গুচ্ছ কবিতা
আশীর্বাদ
- (সবুজ বাসিন্দা)
যতদূর নিঃস্ব হওয়া যায় ততদূর হাত খুলেছি আজ।
সর্বস্ব নিয়ে নে তুই।
আমার এই কন্ঠ,ধমনি,রক্ত,শ্বাস এবং বসবাস -
সমস্ত কিছুই তোর নামে সমর্পণ ।
হৃদয়ের ভিতরের মাটিতে যে স্নেহবীজ পুঁতেছিলাম
তাকে বড় হতে দিস,
শাখা ছড়াতে দিস অসীম আদিগন্ত।
আমি'-র আমি-কে আর পূর্ণতা দিয়ে কি হবে?
এ-সবই তোর ।
আমারতো কেবল অস্হায়ী শরীরে ভর করে পৃথিবীতে আসা
মাত্র।
যা কিছু সব আশীর্বাদ স্বরূপ তোকে দিয়ে গেলাম।
সুখে থাকিস...
ফেলে যাচ্ছি
চলে আসলে, ফিরেও যেতে হয় ভিটে ছেড়ে।
আমাদের মাঝে ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে সময়।
কেন মানুষ হয়ে জন্মালাম? ---
জল,আগুন,বাতাসও-তো হতে পারতাম।
রক্তের প্রকৃত সম্পর্কগুলোতে সুদৃঢ় টান থাকে,
দূরত্ব এলে বুক জ্বালা করে, চোখের জল ভারী হয়।
হে ঈশ্বর,কেন সম্পর্কের শিরাগুলোতে
ভালবাসা ঢেলে দিলে!
কেন সম্পর্কের নাম মা-বাবা-ভাই-বোন দিলে!
মনে হচ্ছে,
আজ হৃদপিণ্ডের এক টুকরো
শত দিগন্ত দূরে ফেলে যাচ্ছি।
ভালবাসা না থাকলে কোনও কষ্টই হত না!
আমাদের পাথর করে দাও,প্রভু ।
প্রজাপতি-রঙ
প্রজাপতি-মহলে অজস্র রঙীন তাস সংরক্ষিত।
আমি ভুলে গিয়েছি আমার গন্তব্য কি ছিল,
ভুলে গিয়েছি আমার আদিম পরিচয়।
তোমার কয়েনের হেড আর টেলের পর্যাপ্ত সময়ের ভিতরে
যদি আমার ক্ষণিক প্রেমের জন্ম-সুখ ঘটে,
তার জন্য তুমি দায়ী নও ---
দায়ী ঐ ঈশ্বর যিনি তোমাকে প্রজাপতি-রঙ দিয়েছে,
আর আমাকে ভালবাসার অধিকার।
তোকে নিয়ে কবিতা
দীর্ঘ কয়েক বছর পর
রাত্রিকালীন কবিতার খাতাটা খুললাম আজ।
দেখি, রাতের আকাশ থেকে চাঁদটা সরে গেছে
অনেক দূর।
তুই গভীর নিদ্রায় মগ্ন,আর তোর ঘরের ভিতরটাও অন্ধকার।
আমি নিঃশব্দে সার্চ-লাইট হাতে খুঁজে চলেছি
তোকে নিয়ে লেখা সমস্ত কবিতাগুলো ।
সূর্যটা উঠলেই প্রকাশিত হবে সেইসব কবিতাগুচ্ছ।
বইয়ের মলাটে থাকবে আমার নাম,
আর বইয়ের ভিতরে তোর কথা।
নিঃস্বার্থ
আজ অসম্ভব ভালবেসে তোকে ডেকে নেবে কাছে,
কাঁচা রোদ্দুরে ঝেড়ে ফেলবে
সে তার মরচে রঙের জড়তা।
যে-ক'টা পথ সমান্তরাল হয়ে ছুটে গিয়ে
দূরে কোনও এক জায়গায় ভেঙে গেছে,
সেখানে সে মিলন-শিবির রেখেছে।
তারও অনেক আগে ছুটে গেলে দু'জনের চোখে
তীব্র নির্ভরশীলতা স্পষ্ট হয়।
আসলে ভালবাসা যৌবনে নয়, শেষ বয়সে ধরা দেয়,
যা সার্থহীন হয়।
সুপম রায়: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন