ভ্রমণকাহিনী
গত
কয়েকটা দিন কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে কাটছে। মনে হচ্ছে জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে
এখানে এসে পৌঁছেছি। ফ্ল্যাশব্যাকের মত চোখের সামনে ফিরে আসছে সেই সব দিন গুল। আমার
প্রথম আমারিকার দিনগুলোর। জলের মাছ ডাঙ্গায় উঠার ছটফটানোর মেটাফর খুব নগণ্য
মনে হয়। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মাছ একসময় মরে যায়, আমি মরিনি। আমি ওই তীব্র দমবন্ধ হওয়া অনুভূতি নিয়ে দুই যুগ
কাটিয়ে দিয়েছি। ১৯৯৫ সালে যখন আমেরিকায় আসি, তখনো বাংলাদেশে আর আমেরিকার দূরত্বটা খামে ভরা চিঠি লেখার
মধ্যে রয়ে গিয়েছিল। একটা চিঠি লিখলে ১৫ কি ২০ দিন লাগত যেতে, তারপর কথা থেকে যেত। আদৌ সে চিঠি সঠিক
মানুষের হাতে গেল কিনা। আর গেলেও তার জবাব আসতে লাগতো আর বিশ দিন। ততদিনে কি কারণা কি লিখেছিলাম তা আর
মনে থাকত না। টেলিফোনে কথা বলতে গড়ে অন্তত দু ডলার করে লাগতো। টাকার কথা মাথায়
রেখে সবার সাথে মন খুলে কথা বলা তো দূরেই থাক আসল কথা না বলে কয়েকবার ‘তুমি কেমন আছো', 'আমি ভাল আছি'
করে
নার্ভাস হয়ে ফোন রেখে দেয়া হত। আর সত্যই যেদিন ফ্লাশ কার্ড বানিয়ে, আলোচনার এজেন্ডা রেডি করে বসতাম সেদিন
কাউকে পেতাম না। ইন্টারনেট, ইমেইল, “You Got Mail” থেকে আজকের টুইটার, হয়াটস আপ, ইন্সটগ্রাম,
স্নেপচেটে
পৌঁছতে অন্তত আর গুনে গুনে বিশটি বছর। বাংলা দৈনিক পত্রিকা দূরে থাক, কোন বাংলা টিভি, পত্রিকা, গান কবিতা, খবর কিছুর সাথেই কোন যোগাযোগ ছিল না। ততদিনে গাভী লিখতে ই কার না ঈ কার তা ভুলে গেছি। পরা আর পড়ার ব্যবধান সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। ভুলেই গিয়েছিলাম
আমি বাংলায় লিখতাম, আবৃতি করতাম। আর হঠাৎ
যখন আবিষ্কার করলাম আবার বাংলা লিখতে পারবো ততদিনে জেনারেশন গ্যাপের মত কত সব গাপ
আবিষ্কৃত হল। আধুনিক বাংলা সাহিত্য,
সংস্কৃতি
রাজনীতি গান কবিতা, কবি লেখক, রাজনীতিবিদ সবই আমার কাছে কুয়াশা।
তারপর আমি লিখলে কি করে তা একজন পাঠকের কাছে যেয়ে পৌঁছবে? কে যেন বলেছিল,
বিজ্ঞাপন
ছাড়া কোন ব্যবসা হচ্ছে অতি সুন্দরী নারীর অন্ধকারে বসে মুচকি হাসা। আমি লিখব
কিন্তু পড়বে কে? মোদ্দা কথা ফেসবুকের
মত এমন ইনস্ট্যান্ট গ্রাটিফিকেশনের কোন রকম সুযোগ ছিল না। তাই facebook/social media কে নিয়ে বিজ্ঞজনেরা যতই গালাগালি করুক, নিম্নমানের ভাবুককরুক ফেইসবুকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।কত অজানারে
জানতে পারলাম। কত পুরন বন্ধু ফিরে পেয়েছি, কত নুতন মানুষকে বন্ধু বলে পেয়েছি।
যে
লাইন দিয়ে লেখা শুরু করেছি তার থেকে বহু দূরে চলে এসেছি। একদিন এক বিকেলে বিশ্ব
বাংলা সাহিত্য সমাবেশে আমন্ত্রণ পেয়ে গেলাম। প্রথম বারের মত হতে যাচ্ছে এই সমাবেশ।কি আনন্দ! একা যাব? আমার বন্ধু সামাকে বলতেই রাজি হয় গেল।
দুই বন্ধুতে এক সাথে চার দিন কাটাব। হচ্ছে আটলান্টা জর্জিয়া। কখনো যাওয়া হয়ে
উঠেনি। নতুন জায়গাও দেখা হবে, কত নতুন মানুষের সাথে
পরিচয় হবে। তারপর কাজের ফাঁকে ফাঁকে শেষ করলাম রেজিস্ট্রেশান, হোটেল বুকিং, প্লেন টিকেট কাটা ইত্যাদি। যাত্রার দিন আমার টোনা নামিয়ে
দিয়ে এলেন এল এ এক্স এয়ারপোর্টে।
সাথে
নিয়েছি দুজনের জন্য চারটে স্যান্ডউইচ, ট্রেডার
জোস থেকে ঝাল শুঁকানো আম। প্লেনে তো কিচ্ছুটি খেতে দেবে না। দুজন আলাদা টিকেট
কেটেছি, তাই কি করে একসাথে বসা যায় তার
শলাপরামশ্য করে নিলাম। ফ্লাইট ছিল তিনটা চল্লিশে, আমরা এয়ারপোর্টে সাড়ে বারটার মধ্যে পোঁছে গেছি। অতিউৎসাহী
কাকে বলে! লস আঞ্জেলেসের ট্রাফিক,
এয়ারপোর্টের
চেকিং কিছুই “আমাদের দাবায় রাখতে
পারবো না"। চেকিং শেষ করে কোথায় যাব? গেট নাম্বার তো এখনো দেয়নি। আমি একটু অস্থির প্রকৃতির, সব ঠিকঠাক মত হতে হবে, সামা ঠাণ্ডা মাথার। “চল
ডেল্টার লবিতে যেয়ে বসি।" গেট নাম্বার দেয়ে হল। ওখানে যেয়ে বসে দুজন দুটো
স্যান্ডউইচ খেলাম। কলা খেলাম। লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হবে। দুজন আড্ডায় মশগুল।
দু একবার বললাম এখনো বডিং শুরু হচ্ছে না
কেন? চোস্ত বাংলা, ইংরেজি, উর্দু জানা মেয়ে ঠাণ্ডা
মাথায় আঞ্চলিক ভাষায় বলল। “ তুমি কি এই পরথম
ট্রাভল করতাছ! কোন চিন্তা কইরো না,
তোমারে
রাকইখা প্লেন আটলান্টা যাইত না”। তিনটা বেজে যাচ্ছে, তিনটা বিশ তাও কোন বডিং করছে না কেন।
কিছু বলছি না সামার বকা খাওয়ার ভয়ে।
সামা গেল ফ্রেশ হতে, আমি এই ফাঁকে ফোনে
ট্যাক্স চেক করলাম, না কোন ফ্লাইট আপডেট নেই। কিন্তু ওয়াইফাই পেয়ে
ইমেইল চেক করে দেখলাম গেট নাম্বার বদলে দেয়া হয়েছে। সেকি আমরাতো ভুল গেইটে বসে আছি। বিমান
আকাশে উড়ার ১০ মিনিট বাকি। সামা ফেরেনি, আমার
সাথে আমাদের সব বাক্স পেঁটরা। আমি তখন দেখার মত বস্থু। ছুটোছুটি করছি মন্ডু-বিহীন
মুরগির মত। সামা এলো, ঠাণ্ডা মাথার মহিলা, “চল তাইলে ওই গেঁটে যাই “ নিদ্রিস্ট গেঁটে যেয়ে আর প্লেনে উঠা হল
না। বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। কি আর করা আবার অপেক্ষা, এবার এলার্ম দিয়ে বসলাম।
~
আমাদের
হোটেল বুকিং ছিল চার দিনের। সামার ফুপু ওখানে থাকেন, অনেক দিন ফুপুর সাথে দেখা নেই। ভাল মাশকালাই ডাল রাঁধেন শুনে
খাওয়ার লোভে প্রথম ও চতুর্থ দিনের হোটেল ক্যানসেল করে দিলাম। তাছাড়া তাদের সাথে
থাকার প্রস্থাব পকেট ফ্রেন্ডলিও বটে।
আমাদের
এয়ারপোর্ট থেকে নিতে এসেছেন সামার ফুপা।
রাত একটা। রাত দুটোয় ফুপুর বাসায় পৌঁছে বার পদের সাথে মাশকালাই ডাল দিয়ে ভাত
খেয়ে তবেই বিছানায় পিঠ ঠেকিয়েছি।
পরের
দিন সারা সকাল ফুপুর বাসায় জমিয়া আড্ডা। ততক্ষণে আমার মন হারিয়ে গেছে হরিণ
শাবকের খোজে আটলান্টার আকাশ ছোঁয়া ঘন অরণ্যে। মন পালাই পালাই করছে। দুপুরে ফুপা তার গাড়ীর চাবি হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমাদের আর
পায় কে। আমার আর মন নেই, কোথায় কেন এসেছি সব
ভুলে গেলাম। যেদিকে অরণ্য সেদিকেই ছুটছি। সামা অ্যালার্ম ঘড়ির মত মনে করিয়ে দেয়, হোটেলে চেক ইন করতে হবে। আয়োজকদের সাথে
হাই হ্যালো করতে হবে ইত্যাদি। আমার সেই পুরন আবদার তারপর জঙ্গলে যেতে পারব? অন্তত একটা গাছকে জড়িয়ে ধরে তার
উষ্ণতা,না না শীতলতা নিতে পারব? উষ্ণতা কেন চায় মানুষ, কারণ তা ভালবাসার প্রতীক? হয়ত। শুধু ভালবাসাই পেলেই কি হোল? শীতলতাও আমাদের অনেক দিতে পারে যা
ভালবাসার চেয়েও জরুরী। কন্টেন্ট শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ কি প্রশান্তি। পিসফুল
হ্যাপিনেস। যেখানে চাই চাই নেই,
জায়গা
আদায় করা নেই, নিজের মধ্যে নিজেকে
যা আছে তা নিয়ে তৃপ্তি। আমি একটা জীবন শুধু হরিণ শাবকের সাথে অরণ্য কাটিয়ে দিতে
পারি। হারুন ভাইয়ের ফোনে সম্বিত ফিরে পেলাম। এখানকার আয়োজকদের মধ্যে একজন।
লোকটার সাথে এখনো দেখাই হল না কিন্তু কেমন করে যেন আমাদের সব দায়িত্ব তার কাঁধে
দিয়ে বসে আছে। মন্দ লাগছে না,মাঝে মাঝে নির্ভার
হতেও মন চায়। হোটেলের লবিতে তার সাথে দেখা হলো। বললেন চেক ইন করে ৪২১ নম্বর রুমে
যেতে। আয়োজকরা ওখানে আছেন। আমরা তাই করলাম,
আমাদের
৫০২ নাম্বার রুমে আমাদের বাক্সপেট্রা রেখে চলে গেলাম ৪২১ নম্বর রুমে। ততক্ষণে
আড্ডা জমে উঠেছে। আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু
পূরবী দি আর জ্যোতিদা। আহা! "সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলঙ্কার"!
এতো দিন পূরবীদির সাথে শুধু চিঠি চালাচালি হয়েছে, এই সম্বেলনের যোগ দেয়া উপলক্ষে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি
এতো বড় একটি সমাবেশের সব কিছুর উপর তিনি কি করে সুচারু ভাবে সামলাচ্ছেন। সবাই
আড্ডা দিচ্ছেন তার মধ্যেই কে কে এসে পৌঁছল, কার কি করতে হবে সব বলা হয়ে যাচ্ছে। অনেকের সাথে পরিচয় হল।
একটি মেয়ে কাছে এসে বসল, বলল আমি তোমাকে টি এস
সি থেকে চিনি। তুমি মাহি ভাই এক সাথে আবৃতি করতে। ২৫ বছরে আগের কত কথা মনে পড়ে
গেল। মিষ্টি মেয়েটা ডালাস থেকে এসেছে। নাহিদ ফারজানা।
আমার
মন পড়ে আছে স্টোন মাউন্টেইনের অরণ্যে। সূর্যাস্তের আগেই বেরুতে হবে প্রস্থর অরণ্য
দেখতে। পরের দু দিন তো ব্যস্ত থাকবো প্রাণের সমাবেশে। সামাকে নিয়ে বেড়িয়ে
গেলাম। ছবি তুলছি গাড়ী চালাচ্ছি। একদম ঠিক নয়! সামার কাছে আবারো বকা খেলাম।
কিন্তু হুড়োহুড়ি করে যেয়ে কোন লাভ হল না। সাড়ে পাঁচটায় ভেতরে ঢোকা বন্ধ হয়ে
যায়। কি আর করা পথে পথে ঘুরে চলে এলাম হোটেলে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলছে। আলাপ
পরিচয় হচ্ছে সকলের সাথে। মানুষের সাথে ভাব বিনিময়ের সময় আমি তেমন সুন্দর করে
গুছিয়ে একাটা কিছু বলতে পারি না।এখানেও আমি শীতল সামা উষ্ণ। সামা সবখানে সবার
সাথে জমিয়ে ফেলছে আমি চেয়ে চেয়ে দেখি। মজা পাচ্ছি। রুমে এসে শাওয়ার করে দুজনে
চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। রাতে রিহেয়ারসাল দেখতে যাব সেবা লাইব্রেরীতে। গান হবে
কবিতা হবে আড্ডা হবে।
রাতে
আর খেলাম না। যার সাথে খাব সে তো খাওয়ার নামটিও নেয় না। সকালে উঠে একটা পাউডার
সেক খেয়ে ফেলে, বেস। ফুপার গাড়ী
ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন উবারই ভরসা। সেবা লাইব্রেরীতে যেয়ে দেখলাম সে এক মহা
সমাবেশ। সবাই খুব উৎফুল্ল তবে মনযোগী। দারুণ গান
গাইছে সবাই। এই প্রবাসে একটি জায়গা নিয়ে লাইব্রেরী করা চাট্টি খানি কোথা নয়। তিন হাজারেরও বেশী বই আছে এখানে। বিদেশে সাহিত্য সংস্কৃতি
চর্চা করতে যেয়ে কত সব প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় তা আমরা যারা সংগঠন করি তারা
হাড়ে হাড়ে জানি। আয়েশ করে বসে বইগুলোর সাথে সখ্যতা করতে পারলে ভাল লাগতো।
কিন্তু মাথায় তো অন্য এজেন্ডা। একটা হারমোনিয়াম বাগাতে হবে, রাতের আড্ডা জমাতে। আমরা ঠিক মানুষকেই ধরেছি। হারুন ভাই একটা জোগাড় করে তুলে দিলেন আমাদের উবারে। আমরা মহা
খুশি হয়ে ফেরত এলাম ডাউশ হারমোনিয়াম সঙ্গে নিয়ে। সন্ধ্যায় যখন আড্ডার
প্রস্তুতি চলছে তখন দেখা গেল সেখানে কেউ আর সেই হারমোনিয়াম খুলতে পারছে না।
কাঁটাচামচ, ছুড়ি,যাবতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেও
হারমোনিয়াম খোলা গেল না। কি আর করা নয় মন ঘি হবে না বলে কি রাধা নাচবে না? সামার ফোনের তানপুরা দিয়েই চলল গান, আবৃতি, গল্প। এমন সন্ধ্যা সহসা আসে না । শুধু কবিতা গান সাহিত্যে
নিশ্বাস প্রশ্বাস, আহা প্রশান্তি।
কিন্তু ঘুমাতে তো হবে নইলে উদ্ভধনী অনুষ্ঠানটাই মিস করবো। সকাল দশটায় শুরু।
প্রথমেই কাজি রাহমান ভাই কবিতা পড়বেন, তাতো
কিছুতেই মিস করা যাবে না।
প্রবাসে
অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে আজকাল। বিভিন্ন মেলা, ফোবানা, বৈশাখী মেলা, লালন উৎসব, কিছুই বাদ নেই। কিন্তু সাহিত্য সমাবেশ এত বড় আকারে এই প্রথম।
প্রতিটি অনুষ্ঠানে যেয়েই অনুষ্ঠানের মান আর যাচাই করতে চাই না, তাতে হতাশ হই । যাই শুধু লোকজনের সাথে
দেখা হবে, দেশ দেশ একটা ভাব পাব
তাতেই খুশি। তাই অনেক বেশী উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাচ্ছি না। তবে তাঁদের ওয়েবসাইট
খুবই গোছানো দেখে প্রথম হোঁচট খেয়েছি। তারপর
ইমেইল করলে সাথে সাথে তার উত্তর আসছে, ফোনে
করলে সাথে সাথে অন্য প্রান্ত থেকে মনুষ্য কণ্ঠ ভেসে আসছে। বিশ ডলার দিয়ে
রেজিস্ট্রেশন করেছি, তাকে দু দিনের
দুবেলার খাবার থাকবে। এতো কিছু গুছিয়ে
হচ্ছে কি করে! হোঁচট খাবার আর বাকি ছিল তা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেয়েই বুঝেছি। রেজিস্ট্রাশন,
পরিচয়পত্র
দেয়া, খাবার কুপন দেয়া সব নীরবে হয়ে যাচ্ছে।
কার ছটছুটি নেই, হাঁক ডাক নেই।
বাচ্চাদের দৌড়োদৌড়ি নেই । দলা দলি নেই। আমাকে মাইক প্রাইম টাইমে দিতে হবে আবদার
নেই। এ কেমন বাঙ্গালি!
সবাই
নীরবে অপেক্ষা করছে যে যার যার আসনে। প্রদিপ জ্বালিয়ে "আগুণের পরশমনি
ছোঁয়াও প্রাণে" গেয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হল । যিনি গাঁইছিলেন তাঁর কণ্ঠে
কিছু ছিল যা আমাদের সকলেকে একটি বিন্দুতে নিয়ে এল। তারপর মৌলবাদীদের হাতে নিহত
আটলান্টা প্রবাসী আলোকিত লেখক অভিজিৎ রায়ের স্মরণে নীরবতা পালনের পর তাঁকে নিয়ে
কবিতা আবৃতি করলেন কাজী রাহমান ভাই। বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের ব্যানারের
ডিজাইন অপূর্ব। তাজুল ইমামের ব্যাখ্যা পেয়ে আরো তার আঁকার মধ্যে ডুবে গেলাম। আমার
মনে হয়েছে তিনটে বৃক্ষ বিকশিত হচ্ছে। সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে, কিন্তু তাঁরও গভীরে তিনজন মানুষের বেলুন উড়ানোর আকৃতি লুকিয়ে
আছে। আর স্লোগান “বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা”। এই বিশ্বায়নের দিনে এর চেয়ে আর কি ভাল স্লোগান হতে পারে!
সারাদিন কেটে গেল স্বরচিত কবিতা পাঠ, গল্প
পাঠ আলোচনা, রবীন্দ্র কক্ষ, নজরুল কক্ষ করে। আলোচনা হল বাংলা সমাজ ও
সাহিত্য নারীর ভূমিকা নিয়ে, আলোচনা হল আনাবাসী
বাঙ্গালির সাহিত্য , প্রকাশ প্রচাররের
সুবিধা অসুবিধা, স্বদেশ, মুক্তিযুদ্ধ কিছুই বাদ গেল না। সারাদিন
কেটে গেল যাঁদের নিশ্বাসে প্রশ্বাসে কবিতা গান সাহিত্য আর মুক্তচিন্তা মানবতা। এমন
একটি দিনের জন্য কত জন্ম আমি আকুল হয়ে কেঁদেছি। শনিবারের মূল আকর্ষণ ছিল গ্রন্থও
গ্রন্থকার পর্বটি । কত লেখকদের বই আর তাঁদের কাজের সাথে পরিচয় হল। দিপেন দার
প্রশ্রয় ও প্ররোচনায় আমার সবে ধন নীলমণি “ পলিটুরিজম” সেখানে জায়গা করে
নিল। বইটির সহ লেখক মুন্নি সাহাকে দুবার ডাকা হল। তাঁর অনুপুস্থিথিতে আমাকেই বই
পরিচিতি দিতে হল।
পরের
দিন আমার কবিতা পড়তে হবে। তাও নিজের কবিতা।
একটা হালকা জামদানি পরে কপালে টিপ দিয়ে, সাথে
একটা কাপড়ের বেগ নিলাম। বাঙ্গালি ভাব নিয়ে গেলাম অনুষ্ঠানে। স্বরচিত কবিতার আসর
১২:৩০। দশটায় পৌঁছে গেলাম। প্রথমেই গল্প পাঠ। গল্প, অণুগল্প যে এভাবে বসে শোনা যায় নিবিষ্ট চিত্তে তা এখানে না
এলে জানা হতো না। কি দারুণ সব গল্প।
তারপর
একটিশ্রুতি নাটক "শিল্পোদ্যোক্তা” (Entrepreneur), খুব মজা করে উপভোগ করলাম। বিদেশের বাড়ীতে সন্তানের পড়াশুনা
নিয়ে বাবামায়ের উৎকণ্ঠা খুব সুন্দর ফুটে উঠেছে। দুপুরের খাবারের পর্ব স্কিপ করে
শুরু হলো কবিতার আসর। এখানে শুধু নিজের কবিতা নিজেকে পড়তে হবে তাই নয়, মঞ্চে চারজন বিশেষজ্ঞ বসে আছে এ বিষয়ে
আলোচনা করবেন বলে। এতো সীতার অগ্নিপরীক্ষা। তাই যত তাড়াতাড়ি আমার অংশ শেষ হবে তত
তাড়াতাড়ি অন্য অনুষ্ঠানগুল মন দিয়ে উপভোগ করতে পারবো। কি দারুণ দারুণ সব কবিতা
পড়লেন সকলে। একটা বিষয় পুরো অনুষ্ঠানেই লক্ষ্য করেছি। ওখানে কোন সাউন্ড
ইঞ্জিনিয়ার অথবা টেকনিশিয়ান ছিল না, নিদেনপক্ষে আমার মত verically challenged কার জন্য একটা মাইকস্ট্যান্ড,বা স্ট্যান্ড উঠিয়ে নামিয়ে দেবার কেউও
ছিল না। আমার ডাক পরলে আমি নিজেই পাশ থেকে স্ট্যান্ড নিয়ে বসিয়ে নিলাম। লম্বা এক
কবিতা নিয়ে এসেছি, কবিতা শেষ না করে
নামছি না। একাডেমী এওয়ার্ড এর মত যতই মিউজিক বাজাক তাও শেষ করে নামবো। সামা
তানপুরার মিউজিক বাজিয়ে দিল। কবিতার নাম “পরিত্যক্ত শরীর ও লুকোচুরি”।
কবিতা
আমার কাছে শুধু গাছ নদী প্রেম নয়,
কবিতা
আমার কাছে সমাজ বদলের হাতিয়ার। আমরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোট থেকে আন্দোলন করেছি , যেখানে
যা অন্যায় দেখেছি তার প্রতিবাদ করেছি কবিতার দিয়ে, কলম দিয়ে। সব যুদ্ধ তলোয়ার দিয়ে হয় না, হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। কিছু কিছু
প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হয় কলমে,
কবিতায়, সাহিত্যে। যে কলম হাঁতে তুলে নেয় তার
সমাজের প্রতি,দেশের প্রতি,মাবতার প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি যদি
সমাজ সংসারের কার অব্যক্ত কষ্টের কথা সবার সামনে তুলে ধরতে না পারি, তবে আমি কবি কিসের! তাছাড়া একজন
মানুষের মধ্যে সমাজের অন্ধকার যখন পীড়া দেয় তা থেকে মুক্তিও তো দরকার। বাংলাদেশে
এখন প্রতি ঘরে ঘরে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার। ধর্ষণ আর ধর্ষণের চিত্র এতোই
দৈনন্দিন যে তা সবার সয়ে গেছে। হিংস্রতা আমাদের রন্দ্রে রন্দ্রে।
আমার
কবিতাটির বিষয়বস্তু ছিল যৌন নির্যাতিত একটি শিশুর আত্তকথন আর তার বেঁচে থাকার
কৌশল Dissociation defense mechanism নিয়ে। নিজের অনুভূতিকে আয়ত্তে রেখে
অন্যের কবিতা আবৃতি করেছি বহুকাল। নিজেরটার সময় খুব কঠিন ছিল। কেউ বুঝতে পেরেছে
কিনা তা জানি না। শেষ করার পর মউ মধুবন্তি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তার চোখে জল, একজন সাহসী কবির চোখে জল। অনিন্দিতা
বন্দ্যোপাধ্যায় এসে জড়িয়ে ধরলেন।
সামার
চোখে জল। আসলেই সেটা কবিতা হয়েছে কিনা জানিনা তবে বোঝা গেল সবাই বিষয়টি নিয়ে
ভাবেন, কিন্তু কি করে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া
যাবে তার উপায় জানেন না, তারাও আমার মতই
অসহায়। আমি কেঁদে ফেলতে চাইনি তাই হুমায়ুন কবির ভাইয়ের ঘুংগুর স্টলে যেয়ে
বসলাম। তিনি আমাদের সংগঠন ক্রান্তিঃ সেন্টার ফর বাংলাদেশ ডায়লগ, ইউ এস এ, প্রতিষ্ঠাতা কমিটির একজন। আমাদের সম্মানিত উপদেষ্টা। তার সাথে
বসে বসে আমাদের আগামী অনুষ্ঠানের আলোচনা করলাম, বই উপহার পেলাম। "হ্রিদবাংলা” কিনে পয়সা দিতে যেয়ে বেগে হাত দিয়ে আর ওয়ালেট পাই না। কি
হল! কোথায় রাখলাম? হারিয়ে ফেলি নি তো! প্রথমেই মনে হল আমার আইডি ছাড়া তো প্লেনে
উঠে বাড়ী ফিরতে পারব না। আজ সকালে ব্যাগ বদলেছি। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার জোগাড়।
ব্যাগ থেকে যাবতীয় জিনিস উল্টে টেবিলে ফেলে দিলাম। কোথাও নেই। হুমায়ুন ভাই আমার
অবস্থা দেখে সান্তনা দিলেন। বললেন টাকার কথা ভেবো না। মাথা ঠাণ্ডা করে খুঁজে দেখ।
ততক্ষণে রবীন্দ্রকক্ষে শুরু হয়ে গেছে সমান্তরাল সাহিত্য আসর। সঞ্চালনায় আমাদের
অতি প্রিয় দিপেন ভট্টাচার্য। এই পর্বটা আমার মিস করার কথা ছিল না। কিন্তু ওয়ালেট
না পেলে তো সব ভেস্তে যাবে। সামা প্রথম সারিতে বসে অনুষ্ঠান দেখছে। আমি ওকে কিছু
না বলে উবার ডেকে সোজা হোটেল রুমে। আমাদের রুম আজ সকালে ছেড়ে দিয়েছি, বাক্স পেঁটরা নাহিদের রুমে। একবার দুবার
তিনবার তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না। আমার টোনাকে না জানালেই নয়। বললাম , কোন বকাঝকা করবে না। লাইফ এন্ড ডেথ সিচুয়েশন। আমার
ওয়ালেট হারিয়ে ফেলেছি। বলল, “তাহলে আর কি, ফ্লাই তো করতে পারবে না, বাসায় আসতে চাইলে হাটা শুরু কর।”
তার
পরের দু তিন ঘণ্টা কি করে কেটেছে তা অনুমান সাপেক্ষ। হোটেলে ওদের দিয়ে রুম
তল্লাসি, পুলিশে কল, TSA কল, সব ক্রেডিট কার্ডে কল
করে বাতিল করা ইত্যাদি ইত্যাদি । সামা হারুন ভাইকে নিয়ে চলে এসেছে। হঠাৎ নিজের
বাসাটাকে অনেক দূরে মনে হল, অনেক দূর। মাথার
ভেতরে বাজছে মাইকেল বুব্লের “
another summer day / is come and gone away/ in paris and rome/ but i wanna to
go home….let me go home . তারপর মনে হল ইংরেজিতে একটা কথা আছে its not the end of the world মানে কেয়ামত তো নাইমা আসে নাই।
এয়ারপোর্টে না যেতে দিলে তখন বুঝবো। এখন আজকের দিনটা উপভোগ করি। যার জন্য এতদূর
আসা। শাড়ী আর সইছিল না। কোনরকম একটা কামিজ সালোয়ার পড়ে আবার চলে গেলাম সমাবেশে।
সব কিছু যেয়ে পাইনি, রাতে সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান হল আসাধারণ।
তারপর শাওনের গান (মেহের আফরোজ শাওন) রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করল, একটার পর একটা অসাধারণ মন ছোঁয়া গান।
তারপর রাইহানা নিয়ে এলো আমাদের হোটেলে, সাথে
সামা, নাহিদ। সস্ত্রীক হারুন ভাই হোটেলর লবিতে, দিপেন দা, কাজী ভাই, পূরবী দি,জ্যোতি দা সহ সকল কবি সাহিত্যিকের
সমাবেশ। এই মিলন মেলার শেষ সন্ধ্য। কেউ ঘুমাতে রাজি নয়। আমরাও হোটেলেই আজ থাকব
সিদ্ধান্ত নিলাম। কাল সময়ের অনেক আগে এয়ারপোর্টে যেতে হবে। TSA যদি দয়া করে উড়তে দেয় তবেই বাড়ী
ফেরা যাবে।
লবিতে
ততক্ষণে আড্ডা জমে উঠেছে। কবিতা হচ্ছে, গান
হচ্ছে, আবার কবিতা, আবার গান, এভাবেই চলতে লাগলো।
সামা ওই রাতে গান গেয়ে অনেক প্রশংসা পেল। সাথে মোনা, শাওন, সেজান গান গাইল।
অনেকেই স্বরচিত কবিতা পড়ল। কার চোখে ঘুম নেই। সকাল ৫ টায় মনে হল রুমে এলাম।
নাহিদের রুমে, ও এখন নিজের রুমে পরবাসী। সকালে রুম ছাড়তে হবে তাই ও
চলে গেল রাইহানার সাথে সকালে লম্বা ঘুম যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই প্রত্যাশায়।
আমাদের উবার আসবে সকাল ছটায়। ঘুমানোর উপায় নেই। তাও সামা এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিল।
সামা, আমি , দিপেন দা, কাজী ভাই, শাওন সকলে রওয়ানা দিলাম এয়ারপোর্ট। লম্বা রাস্তা আড্ডা খুনসুটিতে কেটে গেল। সবাই ক্লান্ত, তার উপরে সবাই কি করে আমাকে সিকিউরিটি
পার করে দেয়া যায় তাই নিয়ে বিভিন্ন আইডিয়া। আমি সাথে আমার পুরনো পরিচয় পত্রের
কপি, পাসপোর্টের কপি নিয়েছি। কাল টোনা বাসা
থেকে যা যা পাঠাতে পারে তা ছবি তুলে পাঠিয়েছে। সাথে আছে আমার বিজনেস কার্ড আর ATN NEWS এর পরিচয় পত্র।
সবাই
একসাথে লাইন দাঁড়িয়েছি, মনে হচ্ছে যেন
প্যাকেজ দিলে আমি ফ্রি যেতে পারব। তা আর হল না, এক এক করে সবাইকে ছেড়ে দিয়ে আমার কাগজ পত্র নিয়ে খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। না কিচ্ছু ভ্যালিড নয়। কোন ফটোকপি চলবে না।
-তোমার ওষুধের
প্রেসক্রিপশন আছে?
-না কোন ওষুধ খাই না।
-কোন চিঠিপত্র আছে
যাতে তোমার নাম ঠিকানা লেখা আছে?
-না চিঠিপত্র বলতে তো আমেরিকায় বিল, সব পাওনাদারদের তাগাদা, তা নিয়ে কেউ ছুটিতে যায়? বিলটিল টাকা পয়সার কথা চার দিনের জন্য ভুলে থাকতে এসেছি।
দীর্ঘদেহী
কৃশাঙ্গ রমণী আমাকে বললেন “
follow me”. সামা
আর আমি রয়ে গেলাম। বাকি সবাই করুন মুখে বিদায় নিল। দীর্ঘদেহী রমণী এক জায়গায়
নিয়ে গেল যেখানে আমার মত আরও অনেকে চোর চোর ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাক, দল ভারি দেখে স্বস্তি পেলাম। দরকার হলে
আন্দোলন করা যাবে। সামা আমার কাছেই ছিল। একজনকে ডেকে বলল, ওকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে। সামা দরজার বাইরে রইল।
দীর্ঘদেহী রমণী কাকে যেন ফোনে করে আমার আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন। মাঝে মাঝে আমাকে
প্রশ্ন করছেন- ইয়উর এড্রেস, ইয়উর ক্লোজ রেলেটিভ-
চিন্তায় পড়ে গেলাম, স্বামী কি ক্লোজ
রিলেটিভ? তার জন্ম তারিখ। কোনটা বলবো? মাথা কেমন এলোমেলো! তারপর বললাম এক বাড়ীতেই আছি বিশ বছর, এক চাকরিতেও বিশ বছর। তাও খুঁজে পাচ্ছ
না? নিজেকে ফেরারি আসামির মত লাগছে।
আমি
কি ভুল দেখলাম নাকি, দীর্ঘদেহী রমণী একটু
হাসলেন মনে হোল। সাদা ফকফকে দাঁত। কি দারুণ হাসি। বললেন-
-you are all clear
to fly.
-সত্যি?
মহিলাকে
জড়িয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছেকে সংবরণ করলাম। ততক্ষণে তিনি আবার গম্ভীর। আমি জানি এটা তাঁর মুখোশ। এই দীর্ঘদেহীসুহাসিনী রমণীকে সুটকেস
খুলে সব শাড়ি দিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল।কিন্তু ভাবলাম স্যার মাইন্ড করবেন। তাই দেয়া হল না।
দীর্ঘ
ভ্রমণের শেষে যে যার বাড়ী। আহা হোম সুইট হম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সামার একটি
টেক্সট। ফেইসবুক মেসেঞ্জারের একটা মেসেজ “ Hellow, I was your Uber driver today. One of you
left your wallet. Just wanted to return it.” Time sunday 3:49.
সাথে
সাথে আমি আমার মেসেঞ্জারে দেখলাম লিটা নামের মেয়েটি আমাকে ১০:২৪ এ মেসেজ
পাঠিয়েছে। মানে আমাদের নামিয়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ফেইসবুক ঘেঁটে সামাকে মেসেজ
পাঠিয়েছে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া আসার আগে মেসেজ গুল পাইনি কেন। লিটাকে সাথে
সাথে কল দিয়ে বললাম, “ বইনগো যা ডলার আছে
ওয়ালেটে তা তুমি নিলে আমি তৃপ্তি পাব, খালি
ওয়ালেট টা হাসান ভাইকে দিয়ে দিও। মেয়েটি বার বার জানতে চাইল। Are you sure? Are you sure? তুমি আমার মানুষের
প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছ, তা ডলার দিয়ে কিনতে
পাওয়া যায় না। মনে হল এই সৎ মানুষটিকেও আমার প্রিয় একটি শাড়ী পাঠানো উচিত, কিন্তু ও তো আমার মতখাটো এবং মোটা, স্যার মাইন্ড করবেন নাতো। স্যার রাগ
করলেও লিটা আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় শাড়ী পাবেই। আটলান্টার এই চার দিনের পথ
চলায় অনেক মুখ প্রিয় হয়ে উঠেছে,
লিটার
মুখটিও তার সাথে মিলেমিশে একাকার।
শীলা মোস্তাফা: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন