গল্প
বসুন্ধরাদের
বাড়িটা একটু সেকেলে ধরনের। উত্তর কলকাতার বনেদী বড়লোক
পরিবার রায়চৌধুরীদের অঞ্চলে সকলেই একডাকে চেনে। সেই রায়চৌধুরী বাড়িতে আজ সকাল
থেকেই সাজ সাজ রব। বিশ্বনাথ রায়চৌধুরীর একমাত্র আদরের নাতনী বসুন্ধরা কে দেখতে
বিদেশ থেকে পাত্র আসছে। এই বছরই বাংলা সাহিত্যে
এম. এ. পাশ করেছে বসুন্ধরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাড়ির সকলের খুবই
আদরের মেয়ে ও। আসলে রায়চৌধুরী পরিবারের মেয়ের সংখ্যা খুব কম আর তাই ছোট থেকেই আদর
আর প্রশ্রয়ের মাত্রাটা একটু বেশীই ছিলো বসুন্ধরার। ভারি মিষ্টি মেয়ে এই বসুন্ধরা, যেমন মিষ্টি
চেহারা তেমনই মিষ্টি স্বভাব। সবচাইতে আকর্ষণীও ওর একঢাল কোঁকড়া কোমোর ছাপানো চুল।
ওর ঠাকুমাতো বলেন, এ মেয়ের দেবী অংশে জন্ম তা না হলে অমন
দেবী প্রতিমার মতো মুখের গড়ন আর সাক্ষাৎ জগৎ জননীর মতো চুল কি হয়! গায়ের রংও
একেবারে কাঁচাহলুদ।
এহেন
বসুন্ধরা কে দেখতে এলো পাত্রপক্ষ। পাত্র লন্ডনে কর্মরত। বিয়ে করতেই ছুটি নিয়ে আসা।
বিয়ের পরই আবার সস্ত্রীক ফিরে যাবে লন্ডন। বসুন্ধরা কে অভিরূপের বাড়ির লোকজনের
এতটাই পছন্দ হলো যে পারলে এখনই নিয়ে যায় নিজেদের সঙ্গে। সকলেই খুব খুশী এরকম সময় অভিরূপ
হঠাৎ বলে উঠলো, আমার কিছু কথা আছে মেয়ের সঙ্গে একটু পারসোনাল। বসুন্ধরাদের বাড়ি একটু
প্রাচীনপন্থী আগেই বলা হয়েছে কিন্তু তাও তাঁরা অভিরূপের এই অনুরোধ হাসিমুখে মেনে
নিলো। মিনিট কুড়ি আলাদা করে কথা বলার পর অভিরূপ এসে বললো যে ওর বসুন্ধরা কে খুব
পছন্দ হয়েছে। অভিরূপের বাড়ির লোকজন তো বেশী দেরি করতেও চান না কারন অভিরূপকে ফিরে
যেতে হবে। মাস দুয়েকের মধ্যেই সব সেরে ফেলতে হবে এই বলে একটা দিন স্থির করতে বলে
চলে গেলেন অভিরূপের বাড়ির লোকেরা।
ওনারা
চলে যাওয়ার পর বসুন্ধরা জানালো যে অভিরূপ ওর সাথে বাড়ির বাইরে একটু দেখা করতে চায়
কাল বিকেল পাঁচটায়। শুনেই বসুন্ধরার ঠাকুমা তো বেঁকে বসলেন,না না এ কি করে
হয় বিয়ের আগেই বাড়ির বাইরে দেখা করা! না না এ হয়না। সমু তুমি ওনাদের জানিয়ে দাও
আমাদের মেয়েকে আমরা পাঠাবো না। বসুন্ধরার বাবা সোমনাথ বাবু বললেন, আহ্ মা বিলেতে থাকা ছেলে অমন একটু চাইতেই পারে।আর তাছারা বিয়েতো একপ্রকার
ঠিকই হয়ে গেছে। তাহলে আর দেখা করার মধ্যে দোষটা কোথায়। ঠিক আছে মাম্ তুই যাবি।
বসুন্ধরাকে বললেন ওর বাবা। বাড়িতে সবাই মাম্ বলেই ডাকে ওকে। যা ভালো মনে হয় কর
আমার বলার বললাম, বলে ওখান থেকে চলে যান বসুন্ধরার ঠাকুমা।
কথামতো
কাঁচা হলুদ রঙের একটা শিফন পরে বসুন্ধরা গেলো অভিরূপের সঙ্গে দেখা করতে।
দেবীপ্রতিমার মতো চেহারা আর কাঁচা হলুদ গায়ের রঙের বসুন্ধরাকে ঐ শিফন শাড়িটাতে
জাস্ট ফাটাফাটি লাগছিলো। অভিরূপ তো চোখই ফেরাতে পারছিলো না। বেশ কয়েকটা দিন পেরিয়ে
গেলো। এরমধ্যে আরও দুবার দেখা হয়েছিলো দুজনের অবশ্য দুই বাড়ির কেউ সেটা জানতে
পারেনি।
অভিরূপের
ইচ্ছের কথাটা বাড়িতে কি করে বলবে ভেবে পাচ্ছিল না বসুন্ধরা। লাস্ট যেদিন দেখা হলো
অভিরূপের সঙ্গে সেদিন হঠাৎই অভিরূপ ওকে বললো, অপূর্ব সুন্দরী তুমি বসুন্ধরা কিন্তু
একটা কথা না বলে পারছিনা তুমি বড্ড ওল্ড ফ্যাশনড। দেখো বিয়ের পর তুমি থাকবে লন্ডনে
আর ওখানে নানানরকম আউটফিটস ও পরবে তুমি। আর আমাদের অফিস পার্টি লেগেই থাকে। যেটা
নিয়ে মেইনলি বলতে চাইছি সেটা হলো তোমার এই এতো লম্বা চুল। প্লিজ এটা একটু শর্ট
করিয়ে স্ট্রেট করিয়ে নাও যা খরচা লাগে আমি দেবো। ইউ উইল লুক জাস্ট স্টানিং
ডার্লিং। ব্যাস এটুকুই আমার চাওয়া তোমার থেকে। বসুন্ধরা বললো, প্রতিমাসে যা হাতখরচ পাই তার অর্ধেকও খরচ হয়না তাই এগুলো আমি নিজের খরচেই
করাতে পারবো কিন্তু বাড়ির লোককে কিভাবে রাজি করাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা। অভিরূপ
বসুন্ধরার গালে টোকা মেরে বললো, আরে চিল ইয়ার চুপচাপ যা করার
করে বাড়িতে যাও। একটু বকাবকি করবে কিন্তু একবার চুল কাটা হয়ে কি বা করতে পারবে।
আমার জন্য নাহয় একটু বকা খেয়ে নেবে সুন্দরী। আর বেশী বকলে বলবে আমি বলেছি তাহলে
দেখবে আর কিছু বলবে না।
বসুন্ধরা
অভিরূপের কথামতোই বাড়িতে কিছু না জানিয়ে রবিবার সকালে এক বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার নাম
করে বেড়িয়ে পরলো। এক নামকরা বিউটি স্যালোন এ ওর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করাই ছিলো।
সেখানে পৌঁছে গেলো বসুন্ধরা। স্যালোনেও ওকে প্রত্যেকে বললো এতো লম্বা চুল ছোট না
করিয়ে শুধু স্ট্রেট করিয়ে নিতে। কিন্তু অভিরূপ মুখফুটে এই একটাই ইচ্ছার কথা বলেছে
ওকে তাই ওকে সেই ইচ্ছের দাম দিতেই হবে। শেষমেষ কেটেই ফেললো ওর ঐ কোমোর ছাপানো
চুলের গোছা। চুল কেটে স্ট্রেট করিয়ে প্রায় ঘন্টাচারেক পর দুরুদুরু বক্ষে বাড়ি
ফিরলো বসুন্ধরা।
একি!
একি সর্বনেশে কান্ড! হায় হায় এ তুই কি করলি মাম্। বসুন্ধরার মা ওকে দেখে আর্তনাদ
করে ওঠেন। ওর মায়ের চ্যাঁচামেচিতে বাড়ির বাকিরাও সেখানে হাজির হয় আর সবাই হা
হুতাশ করতে থাকে। ওর মা তো ওকে এই মারে কি সেই মারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওর
ঠাকুমা তাড়াতাড়ি ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলেন, এমন কাজ কেন করলি দিদিভাই বল
আমায়। বেশ কিছুক্ষন পর মুখ খোলে মেয়ে, বলে- তোমার হবু
নাতজামাই -এর বড় চুল পছন্দ নয় ঠাম তাই....!
এ আবার কি অলুক্ষুনে কথা বাপু! এমন দেবী প্রতিমার মতো চুল তার পছন্দ নয়!
ঠাকুমা গজ গজ করতে করতে চলে গেলেন। বাকিরাও অভিরূপের কথা শুনে আর বিশেষ কিছু কেউ
বললো না। বসুন্ধরা হাঁফ ছেরে বাঁচলো। নিজের ঘরে গিয়ে বেশ কয়েকটা সেল্ফি তুলে
হোয়াটসঅ্যাপ করলো অভিরূপকে। সাথে সাথে রিপ্লাই, উফ্ জান
ফাটিয়ে দিয়েছো। পুরো অ্যাটম বম্ব লাগছো ইয়ার, কন্ট্রোলই নেহি
হোতা। ইশ্ যাহ কি অসভ্য, বসুন্ধরা রিপ্লাই করে।
পাসপোর্ট, ভিসা এসবের
ব্যাবস্থা করতে হবে বলে ওদের রেজিস্ট্রি টা আগেই করিয়ে দিলো বাড়ির লোকজন। এইসমস্ত
ফর্মালিটি আর বিয়ের জোগাড়যন্ত্রে ঝড়ের বেগে কেটে গেলো সময়। নির্দিষ্ট দিনে
বসুন্ধরা আর অভিরূপের সামাজিক শুভ বিবাহ সম্পন্ন হলো। অষ্টমঙ্গলার পরই ওরা চলে যাবে
সুদুর লন্ডনে। মাঝের কটাদিন যেন স্বপ্নের মতো কেটে গেলো বসুন্ধরার। প্রিয় পুরুষের
আদরে ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরে উঠলো বসুন্ধরা। অভির সব ভালো শুধু ওর একটাই কাজে
বড় লজ্জা করতো কেমন যেনো গুটিয়ে যেতো বসুন্ধরা। অভির স্বভাব হলো ওর আর বসুন্ধরার
অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি তোলা ভিডিয়ো করা। কিছু বললে বা বাধা দিলে অভি বলে, আরে চাপ নিচ্ছো কেনো সোনা এসব তো একান্তই আমাদের দুজনের। তুমি যদি তোমার
বাপের বাড়ি ঘুরতে আসো তখন তো ভীষনভাবে মিস করবো তোমায় আর তখন এই ছবিগুলো কিছুটা
রিলিফ দেবে আমায়। বুঝলে প্রিয়তমা, একটা গভীর চুমু খেয়ে বলে
অভিরূপ। আজ বসুন্ধরার অষ্টমঙ্গলা। রায়চৌধুরী বাড়িতে আজ খুশীর আবহ। অবশ্য একটা
চোড়া বিষাদের সুরও রয়েছে খুশীর আড়ালে। বাড়ির একমাত্র আদরের মেয়ে এতটা দুরে চলে
যাবে দুদিন বাদেই চাইলেও তাকে দেখা যাবেনা
ইচ্ছেমতো। বসুন্ধরার হাসিখুশী মুখ দেখে বাড়ির লোকের কষ্ট অবশ্য অনেকটাই
চাপা পরে গেলো।
ছবির
মতো শহর উইনচেস্টার। গাড়িতে যেতে যেতে দুচোখ ভরে দেখছিলো বসুন্ধরা আর শিশুদের মতো
উচ্ছাস প্রকাশ করছিলো। কিন্তু একটা জিনিস ও কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলো না যে
প্লেনে ওঠার পর থেকেই অভি এতো মারাত্বক রকমের গম্ভীর হয়ে আছে কেন! গম্ভীর তো
বসুন্ধরার হওয়ার কথা সবাইকে ছেড়ে এতো দুর সে চলেছে। যাকগে এখন এ নিয়ে এতো মাথা
ঘামিয়ে লাভ নেই পরে অভিকে জিজ্ঞেস করবেখন। একটা সবুজ লনে ঘেরা এপার্টমেন্টের সামনে
এসে থামলো ওদের গাড়ি। অভিরূপ গাড়ি থেকে নেমে বললো, নেমে এসো বসুন্ধরা। লিফ্টে সব
জিনিসপত্র নিয়ে ওরা উঠে এলো থার্ড ফ্লোরে। একটা নির্দিষ্ট দরজার সামনে দাঁড়িয়ে
কলিং বেল বাজালো অভি। নেমপ্লেটে ঝকঝক করছে মিসেস অ্যান্ড মিঃ অভিরূপ চ্যাটার্জী।
মিসেস অ্যান্ড মিঃ কেন?! বসুন্ধরা ভাবলো একটু। হয়তো বিয়ে
করেই ফিরবে এই প্ল্যান করে আগে থেকেই এই নেমপ্লেট লাগিয়ে গেছিলো, নিশ্চয়ই তাই হবে। কিন্তু এখানে আর কে থাকে যে কলিং বেল বাজানোর দরকার পরলো??!!!!
বসুন্ধরার
নানানরকম ভাবনার মাঝেই খুলে গেলো দরজা। ওহঃ হানি আই মিসড্ ইউ সো মাচ, অপূর্ব সুন্দরী
এক বিদেশীনি জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো অভিরূপকে। আই মিসড্ ইউ টু, একটু অস্বস্তিভরা স্বরে বলে উঠলো অভিরূপ। তারপর অভিরূপ আরো বললো, অ্যাডিলিনা মিট ইয়োর নিউ হাইসমেড ফ্রম ইন্ডিয়া। হার নেম ইজ বসুন্ধরা। ইটস
এ টিপিকাল ইন্ডিয়ান নেম, ইউ মে হ্যাভ সাম প্রবলেম টু
প্রোনাউনসিয়েট ইট। ইউ ক্যান কল হার বসু। অ্যাডিলিনা নাম্নী বিদেশীনি বসুন্ধরাকে
হাত ধরে ভেতরে টানতে টানতে বললো, ও বাসু কাম ডিয়ার অ্যান্ড
ফিল ফ্রি হিয়ার, ফিল লাইক ইয়োর ওন হোম। বসুন্ধরা যা দেখছিলো
যা শুনছিলো তার কিছুই যেন বোধগম্য হচ্ছিলো না ওর বা বলা ভালো এসবের মানেটাই ও বুঝে
উঠতে পারছিলো না। অভিরূপ ওকে কাজের লোক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে কিন্তু কেন?! এসব কি ঘটে চলেছে! ওর শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমেল স্রোত বইতে শুরু করলো আর
চোখ থেকে অঝোর ধারা।
হোয়াই
সি ক্রাইং অবি? অ্যাডিলিনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। নাথিং ডার্লিং সি ইজ জাস্ট মিসিং হার
কান্ট্রি নাথিং এলস, বলে অভিরূপ প্রায় ধাক্কা মেরে
বসুন্ধরাকে ঘরের ভেতর ঠেলে অ্যাপার্টমেন্টের দরজাটা আটকে দিলো। তারপর হিমশীতল
স্বরে বসুন্ধরাকে বললো, চুপচাপ জিনিসপত্র নিয়ে ঘরে যাও কোনো
সিন ক্রিয়েট কোরোনা করেও কোনো লাভ নেই। বরং বিয়ের নাটকটা ভুলে চটপট নিজের কাজ বুঝে
নাও। অ্যাডিলিনা প্রেগনেন্ট ওর দেখাশোনা আর বাড়ির সব কাজ করাই তোমার কাজ এখানে।
জানো নিশ্চয়ই এখানে কাজের লোক বলতে গেলে পাওয়াই যায় না তাই এই ব্যাবস্থা বুঝলে
খুকুমনি। তবে চাপ নিও না, তোমার একটুও অসুবিধা হবেনা এখানে।
নিজের কাজ করো আর বিন্দাস থাকো। তবে হ্যাঁ একটা কথা খুব ভালো করে মাথার মধ্যে
ঢুকিয়ে নাও অসুবিধা ততক্ষনই হবেনা যতক্ষন তুমি নিজের মুখ বন্ধ রাখবে। আমার বা
তোমার বাড়ির কেউ যেন বিষয়টা ঘুনাক্ষরেও জানতে না পারে। ঘরের চারিদিকে সিসিটিভি
ক্যামেরা লাগানো আছে আমার ল্যাপটপের সাথে কানেক্টেড তাই কোনো ভাবেই চালাকি করার
চেষ্টা করবে না। এছাড়াও আরো একটা অস্ত্র আছে আমার হাতে, গেস
হোয়াট?? বলতে বলতে একটা শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো ওর চোখে মুখে।
এখন যাও একটু রেস্ট নিয়ে নিজের কাজে লেগে পরো। রান্নাঘরের গ্যাজেটস গুলো কি করে
ব্যাবহার করতে হয় অ্যাডি তোমায় দেখিয়ে দেবে। একসঙ্গে এতো কথা বলে সেখান থেকে চলে
গেলো অভিরূপ চ্যাটার্জী।
বসুন্ধরা
বুঝতে পারে যে সে একটা ফাঁদে ভালোমতই আটকে পরেছে। আর একটা অস্ত্র বলতে শয়তানটা
নিশ্চয়ই ঐ ভিডিও গুলোর কথা বলতে চাইলো। ইশ্ একটুও যদি বুঝতে পারতো তাহলে কিছুতেই ঐ
ছবি আর ভিডিও গুলো করতে দিতো না বসুন্ধরা। কি করেই বা বুঝবে! নাহ্ ভেঙে পরলে চলবে
না। মাথা ঠান্ডা রেখে অভিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে ওকে ভাবতে হবে কি করে এই ফাঁদ থেকে
মুক্তি পাওয়া যাবে। শুধু মুক্তি পেলেই চলবে না সাথে এই মুখোশধারী শয়তানটার আসল
চেহারাটাও সবার সামনে আনতে হবে যাতে আর কোনো নিষ্পাপ মেয়ের জীবন ও এইভাবে নষ্ট
করতে না পারে।
অভিরূপ
বাড়িতে ফোন কানেক্ট করে দিলো। সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো বাড়িতে ওদের
ফোনের জন্য। দাদু,
বাবা, ঠাম সবাই একে একে বসুন্ধরার সাথে কথা
বললেন। শেষে ফোনটা নিলেন ওর মা। বসুন্ধরা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার
চেষ্টা করলেও মায়ের সাথে কথা বলার সময় ওর গলাটা একটু কেঁপে গেলো। ওর মা বললেন,
কিরে মা তোর গলাটা এতো বিষন্ন শোনাচ্ছে কেনো রে! সব ঠিক আছে তো?
চটপট নিজেকে সামলে নিয়ে বসুন্ধরা বলে, হ্যাঁ
হ্যাঁ মা সব ঠিক আছে তোমাদের জন্য মনখারাপ করছে আর কিছু না। এখন রাখছি ঠিক আছে,
পরে আবার কথা বলবো। বলে ফোনটা রেখে কান্নায় ভেঙে পরলো বসুন্ধরা। এই
শোনো একদম নাকি কান্না কাঁদবে না। অ্যাডিলিনা যেন কিছু বুঝতে না পারে বলে রাখলাম
তা না হলে কপালে অশেষ দুঃখ নাচছে মামনি বুঝতে পারলে। নাও লিভ, যাও গিয়ে ডিনার রেডি করো। বলে টিভি অন করে সোফায় বসে পরলো বসুন্ধরার সো
কলড হাসবেন্ড।
অভিরূপের
কথা শুনে বোঝা গেলো অ্যাডিলিনা ব্যাপারটা কিছুই জানেনা। মেয়েটাকে যতটুকু দেখলো
ভালো বলেই মনে হলো। বসুন্ধরা ঠিক করে কিছুদিন যাক অ্যাডিলিনাকে আর একটু ভালো ভাবে
চিনুক আর একটু গভীর হোক সম্পর্কটা তারপর ওর মাধ্যমেই এই ফাঁদ থেকে বেরোনোর রাস্তা
খুঁজতে হবে।
মাসখানেক
কেটে গেলো। বসুন্ধরা এখন এদেশের কাজকর্মে বেশ রপ্ত হয়ে উঠেছে। ডিশওয়াসার, মাইক্রোওভেন
এসব ব্যাবহার করতে আর তেমন সমস্যা হয় না। অ্যাডিলিনার তো ওকে ছাড়া একমুহুর্তও চলে
না। অভিরূপের সাথেও খুব স্বাভাবিক আচরন করে বসুন্ধরা, একটুও
সন্দেহের অবকাশ রাখেনা। শুধু অ্যাডিলিনার আড়ালে অভিরূপ যখন চেষ্টা করে ওর ঘনিষ্ট
হওয়ার সেটা খুব বুদ্ধি করে এড়িয়ে যায় বসুন্ধরা। বাড়িতেও মাঝেমধ্যে কথা হয় ফোনে
কিন্তু ও কাউকেই কিছু জানতে দেয়নি ওর পরিস্থিতির ব্যাপারে। একদিন সন্ধ্যেবেলা
অভিরূপ কাজ থেকে ফেরার পর ওর আর অ্যাডিলিনার কথোপকথন বসুন্ধরার কানে আসে। অভিরূপ
কোথাও যাওয়ার কথা বলছে অ্যাডিলিনাকে। দেখা যাক কোথায় যাওয়ার কথা বলছে শয়তানটা,
বসুন্ধরা মনে মনে ভাবে। রাত্রে ডিনার সার্ভ করছিলো বসুন্ধরা এমন সময়
অভিরূপ বলে, শোনো কাল আমি কটাদিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি
অফিসের কাজে। সকালে তাড়াতাড়ি বেরোবো ব্রেকফাস্ট আর্লি রেডি করে দিও। কি কানে
গেলো কথাগুলো? বসুন্ধরা চুপচাপ সম্মতিসুচক ভাবে মাথা দোলায়
আর মনে মনে ভাবতে থাকে এই সুযোগ অ্যাডিলিনাকে সবটা খুলে বলতে হবে।
পরের
দিন সকাল সকাল বেড়িয়ে গেলো অভিরূপ। হাতের কাজ সেরে আসতে আসতে বসুন্ধরা দেখলো , অ্যাডিলিনা
ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে এসেছে।
ও
বললো, গুড মর্নিং ম্যাম আপনাকে ব্রেকফাস্ট দেবো? ওহ ইয়েস
ডিয়ার সঙ্গে নিজেরটাও নিয়ে নাও, অ্যাডিলিনা খবরের কাগজে চোখ
বোলাতে বোলাতে বললো। অ্যাডিলিনাকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে নিজের ব্রেকফাস্ট নিয়ে ওর কাছাকাছি
বসলো বসুন্ধরা। ব্রেকফাস্ট কেমন হয়েছে ম্যাম? এই ডিশটার নাম
ইডলি আর সঙ্গে সম্বর ডাল, এটা সাউথ ইন্ডিয়ার একটি জনপ্রিয়
খাবার। ওহ এটা খুবই টেস্টি বাসু খুব সুন্দর, অ্যাডিলিনা খেতে
খেতে বলে। ধন্যবাদ ম্যাম, আচ্ছা ম্যাম আমি যদি আপনার থেকে
কিছু জানতে চাই আপনি কি কিছু মনে করবেন? বসুন্ধরা জিজ্ঞেস
করলো। না না বাসু কিচ্ছু মনে করবো না। তোমায় তো প্রথম দিনই বলেছিলাম তুমি এখানে
একদম নিজের বাড়ির মতো থাকবে। বলো কি জানতে চাও, অ্যাডিলিনা
বললো। বসুন্ধরা জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ম্যাম আমার আগে এখানে
ইন্ডিয়া থেকে আর কোনো হাউসমেড এসেছিলো কাজ করতে? অ্যাডিলিনা
বললো, হ্যাঁ ছিলো তো তোমার আগে একজনকে আবি এনেছিলো ইন্ডিয়া
থেকে তা প্রায় বছরখানেক আগে। বসুন্ধরার উত্তেজনা বাড়তে থাকে, ও জিজ্ঞেস করে সেই মেয়েটির কি হলো?? অ্যাডিলিনা একটু
চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলো, কি জানি বাসু , ঐ মেয়েটির নাম ছিলো রূপা। এখানে আসার মাসখানেক পরেই হঠাৎই মারা গেলো। আর
রূপা তোমার মতো হাসিখুশী ছিলোনা একদমই। সারাদিন কান্নাকাটি করতো, খাওয়াদাওয়া করতো না ঠিকঠাক। আমিতো ওর ভাষা বুঝতে পারতাম না আর ও ইংরেজী
বলতেও পারতো না। আপনি স্যারকে জিজ্ঞেস করেননি কেন রূপা সারাক্ষন কান্নাকাটি করতো,
খাওয়াদাওয়াও করতো না! বসুন্ধরা জানতে চায়। হ্যাঁ আমি অনেকবার আবিকে
জিজ্ঞেস করেছি যে কেনো রূপা এমন করে! আবি বলতো রূপা এখানকার পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে
নিতে পারছে না তাই এরকম করছে। আমি বলতাম ওকে ইন্ডিয়াতে রেখে আসতে, কিন্তু আবি বলতো ওর কেউ নেই কোথায় যাবে? দেখবে
কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক আর হলো কই মরেই গেলো বেচারা। কিন্তু তুমি আজ
হঠাৎ এগুলো জানতে চাইছো কেনো!? তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
একটু অবাক হয়ে অ্যাডিলিনা জানতে চায়। বসুন্ধরা তখন উঠে দাঁড়ালো
বললো ওয়েট আমি আপনাকে কিছু ফটোগ্রাফ দেখাতে চাই। তারপর বলবো আমি কেনো এগুলো জানতে
চাইলাম। এই বলে বসুন্ধরা ওর আর অভিরূপের বিয়ের কিছু ফটোগ্রাফস অ্যাডিলিনা কে
দেখালো আর বললো ম্যাম এই ছবিগুলো হচ্ছে আমার আর অভিরূপের বিয়ের। ইন্ডিয়াতে হিন্দু
বাঙালীদের এভাবেই বিয়ে হয়। হোয়াট!!!! অ্যাডিলিনা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
তুমি কি
বলছো তুমি জানো??!
কয়েকটা ফটোতে কিচ্ছু প্রমান হয়না। তুমি মিথ্যে অভিযোগ করছো আবির
নামে। ও আমাকে খুব ভালোবাসে আর অন্য কাউকে এভাবে ঠকিয়ে বিয়ে করতেই পারেনা।
অ্যাডিলিনা হাঁফাতে থাকে। বসুন্ধরা বলে, ম্যাম উত্তেজিত হবেন
না আপনার শরীরের এই অবস্থায় সেটা আপনার জন্য একেবারেই ঠিক নয়। আচ্ছা ছবিগুলো
মিথ্যে হতেই পারে কিন্তু এইযে আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সেটাও কি
মিথ্যে! এখনও বিশ্বাস না হলে অভিরূপের বাড়িতে ফোন করুন সব জানতে পারবেন।
উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে বসুন্ধরা। না আমি আবির বাড়িতে ফোন করতে পারবো না আবি বারন
করেছে বলেছে আমার কথা ওর বাড়ির লোক বুঝবে না। আমাদের বেবি হওয়ার পর ও আমায়
ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাবে বলেছে। অ্যাডিলিনা কাঁদতে শুরু করে।
ও
আপনাকে কোনোদিনই ইন্ডিয়াতে নিয়ে যেতে পারবে না। ওর বাড়িতে কেউই একজন বিদেশীনি কে
মেনে নেবেনা। আমায় দয়া করে ফোনটা করতে দিন আমাকেও ওর বাড়ির লোকেদের কাছে জানতে
হবে আগের বিয়ের কথা কেন গোপন করেছে আমার এবং আমার বাড়ির লোকেদের থেকে। ঐ রূপাকেও
নিশ্চয়ই এই একই ভাবে বিয়ের নাটক করে ফাঁদে ফেলেছিলো। অ্যাডিলিনা প্লিজ আমায় একটু
সাহায্য করুন যাতে আমি আমার বাড়ি ফিরে যেতে পারি। আমি খুব খুব আদরে মানুষ হয়েছি
ছোটো থেকে এই ভাবে আমার জীবন কাটতে পারেনা, অ্যাডিলিনার হাতটা জড়িয়ে ধরে বসুন্ধরা
কান্নায় ভেঙে পরে। ওকে ওকে কামডাউন বাসু আমি দেখছি কি করা যায়। আগে ওদের আর নিজের
বাড়িতে ফোন করে সবটা জানাও, বলে নিজের ফোন আনলক করে এগিয়ে
দেয় ওর দিকে অ্যাডিলিনা। ফোনটা হাতে নিয়ে আগে বাবার নাম্বার ডায়াল করতে শুরু করে
বসুন্ধরা, ঠিক তখনই কলিংবেলটা বেজে ওঠে।
আচমকা
কলিংবেলের আওয়াজে ওরা দুজনেই চমকে ওঠে। বসুন্ধরা ফোনটা টেবিলে রেখে বলে আমি দেখছি।
দরজা খুলে কাউকেই দেখতে পায়না বসুন্ধরা। একটু অবাক হয়ে দরজাটা বন্ধ করতে যাবে এমন
সময় পাশ থেকে হঠাৎই কেউ বলে ওঠে, হাই ইস অ্যাডিলিনা দেয়ার? টেল
হার স্যাম ইজ লুকিং ফর হার। এক ইংরেজ যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বসুন্ধরা।
ভেতর
থেকে অ্যাডিলিনা বলে,বাসু কে এসেছে? স্যাম বলে কেউ আপনাকে খুঁজছে,বসুন্ধরা বলে। ওহ আরে ও আমার ভাই। স্যাম ভেতরে এসো, অ্যাডিলিনা
এগিয়ে আসে। বাসু মিট স্যাম ও আমার ভাই পাশের শহরেই থাকে। আর স্যাম এ হলো বাসু,বা-সু-ন-দ-রা। ও ইন্ডিয়া থেকে এসেছে খুব ভালো মেয়ে বাসু,ও আমার বোনের মতো। এসো স্যাম তুমি খুবই ভালো সময়ে এসেছো আমরা একটা খুব
বড়ো প্রবলেমে পরে গেছি। স্পেশালি বাসু ইজ ইন গ্রেভ ডেনজর। অ্যাডিলিনা স্যামকে
পুরো বিষয়টা খুলে বলে এমনকি রূপার ব্যাপারটাও বলে। বসুন্ধরা-অভিরূপের বিয়ের
ফটোগ্রাফ আর ম্যারেজ সার্টিফিকেট ও দেখায়। স্যাম সব শুনে বসুন্ধরা কে বলে,তুমি এক্ষুনি তোমার বাড়িতে ফোন করে গোটা ব্যাপারটা জানাও। আর শোনো এখন অাবির
বাড়িতে কিচ্ছু জানিও না ওরা ওকে অ্যালার্ট করে দেবে। যতোই হোক ওদের বাড়ির ছেলেতো
তাই বললাম। কথামতো বসুন্ধরা বাবাকে ফোন
করে। এইসময় হঠাৎ ওর ফোন পেয়ে সোমনাথ বাবু খুব খুশী হলেন। অনেক কথা পরপর বলেই যেতে
থাকলেন। হ্যাঁরে মা বুড়ো বাপকে এতোদিনে মনে পরলো তোর! অভিকে কতোবার ফোন করেছি
কিন্তু কোনোবার তোর সাথে কথা হয়নি। ওকে জিজ্ঞেস করলেই বলে হয় বাথরুমে নয় মার্কেটে
যাক এতোদিনে আমার মা জননীর সময় হয়েছে ফোন করার। দেখ দেখি তখন থেকে পাগলের মতো আমি
একাই বকে যাচ্ছি,বল মা বল কেমন আছিস মা? বসুন্ধরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। হাউ হাউ করে কেঁদে
ফেলে। সোমনাথ বাবু তো ওর কান্না শুনে খুব ভয় পেয়ে যায় এক অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠেন
উনি। কি হয়েছে মা তুই কাঁদছিস কেন বল আমায়। নিজেকে সামলে নিয়ে সবটা আস্তে আস্তে
বাবাকে খুলে বললো বসুন্ধরা। সোমনাথ বাবু বললেন উনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, টিকিট সব কিছুর
ব্যাবস্থা করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর কাছে পৌঁছচ্ছেন। ও যেন শান্ত থাকে মনের
জোর ধরে রাখে। বসুন্ধরা তখন সোমনাথ বাবুকে বললো, না বাবা আমি
একদম ঠিক আছি এখানে আমার দুই দাদা দিদিকে পেয়েছি ওরা থাকতে আমার কিচ্ছু হবে না।
তোমার আসার দরকার নেই আর শোনো অভিরূপের বাড়িতে এখন কিচ্ছু জানাবে না। তাহলে শয়তান
টা সাবধান হয়ে যাবে আর আমারও বিপদ বাড়বে। ঐ শয়তানকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তবেই
এখান থেকে যাবো। তুমি এই নাম্বারে কল করলে আমার খবর পাবে। এটা অ্যাডিলিনা মানে
অভির স্ত্রী আর আমার নতুন দিদির নাম্বার,এই বলে ফোনটা রেখে
দিলো বসুন্ধরা।
এরপর
ওরা তিনজন প্ল্যান সাজাতে শুরু করলো কিভাবে অভিরূপকে ওর কৃতকর্মের সাজা দেওয়ানো
যায়। স্যাম বললো,আমি এখানেই থাকছি এখন। পরশু আবি ফিরলে আমি অ্যাডিলিনা কে দুদিনের জন্য
নিয়ে যাচ্ছি বলে বেড়োবো। আর অ্যাডি তুমি এখনই ঐ সিসিটিভির লোকটাকে খবর দাও ওর সাহায্যের
খুবই দরকার এখানে। অ্যাডিলিনা বলে,সে না হয় ডাকছি আমি
হ্যারিকে কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আবি যেখানে গেছে সেখানে আর কিছুক্ষনের
মধ্যেই পৌঁছে যাবে। আর ও কিন্তু নিজের কাজের ফাঁকে বাসুর ওপর নজর রাখার চেষ্টা
করবে কারন ওর ল্যাপটপে এই সিসিটিভি অ্যাপের মাধ্যমে কানেক্ট আছে। তাহলে উপায় ওতো
সব জানতে পেরে যাবে দিদি বসুন্ধরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে। কিচ্ছু জানবে না। ঐ
প্যাসেজটায় ক্যামেরা লাগানো নেই,বাথরুমেও নেই তাই আমরা যখনই
কোনো আলোচনা করবো ঐ জায়গা গুলোতেই করবো বোঝা গেছে? অ্যাডিলিনা
বসুন্ধরা কে জড়িয়ে ধরলো। বললো আমার এই মিষ্টি বোনটাকে যতক্ষন না নির্বিঘ্নে
ইন্ডিয়ার প্ল্যানে চাপিয়ে দিতে পারছি ততক্ষণ আমার শান্তি নেই। স্যামও এগিয়ে এসে
বললো আমারও। ওরা একসাথে হেসে উঠলো। ওদের কথার মাঝেই অ্যাডিলিনার ফোনটা সশব্দে বেজে
উঠলো...
ফোনের
রিংটোনের ঝংকারে ওরা তিনজনই চমকে ওঠে। অ্যাডিলিনা চটপট ফোনটা হাতে
নিয়ে বলে,আবি ফোন করছে নিশ্চয় পৌঁছে গেছে। ও ফোনটা রিসিভ করে খুব স্বাভাবিক ভাবে
কথা বলতে শুরু করে। স্যামের আসার কথাও জানায় অভিরূপকে। বেশ খানিকক্ষন কথা বলার পর
ফোনটা রেখে অ্যাডিলিনা দেখে বসুন্ধরা আর স্যাম দুজনেই ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রয়েছে। অ্যাডিলিনা বললো,লুক গাইস আবি পৌঁছে গেছে তাই
আমাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ও কিন্তু এবার বাসুর ওপর নজর রাখবে। চলো বাকি কথা ঐ
প্যাসেজের কাছে গিয়ে বলবো। আচ্ছা চলো,বলে বসুন্ধরা আর ওরা
দুজন প্যাসেজের দিকে গেলো। অ্যাডিলিনা বলতে শুরু করলো, শোনো
কাল সকাল ১০ টা থেকে বেলা ২ টো পর্যন্ত আবির মিটিং রয়েছে। আমাদেরকে যা করার তার
মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। আমি এখন আমার রুমে গিয়ে সিসিটিভি-র অফিসে ফোন করে কথা বলছি
হ্যারির সাথে। ঐ সময়ের মধ্যে ওকে দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করিয়ে নিতে হবে। স্যাম
প্লিজ কিছু খাবার অর্ডার করে দাও লাঞ্চের জন্য আমি কলটা করে নি। বসুন্ধরা বললো,
না না কিচ্ছু অর্ডার করার দরকার নেই আজ আমি আমার দাদা দিদিকে নিজের
হাতে টিপিকাল ইন্ডিয়ান ডিশ রান্না করে খাওয়াবো। না বাসু এতোদিন কিছু জানতাম না তখন
আলাদা ছিলো কিন্তু এখন সবকিছু জানার পর আর তো তোমায় এভাবে কাজ করাতে পারবো না,অ্যাডিলিনা বললো। বসুন্ধরা অ্যাডিলিনার গলা জড়িয়ে বললো, তুমি ওভাবে ভাবছো কেন দিদি! আমায় নরমালি কাজগুলো করতে দাও। দেখো অভিরূপ
যদি দেখে আমি রোজ যা যা করি তার কিছুই
করছি না ওর কিন্তু সন্দেহ হতে পারে। আর তাছাড়া এরপর আর হয়তো তোমাদেরকে নিজের হাতে
খাওয়ানোর সুযোগ নাও পেতে পারি। স্যাম বললো,বাসু ঠিক বলেছে।
অ্যাডি তুমি হ্যারিকে ফোনটা করো আর ও নিজের কাজ করুক এমন কিচ্ছু করার দরকার নেই
যাতে আবি একটুও সন্দেহ করতে পারে।
ওকে
স্যাম আমি আমার বেডরুমে গিয়ে ফোনটা করছি কারন ওখানেও ক্যামেরা লাগানো নেই। বলে অ্যাডিলিনা
নিজের বেডরুম-এর দিকে চলে গেলো।
অভিরূপ
ল্যাপটপে বসুন্ধরা র ওপর বেশ খানিকক্ষন নজরদারী চালিয়ে ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠে
দাঁড়ালো আর নিজের মনে মনেই ভাবতে শুরু করলো,নাহ্ মেয়েটা মনে হচ্ছে পোষ মেনেছে,গুড গার্ল। আর কিছুদিন সোনা ব্যাস একবার গ্রীনকার্ড টা হাতিয়ে নিলেই
অ্যাডিলিনার ছুটি। বেচারী বসুন্ধরা, ডোন্ট ওরি বেবি আর
কয়েকটা মাস একটু কষ্ট করো সোনা। অ্যাডিলিনার মেডিসিনের কৌটোর ট্যাবলেট গুলোতো
পাল্টে এসেছিলো বাচ্চার ব্যাবস্থাটা মনে হয় কয়েকটা ডোজেই হয়ে যাবে। উফ একেই বলে
প্ল্যানিং! অভিরূপ তুই একটা জিনিয়াস। আই লাভ ইউ বসুন্ধরা... হ্যাভ পেসেন্স
ডার্লিং। গুন গুন করতে করতে বাথরুমে ঢুকে পরে অভিরূপ।
আচ্ছা
অ্যাডি এই সিসিটিভি ফুটেজ কি এখানে দেখার আর কোনো অপশন আছে। আমি একটু ক্যামেরা
কভারেজ এরিয়াগুলো ভালো করে দেখে নিতে চাই আর বাসুকে যা যা বলেছে আবি ওগুলোও রেকর্ড
রাখতে হবে। বাসুকেও ডেকে নাও কারন বাংলা কথোপকথন তো তাই ও বুঝবে কোনটা দরকারী, স্যাম বললো। ওহ
ইয়েস আমার ল্যাপটপে দেখা যাবে। চলো আমার বেডরুমে। বলে অ্যাডিলিনা স্যামকে আর
বসুন্ধরাকে ওর বেডরুমে নিয়ে যায়। ওরা বসুন্ধরার এখানে আসার দিন থেকে ফুটেজ দেখতে শুরু করে আর বসুন্ধরা বলতে
থাকে কোনগুলো প্রমাণস্বরূপ ব্যাবহার করা যেতে পারে। অবশেষে অভিরূপের বাইরে যাওয়ার
আগের দিনের ফুটেজে এসে পৌঁছোয় ওরা। পজ পজ, অ্যাডিলিনা বলে
ওঠে। আরে আবি আমার মেডিসিনের কৌটো নিয়ে কি করছে ! রিওয়াইন্ড করো একটু ইয়েস স্টপ,
জুম করো। ও মাই গড! বাসু
ডাইনিং-এর কাবার্ড থেকে আমার মেডিসিন গুলো আনোতো ফাস্ট। বসুন্ধরা দৌড়ে মেডিসিন
গুলো নিয়ে এলো। এই যে এটা এই ভিটামিনের কৌটো থেকে মেডিসিন গুলো বের করে অন্য
মেডিসিন ঢোকালো আবি। অ্যাডিলিনার মুখটা রক্তশূণ্য হয়ে যায়। কি করতে চাইছে টা কি ও!
ভেরি ফিসি। যাইহোক কুল ডাইন ভালো সময় দেখেছো ঐ ভিটামিনের অন্য ফাইল আমি বিকেলে
নিয়ে আসবো। তারপর ঐগুলো কিসের মেডিসিন জানতে হবে, স্যাম অ্যাডিলিনাকে আস্বস্ত করে।
অ্যাডিলিনা বসুন্ধরা আর স্যামকে জানায় যে হ্যারি কাল সকাল ১০টার মধ্যেই এসে যাবে।
বসুন্ধরা বলে, অনেক দেরি হয়ে গেছে আজ চলো এবার সবাই লাঞ্চ
করে নি। বসুন্ধরার কথামতো ওরা ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোতে থাকলো। লাঞ্চ করতে করতেই
আবার অভিরূপের ফোন। ওরা তিনজনেই একটু চিন্তিত হয়ে পরে আবার কেন ফোন করলো
অভিরূপ!!!!
অ্যাডিলিনা
ফোনটা তুলতেই ও প্রান্তে অভিরূপের উদ্বিগ্ন গলা, কি ব্যাপার ডার্লিং এতো দেরি হলো
ফোনটা রিসিভ করতে! কখন থেকে চেষ্টা করছি লাইনই পাচ্ছিলাম না, আমিতো টেনশনে পরে গেছিলাম। আই এম ফাইন আবি, হ্যাভিং
লাঞ্চ, অ্যাডিলিনা বললো।
এতো
দেরিতে লাঞ্চ! কেন??
বসুন্ধরা কি ঠিক সময় মতো লাঞ্চ দিতে পারেনি নাকি? না না শরীরের এই অবস্থায় এরকম অনিয়ম একদমই ঠিক নয়। বসুন্ধরাকে বলো সেটা,
একনাগারে কথাগুলো বলে একটু থামে অভিরূপ।
না
আবি বাসুর কোনো দোষ নেই,
অ্যাডিলিনা বলতে থাকে, আজ ব্রেকফাস্ট একটু
হেভি হওয়ায় আমিই বলেছিলাম লেটে লাঞ্চ নেবো। বসুন্ধরা খুব সুন্দর ইন্ডিয়ান লাঞ্চ
খাওয়ালো আমাদের।
ওহ্
দ্যাটস গ্রেট। আচ্ছা শোনো যে কারনে ফোন করলাম, তোমার ওষুধ গুলো ঠিকঠাক খেয়েছো তো? স্পেশালি
ভিটামিন। তোমার কিন্তু এই সময় ভিটামিনটা খুবই জরুরী। আচ্ছা গুড, মনে করে ওষুধ গুলো খেও। আমি ডে আফটার টুমোরো ফিরছি। এখন রাখলাম ওকে বাইইই
টেক কেয়ার লাভ ইউ অ্যান্ড মিস ইউ, উমমমমাহ্, অভিরূপ বললো। অ্যাডিলিনাও ওকে প্রতুত্তর দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো।
ওরা
চুপচাপ লাঞ্চ শেষ করে উঠে পড়লো। এরপর সবাই অ্যাডিলিনার ঘরে গেলো।
এখন
হঠাৎ ফোন করলো কেন!?
বসুন্ধরা জিজ্ঞেস করলো।
অ্যাডিলিনা
বললো, আসলে শয়তানটা কনফার্ম করতে চাইছিলো ওর উদ্দ্যেশ্য কতদুর সফল হলো। আমি ওর
পাল্টে দেওয়া ওষুধগুলো খেলাম কিনা এসবই। আমিও ওকে নিশ্চিন্ত করে দিলাম। এরপর ওরা
তিনজনই একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যে যার রুমে চলে গেলো।
বিকেলে
অ্যাডিলিনা আর স্যাম ডক্টরের কাছে গেলো। ডক্টর বেশকিছুক্ষন ভালোভাবে মেডিসিনটা ম্যাগনিফাইং
গ্লাস দিয়ে দেখার পর,
আসলে নামটা এতো ছোটো করে লেখা তাই ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলাম।
কিন্তু এই মেডিসিন এই পিরিওডে তোমার কাছে কি করছে?! তুমি কি
এটা অলরেডি খেয়ে ফেলেছো? না ডক্টর আমার একটু সন্দেহ হওয়ায় আমি এটা না খেয়ে আপনার কাছে এসেছি। এস
বিকস ইউ আর নট ওনলি মাই ডক্টর বাট এ ভেরি গুড ফ্রেন্ড ইনডিড, অ্যাডিলিনা বলে।
থ্যাঙ্ক
গড যে তুমি ওটা খাওনি। এটা খুবই ক্ষতিকারক একটা ওষুধ। প্রেগনেন্সিতে এই ওষুধ খেলে
মিসক্যারেজ কেউ আটকাতে পারতো না। তোমারও লাইফ রিস্ক যথেষ্ঠ ছিলো এই স্টেজে। কিন্তু
তোমার কাছে এই ওষুধ এলো কি করে?! ডক্টর অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
সেটা
অনেকটা লম্বা ঘটনা তোমার তো এখন চেম্বার টাইম সো পরে সব বলবো। অ্যাডিলিনা উঠে পরে।
আরে
না বসো বলে ডক্টর অ্যাডিলিনাকে বসিয়ে দিলো। ঘন্টাখানেক পর আমার একটা জরুরী কাজ আছে
বলে আজ আমি চেম্বার অফ রেখেছি। তুমি দুপুরে ফোনে বললে খুব আর্জেন্সি আছে তাই আমি
তোমায় এই সময়ে আসতে বলেছিলাম। তুমি বলো এখনও বেশ কিছুটা সময় আছে আমার কাছে। আর
তাছাড়া তুমি আমার বন্ধু তাই তোমার এরকম বিপদ কি করে হতে যাচ্ছিলো আর কার জন্যই বা
হচ্ছিলো সেটা জানাটা আমার কাজের থেকে বেশী জরুরী কাজটা পরেও কোনোদিন হতে পারবে।
নাও টেল মি ইন ডিটেইল।
অ্যাডিলিনা
কেঁদে ফেললো,স্যাম প্লিজ সবটা ডক্টরকে বলো, আই কান্ট টেক ইট
এনিমোর।
ওকে
ওকে কুল ডাউন আমিই বলছি সবটা, স্যাম অ্যাডিলিনাকে শান্ত হতে বলে। তারপর ও পুরো
ঘটনাটা ডক্টরকে জানায়।
ওহ্
মাই গুডনেস! কি বলছো কি! ডক্টর জেমস স্মিথ উত্তেজিত হয়ে পরে। তোমরা এখন কি ভাবছো, কি করে ঐ
ডেভিলকে আইনের হাতে তুলে দেবে?
ডক্টর
আমরা বেশকিছু প্রমান অলরেডি জোগাড় করে নিয়েছি। আপনি একটু এই মেডিসিন-র নাম লিখে
একে হার্মফুল ডিউরিং প্রেগনেন্সি বলে সার্টিফাই করে দিন। তারপর ও ফেরার পর ওকে
কিভাবে ফাঁদে ফেলা হবে সেটা পুরোটাই প্ল্যান করা আছে, স্যাম বলে।
এদিকে
ওরা যখন ডক্টরের চেম্বারে সেই সময় ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে,বসুন্ধরা ফোনটা
রিসিভ করলো।
বসুন্ধরা
একটু অবাক হলো সচরাচর ল্যান্ডফোনটায় ফোন আসেনা। ও গিয়ে রিসিভারটা কানে লাগিয়ে
হ্যালো বলতেই, কি খুকুমনি খুব রাগ হচ্ছেতো আমার উপর? সুযোগ পেলে
খুনই করে ফেলতে হয়তো। বসুন্ধরা রিসিভারটা কানে লাগিয়ে চিত্রার্পিতের মতো দাঁড়িয়ে
থাকে মুখে কোনো কথা বেরোয় না। অভিরূপ আবার কি মতলবে ফোন করেছে! নিজেকে সামলে নিয়ে
বসুন্ধরা বলে, না তেমন কোনো ইচ্ছা আমার হয়নি অভিরূপ কারন
আমার মনটা অপরাধী নয়। এখন বলো কেন হঠাৎ ল্যান্ডফোনে কল করছো!
অভিরূপ
বলে, ওয়েল যে জন্য ফোনটা করা সেটা হচ্ছে অ্যাডিলিনা আর স্যামকে বেরোতে দেখলাম।
কোথায় গেছে ওরা কিছু বলে গেছে? আর একটা কথা এই সুযোগে
বেগড়বাই কোরোনা সোনা, নিশ্চয় বুঝতে পারছো আমার নজর সবসময়
তোমার ওপর রয়েছে।
হ্যাঁ
ওরা একটু মার্কেটিং-এ গেছে। অ্যাডিলিনা ওহ সরি ম্যাডামের ভাইয়ের বাড়িতে কিছু
অনুষ্ঠান আছে কদিন পরে সেই উপলক্ষ্যেই কেনাকাটা। বসুন্ধরা বললো।
অভিরূপ
বলে, আরে চিল ইয়ার আমার সামনে ম্যাডাম না বললেও চলবে অ্যাডি কে। তোমার জন্য
কিছুদিনের মধ্যেই একটা বিরাট চমক অপেক্ষা করছে কিন্তু ততদিন একটু কষ্ট করে
সহযোগিতা করো আমার সাথে। শুধু এটুকু জেনে রাখো আগামী দিনগুলো শুধুই আমাদের হবে।
বাই লাভ ইউ এ লট। ফোনটা কেটে দিলো অভিরূপ।
ফোনটা
কেটে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষন রিসিভারটা হাতে নিয়ে স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে
বসুন্ধরা। কি বলতে চাইছিলো শয়তানটা! আগামী দিন আমাদের মানে?? আরো কি ভয়ঙ্কর
ছক কষে চলেছে ও! ঠাকুর দেখো অ্যাডিলিনার যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
এসব
নানানরকম ভাবনার মাঝেই অ্যাডিলিনা আর স্যাম ফিরে এলো। অ্যাডিলিনার মুখটা থমথম
করছে। ও চোখের ইশারায় বসুন্ধরা কে ডেকে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। বসুন্ধরা তিনকাপ কফি
আর কুকিজ নিয়ে অ্যাডিলিনার রুমে গেলো।
স্যাম
কফি খেতে খেতে ওষুধ বদলের কাহিনী সবটা খুলে বললো বসুন্ধরা কে। সবটা শুনে বসুন্ধরা
বললো,ওর উদ্দেশ্য কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি আমি।
এটা
শুনে অ্যাডিলিনা আর স্যাম একসাথে বলে ওঠে, কি উদ্দেশ্য??
বসুন্ধরা
ওদেরকে অভিরূপের ল্যান্ডলাইন-এ ফোন করার কথাটা জানালো। আর কি কি কথা হয়েছে সবটুকুই
খুলে বললো।
এরপর
স্যাম বললো,এইবার আমিও আন্দাজ করতে পারছি ওর প্ল্যান। অ্যাডি ও শুধু তোমার বাচ্চাকে
নয় তোমাকেও মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছিলো। তোমার এই স্টেজে মিসক্যারেজ হলে বাঁচার সম্ভবনা খুবই কম ছিলো।
আর যদিও বা বেঁচে যেতে ও তোমায় কোনো না কোনো ভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করতো।
অ্যাডিলিনা
বললো, ও তাহলে আমায় বিয়েটা করলো কেন?! কি অসম্ভব
ভালোবেসেছে ও আমায়। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না যে সবটাই ওর অভিনয় ছিলো। অ্যাডিলিনা
কেঁদে ফেলল।
বসুন্ধরা
জড়িয়ে ধরলো অ্যাডিলিনাকে। বললো,একদম চোখের জল ফেলবে না ঐ শয়তানটার জন্য। ও তোমার
ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নয় ইনফ্যাক্ট শুধু তোমার কেন ও কারোরই ভালোবাসা পাওয়ার
যোগ্য নয়। মন শক্ত করো, এসো আমরা সবাই মিলে ওকে ওর উপযুক্ত
শাস্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করি। বলে বসুন্ধরা ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো আর ওরা দুজন ওর
বাড়ানো হাতটা চেপে ধরলো। এই সময় অ্যাডিলিনার ফোন বেজে উঠলো। বসুন্ধরা- র বাবার
নাম্বার স্ক্রীনে ফুটে উঠেছে।
অ্যাডিলিনা
ফোনটা বসুন্ধরার হাতে দিলো। ফোনটা রিসিভ করতেই,ও মা গো তুই কেমন আছিস মা, বসুন্ধরার মা হাই হাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। বসুন্ধরা বললো, মা চুপ করো মা শান্ত হও আমি একদম ঠিক আছি। ঠিকসময় তোমার কাছে পৌঁছে যাবো
একদম চিন্তা কোরোনা। আর শোনো বাড়ির বাকিদের বিশেষ করে দাদাই আর ঠামকে কিচ্ছু
বোলোনা। ওদের বয়স হয়েছে এই ধাক্কাটা নিতে পারবে না।
ওর
মা বলে,না না না তুই ঐ শয়তানটা বাইরে থাকতে থাকতে চলে আয় ওর শাস্তি ভগবান দেবেন।
তুই আমাদের কাছে ফিরে আয় মা।
বসুন্ধরা
শান্ত গলায় বলে, না মা তা হয় না এখানে অনেক বড় ষড়যন্ত্র করে রেখেছে অভিরূপ। আর যে দিদি
আমার বিপদে আমায় রক্ষা করছে আমার সাথে আছে তাকে এতোবড় বিপদের মুখে ফেলে রেখে আমি
কিছুতেই স্বার্থপরের মতোন পালাতে পারবো না। তোমরা চিন্তা কোরোনা এই দুই দাদা-দিদি
আমার সাথে আছে আমার কিচ্ছু হবেনা। আমি এখন রাখি আর একটা কথা এভাবে হঠাৎ ফোন
কোরোনা। আমি ঠিক সুযোগ বুঝে তোমাদের খবর দেবো। সাবধানে থেকো আর একদম চিন্তা
কোরোনা।
ফোনটা
রেখে বসুন্ধরা দেখে অ্যাডিলিনা আর স্যাম অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
বসুন্ধরা
হেসে ফেলে বলে,বুঝেছি আমার কথা কিছুই বুঝতে পারোনি তোমরা তাই এরকম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো?
ঠিক
তাই,ওরা দুজনও হাসতে হাসতে বলে।
সেরকম
কোনো কথা নয়গো,আসলে মা-বাবা তো চিন্তা করবেই। তারপর হঠাৎই এরকম একটা খবর তাই মা খুব
কান্নাকাটি করছিলেন। আমায় বারবার অভি ফেরার আগে ফিরে আসতে বলছিলেন। কিন্তু আমি বলে
দিয়েছি সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অ্যাডিলিনা
সব শুনে বললো,বাসু তুমি যদি যেতে চাও চলে যেতে পারো। আমি ট্রাভেল এজেন্সীতে ফোন করে
টিকিট করিয়ে দিচ্ছি কালকের। আবির শাস্তি ঠিকই হবে ওর বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ প্রমান
অলরেডি আমাদের হাতে রয়েছে।
বসুন্ধরা
দৃঢ় গলায় বলে,না আমি নিজের চোখে ওর শাস্তি না দেখে আর তোমায় নিরাপদ না দেখে এখান থেকে
কোথাও যাবোনা। আমায় এতোটা সুবিধাবাদি ভেবোনা তোমরা। আচ্ছা আমি একটা কথা ভাবছি।
স্যাম
জানতে চায়,কি ভাবছো তুমি বাসু?
বসুন্ধরা
বলে, অভি দিদির ওষুধ পাল্টে দিয়ে গেছিলো আর ও ভাবছে দিদি ঐ ওষুধই খাচ্ছে এখন
দিদি যদি সুস্থ থাকে তাহলে বুঝতেই পারছো ও কিছু সন্দেহ করতে পারে। তাই এরপর ও যখন
দিদিকে ফোন করবে তুমি ফোনটা তুলবে আর বলবে দিদির হঠাৎই শরীরটা খারাপ হয়েছে ও শুয়ে
আছে।
এটা
কিন্তু আমাদের মাথাতেই আসেনি,এটা বাসু একদম ঠিক বলেছে,অ্যাডিলিনা
বলে।
আচ্ছা
আমি এখন এখান থেকে যাচ্ছি। অভি আমাদের কাউকে দেখতে না পেলে সন্দেহ করতে পারে। আমি
ডিনার টা রেডি করি দাদা তুমি একটু পরে চলে এসো আর দিদি তুমি রুমেই থাকবে তোমায়
এখানেই ডিনার সার্ভ করবো। কারনটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো। বলে বসুন্ধরা সেখান থেকে
চলে গেলো।
স্যাম
আর বসুন্ধরা ডিনার করছিলো আর অ্যাডিলিনা রুমে বসে ডিনার করছিলো। এরকম সময়
ল্যান্ডলাইনে একটা ফোন এলো। বসুন্ধরা চাপাস্বরে বললো, নিশ্চয় অভি।
দাদা তুমি ফোনটা ধরো।
স্যাম
উঠে ফোনটা রিসিভ করলো। বসুন্ধরার অনুমানই সঠিক ছিলো সেটা হাতের ইঙ্গিতে বুঝিয়ে
দিলো স্যাম। হ্যাঁ অ্যাডির ফোনটা অফ আছে। আজ মার্কেট থেকে ফেরার পর থেকেই ওর
শরীরটা খারাপ। ও বিশ্রাম নিচ্ছে। হ্যাঁ হ্যাঁ ডক্টর কে কল করেছিলাম। রেস্ট নিতে
বলেছে। না না তেমন চিন্তার কিছু নেই ওর পেটে একটু পেইন হচ্ছে। তেমন কিছু হলে আমিতো
আছি চিন্তা কোরোনা। স্যাম ফোনটা রেখে দিলো।
ফোনটা
ডিসকানেক্ট করতে করতে অভিরূপের মুখে একটা শয়তানি হাসি খেলে গেলো। ইয়েস তারমানে
ওষুধ নিজের কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। উল্লাসে ফেটে পরলো অভিরূপ। যা যা প্ল্যানিং
করেছিলো সবকিছু মসৃনভাবে এগিয়ে চলেছে। ল্যাপটপ খুলে বসলো অভিরূপ,কালকের মিটিং-এর
প্রেজেন্টেশন টা আর একবার ফাইনালি চেক করতে হবে। তার আগে একটু মেলগুলো দেখে নেওয়া
যাক এই ভেবে মেলবক্স ওপেন করে মেলগুলো চেক করতে শুরু করলো অভিরূপ। হঠাৎই একটা মেলে
এসে চোখ আটকে গেলো ওর। ভালো করে চোখদুটো কচলে নিলো, ঠিক
দেখছে তো ও!!!!
ঝটপট
মেলটা ওপেন করে আনন্দে চোখটা ঝিকিয়ে উঠলো অভিরূপের। এ যে মেঘ না চাইতেই জল! ওয়াও
আই অ্যাম এ সিটিজেন অফ ইউনাইটেড কিংডম ফ্রম নাও। ভাগ্যদেবী দেখছি সত্যিই সুপ্রসন্ন
আমার উপর আর শুধু তাই নয় বসুন্ধরাও আমার লাকি চার্ম। ভাবতেই পারিনি এখনই গ্রীন
কার্ডটা পেয়ে যাবো। বসুন্ধরা কে এক্ষুনি গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছা করছে, তোমার জন্য
নতূন সকাল অপেক্ষা করছে মাই ডার্লিং। নাহ আর নজরদারী করবো না আজ, শুয়ে পরি কাল সকালে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে। অভিরূপ ল্যাপটপ সাটডাউন করে
শুয়ে পরলো।
পরেরদিন
সকালে বেরোনোর আগে একবার অ্যাডিলিনা কে ফোন করতে গিয়ে দেখলো ওর সেল ফোন সুইচড অফ।
হুম তারমানে অ্যাডিলিনার শরীর নিশ্চয় আরো খারাপ হয়েছে। দেখি একবার ল্যান্ডলাইনে
ফোন করে।
স্যামই
ফোনটা রিসিভ করলো। অভিরূপ খুব উদবিগ্ন ভাব দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, গুড মর্নিং ব্রাদার
অ্যাডিলিনা ঠিক আছে তো? সারারাত ওর চিন্তায় দুচোখের পাতা এক
করতে পারিনি। স্যাম বললো, না আজ ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
পেটের ক্র্যাম্পটা বেড়েই চলেছে। ডক্টর কিছু মেডিসিন ওভার দ্য ফোন বলেছিলেন বাট
তাতে কোনো কাজ হয় নি। তুমি টেনশন কোরোনা আমি আছি। আর তুমিতো কালই ফিরছো। ওকে বাই
ফর নাও। স্যাম ফোনটা কেটে দিলো।
অভিরূপের
খুশীতে নাচতে ইচ্ছে করছে। হুঁ হুঁ বাবা যতই মেডিসিন খাওয়াও আর ডক্টরের কাছে নিয়ে
যাও ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব গল্প শেষ। যাক ভালোভাবে কাজগুলো সেরে পরে
আবার আপডেট নেওয়া যাবে,
অভিরূপ বেরিয়ে পরলো।
সকাল
১০.০৫,কলিংবেলটা বাজতেই স্যাম ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। হ্যারি রাইট? আগন্তুককে প্রশ্ন করতেই সম্মতিসুচক ঘার নাড়লো সে। ওকে কাম ইনসাইড। স্যাম
হ্যারিকে ভেতরে নিয়ে এলো। প্রয়োজনীয় যা যা করার এবং বোঝানোর ছিলো সবটা করতে
হ্যারির ঘন্টাখানেক মতো সময় লাগলো। সবকিছু করে হ্যারি চলে গেলো।
স্যাম
অ্যাডিলিনাকে বললো,কুইক রেডি হয়ে নাও। আমরা পুলিশ স্টেশন যাবো।
বসুন্ধরা
জানতে চাইলো,কেন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে কি হবে?
অ্যাডিলিনা
বললো, আবির সাথে যা কথা হয়েছে তাতে করে ও কাল সকাল ১০টার মধ্যেই ফিরে আসবে। আমরা
এখন পুলিশকে গোটা বিষয়টা জানিয়ে তাদের কাল ১০.৩০টা নাগাদ তৈরী থাকতে বলবো যাতে ফোন
করলেই চলে আসে। আর কয়েকটা জিনিস-এর ব্যাবস্থা করতে হবে।
বসুন্ধরা
বললো, কি জিনিস।
অ্যাডিলিনা
তখন বসুন্ধরা র কানে কানে কিছু বললো। শুনতে শুনতে বসুন্ধরা র মুখের মেঘ কেটে
একটুকরো হাসি ঝিলমিলিয়ে উঠলো।
পরের
দিন সকাল ৯.৫৮। কলিংবেলটা বেজে উঠলো বসুন্ধরা ম্যাজিক অাইহোল দিয়ে দরজার বাইরেটা
দেখে অ্যাডিলিনা কে ইশারা করলো। অ্যাডিলিনা ওর সঙ্কেত বুঝেই মাটিতে পরে কাতরাতে
শুরু করলো আর জায়গাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো। স্যাম ছুটে এলো অ্যাডিলিনার কাছে। আবার
কলিংবেলের আওয়াজ। দরজাটা খুলে দিলো বসুন্ধরা।
একি
কি হয়েছে আমার অ্যাডির! অভিরূপ ছুটে এলো।
স্যাম
বললো, হঠাৎই ব্লিডিং স্টার্ট হয়েছে আমি অ্যাম্বুলেন্সে কল করে দিয়েছি এখুনি চলে
আসবে। বলতে বলতেই স্যামের ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করে স্যাম ফ্ল্যাট নাম্বার বলে
দিলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্সের লোক স্ট্রেচার নিয়ে চলে এলো। অভিরূপ
ঘটনার আকস্মিকতায় চুপ করে গেছিলো। এবার ও বলে উঠলো, আমিও
যাচ্ছি তোমাদের সাথে।
অ্যাডিলিনা
যন্ত্রনায় ছটফট করছিলো। ওর পোশাক রক্তে লাল হয়ে উঠেছে।
স্যাম
বসুন্ধরা কে বললো,অ্যাডির প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে দাও ফাস্ট। আর আবি শোনো তুমি এইমাত্র
ফিরলে একটু ফ্রেস হয়ে নাও তারপর এসো আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি এখন।
অভিরূপ
মনে মনে এটাই চাইছিলো কিন্তু এমন ভাব দেখালো যেন ও নিজেই অসুস্থবোধ করছে
অ্যাডিলিনার অবস্থা দেখে। মুখে বললো ঠিক আছে আমি একটু পরেই আসছি। টাকা লাগবে কই
কিছু?
স্যাম
বললো ইমার্জেন্সি ওর কাছে রয়েছে। আবি যেন যাওয়ার সময় টাকা নিয়ে যায়।
স্যাম
অ্যাডিলিনাকে নিয়ে চলে গেলো। বসুন্ধরা জায়গাটা পরিষ্কার করবে বলে বাকেট আর মপ নিয়ে
আসতে ভেতরে গেলো।
এসে
দেখে অভিরূপ এক পা এক পা করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। বসুন্ধরা পেছোতে শুরু করলো।
পিছোতে
পিছোতে বসুন্ধরা ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে ধাক্কা খেলো। অভিরূপ তখন একদম ওর কাছে, ওর গরম
নিঃশ্বাস এলোমেলো করে দিলো বসুন্ধরার কপালের ঝুরো চুলগুলো।
কি
চাই কি তোমার অভিরূপ!?
আমায় বিয়ে করে নিয়ে এসে কাজের লোক বানিয়ে রেখেও তোমার শান্তি নেই!
আমিতো তোমার কথামতোই চলছি তাহলে আর কি চাও আমার থেকে!!
বসুন্ধরা
কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অভিরূপ আর বললো,শুনবে আমি কি চাই,তাহলে
ভালো করে মন দিয়ে শোনো। হ্যাঁ আমি মানছি আমি তোমার অপরাধী বসুন্ধরা। কিন্তু আমি
কেন এসব করেছি জানলে আর তুমি আমার উপর রেগে থাকতে পারবে না। প্রথমেই তোমায় একটা
সুখবর দি, আমি গ্রীনকার্ড পেয়ে গেছি। এর মানে বুঝতে পারছো
বসুন্ধরা। শুধুমাত্র এই একটাই কারনে আমি অ্যাডিলিনাকে বিয়ে করেছিলাম। এখন আর ওকে
আমার জীবনে কোনো দরকার নেই। আমি শুধুমাত্র তোমায় ভালোবাসি বসুন্ধরা।
বসুন্ধরা
চুপচাপ শুনলো,তারপর বললো,কিন্তু অ্যাডিলিনা সন্তানসম্ভবা আর তুমি
ওকে এখন তোমার জীবন থেকে আর কোনোভাবেই বাদ দিতে পারোনা। আর এই সময় ওকে ডিভোর্স
দিলে তোমার গ্রীনকার্ডও বাতিল হয়ে যাবে।
অভিরূপের
মুখে আবার সেই শয়তানি হাসিটা খেলে গেলো, আমি কি অতোই কাঁচা কাজ করি জানু মেরি
জান। অ্যাডিলিনার এইযে মারাত্বক ব্লিডিং শুরু হয়েছে সেটা কি হঠাৎই হলো ভাবছো। নো
ম্যাডাম জি পুরোটাই এই অভিরূপ চাটুজ্যের প্ল্যানিং। আমি ট্যুরে যাওয়ার আগের রাত্রে
ওর ভিটামিনের মেডিসিন বদলে প্রায় একইরকম দেখতে অন্য মেডিসিন রেখে দিয়েছিলাম আর তার
ফলাফল তো দেখতেই পাচ্ছো ডিয়ার। অ্যাডিলিনার বাঁচার সম্ভাবনাও খুবই কম। আর যদিও বা
বরাত জোরে বেঁচে যায় তার জন্য প্ল্যান নাম্বার টু তৈরী আছে।
বসুন্ধরা
একটু আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো,সেটা কি আমায় তো বলো।
আছে
আছে ম্যাডাম জি ক্রমশ প্রকাশ্য। এখন আমার একটু তৃষ্ণা নিবারণ করো প্রিয়ে। তোমার
বিহনে প্রাণ যে আমার যায় যায়,অভিরূপ হাসতে হাসতে বলে।
ওহো
তাইতো তাইতো, আচ্ছা তার আগে বলোতো তুমি কি রূপাকেও একই কথা বলেছিলে এখন যা যা আমায়
বলছো! আসলে মেয়েটা বোকা ছিলো তো তাই তোমার ছক কষা ভালোবাসা বুঝতে পারেনি আর
বেচারীকে বেঘোরে প্রাণটা দিতে হলো তাইনা বলো সোনা। বসুন্ধরা দাঁতে দাঁত চেপে
কথাগুলো বললো।
ক-কি-কি
বললে তুমি! কে রূপা! ছক কষা ভালোবাসা মানে কি বলতে চাইছো তুমি। পাগল হয়ে গেলে নাকি!!
অভিরূপ ভীষন ভাবে চমকে ওঠে।
দাঁড়াও
দাঁড়াও শ্রীমান অভিরূপ এতেই ঘাবড়ে গেলে! প্ল্যানিং কি একা তোমারই কপিরাইট!!
বসুন্ধরা মুচকি হেসে বললো।
নিজেকে
বেশী চালাক মনে করছো মনে হচ্ছে। খুব বেশী যখন জেনেই ফেলেছো তখন তো তার শাস্তি
তোমায় পেতেই হবে ডিয়ার,অভিরূপ ছুটে গিয়ে বসুন্ধরার গলাটা চেপে ধরে।
ঠিক
তখনই সদর দড়জায় খুট করে শব্দ হয়।
অভিরূপ
চমকে পেছনে তাকাতেই দড়জাটা পুরোপুরি খুলে যায়।
সামনে
একদল পুলিশ,হ্যান্ডস আপ, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। একজন পুলিশ
ছুটে গিয়ে ওর হাত থেকে বসুন্ধরাকে ছাড়িয়ে নেয়। ইউর গেম ইজ ওভার মিঃ আবিরূপ,পুলিশের পেছন বেরিয়ে আসে অ্যাডিলিনা আর স্যাম।
অ্যাডিলিনা
কে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে অভিরূপ। কোনোরকমে বলে,তু তুমি এখানে
কি করে!
এবার
স্যাম এগিয়ে এসে বলে,খুব অবাক হচ্ছো তাই না। কি ভেবেছিলে তুমি সবকিছু তোমার কষা ছক অনুযায়ী
চলবে! এটা জীবন আবি কোনো ফিল্মের স্ক্রীপ্ট নয়। আর তাই বাকি ক্যারেক্টাররাও তোমার
হাতের পুতুল নয়।
অভিরূপ
বলতে থাকে,কি করে প্রমান করবে সবটা। কোর্ট তো প্রমান চাইবে।
অ্যাডিলিনা
বলতে শুরু করে,প্রথমত তুমি এখন যা যা বলছো সেটা পুলিশের সামনে। আর তুমি ভুলে যাচ্ছো কেন
এখানে তোমারই লাগানো ক্যামেরা গুলোর কথা। আমার ফোনে তোমার সব কির্তিকলাপের ফুটেজ
যত্ন করে রাখা রয়েছে। যেদিন তুমি ট্যুরে বাইরে গেলে সেদিনই বাসু সবটা খুলে বলে
আমায়। তারপর স্যাম এসে পড়ায় আমাদের আরো সুবিধা হয়। তখন অবশ্য আমার সাথে এই নোংরা
প্ল্যানিং-এর ব্যাপারটা জানতাম না। পরে আস্তে আস্তে সবটা জানতে পারি। আর আজ আমার
অসুস্থতার নাটকটাই ছিলো তোমার মুখ দিয়েই সবটা বলানোর জন্য। যাও এবার জীবনের
অন্ধকারময় দিনগুলো কাটানোর জন্য প্রস্তত হও। অফিসার নিয়ে যান এই শয়তানটাকে।
অভিরূপ
যেতে যেতে বসুন্ধরাকে বলতে থাকে,আমি কিন্তু তোমায় সত্যিই ভালোবেসেছিলাম।
ঘৃনায়
রাগে বসুন্ধরার মুখটা লাল হয়ে ওঠে। ও বলে, ভালোবাসা! হুহ,এই
পবিত্র শব্দটা তুমি মুখেও এনো না। একমাত্র নিজেকে ছাড়া আর কাউকে কখনও ভালোবাসোনি
তুমি। যাও এবার জেলে বাকি জীবনটা কাটাও। ওটাই তোমার উপযুক্ত যায়গা।
এই
ঘটনার দুদিন পর,
আজ
বসুন্ধরা ফিরে যাবে তার দেশে। আর কিছুক্ষন পরেই ওর ফ্লাইট। হিথরো বিমান বন্দরে ওকে
বিদায় জানাতে এসেছে অ্যাডিলিনা আর স্যাম। অ্যাডিলিনা বসুন্ধরা কে জড়িয়ে ধরে ধরা
গলায় বললো, এই দিদিকে ভুলে যাবে না তো বাসু? বসুন্ধরা র চোখের
কোনেও টলটল করছে জল। ও অ্যাডিলিনা আর স্যামের হাত দুটো একসাথে ধরে বললো, যাদের জন্য আজ আমি আবার আমার বাড়ি ফিরতে পারছি তাদের কি করে কোনোদিন
ভুলবো! তবে তোমরা কিন্তু কথা দিয়েছো দিদির ডেলিভারির পর বেবিকে নিয়ে ইন্ডিয়া আসছো।
কথাটা রেখো কিন্তু।
এয়ারপোর্টের
বাইরে বেরিয়ে নিজের দেশের মাটিতে পা দিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললো বসুন্ধরা। বাবা-মা ওর
অপেক্ষায় দাঁড়িয়েই ছিলেন।
বাবা-মায়ের
সাথে বাড়ি ফিরতে ফিরতে এই জানজট পরিপূর্ণ শহরটাই যে ওর কতো আপন সেটা মর্মে মর্মে
অনুভব করছিলো বসুন্ধরা। গাড়ির এফ এম-এ তখন,"এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয়
আলোয়"........
অদিতি সেনগুপ্ত: কপিরাইট
লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন