিয়ে
টেনেসির দিকে রওনা করি গন্তব্য মুখো।হঠাত বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি থামার পর পরেই রঙধনুর
সাতরঙ মেলেধরে আকাশ জুড়ে। আমি এই প্রথম এমেরিকার আকাশে একসাথে দুই দুটো রংধনু দেখতে
পাই একই আকশে, এটাও বেশ উপভোগ্য হয়েছিলো আমাদের সবার জন্য। আমাদের দেশের আকাশে আমরা
যা কোনদিন যা দেখিনি।
এর মধ্যেই
ফোন আসে। আমার ভায়ের সহধর্মিণীর কলেজের এক সহপাঠি জর্জিয়াতে থাকেন, সে আমাদের আমন্ত্রণ
জানাচ্ছেন, তাঁর ওখানেও বেড়িয়ে যেতে। তাঁর ওখানে যেভাবেই হোক আজ রাত্রিবাস করতেই হবে।
তিনি ঘনঘন নিজ হাতে রান্নার মেন্যু বলে লোভাতুর করে তুলছে ভ্রমণ পিপাসু যাত্রীদের।
অবশেষে ঠিকানা ঠিক করে নিয়ে তাঁর বাড়ীতে প্রায় ১০ ঘন্টা পর হাজির হই অনেক রাত করেই।
সেই বান্ধবী আর তাঁর বরের আতিথিয়তা মনে রাখার মতো, অনেক পদের সুস্বাদু রান্না করেছিলেন
তাঁরা আমাদের জন্য। শুধুই বাহারি ডিনার নয়, সাথে বিভিন্ন রকমারি পিঠাও উনি বানিয়েছেন।
রান্নায় ও গৃহকর্মে বেশ পটীয়সী মহিলা, তা বোঝা গেলো তাঁর ব্যক্তিগত সব্জি বাগান দেখে।
সেই সব্জি বাগান থেকে অনেক পদের সব্জিও তিনি আমাদের গাড়ীতে পোঁটলা বেঁধে তুলে দিয়ে
গেলেন। বেঁধে দিলেন পথে খাবার জন্য বাচ্চাদের জন্য চিকেনফ্রাই আর কিছু পিঠা। এ আরেক
ধরণের চিরাচয়িত বাঙালীপনার স্নেহপরায়ণ আরেকটা দিক, যা অস্বীকার করার জো আমাদের নেই।
বিশেষ করে বিদেশ বিভূঁইয়ে একজন বাঙালি আরেক বাঙালিকে ভাতৃতুল্য মনে করেন, সেখানে জাত
কূল, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি মৌলিক জাতিস্বত্বা কাজ করে থাকে। বাঙালির আতিথিয়পরায়নতা
গর্ব করার মতো এক বিশিষ্ট স্বভাব বলা যায়।
সকালে
আবার তাঁদেরকে বিদায় দিয়ে যাত্রা শুরু করি দিক বিজয়ীর দল।
গাড়ী এবার
বাড়ীমুখো যাচ্ছে, তার জানালার ভেদ করে দৃষ্টিশক্তি অভিভূত হয়ে বিদেশি চাষ বাস, তাদের
কৌশলী জীবন প্রণালী। ধানের – গমের সোনালি রঙয়ের পরিত্যক্ত খড়ের গাদা জড়ো করতে দেখছি,
যা কিনা মেশিনে করা হচ্ছে। এমন সব আমাদের দেশের চাষিরা দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় করে
থাকে। দেখছি কাকের দল কি করে ট্রাক্টরের পিছনে উড়ছে পোকা খাবার জন্য। লাল টুকটুকে কার্ডিনাল’
পাখী উড়ে বেড়াচ্ছে। ম্যাপল গাছের গোড়ায় মাটিতে- চাতকের বাসা। রাস্তার পাশে ফলের খামার।
এমেরিকান - সাহেব চাষা এবং তাঁর গেরোস্থালি কৌতূহলী হয়ে মাঝে মাঝে গাড়ী থেকে নেমে উঁকি
দিয়ে দেখে আসি।
সময়টা
এমন যে,সন্ধ্যে হয়ে হয়েও হয়না, প্রায় রাত আটটা পর্যন্ত সূর্য রশ্মিরা এমেরিকার
আকাশে গা গড়িয়ে বেড়ায় এমন আমার মনে হতো। ঘড়ির কাটা রাত ছুঁয়ে দিলেও আকাশে গোধূলির লাল
কমলা রঙের ছোপ ছোপ মেঘ থেকেই যায়। সেইসব রঙের মহনীয় পোট্রেট দেখে চোখে তাক লেগে যায়,
কি অপরূপ দেখায় পশ্চিমা আকাশ! সে রূপ আজও যে দেখতে পায়নি, অনেক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ
থেকে তাঁরা বঞ্চিত, এমেরিকার প্রকৃত নীল আকাশ, গাঢ় সবুজ উপত্যকা, চঞ্চল ঝর্ণা দেখে
এমন কথা প্রায়ই আমার মনে হতো। আমাদের দেশের সবুজ সে যেনো রোদে জ্বলা ফ্যাঁকাসে, ধুলোয়
ধূসর অর্ধ বিবর্ণ ফুলের সব পাপড়ি। প্রকৃতির এ স্বচ্ছ বরফ ধোঁয়া ঝকঝকে ধারালো রূপ যারা
এ দৃশ্য দেখেনি কল্পনাও করতে পারবে না। কি অপরূপ বর্ণিল মায়াময় এই পরিপূর্ণ প্রকৃতি
- বাংলাদেশ থেকে এখানে না এলে আমিও বঞ্চিত হতাম হয়তবা।
এসব অদ্ভুত
সুন্দর প্রকৃতি দেখে আর গাড়ীর ‘সিডি' তে গানের মূর্ছনার সাথে বিভিন্ন গল্পে সল্পে
সময় পেরিয়ে আমরা তখন টেনেসির মাঝামাঝি।
ফ্লোরিডা
(এফএল) এবং টেনেসির মধ্যে দূরত্ব অনুযায়ী ৭১২ মাইল -১১৪৭ কিমি। এই দূরত্ব পেরুতে ১২
থেকে ১৩ ঘন্টা সময় লাগবে বলে মনেকরা হলো।
যা রুট,
দূরত্ব এবং আনুমানিক গতির উপরেই সময় ও রাস্তার অবস্থার উপর নির্ভর করে। আমরা যেহেতু
এইপথে আগন্তক আরোহী, কাজেই সঠিক পথ চেনানোর জন্য, যাত্রার প্রাক্কালে নতুন একটা ‘জিপিএস’
কেনা হয়, কারণ গাড়ীতে যেটা আছে, সেটা বেশ পুরোনো বলেই তার উপর আস্থা পুরোপুরি আনা যায়নি।
জিপিএস’
এর কন্ঠ বেশ বয়স্কা মহিলা কন্ঠের হওয়ায়, আমি তার নাম দিই ‘জেঠি’ এবং ঠাট্টার ছলে জেডি’
(বড় চাচী) সম্বোধন করে থাকি।
হঠাত জি
পি এস' বিগড়ে বসে। নিঃশব্দ! আর সে কথা কহে না।
ফুয়েলের
কাঁটা জানায় ৩৩ মাইল সে যেতে পারবে বলে আনুমান করা হয়।
এক্সিট
(শহরে ঢোকার পথ) নেবার সময় দেখেছি আশেপাশের ১৭২ মাইলের মধ্যে 'গ্যাস' এর কোন সিগন্যাল
নেই!
(ওরা কেন
যে অক্টেন - ডিজেল স্টেশন কে ‘গ্যাস' বলে থাকে বোধে আসেনি আমার )
রাত তখন
১১:৪৭
এমেরিকার
মত জায়গায় স্ট্রিট লাইট নেই! ভাবতেই ক্যামন যেনো অবাক হয়ে যাই। চারিদিকে ধুধু অন্ধকার
...
জ্যোৎস্নাও
নেই আজ, আকাশভরা কিছু খুচরো তাঁরাদের হাতছানি। গাড়ীর গ্লাস খুলে উপরে তাকিয়ে কিছুটা
অসহায় বোধকরি। শুনশান অন্ধকার প্রান্তরে নেই কোন জনমানবের পদধ্বনি। ক্যামন আজব এই এলাকা
আবছা আলোতে ভূতুড়ে নগরী দেখাচ্ছে!
‘জিপিএস’
ছাড়া হাইওয়েতে এই অন্ধকার মুহূর্তে গাড়ী উঠানো প্রায় অসম্ভব! অনেক রাস্তা ভুলে অন্য
রাস্তায় উঠে গেলে আরো কয়েকশ’ কিলোমিটার ঘুরতে হবে অযথাই। অচেনা জায়গায় না জেনে বেরিয়ে
পড়াটা বুদ্ধিমানের কাজও নয়। চিন্তার কোন আগামাথা পাচ্ছিনা খুঁজে। বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে
বোঝা যায়, কিছুটা আমরাও ভয় চেপে আসে মনের ভিতরে। একে ওকে ঠাসছি জ্বালানীর হিসেব না
রাখার কারণে। ওদের সেটা না বুঝতে দিতে হাসির কথা পাড়ি। আমি বললাম মাঝরাতে 'কানা ওলায়'
ধরে শুনেছি, এ তেমন কিনা? গ্রাম দেশে শুনেছি, এই কানা ওলাতে' ধরলে তারা পথ ঘাঁট কিছুই
চিনতে পারেনা। তখন বিভিন্ন বিপর্যয় ঘটে থাকে। এসব গল্প শুনিয়ে বাচ্চাদের মন ভুলানোর
চেষ্টা চালাই। ড্রাইভিং সীটে লী’ (ভাইয়ের পত্নী ) রাস্তার যতটা সম্ভব ঘুরে ঘুরে এড্রেস
দেখার চেষ্টা করছে। রাস্তার প্রতি মোড়ে লেখা ' আ ন নেইমড' রোড ( নাম হীন সড়ক)! কি
আশ্চর্য! কি আশ্চর্য? দুইপাশে বিস্তর ক্ষেতখোলা ঝোপ ঝড়ে ভরা এ অঞ্চল এটা ভালোভাবেই
বোঝা যাচ্ছে - আখ ক্ষেত, গম ক্ষেত মাইলকে মাইল জুড়ে, ভুট্টা আর যব অথবা ‘ওট' ক্ষেত
দেখাচ্ছে রাতের নিজস্ব দান করা আবছা আলোতে গাড়ীর গ্লাস নামিয়ে চিনবার চেষ্টা করছি।
একটা কাঠের ছোটমোটো গির্জাও আবিষ্কার করি। বাচ্চারাও সাথে সাথে গোয়ান্দাগিরি করে আটা
ভাঙ্গাবার জন্য মিলের কাঠের পাখা, ঘোড়ার খালি গাড়ী, কামারের দোকান - এসব দেখে বলতে
থাকে। যেনো পুরোনো আমলের ওয়েস্টার্ন মুভির কোন গ্রামীণ একটা সেট, এমন উদাহরণ বা নমুনা
মনেপড়ে।
গাড়ীর
চতুর্দিকে হঠাত প্রাকৃতিক বিকট গন্ধ, বাচ্চারা চেচায় 'মাম এটা স্কাংখ!! ‘গন্ধ গোকুলে’র
আকুল উতৎকট গন্ধ বলে দেয় -,সে এখন চাকায় পিষ্টরত। একথা বুঝতে আর কারো বাকি থাকেনা।
গাড়ী স্লো করে চলছে, পাশে হরিণ হেঁটে যাচ্ছে হেড লাইটের আলোতে দেখা যায়। আঁখ ক্ষেতের
আইলে আরো জোড়া জোড়া জ্বলা আলো জ্বলছে নিবিড় আঁধারে। যা কিনা দেখে কোন জন্তুর জোড়া
জোড়া চোখ এ বোঝায়। অপরাধ বোধের দায় এড়াতে, ড্রাইভিং সীটে লী' জানায় যে, ‘ওটা আগেই
(স্কাংখ ) আহত ছিলো ‘। আমি চিৎকার করি, হায় মালিক! এ কোথায় এলাম? আমাদের এ যাত্রায়
উদ্ধার করো হে’! ভাতিজি হঠাত উত্তর দেয়, ফুপি – মনে পরছে এমন অন্ধকার রাস্তা ঘাঁট দেখে
- এটা তো মনেহচ্ছে টেনিসের সেই - ‘অ্যাঁমিশ' দের গ্রাম!
এমেরিকার
অ্যামিশ সম্প্রদায়
অ্যামিশ
এবং মেনোনাইট পরিবারের প্রায়ই সবাই কৃষি নির্ভর। কৃষিপণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ
করা তাদের জীবনের অনন্য উপায়। সাধারণত স্বদেশে বেকড পেস্ট্রি, রুটি, পনীর এবং অন্যান্য
খাবার তৈরি করে থাকে এরা। সব্জি জাত পণ্য, মেনোনাইট কম্বল হস্তনির্মিত মৃত্শিল্প এবং
আনন্দদায়ক অ্যামিশ কারুশিল্প এবং আসবাবপত্র সাধারণ দোকানে বিক্রি করে যা আয় করে সেটা
দিয়েই তাদের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। অ্যামিশরা এখনো খাঁটি কিছুকেই ব্যবহার করতে চায়। আধুনিক
জগত ভ্যাজাল অথবা কপটতা বলে মনেহয় তাঁদের কাছে। চমৎকার মানের পণ্য উত্পাদন করে নিজেদের
মধ্যে রাস্তার পাশে দোকান করে বিক্রি করে, অনেক বাগানের সবজি এবং বেরি' বিক্রেতাদের
বিভিন্ন ঋতুতে দেখা যায়। অশ্বশক্তি টানা বগির গাড়ী তাদের খামার জন্য সরঞ্জাম বয়ে নেবার
ভাল প্রযুক্তি। অ্যামিশরা যা আধুনিক জীবনধারা সেটাকে পরিহার করে চলে, যেমন বিদ্যুৎ,
কিংবা মটরগাড়ীর মতো সুবিধাদি তারা ব্যবহার করেনা। হাসপাতাল, কলেজ ইউনিভার্সিটিতেও এরা
পড়ালেখা করেনা। টেলিভিশন, আড়ম্বরপূর্ণ পোশাক এবং এমনকি ট্রাক্টর এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি
যা দিয়ে কাজ করতে হয় তাদের খামারে এই সমস্ত তাঁরা এড়িয়ে চলে। আধুনিক জীবনকে জটিল জীবনধারা
মনে করে থাকে। সাথে তাঁরা আড়ম্বরপূর্ণ জীবনকে অমিতব্যয় কিংবা অপচয় ভেবে থাকে। পার্থিব
ভোগ বিলাসকে অ্যামিশগণ পাপ মনেকরে পরিহার করে চলে।
অ্যামিশ’দের
কেউ কেউ ১৬৯৩ সন এবং ১৭০০ সনের দিকে একদল সুইজারল্যান্ড থেকে প্রথম হিজরত করে এসে এমেরিকার
বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতে থাকে। এখানে এই ‘অ্যানাব্যাপ্টিস্ট’রা তাদের নিজস্ব গির্জা
ও বাড়ীঘর তৈরি করে নেয়। এভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় হাতের কাজ, কৃষি
কাজ, পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পেনসিলভানিয়া, টেনেসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
(বিশেষতঃ পেনসিলভানিয়া, ওহিও, এবং ইন্ডিয়ানা) তে সাধারণত এদের সম্প্রদায় দেখা যায়।
খোঁজ খবর
নিয়ে জানা যায় অ্যামিশ প্রথম বসতি স্থাপন করে ১৯৪৪ সালের দিকে। 'জো য়োদের' এবং 'জোসেফ
জিঞ্জারিশ 'পরিবারের মিসিসিপি থেকে আগত হয়, অন্যরা অনুসৃত হয়ে একটি সম্প্রদায় হিসেবে
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। স্থানীয়দের এলাকাকে "ওল্ড কনভেন্ট বলা হয়।
কানাডার
বিশেষতঃ অন্টারিও'তেও অ্যামিশ পরিবার লক্ষণীয়। তারপর থেকে সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে
থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বা এমেরিকায় এঁদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩০৮,০৩০ / ২০১৬।
অ্যামিশ
গির্জা সদস্যপদ বাপ্তিস্মের দিয়ে শুরু, সাধারণত ১৬ এবং ২৫ বছর বয়সের মধ্যে অ্যামিশ
গির্জাতে বিবাহ প্রয়োজনীয় হয়। একজন ব্যক্তি যদি একবার গির্জার বাপ্তাইজ হয়, সে শুধু
ধর্মীয় বিশ্বাসে এই বিয়ে করতে পারে। চার্চ জেলায় ২০-৪০ পরিবারের মধ্যে গড়ে একটা। পূজা
সেবা বা প্রার্থনা সদস্যেদের বাড়িতে এবং প্রতি রবিবার প্রার্থনা চলে চার্চে। একত্রীতভাবে
অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি জেলার একটি বিশপ এবং কয়েকজন মন্ত্রী ও একজন ‘ডিকন’ দ্বারা পরিচালিত
হয়। অধুনাতন অ্যানাব্যাপ্টিস্টরা কারা হিসেবে অ্যামিশ মন্ডলীর সদস্য আধুনিক জীবনের
চর্চা ও সামরিক সেবা গ্রহণ করেনা। অ্যামিশ মানেই গ্রামীণ জীবন, কায়িক শ্রম ও নম্রতা,
সমস্ত জীবিত সময় ব্যয় করা। তারা যীশু তথা ঈশ্বরের শব্দাবলী হতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও
পৃষ্ঠপোষকতা করে চলে। বিদ্যুৎ, টেলিফোন, এবং অটোমোবাইল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতার বৈশিষ্ট্যসহ
বাণিজ্যিক বীমা কিনতে বা সামাজিক নিরাপত্তা অংশগ্রহণ করেনা। আধুনিক জীবন যাপন সম্বন্ধে
তাঁদের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই বললেই চলে।
সদস্য
যারা এই সম্প্রদায়ের প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য রাখেনা তাদেরকে তওবা করার মধ্যদিয়ে
সমাজচ্যুত করা দেয়। এ ছাড়াও, সদস্য হিসাবে তাঁরা বর্জনীয়। চলমান আচরণ যে, একজন বয়স্ক
যারা বাপ্তিস্ট হবার জন্য স্থায়ী অঙ্গীকার করেছিলেন তা থেকেও পরিহার স্থাপিত হবে।
সেখানে সাধারণত গির্জা এবং পারিবারিক সম্পর্কের উপর একটি ভারী জোর দেওয়া হয়ে থাকে।
তারা সাধারণত ১৩-১৪ বছর বয়সে তাদের নিজস্ব স্কুল ও গ্রেড আট’ পার হওয়ার পর হারাবে
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম। সেসব পরিচালনা করেন শিশুদের বাবা, সম্প্রদায়ের অভিভাবকত্ব
অধীনে ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং স্কুল শিক্ষক নিযুক্ত আছে। অ্যামিশ ছেলেমেয়েদের শেখানো
হয় - পড়া, লেখা এবং পাটিগণিত। তারা স্কুলে ভর্তি হবার পর যখন ৮ম গ্রেড পৌঁছানোর সময়
হয় তখন শেষহয় তাদের ১৪ তম জন্মদিন, সেইসাথে স্কুল শিক্ষারও সমাপ্তি ঘটে বোধহয়।
এই সমইয়ে
যাইহোক, তারা হয়ে উঠে তাদের গবেষণায় দক্ষ এবং এমনকি কথা বলতে পারে -
তিনটি
ভাষায়: ইংরেজি, পেনসিলভানিয়া, ডাচ এবং জার্মান।
তাদের
পার্থিব সম্মান আনতে একটি রক্ষণশীল বিভাজন মেনে চলে অ্যামিশগণ। সম্ভবত অ্যামিশ সামাজিক
জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত দৃষ্টিভঙ্গি "Rumspringa," যার অর্থ
Pennsylvania German, উপভাষায় "চারপাশে চলমান" বোঝায় - এটা হচ্ছে ১৬ বছর
বয়সে সম্পর্কের প্রারম্ভে যৌবন উইকএন্ডে তাদের বন্ধুদের সাথে মেলামেশার সময় যুব সেন্টারে
Rumspringa বিবাহ দিয়ে এ পর্ব শেষ করা হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন অ্যামিশ যুব
গির্জা, যা সাধারণত ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ঘটে। এই গির্জায় যোগদানের যদি তারা বাপ্তিস্ম
হবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নিতে পারে অথবা অ্যামিশ সম্প্রদায় ত্যাগ করানো হয়ে থাকে।
অ্যামিশ
খ্রিস্টান যারা যে বিশ্বাস করে যে, মানুষের অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
জামাকাপড়, ধর্মীয় পরিষেবার জন্য ব্যবহার করে থাকে - সরল্য অ্যামিশ পোশাক, সাদা এবং
অল্প কালোর অংশ, জাক জমক পরিহার করে চলা আবশ্যক। যিশুর নির্দেশ মেনে স্থিরতা এবং ধৈর্যসহকারে
চলা। অ্যামিশ বিশ্বাস করে বড় বড় যেসব পরিবার আছে, ঈশ্বর থেকে আশীর্বাদ লাভই তাদের
কাজ। তাদের পরিবার এবং তাদের প্রতিবেশীদের প্রতি সাধারণত খুব ভদ্র। কিন্তু বাইরের লোকের
প্রতি কিছুটা অভদ্র গোছের মনে হতে পারে। তারা বিশ্বাস করে জীবনও একটি পণ্য অথবা প্রতিযোগিতার
বিষয় হতে পারেনা। যারা একে অপরের সহায়তা করে থাকা পছন্দ করে। তাদের বিশ্বাস সহজ সাধারণ
জীবন-যাপনই উত্তম পন্থা। আপনি যদি অ্যামিশ দেশে পরিদর্শন করতে চান তাহলে, দয়া করে
কয়েকটি সহজ জিনিষ মনে রাখতে রাখতে হবে। তাহলো -
প্রথমত,
অ্যামিশরা কোন পরিস্থিতিতে অযথাই তাদের ছবি তোলা পছন্দ করবে না। এটা এ কারণে যে, তারা
বিশ্বাস স্থাপন করে অযথা নিজেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাও একটি পাপ বলে তাঁরা মনে
করে।
দ্বিতীয়ত,
তারা শুধুমাত্র চান তাদের জীবন যাপন করতে এবং পুজো, প্রার্থনা তারা পছন্দ করে তাদের
চাহিদামতো।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান দ্বারা তারা নিশ্চিত। সরকার তাঁদের অনুগ্রহ করে বা এড়িয়ে চলে
এবং তাদের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করে।
তৃতীয়ত,
তাদের খামারে বাইরের কারো অনধিকার প্রবেশ করা নিষেধ। অনধিকার প্রবেশে তারা গুলিও করতে
পারে।
নিজেদেরভ
অন্যান্য কাজকেও তাঁরা বিবেচনা করবে ভদ্র কাজ হিসেবে। পরিদর্শক হিসাবে এরা কাউকে নিজেদের
সম্প্রদায় ভুক্ত করে না।
ওরা বৈদ্যুতিক
আলো বিমুখ, শুধু কৃষি পণ্য চাষবাস করে জীবন যাপন করে থাকে, আধুনিক জীবন যাত্রা সম্পূর্ণভাবে
অ্যামিশরা এড়িয়ে চলে।
হুম ম
... এতক্ষণে বুঝে আসে এতো অন্ধকারের বিরল রহস্য!
এর মধ্যে
জেডির' (জি পি এস) এর ও বোধহয় মান ভেঙেছে বলে মনেহলো। সে হঠাত বেশ গম্ভির কন্ঠে বলে
ওঠে -
“টার্ন
রাইট এহেড '' .......
হাসিদা মুন: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন