ভ্রমণকাহিনী
কথায়
বলে অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকায়। আমার ক্ষেত্রে ঠিক সাগর শুকায় না কিন্তু যেখানেই
যাইনা কেন ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা এমন কি ভূমিকম্প পর্যন্ত হয়েছে...
আর আমাদের ঘোরা পন্ড হয়েছে। এহেন দুর্ভাগ্য নিয়েও আমি বছর বছর ঘুরতে যাবার প্ল্যান
করি...কখনো যেতে পারি কখনো টিকিট ক্যানসেল করে রেল কোম্পানিকে বড়লোক করি। যাক আমার
দুঃখ আমারই থাক...এবার গত পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার গল্পটা বলি।
প্রথম
ঠিক করি ভাইজ্যাগ যাবো, ভালো হোটেলের সন্ধান
পেতে পেতেই মোটামুটি সব বুক হয়ে গেছিল। তারপর পড়লাম কালিমপং নিয়ে...খোঁজা খুঁজি
চললো না সে গুড়েও বলি। এই ভাবে একটা ট্যুর গ্ৰুপে রাজস্থান নিয়ে নানান মতামত আমার
বেশ পছন্দ হয়। বাহ্ , বেশ তো , রাজস্থান !!! ঝড়, বৃষ্টি আয়লা, লায়লার সম্ভবনা নেই বললেই চলে...যদিও আমার অভ্যর্থনায় হতেও
পারে। তবু আশা আছে। আমার ছেলে ইলেভেনে পড়ে তাই অনেক দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়া একটু
চাপের তাও প্রথমে ৬ দিন, তারপর ৯ দিন , শেষ পর্যন্ত ১২ দিনে এসে দাঁড় করানো গেল
আমাদের ট্যুর প্ল্যান। আমাদের সুবিধে মত আমার কত্তা ছোট্ট কিন্তু বেশ উপভোগ্য
প্ল্যান বানায়… জয়পুর, উদয়পুর, মাউন্ট আবু,
যোধপুর
আর জয়সালমের। আমরা সেই মতো চতুর্থীর দিন বেরিয়ে পড়লাম। রাজধানীতে চড়ে রাজধানী
পৌঁছালাম। কত্তার অফিসের গেস্ট হাউসে স্নান, খাওয়া সেরে দেড়টা নাগাদ বেরোলাম জয়পুরের উদ্দেশ্যে। সফর সঙ্গী
দেবপ্রকাশজী( গাড়ি চালক)।
হরিয়ানার
শেষে এক জায়গায় রাজস্থানের পারমিট করে নিয়ে গাড়ি ছুটলো....আরাবল্লীর বুক চিরে।
সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ জয়পুর পৌঁছালাম। আলো ঝলমলে হাওয়া মহল , জল মহল দেখে মন ভালো হয়ে গেল। হোটেলের ছাদে উঠে সব ক্লান্তি
উধাও ...দূরে আরাবল্লীরর ওপর একদিকে নাহারগর অন্যদিকে গাইতোর কি ছাত্রিয়া ...আলোর
মালায় সাজানো। ওই অভিজ্ঞতা ভোলার না।
পরদিন
সক্কাল সক্কাল বেড়িয়ে প্রথমে নাহারগড়...সেই নাহারগড় যেখানে দুষ্টু লোক ভ্যানিশ হয়ে
গেছিল। পরতে পরতে নস্ট্যালজিয়া। কখনো অতীতে কখনো বর্তমানে ঘুরে বেড়ালাম। এবার জয়গড়, পাশাপাশি দুটো পাহাড়ের একটায় নাহারগড় অন্যটায় জয়গড় । জয়গড়ের
উচ্চতা কিঞ্চিৎ বেশি। অসাধারণ একটা ফোর্ট। বিশাল চত্বর নিয়ে তৈরি। এর মূল আকর্ষণ
জয়বান কামান। এটি ১৭২০ সালে সওয়াই দ্বিতীয় জয় সিংহের তৈরি। ওই সময়ে এটি পৃথিবীর
বৃহত্তম কামান ছিল। জয়গড় থেকে আমের ফোর্টের শোভা ভোলার নয়। অনেক ভালো লাগা নিয়ে
পরবর্তী গন্তব্য আমের ফোর্টের দিকে এগিয়ে চললাম । আমের বা আম্বের ফোর্ট জয়পুর তথা রাজস্থানের অন্যতম
সুন্দর ফোর্ট। দেওয়ানী আম, দেওয়ানী খাস, মন্দির, সিস মহল কি আছে আর কি নেই। হাতির পিঠে চড়ে দুর্গে ওঠার
ব্যবস্থাও আছে। খামোখা পশু পাখির ওপর নিজের বোঝা তুলে দিতে বিবেকে বাঁধে তাই আমরা
চড়িনি। এবার সিটি প্যালেস … রাজপুতনার ঐতিহ্যের
জীবন্ত দলিল যেন। কি তার স্থাপত্য,
কারুকার্য
বলে বোঝানো যায় না। এখানেই আছে পৃথিবীর বৃহত্তম রুপোর জালা । ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত
এবার হোটেলে ফেরা। একটু ফ্রেশ হয়ে এবার
একটু হেঁটে আশপাশটা ঘুরে দেখবো বলে বেরোলাম। অলিগলি গিয়ে পৌছালাম ত্রিপোলিয়া গেট।
আলোয় সুসজ্জিত এই গেটই হলো রাজা এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের সিটি প্যালেসের প্রবেশ
দ্বার । রাস্তার ধারে দোকান গুলো তো আমায় বারবার পথ আগলে দাঁড় করাচ্ছিলো। এমন রঙের
সমাহার দেখে লোভ সামলাই কি করে। কি আর করি দুটো ড্রেস কিনেই ফেললাম....বরকে বললাম
আমরা না কিনলে ওদের চলবেটা কি করে?
শুনে
বর বললো যা মন চায় কেনো কিন্তু নেবে কিসে সেটা তুমি বুঝবে। মেন উইল বি মেন 😏😏। কেনাকাটা
সেরে সেগুলো কে ঠেসে ব্যাগে ভরে খুশি মনে হোটেলের রুফ টপে বসে কাবাব খেতে খেতে
দূরের দুর্গের দিকে তাকিয়ে মন উদাস হয়ে যাচ্ছিল। ইতিহাস বড়োই আকর্ষনীয় বিষয় কিন্তু
ইতিহাস হতে কারই বা ভালো লাগে......
পরদিন
ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। তৈরি
হয়ে বেরোতে বেরোতে ১০ টা…. গাড়ি ছুটলো উদয়পুরের
উদ্দেশ্যে।পথে একটা ধাবায় লাঞ্চ সারলাম প্লেন ডাল, ভাত, পাঁপড়, পেঁয়াজ, লঙ্কা আর ছাঁচ অর্ডার করলাম....ঝোলা থেকে বেরোলো বেড়াল, থুড়ি! আলু ভাজা। রাজস্থানের খাবার নিয়ে
একটু টেনশনে ছিলাম তাই বাড়ি থেকে হট চিপসের ঝুরঝুরে আলু ভাজা (বাদাম দিয়ে) আর ঘি
নিয়ে এসেছিলাম। ধাবার খাবারে খুব একটা ভরসা করতে পারছিলাম না কারণ এখনো আমাদের
অনেক কিছু দেখতে হবে।
আবার
যাত্রা শুরু....আমি একটু শান্ত প্রকৃতির তাই অনেক্ষন একভাবে গাড়িতে বসে থাকা আমার
পক্ষে খুবই কষ্টকর, যতই বাইরের প্রাকৃতিক
দৃশ্য মনোরম হোক না কেন....কি করি কি করি....তখনই মনে হলো ট্যুরের এই অভিজ্ঞতাটা
লিপিবদ্ধ মানে মোবাইল বদ্ধ করা শুরু করি।
উদয়পুর
পৌঁছলাম সন্ধ্যে প্রায় সাড়ে সাতটায়। এতো ঘিঞ্জি শহর যা আমার কল্পনার অতীত। আমাদের
হোটেলটা ছিল ঠিক লেক পিচোলার ধারে। আমি তো খুব খুশি ছিলাম কিন্তু একি !!! বলে
হোটেল অব্দি নাকি গাড়ি যাবে না....লেক এর গেটে আমরা নেমে গেলাম হোটেলের স্টাফ এসে
আমাদের লাগেজ নিয়ে গেল আর ওর পিছন পিছন আমরা চললাম অশেষ বিরক্তি নিয়ে...গাড়ি চলে
গেল চাঁদ পোল সরকারী পার্কিংয়ে (হোটেল থেকে দেড়- দুশো মিটার দূর) ।
হোটেল
এর রুম গুলো বেশ সুন্দর। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম...রাজকীয় একটা ব্যাপার
আছে...জানলা দিয়ে লেক পিচোলা দেখা যাচ্ছে। সিটি প্যালেস, গাংগৌর ঘাট,
জগ
মন্দিরের শোভা অবর্ণনীয়। পিচোলার কালো গভীর জলে এদের আলো যেন সোনা ঢেলে দিয়েছে। সব
খারাপ লাগা দূর।
পরদিন
ভোর বেলা উঠলাম লেকের ওপর কেমন সূর্য ওঠে দেখার জন্য। ছাদে উঠেই পুব দিকে তাকিয়ে
সূয্যি মামাকে বললাম....আজ আমি ফার্স্ট।
অনেক
ছবি তুললাম। কিছু ছবি মোবাইলে অনেকটা মনের ক্যামেরায়। তাড়া খেয়ে ছুটলাম রেডি হতে।
আমাদের প্রথম গন্তব্য সজ্জনগর মনসুন প্যালেস। রাতের অলিগলি নয় এবার সুন্দর রাস্তা, পথে পড়লো ফতে সাগর লেক...চোখ জুড়ানো
সৌন্দর্য্য। দেরি হয়ে যাচ্ছে , আবার ছুট। পাহারটাকে
সাপের মত পেঁচিয়ে রেখেছে মসৃন পথ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আমি বোঝাতে পারবো
না...আপনাদের আসতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সজ্জনগরের উচ্চতা ৯৪৫মিটার...। প্যালেসের
বাগানে প্রচুর সেল্ফি তুললাম আর ঝাড় খেলাম... জয়পুরকে বলে পিঙ্ক সিটি কিন্তু আমার চোখে তেমন একটা লাগেনি তাই
আমি একটু দ্বন্দ্বে ছিলাম কি রে বাবা কালার ব্লাইন্ড হয়ে গেলাম নাকি...কিন্তু নাহ
চোখ আমার দিব্যি আছে নাহলে আমি কি করে এমন সবুজ পাহাড়ে ঘেরা হোয়াইট সিটি দেখতে
পাচ্ছি। একটু ভরসা পেলাম। এবার নামার পালা। এবার গন্তব্য শিল্পগ্রাম। পুরো গ্রাম
ঘুরে ফোক ডান্স দেখে, গান শুনে কিছু
গয়নাগাটি, উটের চামড়ার জুতো
কিনে ওখানেই লাঞ্চ সারলাম...১৩০ টাকায় মাককে কা রোটি, গাটটে কি সবজি,
কাড়ি, মিক্সড ডাল খেলাম, বেশ লাগলো। এবার চললাম রয়াল কার
মিউজিয়াম। এটা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। একটা ছাদের নিচে এতগুলো রাজকীয় গাড়ি একসাথে
জীবনে দেখিনি। ঘোড়া গাড়িতে বসে নিজেকে বেশ রানী রানী লাগছিলো 😁😁😁...উদয়পুর এলে অবশ্যই এটা দেখবেন। টিকিটটা
কেটে ছেলেকে বলছিলাম ৩৫০ টাকা দিয়ে কটা পুরোনো গাড়ি দেখে আমি কি করবো তুই আর তোর
বাবা যা...আমি ততক্ষন ফেসবুক করি। এমন ধমক খেলাম সে আর বলার না। কিন্তু ভেতরে ঢুকে
এত ভালো লাগলো যে কি বলবো...ভাগ্যিস বকা দিয়েছিল।
এবার
সিটি প্যালেস। কিন্তু হায়...অষ্টমীর পুজো চলছে বলে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। মন খারাপ
দূর হয়ে গেল ফেয়ার পথে গংগৌর ঘাটে স্টীমারে চড়ে। তখন সূর্য অস্তাচলের পথে। লেকের
জলে সোনালী আভা। ঠান্ডা হাওয়ায় মেজাজ ফুরফুরে। লেকের মাঝে তাজ হোটেলটা বড্ডো ভালো
লাগলো। পরদিন ভোরে উঠে চটপট তৈরি হয়ে ৯ টায় একদম সিটি প্যালেসের গেটে। অসাধারণ
বললেও কম বলা হয়। একদিক সংরক্ষিত রাজপরিবারের জন্য। দুর্দান্ত সংগ্রশালা।
বাদ্যযন্ত্র, অস্ত্রশস্ত্র, রুপোর নানাবিধ সামগ্রী, রুপোর ঘোড়া গাড়ি, পালকি...বিস্ময়ের শেষ নেই আমার।
দুঘন্টাতেও মনে হলো অনেক কিছুই দেখা হলো না।
গাড়ি
ছুটে চলেছে মাউন্ট আবুর উদ্দেশ্যে । বহু
বছর আগে একজনের প্রেমে পড়েছিলাম....যে কিনা আবার অন্য একজনের প্রেমে পড়েছিল মাউন্ট
আবু গিয়ে। আমির খান.....ক্যায়ামত সে ক্যায়ামত তক...আহা...সে কি ভোলা যায়....
রাজস্থান
যাচ্ছেন শুনলে যে কেউ জিজ্ঞেস করবে মাউন্ট আবু আর সোনার কেল্লা যাচ্ছিস তো ? ...হ্যাঁ বাবা আমি প্রায় পৌঁছেই গেছি।
অসামান্য সুন্দর পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে সর্পিল পথ ধরে বিকেল ৪ টে নাগাদ পৌঁছালাম। হোটেলে ঢুকেই ব্যাগ
খুলে জয়পুর থেকে কেনা ড্রেসটা বের করলাম। মাউন্ট আবু এলাম, এবার সেই সিনেমায় দেখা সানসেট পয়েন্ট এ যাবো তাই খুবই
এক্সাইটেড । কত্তা রিসেপশনে ফর্মালিটি শেষ করে ঘরে ঢুকেই চোখ গোল...আমির খান থোরি
তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ৩০ বছর ধরে?
সাজগোজ
করতে গিয়ে আমাকে আর সূর্য দুটোই ডোবাবে....যা পরে আছো তাই পরেই চলো। দিলো..সব
রোমান্সের চোদ্দটা বাজিয়ে......মনে মনে বললাম "বনমালী তুমি পরো জনমে হইও
রাধা"।
প্রথমে
গেলাম দিলওয়ারা টেম্পেল। এই মন্দিরে ছবি তোলা নিষেধ...এই জৈন মন্দিরের শিল্প
স্থাপত্য অপূর্ব... মন্দিরের দেওয়াল, ছাদের
কারু কাজ দেখে একটাই প্রশ্ন মনে আসে....কি
করে সম্ভব এত সুক্ষ সুনিপুন শৈলী !!.... ভোলার নয়। যদিও আমি প্রচুর মন্দির ঘুরিনি
তাও মন্দির হিসেবে আমার আজ পর্যন্ত দেখা শ্রেষ্ঠ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত মন্দির
কিন্তু বেশ কড়াকড়ি আছে...বারমুডা,হাফ প্যান্ট, লুঙ্গি, মেয়েদের ছোটো পোষাক নিষিদ্ধ। আর নিষিদ্ধ মেয়েদের ঋতুকালীন সময়ে
মন্দিরে প্রবেশ। যস্মিন দেশে যদাচার...কিছু করার নেই।
মন্দিরে
বাইরে কাঠ পালিশ করে তাতে সুন্দর করে নাম লিখে দিচ্ছিল...১৫০ টাকা দিয়ে আমিও একটা
ফলক তৈরি করালাম । রঙ তো কাঁচা,
কি
করি...কত্তা কে বললাম ধরে বসে থাকো তোমার এখানে কাজটাই বা কি আছে 😋😋😋। নাক্কি
লেক ছুঁয়ে অবশেষে পৌঁছালাম সানসেট পয়েন্টে। বেশ ভিড় ফটো তোলার জন্য হুড়োহুড়ি।
দুধারে লাইম সোডা , ঝাল মুড়ি, লাউয়ের সাইজের শশা বিক্রি হচ্ছিল সবে
কিনতে যাবো হঠাৎ চোখ পড়ল সার দিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বসে আছেন । ঝাল মুড়ির
ঠ্যালায় আমার ঘাড়ে এসে পড়লেই তো চিত্তির। লোভ সামলে সূর্যদেবে মনো নিবেশ করলাম।
সোনার একটা বলকে পাহাড় লুফে নেবার জন্য হাত বাড়িয়ে আছে। বলটা সহজে ধরা দেবে
না...রঙ বদলে বদলে ধীরে ধীরে নামতে লাগলো। সোনার বলটা প্রথমে কমলা হলো তারপর
আকাশের গায়ে একটা গোলাপি বিন্দি হয়ে টুপ করে লুকিয়ে পড়ল। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে
হোটেলে ফিরে এলাম। গুগল বলছিল 17 ডিগ্রি কিন্তু আমার
মনে হচ্ছিলো 7....চাদর মুড়ি দিয়ে বারান্দায়
বসে কফি , পেঁয়াজি আর চিকেন সিক
কাবাব খেলাম....আহা ক্লান্তি দূর। "ম্যাডামজি আপ ছাদ পে যাও... বন ফায়ার লাগা
হ্যায়".... উৎসাহে লাফাতে লাফাতে চললাম...এই ঠান্ডায় আগুনের উত্তাপে কি আরাম।
ডিনার সেরে সোজা কম্বলের নীচে। ঘুম থেকে উঠে রোদ ঝলমলে পাহাড় দেখতে দেখতে চায়ে
চুমুক...দিল খুশ। স্নান সেরে পুরি সবজি কফি খেয়ে আবার গাড়ি ছুটল। লক্ষ্য কুম্ভলগড় ফোর্ট। মহারানা প্রতাপের
জন্মস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই দুর্গটির প্রাচীর
পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর (৩৬ কিমি) । দেখার জন্য অধীর অপেক্ষা ছিল। তবে
একটা কথা দুর্গটা দূর থেকে বেশি ভালো লাগে। অনেক ধাপ পেরিয়ে এবং গরমে যখন মোটামুটি
আমি শেষ তখন একদম ওপর থেকে পুরো গড়ের প্রাচীর দেখে অসম্ভব ভালো লাগলো। কিন্তু আবার
এতখানি নামতে হবে চিন্তা করে পা ব্যথা করতে লাগলো। রাজারা তাদের রানীদের এক মহল
থেকে অন্য মহল যাবার জন্য পালকি ব্যবস্থা করেছিলেন নাই বা হলাম রানী তবু আমাদের
জন্য কিছু তো একটা বন্দোবস্ত করতে পারতো 🙄🙄🙄 ৪ টে নাগাদ ফোর্ট থেকে বেরিয়ে ডাবের জল
খেয়ে চললাম যোধপুরের উদ্দেশ্যে।
আমাদের
দেবপ্রকাশ জি খুব সাবধানে গাড়ি চালান..৮০ র ওপর স্পিড কদাচিৎ। তাড়া দিলে বলেন
"আচানক গাই আ গায়ি তো কান্ড হো যায়েগা"...অগত্যা হলে হলে চলো। ৮টা নাগাদ যোধপুরে হোটেলে ঢুকলাম । গরম জলে
স্নান সেরে খেয়ে নিলাম। জৈন হোটেল তাই নিরামিষ। ভেজ চাউমিন আর পনির চিলি বেশ
বানিয়েছিল। এতোটা জার্নির ধকলে শরীর ক্লান্ত। ডুবে গেলাম ঘুমের দেশে।
আমরা
খুব কম দিনের জন্য রাজস্থান এসেছি কিন্তু প্ল্যান অনেক কিছু দেখার তাই নষ্ট করার
মতো সময় একেবারেই নেই। পরদিন স্নান ব্রেক ফাস্ট সেরে ৯ টার মধ্যে মেহেরণ গড়
ফোর্টের দোর গোড়ায় হাজির। প্রকান্ড এই ফোর্ট দেখতে বেশ সময় লাগে। টিকিট কাটার সময়ই
লিফটের টিকিট করিয়ে নিলাম তারপর একে বারে ওপরে উঠে গেলাম সেখান থেকে দেখতে দেখতে
নীচে নামা। পুরোটা দেখার পর মুখ থেকে একটাই শব্দ উচ্চারিত হলো..অনবদ্য। আমার দেখা
রাজস্থানের সেরা ফোর্ট...(একান্ত
ব্যক্তিগত মত)। ফোর্টের মধ্যে অবস্থিত চামুন্ডা মন্দিরটি অত্যন্ত সুন্দর। ফোর্টের
মধ্যে জুতো, শাড়ি, সুট পিস, ঘর সাজাবার জিনিসের দুর্দান্ত সব দোকান আছে। সকালে হোটেলে
ব্যাগ গোছাবার সময় দেখেছি একটু জায়গা এখনো আছে তাই দাঁড়িয়েই পড়লাম ...করুন মুখ করে
বললাম কি সুন্দর সব জিনিস কিন্তু নেওয়ার উপায় নেই...ব্যাগে তো আর জায়গাই নেই।
ওষুধে কাজ হলো...তিনি বললেন কিনে নাও আর তো আসা হবে না..নাহয় আর একটা ব্যাগ কিনে
নেব এখান থেকে। মন চাইলো তিন পাক নেচে নিই... কিন্তু মুখে বললাম... না থাক।
"থাকবে কেন? ভাইয়া ও শাড়ি কা ক্যা
দাম হ্যায় ?"
জয়
মা চামুন্ডা....এতো তাড়াতাড়ি একশান !!!
ফুরফুরে
মনে ফোর্ট থেকে বেরিয়ে বর কে বললাম লাইম সোডা খাবে ? আমি খাওয়াচ্ছি 😋😋😋😋...
সাড়ে
এগারোটা নাগাদ গাড়ি ছুটলো...গন্তব্য জয়সালমের.....
মাঝে
একটা হোটেলে লাঞ্চ সারলাম। সাড়ে ৪ টের মধ্যে ডেজার্ট এ পৌঁছাতেই হবে। জয়সালমের
থেকে স্যাম ৪০ কিমি... সাড়ে ৩টে তেও আমরা জয়সামের থেকে ১০০ কিমি দূরে। ক্যাম্পের
মালিক কসম ভাইয়ের ফোন আসতে লাগলো..."কাহা হো স্যার জি...জলদি আও নেহি তো
সানসেট ছুট জায়েগি।".....যাকে বলল সে তো সিটে গা এলিয়ে বললো 'ও আর হবে না। ঘুমিয়ে নাও এখন।"
বলে
টা কি ????...যদিও উটের পিঠে ওঠার
কোনো শখই আমার নেই....আমি জানি আমার
অবস্থা লালমোহন বাবুর মতোই হবে কিন্তু আমার ছেলে তো উত্তেজনায় টগবগ করে
ফুটছে...বেচারা বড় কষ্ট পাবে। তখন মনে হচ্ছিল শাড়ি চুড়িদার না কিনলেও তো আধ ঘন্টা
বাঁচত... ইসস কি হবে এখন..???
আমার
মন চাইছিল শোলের হেমা মালিনীর মতো চাবুক ঘুরিয়ে দেবপ্রকাশ জি কে বলি "চল
ধান্য"...নাঃ সেটা আর বলি নি তাহলে বর আমায় গাড়ি থেকে নামিয়েই দেবে☹️☹️☹️... অনেক কাকুতি মিনতি
করে ৮০ থেকে ১০০ হলো স্পিড। আকাশের দিকে চেয়ে সূর্যকে বলছিলাম আরো কিছুক্ষন ওপরে
থাকো প্লিজ 🙏🙏🙏
অবশেষে
ডেজার্ট এ পৌঁছালাম সওয়া ৫ টায়। একটা মিষ্টি ছেলে আমাদের জন্য দাঁড়িয়েই ছিল নাম
মুরাদ...ওই আমাদের উটের কাছে নিয়ে গেল। আমি বললাম তোমরা যাও আমি এখন থেকে ভিডিও
শুট করি। মুরাদ বললো "আন্টি কুছ নেহি হোগা হাম হ্যায় না।"....মুরাদের
মুরোদ কতটা জানা নেই তাই বরকে বললাম আমি তোমার সাথে যাবো...হায় রে...কার ভরসায়
উঠলাম, সে দেখি উট ওঠার সময় আমায় ধরে আছে।
প্রথমে
ভীষণ ভয় করছিল উঁচু বালির ঢিপি থেকে খাদে নেমে যাচ্ছে... তখন মনে হচ্ছিল এইবার আমি
পড়লাম। বরকে বললাম আর একবার আমার ওপর ভর দিলে উটের আগে আমি তোমায় ফেলে দেব। ও বললো
"আরে আমি তো তোমায় ধরে রেখেছি যাতে পড়ে না যাও"....খালি চালাকি। মুরাদ
কি বুঝলো কে জানে বললো "ডরো নেহি...কুছ নেহি হোগা।"
আসতে আসতে আমারও ভয় কাটছিল ফেলুদার কথা মনে করে
উটের তালে তালে মিলিয়ে শরীরটাকে এগিয়ে পিছিয়ে নিচ্ছিলাম....যতক্ষণে আমি বিষয় টা
এনজয় করতে লাগলাম ততক্ষনে জার্নি শেষ.... আপনারা কিন্তু ভয় পাবেননা...সাচ মে কুছ
নেহি হোতা হ্যায়।
রাইড
সেরে বালির ওপর বসে শুয়ে গড়িয়ে নানান ভঙ্গিমায় ফটো তুলাম। এবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
যা দেখতে এত দূর আসা...সূর্য ডুবতে চলেছে...চোখ জুরিয়ে গেল।
এবার
আমরা ক্যাম্প এ গেলাম....ঘাগড়া চোলি পরে খুব সুন্দর করে সেজে একটা মেয়ে আমাদের
তিলক পরিয়ে স্বাগত জানালো। ক্যাম্প এ ঢুকেই সাংঘাতিক আপ্লুত....মাঝখানে খোলা চত্বর
তার দুধারে সার দিয়ে টেন্ট। কাপড়ের এবং কংক্রিটের দু রকমই আছে আমরা কাপড়েরটা
নিয়েছিলাম। নাহলে টেন্ট এর মজা টাই তো আসবে না। সুসজ্জিত ঘর, বাথ রুম, সুইমিং পুল সব কিছু আছে। আমার বিস্ময়ের শেষ নেই...মরুভূমিতে এত
কিছু !!! ৭:১৫ নাগাদ কালচারাল প্রোগ্রাম শুরু হলো। ফোক ডান্স, গান।
সাদা পাথরে মোরা গ্যালারি তে বসে চা আর পাকোড়া খেতে খেতে নাচ দেখতে দেখতে
নিজেদেরও রাজা রানী মনে হচ্ছিল। কিছুক্ষন পর আমরা অনেকেই গেলাম ওদের সাথে নাচতে।
দারুন আনন্দ করলাম। সাড়ে ৯ টা নাগাদ ডিনার করতে গেলাম...ট্র্যাডিশনাল রাজস্থানী
খাবার ডাল-বাটি- চুরমা...খুব একটা ভালো লাগেনি তাও খেলাম। ৫০০০ টাকায় ৩ জনের
ক্যামেল রাইড, জিপ সাফারি, টেন্ট এ ডিনার, পরদিনের ব্রেক ফাস্ট কালচারাল প্রোগ্রাম সব (এর থেকে কম ও বেশি
দামের প্যাকেজ ও আছে)। নেট এ জিপ সাফারির ছবি দেখে আমি ওটা ক্যানসেল করে দিয়ে
ছিলাম। কিন্তু ক্যাম্প মালিক কসম ভাই এসে বলল "জিপ সাফারি চালিয়ে দাদা...লাইফ
টাইম এক্সপেরিয়েন্স। হাম খুদ ড্রাইভ কারকে লেকে জায়েঙ্গে, ম্যাডাম বহুত ডরতি হ্যায় মুরাদ বোলা।" ছোকরার আস্পর্ধা কি, জনে জনে আমার ভয় পাওয়ার গল্প বলে
বেড়াচ্ছে। চোখ পাকিয়ে তাকাতেই মুরাদ হাওয়া।
ব্যস আর তখন আমার কথা কে শোনে, বাবা
ছেলে এক পায়ে খাড়া। ঠিক হলো ভোর ৬ টায় কসম ভাই আসবে আমাদের নিতে।
তাঁবুর
বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো। এখনো সিজন সেভাবে শুরু
হয়নি তাই ৪০টা টেন্টের মধ্যে ১০ টা ভর্তি আর ৩০টাই ফাঁকা। ক্যাম্পের বাউন্ডারির
বাইরে ধূ ধূ মরুভূমি। নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর কিন্তু আমি যেহেতু ভীষণ সাহসী তাই একটু
কেমন কেমন লাগছিলো। তাছাড়া বেশ ঠান্ডা তাই
উঠে পড়লাম...ওদের বললাম কাল তো আবার ভোর বেলা ওঠার প্ল্যান বানিয়েছ শুয়ে পড়ো ১২ টা
বাজতে যায়। শুয়েও খালি মনে হচ্ছিলো সাপ বা সোনার কেল্লা সিনেমায় ফেলুদার ঘরে যেমন
বিছে ঢুকে পড়েছিলো তেমন হবে না তো ?
এই
সব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি। ৫:৩০ টায় এলার্ম দেওয়া ছিল একবার বাজতেই উঠে
পড়লাম । সাপ বা বিছে কিছুই আসে নি। অন্যদিন রিও মানে আমার ছেলে সহজে উঠতে চায় না
আজ একবার ডাকতেই উঠে পড়ল...জিপে চড়ে মরুভূমি যাবে....বালির ঝড় উঠবে...বয়সটা ষোলো
তাই উত্তেজনা তুঙ্গে। যাই হোক চটপট তৈরী হয়ে নিলাম ৬:১৫ বাজে কিন্তু বাইরে এখনো
আলো ফোটে নি ভালো করে। বালির ওপর কিসের লম্বা দাগ..."ইহা সাপ হ্যায় ?" .....উত্তরে ক্যাম্পের স্টাফ বললো "নেহি
ম্যাডাম ইয়ে কিরা হ্যায়।" কোন কিরা এতো লম্বা হয় কে জানে ? সাড়ে ৬টায় জিপে উঠলাম...কসম ভাই আর
মুরাদ সামনে আমরা পেছনে। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া গাড়ি ছাড়তেই হামলে পড়লো আমাদের ওপর।
ঝড়ের গতিতে গাড়ি ছুটছে। রাস্তা ছেড়ে গাড়ি এবার বালির পথ ধরলো। গাড়ি থামিয়ে কসম ভাই
এসে বললো "আচ্ছে সে পাকারকে রাখনা ব্যাস, আউর কুছ ডর নেহি।"....এমন সতর্কবাণী শুনলে কি হয়, আশা করি বুঝতে পারছেন? এবার শুরু হলো সেই
প্রাণান্তকর অভিজ্ঞতা....একবার গাড়ি বালির পাহাড়ে উঠে যাচ্ছে আবার পরক্ষনেই খাড়া
খাদে ঝাঁপ। হাতে জোর রাখতে পারছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল এই আমার শেষ যাত্রা। একদম
খাদের ধারে গিয়েই আবার সাঁই করে বাক নিচ্ছে। কোথায় লাগে সালমান , অক্ষয় কুমার...ইনি একই ৩০০। অবশেষে থরে
থরোহরি অভিযান শেষ হলো। "ম্যাডাম জী আপ ইহা রুককে ভিডিও লো, হাম স্যার আউর বেটা কো থোড়া আউর ঘুমাকে
লাতে হ্যায়।".....আমায় বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তেনারা চললেন স্টান্ট করতে। অগত্যা
আমি মোবাইল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। সব কায়দাবাজি শেষ করে ওনারা ফিরলেন যেন এভারেস্ট, থুড়ি থর জয় করেছেন । যা পারে করুক আমার
কথা তো কেউ শুনতেই চায়না। মরুভূমিতে সূর্যদয় যে কতটা সুন্দর তা ভাষায় প্রকাশ করার মত
শব্দজ্ঞান আমার নেই। সকালের প্রথম চা টা খেতে খেতে সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য উপভোগ
করলাম।
টেন্টে
ফিরে বাটার টোস্ট, পোহা আর চা খেয়ে গাড়ি
আবার ছুটলো। এবার গন্তব্য জয়সালমের। পথে কুলধারা গ্রামটা একটু দেখে নেব। স্যাম
থেকে ৩৬কিমি দূরে অবস্থিত কুলধারা গ্রাম। এই গ্রামের কথা অনেক শুনেছি, এটা নাকি একটা ভৌতিক গ্রাম। ভূত দেখার
কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। কিন্তু যে গ্রামে এক নারীর সম্মান বাঁচাতে প্রায় ১৫০০
মানুষ রাতারাতি গায়েব হয়ে যায় সেই গ্রামটা একবার অন্তত দেখা চাই। সকাল ১০টা নাগাদ
পৌঁছালাম আমরা কুলধারায়। একটা ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে আছি মনে হয়। পথের দুধারে সব
বাড়িই ভেঙে পড়েছে শুধু মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মন্দির আর গ্রাম প্রধানের বাড়িটি।
যতটুকু অবশিষ্ঠ আছে তার কারুকাজও দেখার
মতো। একটা ঘর থেকে কেমন বিকট গন্ধ আসছিল । উঁকি মেরে দেখি ছাদের থেকে টুকরো টুকরো
কালো কাপড় ঝুলছে...ভালো করে দেখতে বুঝলাম বাদুড়। আর নয়, এবার পা চালাই।
গাড়ি
ছুটলো জয়সালমের। কিলোমিটারের সাথে সাথে মন খারাপ টাও কমতে লাগলো। কারণ আমরা এখন
সোনার কেল্লা দেখবো। বাঙালি অথচ সোনার কেল্লা দেখে নস্ট্যালজিক হবে না তাই কখনো
হয়। এখানেই ছোট্ট মুকুল তার বাবা মা বন্ধুদের খুঁজতে এসেছিল...আর আমরা খুঁজতে আসি
মুকুলকে, ফেলুদাকে, তোপসেকে, লালমোহন বাবুকে, ডাক্তার হাজরাকে।
একটা
সত্যি কথা বলি, সত্যজিৎ রায় অস্কার
পাওয়ায় যত না গর্ব হয়েছিল তারচেয়ে অনেক বেশি গর্ব হয় যখন রাজস্থানের কোনো সাধারণ
গাইড বা নৌকা চালক বলেন "জয়সালমের মে পেহলে বহুত কম লোগ আতে থে, ফির যাব সত্যজিৎ রায় নে 'সোনার কেল্লা' ফিল্ম বানায়া তব সে য়ে
প্লেস ফেমাস হো গয়া।"...মহারাজা, তোমারে
সেলাম।
সোনার
কেল্লা রাজস্থানের আর পাঁচটা কেল্লার মতোই...তফাৎ শুধু একটাই... এটা সোনার। ইয়েলো
স্যান্ড স্টোনে তৈরি এই কেল্লা সবার থেকে আলাদা। এটাই রাজস্থানের একমাত্র কেল্লা
যেখানে সাধারণ মানুষের বসতি আছে । লোকজন, বাজার
দোকান সব মিলে একে বারে জমজমাট ব্যাপার। কিন্তু গরম আর ভিড়ের জন্য অতিষ্ঠ লাগছিলো।
গাইডরা কেল্লার ইতিহাসের চেয়ে বেশি পছন্দ করে এই হলদে পাথর আর ফসিল স্টোনের মহিমা
ব্যাখ্যা করতে। রাতে ফসিল পাথরের গেলাসে
জল রেখে সেই জল খালি পেটে খেলে প্রেসার, সুগার, বদ হজম আরো অনেক কিছু কমে কমে যাবে।
সোনার পাথর বাটিতে দই বসালে "সলিড" দই বসবে। এবং সেটা কিনতে হবে ওর চেনা
দোকান থেকে...নয়তো "ঠগে যাওগে"
এমন
নাছোড় যে নিতেই হলো।...আর ঘোরার ক্ষমতা আমার নেই...এবার হোটেলে চেক ইন করে স্নান
খাওয়া সেরে একটু ঘুম। ৫টা নাগাদ উঠে তৈরি হয়ে গাদিসর লেক গেলাম। সন্ধ্যে হতে চলেছে
আজ আর কিছু করার নেই তাই লেকে বোটিং করে ফিরতি পথ ধরা।
পরের
দিনও চটপট তৈরি হয়ে সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম পাটওয়া কি হাভেলি তে। সোনার
কেল্লা আমাদের সবার নস্ট্যালজিয়া কিন্তু যদি বিস্ময় বলেন তবে আমি পুরো রাজস্থানে
একেই প্রথম স্থান দেবো। এক সোনায় মোড়া হাভেলি। হলুদ পাথরের কি উজ্বল্য সোনাকেও হার
মানায়। হাভেলিতে কি ছিল আর কি নেই বলে শেষ
করা যাবে না...কেরসিনে চলা সিলিং ফ্যান, থেকে
ফ্রিজ অব্দি সব। অর্থ,আভিজাত্য, শৌখিনতা, রুচি সব কিছু মিলে যা তৈরি হয়েছিল তা আজও বিস্ময়কর। সব চেয়ে বড়
কথা এটা কোনো মহারাজার প্রাসাদ নয়...একজন ব্যবসায়ীর বাড়ি। সিঁড়িতে বসে একটা ফটো
তুলে নিজের প্রোফাইল পিকচার বানিয়ে নিলাম....
জয়সালমের
থেকে জয়পুর ৫৬০কিমি... এতোটা একটানা গাড়িতে ট্র্যাভেল করা আমাদের পক্ষে এককথায়
অসম্ভব তাই যোধপুর হয়ে মানে একটা রাত যোধপুরে কাটিয়ে পরদিন আবার চলা শুরু হবে এটাই
প্ল্যান।
যাওয়ার
সময় আমরা মাউন্ট আবু থেকে যোধপুর এসেছিলাম, রাত টুকু হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকালে সকাল মেহেরানগড় ফোর্ট দেখে
জয়সালমের চলে এসেছিলাম তাই যোধপুর পুরোটা দেখাও হয়নি...যে ভাবেই হোক সেটা আমাদের
শেষ করতেই হবে। জয়সালমের থেকে যোধপুর ২৭৫কিমি পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেল। বেশ খিদে পাচ্ছে, মাঝে দুপুর একটা নাগাদ একটা ধাবায় ডাল ফ্রাই, আলু গোবি, বাটার ওয়ালী তাওয়া রোটি আর স্যালাড খেয়েছিলাম কিন্তু সেগুলো
হজম হয়ে গেছে অনেক্ষন...। আগের বার যোধপুরে আমরা অন্য হোটেলে ছিলাম এবার আর একটায়।
বর কে জিজ্ঞেস করলাম হোটেলের নাম কি? বললো
"হোটেল উমেদ"....শুনে আমার মুখটা ১০টাকা সাইজের রসগোল্লার মতো হাঁ হয়ে
গেল...দাসবাবু এবার কথায় কথায় চমক দিচ্ছেন তবে এতো টাও আশা করিনি। উমেদ ভবনে মানে
যোধপুরের রাজার বাড়িতে আমরা থাকবো !!! যার এক রাতের ভাড়া ৪৩০০০ হাজার থেকে শুরু হয়ে ৭ লাখ( গাইডের কথা
অনুযায়ী) অব্দি... ভাবা যায় !!!! মনে মনে ভাবছিলাম কোন ড্রেস টা পরে কি পোজ দিয়ে
ফটো তুলব। উফফফফ.... হঠাৎ ঘোর কাটলো এমন গলির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি কেন ? বললাম হ্যা গো...এতো বড় একটা প্যালেস
এমন গলির মধ্যে ? তিনি আমার থেকেও বেশি
অবাক হয়ে বললেন "কোন প্যালেস?"
কেন, উমেদ ভবন।
একটা
বিষম খেয়ে তারপর কাশি থামলে বললো
"রিও রাঁচীই তোর মায়ের উপযুক্ত জায়গা...ওরে বাবা, উমেদ ভবন নয়...হোটেল উমেদে বুকিং আছে
আমাদের। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বিয়েতে তোমায় নেমন্তন্ন করলে তখন ওখানে
থেকো".....প্রথমে হতাশ হলেও নিজের বোকামিতে নিজেই হেসে ফেললাম।
হোটেলে
ঢুকেই মন ভালো হয়ে গেল...নানান রকম অ্যান্টিক
আর বাতিল জিনিষ দিয়ে সাজানো হোটেলটা। সবচেয়ে অবাক হলাম হ্যান্ড পাম্প এর
অংশ দিয়ে টেবিল বানিয়েছে দেখে। আরাম করে এক কাপ কফি খেয়ে আমরা হেঁটে
বেরোলাম...গাড়িতে উঠতে আর ভালো লাগছিলো না। হোটেল থেকে ঘন্টা ঘর দেড় কিলোমিটার, দোকান বাজার দেখতে দেখতে দিব্যি পৌঁছে
গেলাম...জায়গাটা অনেকটা আমাদের নিউ মার্কেটের মতো...প্রচুর দোকান রাস্তার ধার ধরে।
কিন্তু আমার ব্যাগে আর সত্যি জায়গা নেই ডাইনে বাঁয়ে না তাকিয়ে ঘোড়ার মতো সোজা
চললাম। ঘন্টা ঘর দেখে খুব ভালো লাগলো। মনে হলো বিগ বেন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
হোটেলে ফিরছি এমন সময় রাস্তার ধারের একটা ছোট্ট দোকানে থরে থরে সাজানো চিকেন
পাকোড়া, কাবাব, তন্দুরী দেখে ছেলের বায়না "খাবোই" ....বাবা দেবেই
না...এই ফুটপাথের দোকানের মাংস খেলে আর বাকি ট্রিপটা শেষ করতে হবে না। দেখে লোভ
আমারও হচ্ছিল। কি করি, ধর্ম সংকট, শেষে আমি ভীষ্মর মতো কৌরবদের দলেই
গেলাম। হোটেলের রুমে যখন চিকেন পাকোড়া আর কাবারের সাথে কোল্ড ড্রিংক নিয়ে মা ছেলে
বসলাম তখন দেখি কৃষ্ণও ধর্ম যুদ্ধ ছেড়ে পাকোড়া খাচ্ছে। ছেলে বললো বাবা তুমি কিনতে
বাঁধা দিয়েছ তাই তুমি দুটোর বেশি পাবে না।
রাজস্থানের
অধিকাংশ হোটেল, ধাবা নিরামিষ। আমাদের
মতো বিড়ালদের বড়োই কষ্ট। তাই নন ভেজ দেখলে লোভ সামলানো মুশকিল। দোকান ছোটো হলেও
খুব সুস্বাদু আর ভালো খাবার...তাই কোনো সমস্যা হয়নি। স্ন্যাকস শেষ করে হোটেলের
ছাদে উঠলাম। ওদের রেস্তোরাটা ওখানেই। উঠেই দিল খুশ। খুব সুন্দর ছাদটা...দূরে উমেদ
ভবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে... কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো আর দুদিন বাকি , চাঁদের মায়াবী আলোয়
সব কিছুই বড় সুন্দর লাগছিল।
পরদিন
দুর্দান্ত পনির পরোটা আর দই দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেল উমেদকে বিদায়
জানালাম...রাজস্থানে আমাদের থাকা সব চেয়ে ভালো হোটেল...বাজেটের মধ্যে ভালো ঘর আর
দুর্দান্ত সার্ভিস। যাক এবার লক্ষ উমেদ ভবন। বিশাল বড় জায়গা নিয়ে তৈরি ভারতের শেষ
রাজপ্রাসাদ। একটা দিকে রাজা তার পরিবার নিয়ে থাকেন, একটা দিক হোটেল আর একটা দিক সাধারণের দেখার জন্য। রাজপ্রাসাদের
ঐশ্বর্য্য, প্রাচুর্য, শৌখিনতা দেখলে আপনা থেকেই সম্ভ্রম আসবে।
অনেক ফটো তুলে এবার চললাম ৬কিমি দূরে অবস্থিত যসবন্ত থাড়া, রাজা যসবন্ত সিংহের (দ্বিতীয়) সমাধি স্থল দেখতে। এমন শান্ত
স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ বিরল। এক অপূর্ব স্থাপত্য। যোধপুর এলে এটা মিস করবেন না
একেবারেই। ১২ টা নাগাদ আবার যাত্রা শুরু জয়পুরের উদ্দেশ্যে।
রাত
আটটা নাগাদ হোটেলে যখন ঢুকলাম তখন শুধু ক্লান্তি আর ক্লান্তি...স্নান করে ডিনার
শেষ করে রুফ টপ থেকে দেখলাম নাহার গড় কেল্লার আলো নিভে এসেছে। যেন দূর্গ থেকে আদেশ
আসছে জয়পুর, এবার ঘুমাও.....
আজ
বিছানা ছাড়তে ইচ্ছেই করছে না। আজ একটু পরেই আমাদের দিল্লি চলো অভিযান শুরু
হবে...আগামীকাল সকালের ফ্লাইটে বাড়ি। ছুটি শেষ। ভাবতেই একরাশ মন খারাপ ঘিরে ধরছিল।
ছোট বেলায় গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটির শেষে এরকমই লাগতো। "কি হলো এখনো উঠলে না
? দেরি করলে কিন্তু তোমার আর ভানগড় ফোর্ট
দেখা হবে না...আজ কিন্তু আমাদের প্রায় ৩৭০কিমি চলতে হবে মনে রেখো।
"....ভদ্রলোক এত দিনে একটা কাজের কথা সময় মতো মনে করিয়েছেন...চটপট উঠে স্নান
করে পুরি সবজি চা খেয়ে ৯:৩০টায় বেরোলাম। জয়পুর থেকে ভানগড় ৮৪কিমি..... ঘন্টা দেড়েক
লাগবে। এমনিতে ভীতু হলে কি হবে রাজস্থানের মাস্ট ভিজিট লিস্টে কুলধারা আর ভানগড় কে
রেখেছিলাম। সব এক্সসাইটমেন্ট তাহলে শেষ হয়ে যায় নি... "পিকচার অভি ভি বাকি
হ্যায় মেরে দোস্ত..।"
ভানগড়
যাবার পথে রাস্তার দুধারে শুধু মার্বেলের মূর্তি , ঠাকুরের সিংহাসন এইসব তৈরির কারখানা চোখে পড়ে। নির্জনতা ভেদ
করে শুধু পাথর কাটার আওয়াজ। ভানগড়ে কোনো টিকিট লাগে না...শুধু ৫০ টাকা পার্কিং।
ফটক পেরিয়ে ডান হাতে হনুমানজির মন্দির রেখে জহুরী বাজারের মধ্যে হেঁটে চললাম। কোনো
একসময় হয়তো এই বাজারে মনি মুক্তোর দোকান ছিল আজ ইটের স্তূপ। আরাবল্লীর কোলে ভগ্ন
প্রায় দুর্গটির সৌন্দর্য্য অপরিসীম। এতটাই নিস্তব্ধ যে নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ
শুনতে পাওয়া যায়। দুর্গের প্রাঙ্গনে গোপীনাথজীর মন্দিরটিও খুব সুন্দর কিন্তু কোনো বিগ্রহ নেই কেন সেটা জানি
না। এই দুর্গ নিয়ে অনেক অপপ্রচার আছে। তাই কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না।
সেল্ফি কুইন সেদিন সেলফিও তোলেনি...সবসময় মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমাদের লক্ষ করছে , পাশে পাশে হাঁটছে। পরে বুঝলাম বাঁদর।
ভানগড়ের সিকিউরিটি গার্ড ওরা...সবার দিকে কড়া নজর...বেচাল দেখলেই তেড়ে আসে।
রাজস্থান শুনলেই মনে হয় দুর্দান্ত সব কেল্লা, প্রাসাদ...ঐশ্বর্য্য, প্রতিপত্তি
আর রাজকীয়তা। ঠিক... কিন্তু লোভ এবং ব্যাভিচারের নির্মম পরিণতির কিছু নিদর্শনও
আছে। অনেক দিন আগে কুলধারা আর ভানগড় সম্পর্কে পড়েছিলাম, তখন থেকে ভেবে রেখেছিলাম যদি কখনো যাই এই দুটো জায়গা দেখবই।
এবার
দুটো গল্প বলি...যার হয়তো একটা সত্যি আবার হয়তো দুটোই মিথ্যে...
আমের
এর শাসক ভগবন্ত দাস তার ভাই মাধো সিংহের এর জন্য আরাবল্লির কোলে ভানগড় কেল্লা তৈরি
করেন। কিন্তু সেখানে বালুনাথ নামে এক সাধুর আশ্রম ছিল তিনি রাজাকে বলেন কেল্লা
তৈরিতে তার আপত্তি নেই কিন্তু এর ছায়া যদি তার আশ্রমে পড়ে তবে তিনি সেটা ধ্বংস করে
দেবেন। রাজা কথা দেন এবং খুব সতর্কতা অবলম্বন করে কেল্লা তৈরি হয়। কিন্তু তারপরেও
দেখা যায় দিনে কিছু সময়ের জন্য হলেও কেল্লার ছায়া আশ্রমে পড়ছে। ক্রুদ্ধ সাধুর
অভিশাপে ছবির মতো সুন্দর কেল্লাটা ধ্বংস হয়ে গিয়ে প্রেতপুরীতে পরিণত হয়।
দ্বিতীয়
গল্প: ভানগড়ের রাজকুমারী রত্নাবতী ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। এক দুষ্ট তান্ত্রিক তার
রূপে পাগল হয়ে যায় কিন্তু রাজকুমারীকে পাওয়া যে এ জন্মে তার সম্ভব না সেটাও বুঝতে
পারে। তখন সে দাসী মারফত সুগন্ধি তেল রাজকুমারীর জন্য পাঠায়। মতলব হলো এই
মন্ত্রপুত তেল মাখলেই রাজকুমারী তান্ত্রিকের কাছে ছুটে আসবে। বুদ্ধিমতী রত্নাবতী
তান্ত্রিকের দুরভিসন্ধি ধরে ফেলেন ..একটা বড় পাথরে আছড়ে ভাঙেন শিশিটি। এর পরেই
পাথর গড়াতে থাকে তান্ত্রিকের দিকে। পাথরে চাপা পরে মৃত্যু হয় তান্ত্রিকের। মারা
যাবার সময় সে অভিশাপ দেয় যে খুব তাড়াতাড়ি ভানগড় ধ্বংস হবে আর রত্নাবতীর মুক্তি নেই
তার হাত থেকে। এর পরেই যুদ্ধে ভানগড় ধ্বংস হয়ে যায়। আজও তান্ত্রিক আর রত্নাবতীর
অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় কেল্লা জুড়ে।
বিশ্বের
১০ টি মোস্ট হন্টেড প্লেস এর মধ্যে ভানগড় একটি। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিন্তু
কোথায় যেন একটা গা ছমছমে ভাব.......
কুলধারার
অভিজ্ঞতা এক রকম আর ভানগড়ের অন্য। ভয় পাবার কোনো কারণ চোখে পড়েনি কিন্তু ওখানে
দাঁড়িয়ে যে অনুভূতি হয়েছিল সেটা অনেক দিন টাটকা থাকবে।
সময়
কম বলে একটু কষ্ট হয়েছে কিন্তু যা যা প্ল্যানে ছিল সবটাই দেখেছি। পুরো ট্রিপটা
অসম্ভব উপভোগ করেছি। আমার এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার শেষ দিকটা বাদ দিলে পুরোটাই গাড়িতে
বসে মোবাইলে লিখেছি, একটা শহর থেকে
অন্যটায় যেতে যেতে। তাই নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না যে রাজস্থানের রাস্তা কতটা ভালো।
২০০০ টাকার ওপর টোল ট্যাক্স দিতে হলেও গায়ে লাগে না যখন জার্নিটা এত মসৃন হয়।
সুতরাং যারা গাড়িতে রাজস্থান ঘোরার প্ল্যান করছেন নিশ্চিন্তে ঘুরে আসুন কোন কষ্ট
হবে না। অনেকেই হয়তো বলবে মিউজিয়াম বা ফোর্ট দেখতে ৪ ঘন্টা লাগে...হতে পারে কিন্তু
আমরা কোনো টাতেই ১থেকে ২ ঘন্টার বেশি সময় দিই নি। আগে যখন লাল কেল্লা বা আগ্রা
ফোর্ট গেছিলাম তখন ওটা করে দেখেছি। আজ কিন্তু সবটাই ঝাপসা। তাই কোন তরোয়াল কোন
রাজা ব্যবহার করেছে সেটা আধ ঘন্টা ধরে না দেখলেও চলে। চোখ ভরে দেখুন , উপভোগ করুন, খুব দরকরি মনে হলে লেখা গুলোর ছবি তুলে নিন। পরে সময় নিয়ে
পড়বেন।
রাজারানী
রূপকথার দেশে দিনগুলো স্বপ্নের মতো কাটলো। আঁচলে বেঁধে নিয়ে চললাম অনেক কল্পকাহিনী, আর অজস্র মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী। মরুভূমি, পাহাড়, দুর্গ, প্রাসাদের ছবি মনের মণিকোঠায় চিরস্থায়ী
হয়ে থাকবে।
শতরূপা চক্রবর্তী: কপিরাইট
লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন