মাটিজন্ম




দীর্ঘ কবিতা



তারপর ...
আটচল্লিশ নম্বর পৃষ্ঠার শেষ লাইন
উঠে এলো কিছু আকৃতিহীন শোক, চতুর্মাত্রিক
তাতে লেপ্টে থাকা দাগগুলো গলতে গলতে
একসময় ঠিক সুড়ঙ্গ খুঁজে পেলো  ।

আখড়ায় আয়োজন গুটিয়ে ভবঘুরের মতো
দক্ষিণের রোয়াকে নিশ্চিন্ত পাথর হয়ে যখন বসলাম আমি ,
জ্যোৎস্না মাখামাখি গাল থেকে তখনও  ঝরে যাচ্ছে বিষাদ ।

টলটলে অমাবস্যার নিখুঁত কালো জমিন জুড়ে আধভাঙ্গা বসতি
ওদিকে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকছে বৃষ্টির ছাঁট
আলমোড়া কাটিয়ে ভিজছে চাঁদও
প্রায় প্রতিদিনই এভাবেই  জন্ম নিত নতুন বৃত্ত

হঠাৎই ...
পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়তে শুরু হলো ,
ঊনপঞ্চাশতম কাগজের সূচনার লাইনে দেখি
শূন্যের গুণিতক সাজানো আছে স্তরে স্তরে ।

গুণিতকের ভেতরে ধর্মঘট মিছিল ধর্ণা মোমবাতি-প্রতিবাদ
পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে একবার শেষযাত্রা
যতটা স্রোত জলস্তরকে উর্ধ্বগামী করেছে
তুমি আজো ততটুকু অভিনয় করতে পারোনি

ভালোরাখা আর ভালোথাকার অন্তর্বর্তী
একটা বর্ণের অসামঞ্জস্য শিল্পী করেছে তোমায়

আশ্চর্যভাবে প্রতিটা নিয়তির শরীর জুড়ে
যেভাবে লেখা থাকে অসহায়ত্বের গল্প
হলুদকাব্যের মোড়ক উন্মোচনের মুহূর্তে
কোনো জবানবন্দি কিন্তু লিখিত হয় না

পাতার পর পাতা উল্টে উল্টে ক্লান্ত জীবন
অবসন্ন এক ধোঁয়াটে বিকেল, নিস্তব্ধ সঙ্গীহীন
ফণিমনসার ঝোপ গজিয়েছে
ক্ষতবিক্ষত আত্মা , জলোচ্ছ্বাসের প্রতীক্ষায় দেহ

তবুও ...
কেও যেনো দীর্ঘমেয়াদি নমুনা বিছিয়ে রেখেছে
পরকালের ঠিকানায়
পোট্রেট আঁকা নিশুল্ক দুপুরে অশরীরীর যাতায়াত
ভিজে যাচ্ছে যাবতীয় উপকরণ
দেয়ালের গা থেকে খসে পড়ছে রঙ্গের প্রাচুর্য
ওদিকে আয়নার বিপরীতে গড়ে উঠছে বিরাট জনপদ

জনতার চোখ বাঁধা রঙ্গিন কাপড়ে
রোদচশমায় বন্যার ইঙ্গিত
হাতের নাগালে শিকড়ের কান্না কিন্তু শব্দবিহীন
থমকে থাকা সূর্যের প্রতিটা অণুতে তির্যক বিরোধ

একটুকরো মেঘ কেনার নামে
তুমি প্রতিদিনই বর্ধিত করছো বন্দীদশার ঘর
দিকচক্রবালের গায়ে লেগে আছে ঝুরঝুরে বালি
উপত্যকা গিলে খাচ্ছে নগ্ন ভূমিরুপ
একমাত্র মোহনাই জানে
পথিক হেঁটে গেলে জলে ছায়া না পড়ার কারণ

ক্রমশ ...
আস্তরণে ঢেকে যাচ্ছে পরিপূর্ণতা
অপাংক্তেয় চিত্রে লবণের তীব্র সংকেত
স্পষ্ট হচ্ছে জমিয়ে রাখা স্মৃতিচিহ্ন
অবশিষ্ট দগ্ধতাটুকু পুড়িয়ে ফেলে
 দেখো রক্তাভ হচ্ছে আধার
কার্যত যেটুকু অনিশ্চয়তা
ঘাম হয়ে ফুটে উঠছে তোমার দামী পোশাকে
আমি নিউজ বুলেটিন থেকে ততটুকু খবর সংগ্রহ করে
বিলি করছি মানুষে মানুষে

আগামীর পৃথিবী আবার গর্ভবতী
আর তুমি আমি মাটিজন্মের অপেক্ষায়।


পিয়াংকী : কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন