রম্যরচনা
ফেসবুক নিয়ে দুচার কথা লিখবো বলে বসেছি সবে, হঠাৎ আমার এক
কবি বন্ধু ফোন করে বললে, ওরে দেখ অমুক কবি তমুকের সম্বন্ধে একটা বিশাল পোস্ট দিয়েছেন,
লেখা চুরি নিয়ে। সেকি চুরি!! বলিস কি? উৎসাহ চাপতে না পেরে ফোন করেই ফেললাম তাকে।
কিন্তু সত্যি যা শুনলাম তাতে মাথায় হাত। আমার চেনা আর এক কবি বান্ধবীই নাকি, সেই চোর।
তার কথার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ঢুকে পড়লাম কবি বান্ধবীর টাইম লাইনে, ওমা গো, একি! দেখি সত্যিই শুধু শব্দ নয় ভাবনাতেও চুরি! ওরে,
চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না যায় ধরা। কিন্তু এ যে এক্কেবারে ক্যাচ কট কট। চোরের নাম
পর্যন্ত তুলে ধরেছেন কবি! আমি বাবা আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিয়ে কাজ নেই, তাই উবজে পড়ে এই উঞ্ছবৃত্তির মধ্যে আর ঢুকলাম না।
তবে নিজের মনে মনেই বললাম, সচেতন হও কাকলি,
এখন থেকে ওই বান্ধবী কোবতে পোস্টালেই দেখে নিতে হবে আমার ঘরে অনাহুতটি অনধিকার প্রবেশ
করে আবার আমার কিছু ঝাঁপলো না তো। ভাবছি বটে, কিন্তু ঝাঁপলেই বা করবো কী? কোমর বেঁধে ঝগড়া তো
আর করতে পারবো না। যতই হোক ভদ্দর লোকের চামড়া গায়ে। আর ভদ্দরলোক ...এইতো সেদিন এক
গ্রুপের একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের কোন সাহিত্যসভায় যোগদানের কারণে বিদেশ যাওয়া নিয়ে শুরু হল তোলপাড়। অপর এক তথাকথিত ভদ্রলোক লোকটির
গায়ে এমন কাদা ছেটালেন যে ভদ্রলোক শুধু গৃহেই নয় এই কারণে হেনস্থা হলেন কর্মস্থলেও।
নির্দোষ লোকটিকে সেদিন যেভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখেছি সত্যি বড্ড খারাপ লাগে।
আর একজন কবি বন্ধুনিকে দেখেছিলাম নিগৃহীত হতে, অচেনা কিছু
মানুষও তার নামে এমন কিছু কথা বলেছিল যা তার পাবার কথাই না। যাই হোক আজ মনস্থ করেছি
চুলোয় যাক চুরিচামারি, আর নিন্দেমন্দা আজ লিখবোই লিখবো এই ফেসবুকের ইতিকথা। আগের দিনে
চোর পুরো সন্ধ্যেটা চুরি করেছে আমার। ফেসবুক আর কিছু করুক না করুক আমাদের মত কিছু নিকামাই
দর্জিদের কিন্তু কাম কাজ করে দিয়েছে। আসলে টি ভি সিরিয়ালে তিনটে বিয়ে চারটে পরকীয়া
দেখতে দেখতে ক্লান্ত মন নতুন কিছুর সন্ধান পেল এই ফেসবুকে। এ প্ল্যাটফর্মের অন্য প্লট।
এখানের উদ্দেশ্য সকলকেই পারফর্মার করে তোলা।
মনের সুপ্ত যেসব বাসনারা খাদ্য না পেয়ে কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছিল, তারা হঠাৎ ফেসবুকীয়
টনিকে চাঙ্গা। ফেসবুক এক্কেবারে ছোটবেলা খুঁড়ে তুলে আনলো "বাই বাই যৌবনের
"উপবনে। জুকুদা তোমারে সেলাম। সত্যি তুমি ঘরে ঘরে সাহিত্যের নন্দনকানন সৃষ্টি
করে দিলে গো।
নন্দনকাননে তৈরি হল নানান দলবৃক্ষ মানে গ্রুপ। সেই গ্রুপের
সদস্যরা হলেন সেই সব মানুষ, যারা না ঘরের না ঘাটের। না না, তা বলে ভালো কেউ নেই তা নয়, তবে সংখ্যায় নগণ্য।
গ্রুপে কী কী হয় ?গপ্প লেখা হয়, কোবতে লেখা
হয়, ছবি আঁকা হয়, পরচর্চা হয়, টাকা তছরূপ হয়, পোতিযোগিতা হয়, কত্ত নতুন পোতিভা উঠে আসে, স্রোতে
ভেসে যায়, ঘর বাঁধে, ঘর পোড়ে, কোন্দল হয়, কেউ হিরো হয়, হমম, কেউ হিরো হলে
কেউ হিরোইনও হয়। দেখছেন এই হল বাঙালি এত্ত
কিছু হয় বলছি, কিন্তু সেটাও কেমন চিমটি কেটে কেটে।
নাহ্ এবার আমি সিরিয়াস। আসলে সত্যি আমরা যেসব মানুষরা, বুকের
মধ্যে না পাওয়াদের পুষে রেখেছিলাম, তারা মরার আগে সেই সব না পাওয়াদের হাতের মধ্যে পেয়ে কেউকেটা হয়ে তবেই বিদায় নেবো এই পৃথিবী থেকে।
আর সে পথ করে দিয়েছে এই মুখবই। মুখের কথা! বসার ঘরে এক আলমারি মেমেন্টো! অথচ লেখার
সময় পরি আর পড়িতে গুলিয়ে গ। দারুণ কে দারুন লিখে বলে এই বানানটাই এখন বেশি চলে।
আর কবিতা? ওরে বাবা একজনকে আমি বিকলাঙ্গ কবিতা লিখতে দেখেছি। ওরে কবিতারই যদি অঙ্গ
বিকল হল তবে সে তো "বিতা" কবিতা তো নয় ।
আর এক মজা ওই প্রতিযোগিতা। যে সেরা নির্বাচন করে সেই অর্ধেক
বাংলা শব্দের অর্থ জানে না। অথচ সে কবি, লোকের
কবিতাকে বিচার করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে রাখবে। হায় হায় সাহিত্যের এ কি
যুগ এলো। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ বেঁচে নেই, না হলে ওঁদেরও কবিতা লেখার আনন্দ
অস্তাচলে যেত।
যতই গাল দি না কেন এই মুখবই এর দৌলতেই কিন্তু বেশ ফুলে ফেঁপে
উঠেছে প্রকাশনার ব্যবসা। মানে বাঙালির ব্যবসার শ্রী বৃদ্ধি হয়েছে। শিবু, বাবু, সাবু
কি জলি, মিলি, কলিরা কলকলিয়ে নিজেদের বই ছাপাচ্ছেন, আর বড়, মেজ, সেজ সাহিত্যিকদের
ডেকে মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা করছেন। আবার নিজেরাই তদবির করে অমুক প্রকাশককে দিয়ে
পুরস্কার পাচ্ছেন। উফফফ কি কাণ্ড।
তবে হ্যাঁ এটা বলতেই হবে হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন
এখন আর আসেনা খবরের কাগজের দপ্তরে। অমুক দেবী তমুক দিন এই জামা পরে নিরুদ্দেশ -- ঝড়ের
মত শেয়ার করুন, এই একটি মাত্র আবেদন। ব্যাস ফটাফট শেয়ার, দুঃখ প্রকাশ, ফোনাফুনি সব
হল, তবে ঝটাপট খুঁজে পায় কিনা সেটা জানা নেই।
একটা মজার কথা বলি। আমি পেশায় শিক্ষিকা। একজন মহিলা রোজ
এসে আমাকে অভিযোগ করতেন ছেলে ফোন নিয়ে সারাক্ষণ
ব্যস্ত একটুও পড়াশুনা করে না। এই নিয়ে বাড়িতে অশান্তি। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ভদ্রমহিলা
আর আসেন না কোন কমপ্লেনও করেন না। ছেলেটিকে একদিন ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, "কিরে মা ভালো আছেন ? আর দেখা করেন না তো "। ছেলের
জবাব ---"ম্যাম, মা তো এখন দিনরাত ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে গল্প করে তাই আমার দিকে
আর অত নজর করে না। "আমি হতভম্ব।হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাইনা আমি।
আর একটা কথাও বলার জন্য পেটের ভিতরটায় কেমন হচ্ছে। বলেই
ফেলি এ্যাঁ। আমাদের বাড়ির পাশের ফ্ল্যাটের চারতলার রুকুবাবুর বউ বরকে ডিভোর্স দিতে
চেয়েছিল শুধুমাত্র রুকুবাবুর দিনরাত ফেসবুক করার অপরাধে। শেষপর্যন্ত বউকে স্মার্ট ফোন
কিনে দিয়ে ফেসবুকের নেশা ধরিয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন তিনি। জানেন এখন বউটা রাস্তায়
হাঁটতে হাঁটতেও ফেসবুক করেন।
কাল আমার শাশুড়ি মা এর ফোন। অসময়ে ফোন করলে ভয় পাই। হ্যালো
বলতেই উত্তেজিত গলায় বললেন, জানিস ফেসবুকে এসেছে নারায়ণ দেবনাথ মারা গেছেন। আসলে
মা ওনার প্রতিবেশী ছিলেন। তাই একটু বেশি উত্তেজিত। আমি টিভির খবর খুলে বসলাম। ওমা কোথায়
কি ?পরে শুনলাম, জীবিত লোকটাকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল ফেসবুক যে তাঁর মৃত্যুর পর সত্যি
কি রকম অভাব বোধ করবে মানুষ। তবে হ্যাঁ এতে জুকুবাবুকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কেউ দুষ্টুমি
করেছিল জুকুবাবু বুঝবে কি করে! লাই ডিটেক্টার তো নেই জুকুবাবুর কাছে।আর উনি তো সব্বাইকে
বিশ্বাস করেন।
আর একটি সভায় কবিতা পড়তে গিয়ে আমি তো জীবিত ভিক্টর ব্যানার্জির
আত্মার শান্তি কামনাও করে এলাম। সে খবরটিও তো জুকুর ফেসবুকের দৌলতেই পাওয়া।
এই দেখো এত্ত বকছি একবারও ঠাকুর দেবতার নাম উচ্চারণ নেই।
এইজন্য, ঠিক এইজন্য আমার কোনো মনোবাসনা পূর্ণ হয়না কোনো উন্নতি নেই। কোটিটাকার মালিকও
হইনা, মুকেশ আম্বানি ডিনারও খাওয়ায় না, ট্রাম্প শুধুমাত্র আমার জন্য রাজপাট ছেড়ে
ডিসনি ল্যান্ডও বানিয়ে দেয়না, নিদেনপক্ষে রাতারাতি বিখ্যাত হওয়াও হয় ওঠে না।কি করি,
আমি আস্তিক হয়েও যে নাস্তিক। আসলে বুধাদিত্য যোগ থাকায় নির্বোধ নই। একবার এই রকম একটা
পোস্ট এসেছিল এই ছবিটি শেয়ার করলেই তিনদিনের মধ্যে মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে। আমি তিনদিন বাদে সেই পোস্ট
উদ্ধার করে কমেন্ট করেছিলাম হে ভগবান এমন নির্বোধদের
ক্ষমা করো, এরা জানে না, এরা তোমার ক্ষমতা নিয়ে মিথ্যে প্রচার করছে। আজ তিনদিন পূর্ণ
হয়ে গেছে আমি শেয়ার করার পরও তোমার দেখা পাই নি। এরপর যে গালাগাল খেয়েছিলাম জুকুদাও
আমাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এমন গালাগাল যুক্ত শব্দাবলী চোখে দেখে আমার কর্নিয়ায় আলসার
হয়ে গিয়েছিল।
এই দেখো তোমরাও ভাবছো আমি বিশ্ব নিন্দুক, বখাটে মহিলা। এই
বয়েসে এসেও ঠাকুর দেবতা নিয়ে ঠাট্টা করি, এর লেখা পড়াই উচিত নয়। দাঁড়াও দাঁড়াও একটা
কথা শুনে যাও এবার যেগুলো বলবো সেগুলো একটাও মিথ্যে নয়।
ভার্চুয়াল জগতে কেউ কারো নয়। দেবতাও আপনার নয় আর মানুষ সে
তো কোন....। নাহ বাক্যের শেষ শব্দ সবার জানা, তাই উচ্চারণ করে আর পাপ বাড়ালাম না।তবে এ কথা সত্যি এ জগতে কেউ
কারোর নয় এটা হলো সার বাক্য। আজ যে মানুষটা তোমায় গাছের মগডালে তুলে দেবে কাল সেই
তোমাকে ঢিল মারবে। প্রয়োজনে তোমাকে কথার জালে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ন আলো করবে, কাল বলবে,
তুমি সেই নিয়নের গায়ে লেগে থাকা পোকা। একদিন তোমায় ফোন করে বলবে, ফেসবুকের দুনিয়ায়
তুমি সেরা উঠতি কবি, পিছনে বলবে অমুককে এই গ্রুপ হাই লাইট করছে। কিন্তু সামনে দেখা
হলে বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা। কত মুখ আর মুখোশ যে দেখলাম তার ইয়ত্তা নেই।
তবে এমন লোকও আছে যারা সত্যি ভালো। একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
এক রবিবার গেছি বর্ধমান। এক বান্ধবী, হ্যাঁ ভার্চুয়াল দুনিয়ার বান্ধবী নিজে ড্রাইভ
করে এসে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে যে আতিথেয়তা করলো মনে হয়নি তাকে প্রথমদিন দেখেছি।
কি দায় ছিল তার? কিচ্ছু না। কি স্বার্থ তার?
কিচ্ছু না। তবু শুধুমাত্র ভার্চুয়াল
বন্ধুত্বটি ভিসুয়াল হল বলে, সেই কারণে
এই অকারণ নির্ভেজাল ভালোবাসা। সত্যি বলতে কি, ভিসুয়াল বন্ধুত্বতেও এখন এমন টান দেখি
না। হ্যাঁ টান আছে। বহুদিন পর জুকুদা সব ছোটবেলার বন্ধুদের মিলিয়ে দিলো। হৈ হৈ করে
সব এক জায়গায় মিলিত হবার টান শুধু প্রচারের
কারণে। কে জীবনে কতটা উঠলো, কতবার বিদেশ গেল, কার ছেলে মেয়ে কতটা সাকসেস পেল, কার বর কটা গাড়ি কিনলো, কার জীবনে কতটা অশান্তি এই সব আর কি।
তবে হ্যাঁ এটা বলতেই হবে আজ যাদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে
উঠেছে, তাদের কাউকেই আমি চিনতাম না যদি ফেসবুক না থাকতো। আমি বড়, মেজ, সেজ কবিদের
চিনতাম না। তাদের চরিত্র জানতাম না। মানুষের গিরগিটি হওয়া দেখতাম না। আমাকে যারা ভালোবাসে
বা মন্দবাসে তাদের আমার ধারেপাশে পেতাম না। সর্বোপরি আমি এই কবি ভাবাপন্ন অকবিও হয়ে
উঠতাম না।
তাই বলতেই হয় আমি যতোই চিমটি কাটি না কেন এটা স্বীকার করতেই
হবে ফেসবুক আমাকে জীবন দিয়েছে। আমি লিখে যে
আনন্দ পাই সেই আনন্দ আরো বেড়েছে এই ফেসবুকের
বন্ধুরা পিঠ চাপড়েছে বলেই। বলুন তো কে না নামযশ চায়? হ্যাঁ আমিও চাই। তাই যখন অজানা কোন মানুষ বলে আরে
আপনাকে তো চিনি তখন আশ্চর্য হই। হ্যাঁ মুখবই আমার মুখটা চিনিয়েছে। তবে কেড়েছে ও অনেক।
এখন কর্তা বাড়ি এসে দেখে আমি মুখবইতে মুখ গুঁজে। উনি গোঁজ হয়ে গজগজ করতে করতে ওঘরে।
হারিয়ে গেছে একসাথে বসে গল্প কথা বা চা খাওয়া। তবে হ্যাঁ এখন আর ঝগড়া তেমন হয় না।
দুজনেই মুখ ডুবিয়ে দি মুখবইতে। সে শেয়ার মার্কেটে আর আমি লাইক কমেন্টে।
হারানোর কথা যখন উঠলো তখন বলি সব থেকে বড় যা হারানোর তালিকাভুক্ত
হলো তা হলো আমাদের প্রাইভেসি। সব ওপেন টু অল। মাছ ভাজছে সেটা টাইম লাইনে, কাজের লোক
আসে নি ঘরের ঝুল ঝাড়ছো সেটা ছবিসহ প্রচার, বাচ্চার দাঁত উঠেছে তার সেলিব্রেশনের ছবি,
শাশুড়ির শ্বাস উঠেছে তার সংবাদ, কোনটা নয়!
একদিন দেখি একটা বাছুরের ছবি দিয়ে লেখা আজ ধবলীর বাচ্চা হলো। এরপর নিশ্চিত, মানুষ
তাদের প্রাতঃকৃত্যর ছবিও দেবে কোনোদিন।
সেদিন আমার এক বন্ধু আমাকে ট্যাগ করে লিখেছে, আজ দুদিন তিনঘন্টা
পঁচিশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড পর, আমার হাবি আমার রাগ ভাঙ্গিয়েছে গোলাপ দিয়ে, সঙ্গে
একটা পোকা খাওয়া পাতার সাথে ঘাড় কাত করা আধফোটা গোলাপের ছবি।
মনে মনে বললাম, মরণ, ন্যকামি দেখো, বুড়ো বয়েসের ভীমরতি। ছেলে মেয়েদের
লীলা দেখানো, নাকি বন্ধুদের! কিন্তু দেখলাম ট্যাগ করেছে যখন, তখন উপায় নেই লাইক তো
ঠুকতেই হবে। ইচ্ছে না থাকলেও কমেন্ট বক্সে লিখতে হলো, সো সুইট।
আর কমেন্ট, হায় হায় সে কথা আর কি বলি! মনে আছে সুচিত্রা ভট্টাচার্য মারা গেছেন। নিউজ ফিডে
শুধু ওনার ছবি আর তাতে শয়ে শয়ে লাইক। আরে মানুষটা অকালে চলে গেলেন তাতে লাইক দেওয়া
কেন? কি বোঝাতে চাইছে মরে গেছেন ভালো হয়েছে !
তবে হ্যাঁ এটা ঠিক এই ফেসবুক এমন একটা মাধ্যম যাতে আমরা সাধারণ
মানুষ নিজেদের স্বাধীন বক্তব্য প্রকাশ করতে পারি অতি সহজেই। মানুষ ঘরে বসে জানতে পারে
দূর দূরান্তের খবর। রাত বারোটার ট্রেনে কোন মেয়ের শ্লীলতাহানি হলো, কোন মন্ত্রী গাড়ি
থেকে মহিলা নিয়ে কোন হোটেলে উঠলো, কোন শিল্পী কোকিলের ছবি কার কাছে বেচলো, সব সব ফেসবুকে।
এই ছবি বেচার কথায় মনে হলো সবাই এখন জাত শিল্পী। অনেকে আবার
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাই লাইটেড করছেন নিজেরা এঁকে বা মাস্টারদের দিয়ে আঁকিয়ে।
চলুক এভাবেই চলুক। আমরাও চলি তাল মিলিয়ে। কি করি আর বলুন
তাল কাটলে যে আবার নটরাজ বাবুর রোষে পড়বো। শেষ পর পরের জন্মে বেহুলে হয়ে জম্ম নিতে
হবে। লখাইকে আবার সাপে কাটবে। ওরে বাবা থাক বরং এভাবেই চলি।
ফেসবুকের ফেস কাটিংটা কিন্তু আমাদের বেশ মনে ধরেছে। আপনারা
কি বলেন ?
কাকলি দাশ ব্যানার্জী: কপিরাইট লেখক
কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন