কবিতা
চক্রব্যূহ: এক
দুনিয়ার সমস্ত খিদের গানে আছে
দাম্ভিক প্রাসাদের আলোছায়ার দাপাদাপি।
আছে পুঁজিবাদী ব্যারাকের ভয়ংকর গল্প,
মধুচক্রে লিপ্ত বেনামী পার্লার,
প্রতিরোধহীন কোমল উরুর রাত্রি,
আর বিলম্বিত শ্রাবণ - মেঘের বিষণ্ণতা।
অথবা লাবণ্যহীন দারিদ্রের অবসাদ।
চক্রব্যূহ: দুই
সাদাবক বিপদসীমা পেরোবার আগেই
ঋণগ্রস্ত কৃষকের আর্তনাদ ধ্বনিত হয় বাতাসে।
কৈলাসই বলো আর মানস সরোবর,
ব্যভিচার সর্বত্র ।
সুখী অসুখী সব দাম্পত্যে
রমনকালে রমনীই পিষ্ট হয় অধিক।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মেই চলছে
জরায়ুভূমিতে চাষাবাদ।
আজকাল প্রায়ই প্রকৃতিও নির্দয় হয়ে ওঠে।
প্রেমিকাও প্রতারক হয় বটে!
চক্রব্যূহ: তিন
নাথবতী অনাথবৎ দ্রৌপদী,
বোরখার আড়াল কিংবা তিন তালাক,
সবই নারী নির্যাতনের বিবিধ পর্যায়।
আইন আদালতের বিলম্বিত রায়ে,
আর ঢিলেঢালা প্রতিরোধে
অপরাধ, নিরপরাধে
পর্যবসিত আজ।
সাক্ষীর অভাবে, প্রমানের অজুহাতে
কত সত্য, কত কান্না খারিজ হয়ে যায়,
আদালতের বেমালুম ভুল রায়ে!
চক্রব্যূহ: চার
প্রেমের জলরঙে থাকা মায়াবী টান,
গ্রীবা ছোঁয়া বাউলের একতারা বেপাত্তা এখন।
দিনলিপি জুড়ে শুধু আপোষী ছায়াদের নৃত্য।
কুয়াশাময় ভোরের ঝিল
সাইবেরিয়ার পরিযায়ী পাখি খোঁজে।
বন্দুকের নিভৃত অন্ধকারের বর্ণমালা
ক্ষমতার উৎস সন্ধানে কাটিয়েছে অঢেল সময়,
আজও তবু অমীমাংসিত।
আলোর অংক না-শেখা মেয়েদের ভিড়ে
নামগোত্রহীন ডাকঘর নতজানু আজ।
শূন্য বন্দরের অযুত ঢেউয়ে তোলপাড় চরাচর।
এভাবেই আমাদের বেঁচে থাকা!
বেঁচে থাকা বলে একে?
চক্রব্যূহ: পাঁচ
প্রত্যাশা ফুরিয়েছে কবেই অপেক্ষার কাছে
কালের বৃত্তে সময়ের বিচিত্র চিত্রকল্প
জলের মগ্নতায় শোনায় মাটির মৃদঙ্গ।
বিপন্ন মেঘ ভাঙে ঘূর্ণায়মান সিঁড়ির দুনিয়া।
ঘুনপোকা খানখান করে নিঝুম রাতের নির্জনতা।
আলোর শরীরে মিশে থাকা অন্ধকার,
আর মেঘরঙে শ্রাবণের স্বরলিপি
বোধির শিকড়ে বোনে মরমী হৃদয়।
অবক্ষয়ের আখ্যান লিখতে লিখতে দেখি
ভেষজগুণহীন গাঢ় সবুজ রঙে
হাততালি দেয় মেধা ।
ভূগোলের সীমানা ছাড়িয়ে
পরিযায়ী পাখিরা ডানা ঝাপটায়,
জুড়াবে বলে অপরিচযের উড়ান-দাহ।
সুধাংশুরঞ্জন সাহা: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন