প্রবন্ধ
পশ্চিমবাংলার
অবিচ্ছেদ অংশ উত্তরবঙ্গ। গঙ্গা নদীর পূব দিক থেকে সংকোশ নদীর পশ্চিম দিক অবধি
বিস্তৃত উত্তরবঙ্গ বা উত্তরবাংলা। মোট আয়তন ২১ হাজার ৮ শত ৫৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে
রয়েছে মোট আটটি জেলা,মালদা,উত্তর ও দক্ষিণ
দিনাজপুর,
দার্জিলিং,কালিম্পং, জলপাইগুড়ি,আলিপুরদুয়ার ও
কোচবিহার। অনেক বছর আগের থেকেই উত্তর বাংলা নানা জাতি, উপজাতির সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ।
দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার পাহাড়
অঞ্চলে যেমন বাঙালি, নেপালী ছাড়াও শেরপা, লিম্বু, রাই, ভুটিয়া, লেপচা, প্রভৃতি নানা জনজাতির লোকজন
থাকে, তেমনি সমতলে তরাই অঞ্চলে চা বাগানগুলিতে নানা আদিবাসী জনজাতি
যেমন সাঁওতাল,
মুন্ডা, ওঁরাও, ভুঁইমালী, ধীমাল,রাজবংশী ইত্যাদি
জনগোষ্ঠীর লোকজনকে দেখা যায়। সেরকম জলপাইগুড়ি জেলায় নানা নানা ভাষা ও সংস্কৃতির
মানুষজন দেখতে পাওয়া যায়। আলিপুরদুয়ার জেলা হবার আগে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় মোট
১৫৬ টি ভাষা প্রচলিত ছিল। আলিপুরদুয়ার জেলাতেই থাকে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র
জনগোষ্ঠী টোটো সম্প্রদায় মানুষজন। এছাড়াও
অতি প্রাচীন জনগোষ্ঠী অসুরদেরও জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এই দুই জেলার সামান্য কিছু
কিছু অংশে দেখা যায়। তেমনি কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এইসব জেলাও নানা জাতি, উপজাতি, ভাষা, উপভাষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ।
নানা জাতির লোকজন থাকার ফলে এখানকার সংস্কৃতি এক মিশ্র ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।প্রত্যেক জনজাতির
লোকেরাই বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী তাদের নিজের নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি পালন করে থাকে। আবার
একে অপরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করার ফলে
তৈরী হয়েছে এক সাংস্কৃতিক
মেলবন্ধন। এখানে হিন্দু ধর্মের সাধারণ দেবদেবীর পূজোর প্রচলন থাকলেও নানা জনজাতির নিজস্ব দেব বা দেবীর পূজা বা
আরাধনা দেখতে পাওয়া যায়। সে উপলক্ষ্যে অনেক জায়গায় মেলা বসে আর তা বেশ কিছুদিন ধরে
চলে। তাছাড়াও আছে সারাবছর ধরে নানা ব্রত পালন। মেয়েরাই সাধারণত এইসব ব্রত পালন করে থাকে। এখন এই ব্রতগুলি
প্রায় অপ্রচলিত হয়ে পড়লেও উত্তর বাংলার সামাজিক জীবনে এইসব ব্রতর বিশেষ প্রভাব থেকে গেছে। এখানে কয়েকটি
বিশেষ লৌকিক দেবতা, ব্রত ও লোক
সাংস্কৃতির কথা লেখা হলো যার মধ্যে
কয়েকটি কেবল উত্তর বাংলায় প্রচলিত, আবার কয়েকটি
অন্য অঞ্চলে প্রচলিত থাকলেও তা
উত্তরবাংলার মতো এতো জনপ্রিয় নয় ।
উত্তরবাংলার
চা বাগান অঞ্চলে আদিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব করম পূজা। বিভিন্ন
আদিবাসীগোষ্ঠী যেমন সাঁওতাল,মুন্ডা,ওঁরাও,ভুঁইমালী,পাহান, মালো,মাহাতো প্রত্যেকেই এই করম পূজা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে
থাকে। ভাদ্র মাসের এগারো দিনের মাথায় এই উৎসব বা
পরব অনুষ্ঠিত হয়।করম দেবতা হলো শক্তি, সুখ, শান্তি,সমৃদ্ধি ও যৌবনের দেবতা। একটা
করম বা কদম গাছের ডালকে করম দেবতার প্রতীক হিসাবে পূজা করা হয়। আদিবাসী যুবকেরা
জঙ্গলে গিয়ে এই করম গাছের ডাল সংগ্রহ করে নিযে আসে। করম পূজা পাঁচ দিন আবার কোথাও কোথাও সাত দিন ধরে চলে।
আবার একদিন ও পনের দিনের করম পূজা ও দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে করম বা কদম গাছের ডাল বসিয়ে এই পূজা
করা হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো কোনো করম বা
কদম গাছকেই পূজা করা হয়। সাধারণত গ্রামের মাঝখানে একটা পরিষ্কার জায়গা দেখে সেখানে
করম গাছের ডাল পুঁতে এই পূজোর আয়োজন করা হয়। পূজোর সাথে সাথে নাচ গান চলতে থাকে।
করম পূজার একটা বিশেষত্ব হলো পূজার
পুরোহিতের করম দেবতার পাঁচালি পাঠ করা । আর শ্রোতাদেরও পাঁচালি শুনতে শুনতে মাঝে
মাঝে হু হু করে ঘাড় নাড়াতে হয়। যাতে সবাই বুঝতে পারে সে কাহিনীটা শুনছে । এইপুজায় যে কেউ অংশ নিতে পারে। তবে তাদের
কতগুলো নিয়ম মানতে হয়। যারা পূজায় অংশগ্রহণ করে তাদের “কেরমেটি”বলা হয়। পূজার দিনগুলোতে কেরমেটিরা আমিষ খাবার খেতে পারে
না এবং যেকোনো রকম মসলা, তেল, হলুদ এইসব ব্যবহার করতে পারে না। করম পূজা নানারকম ভাবে
হয়। গ্রামের দশ জন মিলে যে যে পূজা করে
তাকে “দাসাহার করম”বলে। পারিবারিক পূজাকে “আপান করম”বলে। সবচেয়ে ব্যায়বহুল
করাম পূজা হলো “জিতিয়া করম”। দাসাহার এবং আপান করম ভাদ্র মাসের একাদশীতে হলেও
জিতিয়া করম পূজা ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন হয়। আবার ভাদ্র মাসের একাদশী থেকে পূর্ণিমা অবধি যে করম
পূজা চলে তাকে “ভাদই করম”বলে। আবার শারদীয়া
দুর্গা পূজার সময় আয়োজন করা হয় “দাসাই করম”। দশমীর দিন এই পূজার আয়োজন করা হয়। দশমীর দিন মাদল ও নাগরা বাজিয়ে নারী পুরুষ
দাসাই নাচ নেচে এই পূজা করে থাকে। করম
পূজার সাথে সাথেই “জাওয়া
পরব”ও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
জাওয়া পরব হলো প্রজনন দেবীর পূজা। এই পূজা পালন করে থাকে কুমারী মেয়েরা। জাওয়া
পরবের কয়েকদিন আগের থেকে একটি বেতের
ঝুড়িতে বালি রেখে তার মধ্যে শস্যের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে এই ঝুড়িগুলোতে
জল দেওয়া হয় । কয়েকদিন পর ঝুড়িতে বীজ থেকে অঙ্কুর
বের হয়। আদিবাসীদের বিশ্বাস যার
ঝুড়িতে বেশি অঙ্কুর দেখা দেবে তারই
প্রজনন ক্ষমতা বেশি। করম আর জাওয়া, এই দুটো পরব একসাথেই
অনুষ্ঠিত হয়। করম শক্তি, যৌবন আর সমৃদ্ধির পূজা আর জাওয়া প্রজনন বা উর্বরতার
পূজা। এজন্য অনেক জায়গাতেই এই দুটো পূজাকে
একসাথে “করম-জাওয়া” পরবও বলা হয়ে থাকে।
করম
পূজাসমন্ধে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। বাংলার পশ্চিম অংশে জঙ্গলমহলে এক গ্রামে
সাত ভাই বাস করতো। সাত ভাইয়ের সাত বৌ।
ভাইয়েরা ক্ষেতে কাজ করতে এলে তাদের বৌয়েরা দুপুর বেলায় খাবার পৌঁছে দিত। এমনি এক দুপুর বেলায় সাত বৌ খাবার নিয়ে
এল। কিন্তু ভাইদের আর খাবার সময় হয় না, শেষে বৌয়েরা খাবার ফেরত নিয়ে চলে গেল। পরের দিন আর কেউ
খাবার নিয়ে এলনা। খিদে, তেষ্টায় কাতর হয়ে সন্ধ্যায় সাত ভাই বাড়ি ফিরে এল। বাড়িতে
এসে দেখে সাত বৌ সংসারের সব কাজ ফেলে, বাড়ির উঠানে এক করম বা
কদম গাছের নিচে নাচ,গান
নিয়ে মগ্ন হয়ে আছে। এই দেখে ভাইয়েরা রাগে কদম গাছটা কেটে ফেলে। তারপর থেকেই তাদের
সংসারে অভাব দেখা দিল। দিনদিন তারা গরিব থেকে গরিবতর হয়ে যেতে থাকল। ভাইয়েরা অভাবের
প্রতিকার খোঁজা শুরু করল,কিন্তু কিছুই পেলো না।
শেষে একজন বৃদ্ধ সর্দার কদম বা করম গাছের পূজা করার কথা বললেন। করম দেবতা শক্তি,যৌবন ও সমৃদ্ধির
প্রতীক। তার পূজা করলেই তারা আবার আগের অবস্থা ফিরে পাবে। প্রথমে রাজি না হলেও
শেষে নিরুপায় হয়ে ভাইয়েরা করম পূজোর আয়োজন করা শুরু করল। কিন্তু করম বা কদম গাছ পাবে কোথায়? গাছ তো কেটে ফেলা হয়েছে। শেষে
সর্দার আবার উপায় বলে দিলেন। যে কোনো জায়গা থেকে ভেঙ্গে নিয়ে আসতে হবে করম বা কদম
গাছের ডাল। বন থেকে সংগ্রহ করতে হবে পূজোর
ফুল ও ফল। আর তাই দিয়ে পূজা দিতে হবে করম
দেবতার। সাত ভাই ও বৌয়েরা মিলে পূজাকরে
আবার তারা আগের অবস্থা ফিরে পেল। গাছপালা যে আমাদের সহায়ক,প্রকৃতির মধ্যে
ভারসাম্য বজায় রাখে। এই সত্যটাই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তরবাংলার
রাজবংশীদের অন্যতম প্রধান পূজা ভাণ্ডানি অনুষ্ঠিত হয় আশ্বিন মাসের একাদশীর দিন।
কোথাও এক দিনেই পূজা শেষ হয়ে যায়,আবার কোথাও চার এমন কি পাঁচ দিন ধরেও চলে। মা ভাণ্ডানি
ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী। ভোরবেলা থেকেই
ভক্তদের আনা বাতাসা,দুধ,কলা ইত্যাদি উপাচার দিয়ে পূজা শুরু হয়ে যায়। মোমবাতি, ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ও
পায়রা উড়িয়ে দেবীর আরাধনা করা হয়। ভাণ্ডানি দুর্গারই আরেক রূপ। দুর্গা বা ভাণ্ডানি দেবীর পাশে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক,গণেশ থাকে , তবে সিংহ থাকে না।
দেবীর বাহন এখানে বাঘ। ভাণ্ডানি ঠাকুরের বিসর্জন হয় না। পূজা হয়ে গেলে কোনো মণ্ডপে বা গাছতলায় দেবীকে রাখা হয়। বিখ্যাত ভাণ্ডানি পূজা অনুষ্ঠিত হয় জলপাইগুড়ি
জেলার ময়নাগুড়ি মহকুমার বার্নিশ গ্রামে। এখানে একাদশীর দিনই পূজা হয়। প্রচলিত
বিশ্বাস,
দশমীর
রাতে কৈলাসে যাবার পথে দেবী এই বার্নিশ গ্রামেই একরাত কাটিয়ে ছিলেন। তাই একাদশীর দিন গ্রামের লোকজন দেবী দুর্গা
রূপে ভাণ্ডানি পূজার আয়োজন করে ছিলেন।
পূজা শেষে একাদশীর দিনই দেবী কৈলাসে ফিরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে শস্যে ভরিয়া দিয়ে গিয়েছেলেন গ্রামের
ভান্ডার। এখানে দেবী কিন্তু দশভুজা নয়
দ্বিভুজা। তবে অনেক জায়গায় দেবী ভাণ্ডানি চতুর্ভুজা রূপেও পূজিত হন। ভাণ্ডানি পূজা নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত লোকশ্রুতি
আছে যে,
দশমীর দিন
মা দুর্গা সপরিবারে ডুয়ার্স হয়ে হিমালয়ে ফিরছিলেন। সেসময় ডুয়ার্সে অন্ধকার ঘনিয়ে
আসে। মা দুর্গা সাধারণ বেশে এক রাজবংশী পরিবারে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তখনকার নিয়ম
অনুসারে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ কোনো অচেনা মহিলাকে আশ্রয় দিত না। ফলে দেবী
একদিনের জন্য রাঁধুনি হিসাবে ভান্ডার ঘরে থাকতে দিতে অনুরোধ করেন। ফেরার সময় দেবী
নিজের রূপ ধারণ করেন। সেই থেকে একাদশীর দিন এই পূজা চলে আসছে। তবে গবেষকদের মতে ঘন
জঙ্গলে ঢাকা ডুয়ার্সের বাঘের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্যই রাজবংশী সম্প্রদায়ের
মানুষ ভাণ্ডানি পূজা শুরু করেন। ভাণ্ডানি পূজা নিয়ে আর একটা কাহিনী বহুল
প্রচলিত। সেকালে দুর্গা পূজাজমিদার বা
জোতদার বাড়িতে হতো। একবার পূজা শেষে দেবী
দুর্গা কৈলাসে যাবার জন্য এক জোতদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন গ্রামের কয়জন রাখাল দেবীকে তাদের বাড়িতেও
পূজা নেবার জন্য অনুরোধ করে। দেবী রাজি হন।
পরদিন মানে একাদশীর দিন ওই রাখালরা ভাণ্ডানি রূপে দেবীর পূজা করেছিল।
রাজবংশী
সম্প্রদায়ের আরেকটি বিখ্যাত পার্বন তিস্তা বুড়ির পূজা। কৃষি
নির্ভর রাজবংশী সম্প্রদায়ের কাছে তিস্তা নদীর গুরুত্ব নতুন করে বলার কিছু
নেই। তিস্তা নদীকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিবছরই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন
তিস্তা বুড়ির পূজোর আয়োজন করে থাকে। জলপাইগুড়িতে রাজবাড়ির উদ্যোগে খুব বড় করে এই
পূজোর আয়োজন করা হয়। সারাদিন নিরামিষ খেয়ে
ধামসা,বাঁশি বাজিয়ে,নাচ,গান করে তিস্তা বুড়ির
পূজার অনুষ্ঠান চলে। তিস্তা বুড়ির পূজায়
রাজবংশীদের লোকগান “থুড়ি মেচেনী” গান ব্যবহার হয়ে থাকে। এই থুড়ি মেচেনী গান ভাওয়াইয়া
গানের একটি লুপ্তপ্রায় শাখা। মূলত
মহিলারাই সংসারের মঙ্গল কামনায় যুগ যুগ ধরে থুড়ি মেচেনী গান গেয়ে তিস্তা বুড়ির পূজা করে আসছে।
অনাবৃষ্টি
হলে,বৃষ্টি হবার জন্য
রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলারা “হুদুম দ্যাও” পূজা নামে আর
একটি পূজা করেন। এই পূজায় পুরুষদের
প্রবেশাধিকার নেই। এমন কি তারা এই পূজা
দেখতেও পারেন না। এই পূজা মেঘ দেবতাকে
সন্তুষ্ট করতে করা হয়। শ্রাবন, ভাদ্র মাসে যদি বৃষ্টির অভাবে মাঠের ধান শুকিয়ে যায়,তখন এই আয়োজন করা হয়। এই
পূজোর কোনো সুস্পষ্ট ধর্মীয় রীতিনীতি নেই। গভীর রাতে গ্রামের প্রান্তে কোনো গাছের
তলায় মহিলারা জড়ো হয়ে হুদুম দ্যাও পূজা করে থাকেন। এই পূজায় নাচগানই মূখ্য। এই
হুদুম দ্যাও পূজা একপ্রকার দেবতা ইন্দ্রের পূজা। দেবতা ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করে বৃষ্টিধারা
আনাই হুদুম দ্যাও পূজার উদ্যেশ। হুদুম দ্যাও কে দেবতা ইন্দ্রের আর এক রূপ ভেবে
আরাধনা করা হয়।এই পূজায় দেবতা ইন্দ্রের
কাছে বার্তাবাহক হিসাবে হুদু পাখি পাঠানো হয়। একটা পায়রাকে হুদু পাখি সাজিয়ে দেবরাজ
ইন্দ্রের উদ্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়ে
থাকে।
রাজবংশী
সমাজের প্রায় হারিয়ে যাওয়া আর একটি লোক সংস্কৃতি “ধাম গানের” আসর। একসময় সামিয়ানা
টানিয়ে সারা রাত ধরে চলতো ধাম গানের আসর।
নতুন ফসল তোলার আনন্দে এই গানের আসর বসত। হেমন্তে শুরু হয়ে শীত শেষ না হওয়া
অবধি তা চলতে থাকত। অঘ্রানে ধান উঠার পর
ফাল্গুন মাস অবধি গ্রামের লোকের হাতে কোনো কাজ থাকতো না। ওই সময় গ্রামের ছেলেরা
পালা সাজাতো। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে সেই
পালা গেয়ে আসর জমাত। এই গানকে কোথাও “মারঘুরা গান”,আবার কোথাও “পালাটিয়া” বা “হুলিগানও”বলা হয়। প্রতিদিনের
জীবন যন্ত্রনা ,
সাংসারিক
টানাপোড়েন ,
প্রেম, পরকীয়ার মতো রকমারি
ঘটনা রাজবংশী ভাষায় ধাম গানের সংলাপে উঠে আসে।রাজবংশী ভাষায় ধাম শব্দের অর্থ
স্থান। বাড়ির নিকানো উঠানে, কিংবা রাস্তার পাশে উঁচু জায়গায় সামিয়ানা টানিয়ে আসরের
আয়োজন করা হতো বলেই এর নাম “ধাম গান”।
মনসামঙ্গলের
বিষহরা গান উত্তরবাংলার রাজবংশী সমাজে একদা খুবই জনপ্রিয় ছিল যা প্রায় হারিয়ে যেতে
বসেছে। নানা আঙ্গিকে বিষহরা গান গাওয়া হয়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে যে বিষহরা গান গাওয়া হয় তাকে বলা হয় "ঠাকুর শান্তিগান"। মনসা দেবীকে মানত
করার পর মনস্কামনা পূর্ণ হলে যে বিষহরা গানের আয়োজন করা হয় তাকে বলে " ভাসান
গান"। এই ভাসান গান পুরোপুরি গান নয়। একপ্রকার লোকনাট্য। এক বিশেষ গায়ন রীতিতে
যা গাওয়া হয়। জেলা বিশেষে বিষহরার গানে
কিছু কিছু বৈশিষ্ট দেখা যায় যায়।। বিষহরার
গানের সাথে সাথে মনসা পূজা করা হয়ে থাকে।
কোথাও মাটির তৈরি মনসার মূর্তিকে আবার কোথাও শোলার
তৈরি প্রতীক " দোরমার" পূজাপ্রাঙ্গনে স্থাপন করে পূজা করা হয়।
কোথাও কোথাও এই শোলার তৈরী মনসার প্রতীককে
"চোংবারিং" বলা হয়ে থাকে। জায়গাবিশেষে নাচগান পরিবেশনের ও আলাদা
আলাদা নিয়ম আছে। গানের মধ্যে
"ধুয়াপদ" অবশ্যই থাকবে। এই "ধুয়াপদ" মূল কবির লেখা নয়। গায়কই এখানে পদ সংযোজন করে
নিজের মতো করে গান গেয়ে থাকে। বিষহরার গানে মূল গায়ক বা “গীদাল” দুটি করে লাইন গাইবেন এবং তার
মূল অর্থ দর্শকদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন। প্রায় ত্রিশ রকমের নৃত্যগীতের মাধ্যমে
বিষহরার গান গাওয়া হয়। রাজবংশী সমাজে বিষহরির তিনটে রূপ আছে। যেমন, “কানি বিষহরি,“চলন্তি বিষহরি” এবং “সাইট
বিষহরি”। নৃত্যগীতে নানারকম বাদ্যযন্ত্র
ব্যবহার করা হয়,
তারমধ্যে
অন্যতম প্রধান হলো "মুখা বাঁশি"।
অনেক
বছর ধরে আলিপুরদুয়ার জেলায় ফালাকাটা অঞ্চলে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষজন
"ফালাকাটা রাজার" পূজা করে আসছে। মানুষের বিশ্বাস ফালাকাটা রাজা বা ঠাকুরের পূজা করলে সব
মনস্কামনা পূর্ণ হয়। জনশ্রুতি ওখানে একসময় বনবস্তি আমবাড়িতে ফালাকাটা রাজা বলে
একজন জমিদার ছিলেন,যিনি
মানুষের উপকার করতেন। তার কাছে গেলে কেউ
খালি হাতে ফিরে আসত না । এই আমবাড়ি নামের
সাথেই ফালাকাটা রাজার নাম যুক্ত হয়ে পরবর্তীকালে জায়গাটার নামই হয়ে যায়
"আমবাড়ি-ফালাকাটা"। রাজগঞ্জ ব্লকের আমবাড়ি চাকিয়াভিটা এলাকায় ফালাকাটা
রাজার মন্দির এখনও দেখতে পাওয়া যায়।
ঐ এলাকায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে প্রচলিত
আছে যে দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক ও এই মন্দিরে পূজা দিতে আসতেন। প্রতি বছরই আষার মাসে ধুমধাম করে এখানে ফালাকাটা রাজার পূজা হয়।
পূজা দিতে দূর দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন আসে।
মূলত
ধিমাল জনজাতির মধ্যে “গ্রাম
পূজা” দেবার একটা রীতি আছে।
প্রতিটা ধিমাল গ্রামেই গ্রাম দেবতার একটা নির্দিষ্ট জায়গা বা থান
থাকে। সেখানেই গ্রাম পূজা করা হয়। গ্রাম দেবতার থানে কোনো মূর্তি থাকে না।
গ্রামের প্রান্তে কোনো গাছের তলায় একটা ঝুপড়ি মতো ঘরই গ্রাম দেবতার খান হিসাবে প্রতিষ্টা পেয়ে থাকে।
মূর্তিবিহীন ওই ঘরে সন্ধে বেলায় কেউ না কেউ এসে প্রদীপ জ্বালিয়ে আর সকালে একজন এসে পরিষ্কার দিয়ে যায়। বছরে একবার
ধুমধাম করে,
হাঁস
মুরগি বলি দিয়ে পূজা করা হয়। ধিমাল ছাড়াও অন্য আদিবাসীরাও গ্রাম পূজা করে থাকে।
মূলত জীবনে উন্নতি করার জন্য এবং রোগ ব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্যই গ্রাম পূজা করা হয়। অন্য আদিবাসীরা কিন্তু
ধিমালদের মতো মূর্তি ছাড়া পূজা করে
না। এখানে শিব ও পার্বতীর মূর্তি বসিয়ে শিব ও পার্বতীকে গ্রাম দেবতা হিসাবে পূজা করা
হয়ে থাকে।
‘বাঁশ
পূজ’”একসময় কোচবিহারে অনেক
জায়গায় দেখতে পাওয়া যেত। এখনও কোথাও কোথাও দেখতে পাওয়া যায়। এই পূজা কেবল কোচ
রাজবংশী জনজাতি নয়,কোচবিহারের
অন্য জনজনজাতির লোকজনও করে থাকে। দুটি বড় পরিষ্কার বাঁশ উঠানে তুলসী মঞ্চের পাশে
মাটিতে পুঁতে,সেগুলোকে লাল সালু দিয়ে
জড়িয়ে মাথায় কালো রঙের চামর বেঁধে দেওয়া হয়। এছাড়াও অনেক কিছু অলঙ্করণও করা হয়ে
থাকে। বাঁশের মাথায় পান-সুপুরি,আয়না বেঁধে দেওয়া হয়। চৈত্র মাসের শুক্লা ত্রয়োদশীর দিন
থেকে পূর্ণিমা অবধি পূজা চলে। পূজোর উপচার
হিসাবে আতপ চালের গুঁড়ার সাথে দুধ ও গুড় মিশিয়ে নাড়ু বানিয়ে
সেই নাড়ু দিয়ে প্রতিদিন ভোগ দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও এই নাড়ুতে ভাঙ মিশিয়েও দেওয়া হয়।
এছাড়া কাঁচা দুধের দই,চিড়া,কলা ইত্যাদি ও পূজার ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে। পূজার শেষ
দিনে বিরাট মিছিল বের হয়ে থাকে ।
বাঁশ পূজাএকপ্রকার কামদেবতারপূজো। যাতে বাঁশের মতো বংশবৃদ্ধি হয় সেজন্যই এই পূজোর
আয়োজন।
কোচবিহার
জেলাতে প্রায় সব হিন্দু বাড়িতেই একসময় নববধূ বাড়িতে এলে কিংবা কোনও মনোবাঞ্ছা পূরণ
হলে বাড়িতে “সুবচনী পূজা”করা হতো। এখনও অনেক
জায়গায় করা হয়ে থাকে। দেবীর মূর্তি এখানে মৃন্ময়ী ও গৌরবর্না। দেবী জোড়াসনে বসে, অভয় দান করছেন। যে বাড়িতে সুবচনী পূজা করা হয় সেখানে
বাড়ির উঠানে একটি ছোটো চারকোনা পুকুর কেটে আলপনা দিয়ে সারিসারি জোড়া হাঁস ও একটি
খোঁড়া হাঁস আঁকা হয়। তারপর আমের পল্লব, ডাব বা কাঁঠালি কলাতে সিঁদুর লাগিয়ে ঘটে বসিয়ে চারকোনা
পুকুরকে দুধ ও জল ভর্তি করা হয়। দেবীর ডান দিকে সাজানো থাকে মাছ ধরার জাঁকই, চঙ্গাই,দাও,কুড়াল ইত্যাদি। দুটো
হাঁসের ডিম্ আর কাঁচা সুপারি-পান এই পূজায় অবশ্যই লাগবে।কচি কলাপাতার আগাটুকু কেটে
তাতে সিঁদুর লাগিয়ে ডালা সাজানো হয়ে থাকে। বহুবীজসম্পন্ন ফল যেমন কাঁঠাল, শসা ইত্যাদি রাখা হয়
সন্তান কামনায়। সাধ্যমতো ফলমূল দিয়ে পূজা করা হয়। নববধূর আগমনের উদ্দেশ্যে পূজা
করা হলে সেই নববধূর কাঁধে জলপূর্ণ কলসি
দিয়ে ঘরে তোলা হয়। তাছাড়া যার যার
উদ্দেশ্যে মানত থাকে তাদের মাথায় ডালা স্পর্শ করানো হয়। এই পূজার বিশেষ আকর্ষণ
অবশ্যই ব্রতকথা। ব্রতীরা সকলেই হাতে ফুল
নিয়ে বসে থাকেন। যিনি ব্রত বলেন তাকে “কথাউলি” বলে। কথাউলি যখন ব্রত
কথা বলেন তখন বাকি ব্রতীরা সকলে হুকার দিয়ে থাকেন।এই ব্রতকথা লিখিত আকারে পাওয়া
যায় না। কথাউলিরা বংশ পরস্পরায় তা মনে
রাখেন। কোচবিহারের আরেকটি লৌকিক দেবতা “ডাঙধরা”। একসময় কোচবিহারের চারিদিকে ঘন জঙ্গল ছিল। চারপাশে ছিল বন্য হিংস্র জন্তু, বিশেষ করে বাঘ।
“ডাঙধরা পূজা”করা হয় বাঘ দেবতার
সন্তুষ্টির জন্য। এই দেবতার একহাতে ধরা থাকে লাঠি বা ডাঙ, তাই এই দেবতার নাম ডাঙধরা দেবতা। এই লাঠি বা ডাঙ দিয়ে
ইনি বন্য জন্তুদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেন। এই পূজায় পাঁঠা,হাঁস,চালকুমড়ো ইত্যাদি বলি দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও কোচবিহার
জেলায় মাথাভাঙ্গা মহকুমায় আছে “ঢিল দেবতার” পূজা। ঢিল দেবতা অবস্থান করে থাকেন কোনো গাছে।
সাধারণত তা হয় বট বা অশ্বথ গাছ। পথচারীরা গাছের গোড়ায় ঢিল মেরে দেবতাকে নৈবিদ্য
নিবেদন করে থাকে। গোটা কোচবিহার জেলা জুড়ে এরকম অনেক ঢিল দেবতার গাছ দেখা যায়।
কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা মহকুমার অন্তর্গত প্রেমেরডাঙ্গা বাজারের কাছে একটি
প্রকাণ্ড ও প্রাচীন ঢিল দেবতার গাছ আছে। সব ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষজনই এখানে ঢিল
দেবতার কাছে ঢিল উৎসর্গ করে থাকে। মনে করা হয়ে থাকে আগে এসব জায়গায় ঘন জঙ্গল
ছিল। জঙ্গলে হিংস্র জন্তু আছে কিনা তা জানার জন্য পথচারীরা দূর
থেকে ঢিল ছুড়ে দেখে নিত। হিংস্র জন্তু থাকলে
ঢিলের আওয়াজে পালিয়ে যেত। “মাসান ঠাকুরের” পূজা অবশ্য রাজবংশী,রাভা,বোড়ো সবাই করে থাকে। একসময় বেশ
ধুমধাম করেই মাসান ঠাকুরের পূজা হতো।
যেখানেই মরা নদী, বিল বা ব্রিজ ইত্যাদি দেখা যেত সেখানেই ছিল “মাসান ঠাকুরের” পাট। মাসান ঠাকুর হলো
শিব ঠাকুরের দেহরক্ষী। শিব ঠাকুর থাকেন
শ্মশানে। তিনি লোকালয়ে বিশেষ আসেন
না। আসেন তার দেহরক্ষী “মাসান ঠাকুর”। “মাসান ঠাকুরের”দেহ কুচকুচে কালো। কালো
একটা পাথরকে “মাসান ঠাকুর” বলে প্রতিষ্টা করে পূজা করা হয়। কোচবিহারের রাজবংশীদের মধ্যে যে ষষ্ঠী ব্রত দেখা যায় তাকে বলে “সাইটোল ব্রত”। নিঃসন্তান রাজবংশী
রমণীরা সাধারণত পৌষ, মাঘ
মাসে এই ব্রত পালন করে করে থাকেন। যার
বাড়িতে এই পূজা হয় তাকে স্থানীয় ভাষায় “মারেয়া”বলা হয়। এই পূজায় কোনো
পুরোহিত লাগে না। বাড়ির কর্তী নিজেই পূজা করে থাকেন। “সাইটোল পূজা” করার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন “গিদালি” থাকে,যার পরিচালনায় সাইটোল
গীত ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। গিদালির দলে পাঁচ ছয় জন “দোহার”ও থাকে। পূজা শেষে দোহারেরা
লোকগান পরিবেশন করে থাকে। এই সাইটোল ব্রত মুসলিম সমাজের মধ্যেও প্রচলিত আছে।
এছাড়াও আরো কিছু ব্রত রাজবংশী সমাজে প্রচলিত আছে, যেমন “নিস্কলঙ্ক পূজার” ব্রত।
মেয়েদের জীবন যাতে নিস্কলঙ্ক থাকে
সেজন্য পৌষ মাসে এই ব্রত পালন করা হয়।
আরেকটি হলো “দেউল
পূজা ব্রত”। স্বামী,পুত্র
সহ সুখ কামনায় সধবা নারীরা যে কোনো মাসে
এই ব্রত পালন করে থাকেন।সম্ভাব্য সংসার জীবনে সুখ, শান্তি লাভের আসায় কুমারী মেয়েরা পালন করে “বটেশ্বর ব্রত”। সমগ্র বৈশাখ মাস ধরে কুমারী মেয়েরা আগের জন্মের স্বামীকে পাবার জন্য পালন করে “একুলকুল পূজাব্রত”। সর্বগুণ সম্পন্ন
স্বামী ও সংসার পাবার জন্য কোচবিহার জেলার রাজবংশী সমাজের মেয়েদের মধ্যে একসময় “কাত্যায়নী ব্রতর”প্রচলন ছিল। কার্তিক
মাসের পূর্ণিমায় এই ব্রত পালন করা হতো।
এছাড়াও পৃথিবীকে শষ্যশালিনী করার
জন্য কুমারী মেয়েরা করতো “সাট পূজার ব্রত”।
দীর্ঘদিন
ধরেই তোর্সা নদীর দুই ধারেই তোর্সা পীরের পূজা প্রচলন আছে। এখনও অনেক জায়গায় হয়ে
থাকে। তোর্সা পীরের মা চেলো নদীকেও রাভা ও বড়ো সমাজে দেবতা হিসাবে পূজা করা
হয়। অনেক বছর আগের থেকেই তোর্সা নদীর দুই
পারের লোকজন নদী থেকে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। হিন্দুরা তোর্সা নদীকে
মা গঙ্গা বলে আর মুসলিমরা তোর্সা পীর বলে পূজা করে থাকে। অনেক জায়গায় একই মণ্ডপে
গঙ্গারূপে আর পীর রূপে তোর্সা নদীর পূজা
হতে দেখা যায়। মেচ সমাজে প্রচলিত কথা
অনুযায়ী মেচদের এক সর্দার খাউচান মেচের মেয়ের
সাথে তোর্সা পীরের বিয়ে হয়। তোর্সা
পীরের মা চেলো নদীও রাভা ও বোড়ো সমাজে দেবতা হিসাবে পূজা পান।
এরকম
অসংখ্য ব্রত কথা,গ্রাম্য
দেবতা আর তাদের কেন্দ্র করে নানা উৎসব উত্তর বাংলার আটটি জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
আছে। সমস্ত আলোচনা করা এই স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। কিছু লোক সংস্কৃতি একেবারেই অবলুপ্ত হয়ে
গেছে। এখন আর সেগুলোর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়
না। আবার কিছু কিছু জিনিস একেবারে অবলুপ্ত
না হলেও কোনোমতে টিকে আছে। আবার কিছু কিছু লৌকিক অনুষ্ঠান আরও ব্যাপকতা লাভ করে,আরও অনেক জায়গা
জুড়ে বিস্তার লাভ করে আপাময় জনসাধারণের
বিরাট উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনিভাবেই সমাজ ও সংস্কৃতি এগিয়া চলে। কিছু হারিয়ে যায়,কিছু থাকে আবার কিছু এগিয়ে যায়।
রণবীর চন্দ:কপিরাইট
লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
তথ্যসূত্র
(১) অশেষকুমার দাস, উত্তরবঙ্গের
টাকা ভগৎ আন্দোলন, দাগ, অষ্টম বর্ষ,পঞ্চম
সংখ্যা, ১৪২৫, পৃষ্টা:
৭৭-৮০
(২) অর্ণব সেন, ঘুমিয়ে
পড়া অ্যালবাম থেকে ডুয়ার্সের পূজোর পুরনো দিনগুলি,
এখন ডুয়ার্স, অক্টোবর, ২০১৫, পৃষ্ঠা:
২৯-৩১
(৩) করম-জাওয়ার গল্প, https://amarbhabnaamarchinta.wordpress.com ২৫
সেপ্টেম্বর, ২০১৫
(৪)একাদশীতে বোধন: বাংলার এই দুর্গা পূজার কথা জানেন – Ebela.com
১৫ অক্টোবর, ২০১৬
(৫) ভাণ্ডানি পূজা আরোহ মেলার শুভ মুকুলন, হামার
খবর, ১৯
অক্টোবর, ২০১৮
(৬) সৌরভ দেব,
একাদশীতে ফের উমার বোধন, কলকাতা
২৪ X ৭
২৩ অক্টোবর, ২০১৫
(৭) তিস্তা 'বুড়ি' কে তুষ্ট রাখতে নদী-পূজাকরে রাজবংশীরা, জলপাইগুড়ি
রাজবাড়িতে
বসে মেচেনী মেলা, The Wall, ১২ মে, ২০১৯
(৮) তিস্তা বুড়ি কে পূজাদেহে জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে শুরু
হলো মেচেনী
মেলা, হামার
খবর, ১১
মে, ২০১৯,
(৯) অশেষ দাস,
রাজবংশী লোকাচার হুদুম দেও, বিপন্ন
উত্তরবঙ্গ, প্রভা
প্রকাশনী, কলকাতা
(১০) হুদুম দেওর পূজো, অসমীয়া
ৱিকিপিডিয়া, Wikipedia
(১১) সঞ্জয় সাহা, হুড়ুম
দেও এর স্বত্ব:স্ফূর্ত বিনির্মাণ - দেবজ্যোতির লোকপুরান,
দাগ, অষ্টম
বর্ষ, পঞ্চম
সংখ্যা, পৃষ্ঠা:৬৫-৭১
(১২) ড: নির্মলেন্দু ভৌমিক, হুদুম
বা হুদুমদেও,বঙ্গীয়
লোক সংস্কৃতি, কোষ, ড:
বরুন
চক্রবর্তী, ১৪০২, পৃষ্ঠা-৪৫২
(১৩) বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, রাজবংশী
সমাজের ধাম গানের জৌলুস এখন
অনেকটাই
ফিকে, হারানো
সুর, দার্জিলিং
মেল, মঙ্গলবার, ১৩
মার্চ, ২০১৮
(১৪) ড: গিরিজা শঙ্কর রায়, উত্তরবাংলার
রাজবংশী সমাজের দেবদেবী ও পূজা
পার্বন, ১৯৭২, পৃষ্ঠা-
১০৮, ১১৮
(১৫) লুপ্তপ্রায়
বিষহরা, উত্তরের
কড়চা , আনন্দবাজার
পত্রিকা, ২১
জুন,
২০১৬
(১৬) নবকুমার ভট্টাচার্য, শ্রাবন
মাসে মনসার পূজায় মেলে ৫ অলৌকিক ফল,
বলছে সনাতন
শাস্ত্র, এবেলা, ৩১
জুলাই, ২০১৮
(১৭) ফালাকাটা রাজার পূজাআমবাড়িতে, হামার
খবর, ৬
জুলাই, ২০১৯
(১৮) পুলিশই আরাধ্য দেবতা! উত্তরবঙ্গের এই রীতি চমকে
দেবেই, এবেলা
১২ জুলাই, ২০১৬
(১৯) দেবদেবী,
পূজা-পারবেন ও ব্রত, United-Sodhganga,
www.shdhganga.inflibnet.ac.in
(২০) মুস্তাফা জামান আব্বাসী, চিলমারীর বন্দরে মাটির উৎসব, আজকের
পত্রিকা, ১৩
এপ্রিল, ২০১৬
(২১) Dr. Charuchandra Sanyal, Rajbanshis of
North Bengal, The
Asiatic Society Calcutta
(২২) মাধবী দাস, সুবচনীর
পাট ও সুবচনী কথা, দাগ, অষ্টম বর্ষ,পঞ্চম
সংখ্যা, পৃষ্ঠা:
২৮৭-২৯৯
(২৩) বাঘ,
বাঘদেবতা ও লোকসংস্কৃতি, সাহস, ১৮
আগস্ট, ২০১৯
(২৪) সঞ্চিতা দাশ , উত্তরবঙ্গের
বৃক্ষপূজা, দাগ, অষ্টম
বর্ষ,পঞ্চম
সংখ্যা, ১৪২৫,
পৃষ্টা:
২৩৯-২৪৪
(২৫) W. W.
Hunter, A Statistical Account of Bengal, V- X, Reprint-
1974
(২৬) শিশির মজুমদার, লোকউৎসবের
আঙ্গিনায়, দেশ, ২৩
জুন, ১৯৯০, পৃষ্ঠা-
৫৪
(২৭) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলার
ব্রত
(২৮) বাংলার ষষ্ঠীব্রত: শিশুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির
নিরিখে একটি পর্যবেক্ষণ,
সুবর্ণা
সরকার, ইন্টারন্যাশনাল
জার্নাল অফ হুমনিটিক্স &
সোশ্যাল সাইন্স
স্টাডিস, ২০১৬, ২
(৬): ৩৩-৫১
(২৯) নারায়ণ দে, ধর্মের
গন্ডি ভুলে এক মণ্ডপে প্রার্থনা-দোয়া,
আনন্দবাজার
পত্রিকা, ৮, নভেম্বর, ২০১৮
আপনার তথ্যসমৃধ্য লেখাটি পরে ভালো লাগল।রাজবংশিদের লৌকিক পুজো গুলি এখন লুপ্তপ্রায়।আরো অনেক লৌকি পুজো আছে আপনার লেখাই ভবিশ্যযে আশাকোরি জানতে পড়ব।আমি আপনার লেখার নিয়মিত পাঠক।আপনার লেখা পরলে ছোটবেলার আনন্দ দিন গুলতে ফিরে যাই।
উত্তরমুছুনউত্তরবঙ্গের লোকপূজা সম্বন্ধে তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি পড়ে অনেক উপকৃত হলাম । অনেক তথ্য জানলাম যা উত্তরবঙ্গের অধিবাসী হয়েও এতদিন আমার অজানা ছিলো।
উত্তরমুছুন