মাটি আর মানুষের কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



প্রতিবেদন




[জন্ম শতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য]



"তুমি সোনার কলস কাঁখে চলে যাও,

আমি মাটির কলস ছাড়া পিপাসা জানি না।"
(অন্য মহাশ্বেতা)


"তুমি মাটির দিকে তাকাও, সে প্রতীক্ষা করছে

তুমি মানুষের হাত ধরো সে কিছু বলতে চায়। "


হ্যাঁ,এই মাটি আর মানুষের কথাই তাঁর কাব্য। এক সচেতন মানবিক প্রত্যয় থেকেই তিনি কবিতা লিখতেন। আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম পথিকৃৎ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ( ১৯২০-১৯৮৫ )।  অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তাঁর শিক্ষালাভ কলকাতায়। প্রথম জীবনে অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে  তিনি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশ্বাসী হন এবং বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন, তবে কোন দলভুক্ত হন না। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মূলত মানুষের কবি। নিরন্ন-ক্ষুধার্ত মানুষ, বঞ্চিত-শোষিত মানুষ, সংগ্রামী আর স্বপ্নদর্শী মানুষের কবি। তিনি সময় ও সমাজ-সচেতনও। তাঁর কবিতার অনুষঙ্গে প্রেম প্রকৃতি মিলেমিশে আছে। সামাজিক আন্দোলন, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, এক অকৃত্রিম সংবেদনশীলতা তাঁকে চিহ্নিত করেছে ভিন্নধর্মী কবি হিসেবে। সমাজতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, সাম্যবাদের  উপর আস্থা তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকেও নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমৃত্যু সে বিশ্বাস হারাননি।


"রাজা আসে         রাজা বদলায়

নীল জামা গায়ে     লাল জামা গায়

এই রাজা আসে     ওই রাজা যায়

জামা কাপড়ের       রং বদলায়

                 দিন বদলায় না।"


স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ও বাংলা কবিতায় 'রাজা আসে যায়' কবিতাটি একটি মিথ । রাজনৈতিক ভণ্ডামির এক উলঙ্গ প্রকাশ। তাঁর আরও বহু কবিতা তীক্ষ্ণ শলাকার মত আমাদেরকে বিদ্ধ করে। আমাদের চেতনা বোধ সহনশীলতাকে আঘাত করে। পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে সে সব কবিতাও আজ প্রবাদে পরিণত হয়েছে।


"আমার ভারতবর্ষ

পঞ্চাশ কোটি নগ্ন মানুষের

যারা সারাদিন রৌদ্রে খাটে, সারারাত ঘুমুতে পারে না

ক্ষুধার জ্বালায়, শীতে;

           ..                ..

যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ আসে পরস্পরের মুখে চুমু খেতে খেতে

মাটি কাঁপে সাপের ছোবলে, বাঘের থাবায়;

আমার ভারতবর্ষ চেনে না তাদের

মানে না তাদের পরোয়ানা;

তারা ঈশ্বরের শিশু হয়ে পরস্পরের

                      সহোদরা হয়।"   
(আমার ভারতবর্ষ)


অথবা


"হোক পোড়া বাসি ভ্যাজাল মেশানো রুটি

তবু তো জঠরে, বহ্নি নেবানো খাঁটি

এ এক মন্ত্র! রুটি দাও, রুটি দাও;

বদলে বন্ধু যা ইচ্ছে নিয়ে যাও;

           .           .

শুধু দুই বেলা দু'টুকরো পোড়া রুটি

পাই যদি তবে সূর্যেরও আগে উঠি,

ঝড়ো সাগরের ঝুঁটি ধরে দিই নাড়া

উপড়িয়ে আনি কারাকোরামের চূড়া;

হৃদয় বিষাদ চেতনা তুচ্ছ গণি

রুটি পেলে দিই প্রিয়ার চোখের মণি।"  ( রুটি দাও )


কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ:  গ্রহচ্যুত (১৯৪২), রাণুর জন্য (১৯৫০), লখিন্দর  (১৯৫৬), ভিসা অফিসের সামনে (১৯৬৭), মহাদেবের দুয়ার (১৯৬৭), মানুষের মুখ (১৯৬৯), ভিয়েতনাম: ভারতবর্ষ (১৯৭৪), ব্রাত্য পদাবলী (১৯৮০), মে দিনের কবিতা (১৯৮৬) । এছাড়া তাঁর আরও উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল, আর এক আরম্ভের জন্য, উলুখড়ের কবিতা, মানুষখেকো বাঘেরা বড় লাফায়, এই জন্ম জন্মভূমি, সভা ভেঙে গেলে। সম্পাদনা করেছেন, কবিতা বুলেটিন। তবে 'রাণুর জন্য' কাব্যগ্রন্থ তাঁকে সমধিক খ্যাতি এনে দেয়। ১৯৮২ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার পান "শ্রেষ্ঠ কবিতা" র জন্য। তাঁর জনপ্রিয় ও প্রতিবাদী কবিতাগুলো সুর সংযোজন করে গান গেয়েছেন, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, বিপুল চক্রবর্তী, অজিত পাণ্ডে, পরেশ ধর,অনুপ মুখোপাধ্যায়, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, অসীম ভট্টাচার্য, প্রমুখ গণসঙ্গীত শিল্পী।

বাংলা কবিতায় শ্রেণী-সচেতনতা আর সাম্যবাদের ভাবনা এসেছে মঙ্গলকাব্যের যুগ থেকে। কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের "চণ্ডীমঙ্গল" আর রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের "অন্নদামঙ্গল" তার উদাহরণ। আধুনিক যুগে গোবিন্দ দাস, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিজয় লাল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের হাত ধরে সাম্যবাদের বিস্তার। কিন্তু চল্লিশের দশকে এসে এই ভাবনা একটা সংহত রূপ নেয়। বাংলা কবিতায় প্রগতিশীল ধারার জন্ম হয়। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চল্লিশ দশকের বিশিষ্ট কবি। তিনি নিজের লেখার প্রেরণার বিষয়ে নিজেই লিখেছেন, "আমি নিজের কবিতাকে যতটা বুঝি, আমার কবিতার শিকড় রয়েছে অন্যখানে। সেখানে আজও যাঁরা জলসিঞ্চন করছেন তাঁরা সবাই দলছুট একক কবি---যেমন জীবনানন্দ, তারপর নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ।" তাই বাংলা কবিতার সেই  আবহমান ধারায় নিজের শিকড় প্রোথিত করে ছিলেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি দেশ কালের প্রেক্ষিতে মানুষের অস্তিত্ব মানবতার ধর্মকে খুঁজে ছিলেন।

চল্লিশ দশকের ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রগতিশীল আবহে কবিতা লিখলেও, এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী কবিদের সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও ওই ধারার কবিতাকে তিনি নিষ্প্রাণ ও যান্ত্রিক মনে করতেন। কেননা, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের যে রূপ তাঁর ধারণায় ছিল, এইসব কবিতায় সে স্পার্ক বা স্ফুলিঙ্গ তিনি খুঁজে পাননি। যে মতবাদ, যে রাজনীতি শোষিত মানুষকে আলো দেখায়, দলিত বঞ্চিত নিঃস্ব নির্যাতিতের কাঁধে হাত রাখে তিনি আজীবন তার পাশে ছিলেন।

কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সর্ব অর্থে প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক ছিলেন। তাঁর সমস্ত লেখালেখি ছিল অবাণিজ্যিক ছোট কাগজে। 'পরিচয়', 'অরণী', 'অগ্রণী' প্রভৃতি পত্রিকা ও পরে বহু লিটল ম্যাগাজিনে তিনি অজস্র বিখ্যাত কবিতা লিখেছেন। কবি অরুণ মিত্র, বিমল চন্দ্র ঘোষ তাঁর কবিতার প্রশংসা করেছেন। প্রশ্রয়ও পেয়েছেন।

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এক সময় 'উলঙ্গ রাজা' নামের একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেখানে 'উলঙ্গ রাজা নামক কবিতায় একটি নিষ্পাপ শিশু সভ্যতার বর্বরতার দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করেছিল, 'রাজা তোর কাপড় কোথায়?' সেই অব্যর্থ প্রশ্নে কবি নীরেন্দ্রনাথ বিদ্ধ করেছিলেন নব্য উপনিবেশবাদের আগ্রাসনকে । বামপন্থী কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভালো লেগেছিল এই অমোঘ প্রশ্ন আর বিরোধিতা । সেই সময় শুধু সমাজ সচেতন ও সাম্যবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে নয়, কবিতাটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও সাড়া ফেলে দিয়েছিল। এর কিছুকাল পরে তখনকার সবচেয়ে নামকরা প্রভাবশালী একটি দৈনিক সংবাদপত্র ( বামপন্থীরা যাকে মনে করত বুর্জোয়াদের আখড়া ) পরিচালিত একটি পত্রিকার সম্পাদক পদে আসীন হলেন। ব্যাপারটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেননি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শোষিত নিপীড়িত মানুষের কথা বলতে এসে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের শিকার হয়ে গেলেন। এই ভাবনা থেকেই কবি লিখেছিলেন একটি কবিতা 'নীরেন, তোমার ন্যাংটো রাজা'


"নীরেন! তোমার ন্যাংটো রাজা

পোশাক ছেড়ে পোশাক পরেছে!

নাকি, তোমার রাজাই বদলেছে?

----         ----

পোশাক ছাড়া নীরেন,তুমি,

তুমিও ন্যাংটো।

----        -----

কিন্তু তুমি বুঝবে কি আর;

তোমার যে ভাই, মাইনে বেড়েছে!"


ভণিতা ছাড়াই নিজের মনের কথা বলতেন ও লিখতেন। যা বিশ্বাস করতেন তা পালন করতেন। তাঁর এই অকৃত্রিম ও দৃঢ় মানসিকতা বিলক্ষণ জানতেন কবি নীরেন্দ্রনাথ। তাই সহযোদ্ধা ও বন্ধুর সমালোচনাকে তিনি উপেক্ষা করেছিলেন কিংবা বলা যায় মেনে নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল তাঁর মজ্জায়। যখন সবাই টাকার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাগজে লিখছেন, অভাব ঘাড়ে নিয়েও তিনি লিখেছেন লিটল ম্যাগাজিনে। কবিতায়, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন আপোষহীন সংগ্রামী সৎ এক কবি।

ক্যানসার আক্রান্ত কবি যখন মৃত্যুশয্যায় তখন বহু অনুরোধ উপরোধে দুটি মাত্র কবিতা একটি বড় বাণিজ্যিক কাগজে ছাপার অনুমতি দেন। পঞ্চাশ-ষাটের বহু কবি তাঁর বন্ধু ছিলেন। তারপর সত্তরের তরুণ কবিরা তাঁর কবিতায় প্রেরণা খুঁজে পেল। তিনিও তাদের বুকের গভীরে জায়গা দিলেন। ব্যাগ ভর্তি করে তরুণ কবিদের বই নিয়ে মাঠেঘাটে জনসভায় বিক্রি করতেন, প্রচার করতেন। লিখেছেন,


"আমি তোদের বুকের মধ্যে ঘুমুতে চাই,

মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে নয়

আমি তোদের বুকের মধ্যে জেগে উঠতে চাই

তোদের মুখের কথা শুনতে নয়।"


তরুণ কবিরাও পরম ভালোবাসায় তাদের প্রিয় কবি 'বীরেনদা'কে বুকের খুব গভীরে ধারণ করেছিল।




নিজের লেখার উদ্দেশ্য সন্ধান করতে গিয়ে নিজেই লিখেছেন, "আমিও তো মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষ এবং যে বিচ্ছিন্নতার অসুখ আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে, তাকে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক শরীরে এবং মনে কিছুটা বহন করি।  আমার কবিতায় তার অকুণ্ঠ স্বীকৃতি রয়ে গেছে। বিপ্লব কবে আসবে, কীভাবে আসবে তার ভাবনা প্রধানত আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের, আমার কাজ অন্যরকম। যতদিন ঐ আকাঙ্খিত বিপ্লব না আসছে, আমার চারদিকে মাটি আর মানুষের মধ্যে কী ঘটছে, কীভাবে ঘটছে যতদূর সম্ভব তাদের বুঝতে চেষ্টা করা। আমার ক্ষমতায় কুলোলে কবিতার মাধ্যমে তাদের প্রকাশ করা।" এই মাটি অর্থাৎ দেশ আর সেই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী ছাত্র বেকার যুবক প্রান্তিক মানুষ---সবাইকে নিয়েই ছিল তাঁর "আমার ভারতবর্ষ"।

যেখানে অন্যায় অসাম্য অত্যাচার শোষণ দেখেছেন প্রতিবাদ করেছেন। নিজের কবিতায় তা বলিষ্ঠতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। সত্তর দশকের মুক্তি পাগল ছেলেদের উপর পুলিশি অত্যাচার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন।


"কান্নাকে শরীরে নিয়ে কারা রাত জাগে,

রাত্রির লেপের নিচে কান্নার শরীর নিয়ে

                                 করে যারা খেলা

পৃথিবীর সেই সব যুবক যুবতী

রোজ ভোরবেলা

ঘরে কিংবা রেস্তোরাঁয় চা দিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে

হঠাৎ আকাশে ছোঁড়ে দু-চারটি কল্পনার ঢেলা।


হে যুবক, হে যুবতী,পৃথিবীতে তোমাদের কতটুকু দাম?

কান্নাকে শরীরে নিয়ে কার ঘরে কয় ফোঁটা

                                           দিয়ে গেলে আলো?



আন্তরিক আর সৎ এক দায় ও মানবিক প্রত্যয় থেকেই তিনি কবিতা লিখতেন।


" ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে

যদি আমি সমস্ত জীবন ধরে

একটি বীজ মাটিতে পুঁততাম

যেই গাছ ফুল ফল ছায়া দেয়

যার ফুলে প্রজাপতি আসে, যার ফলে

                পাখিদের ক্ষুধা মেটে ;

ছত্রিশ হাজার লাইন কবিতা না লিখে

যদি আমি মাটিকে জানতাম।"       ( মহাদেবের দুয়ার )





স্বাধীনতার এত বছর পরও আজ নোটবন্দী ভারতবর্ষে সর্বত্র ক্ষুধা অপুষ্টি অনাহার অস্বাস্থ্য অশিক্ষা নির্যাতন ধর্মীয় উন্মাদনা রাজনৈতিক শঠতা বেকারি প্রকট। প্রকট অসহিষ্ণুতা মৌলবাদী কৌশল। স্বপ্নহীন বাকস্বাধীনতা হীন সংস্কৃতি বিহীন এক অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যে আমরা আছি। আজ যখন সাহিত্যের নামে বেসাতি, সুপারিশ আর প্রমোট করা হচ্ছে লেখকদের, ক্ষমতাহীনরা বীরদর্পে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন, পুরস্কারে পুরস্কৃত, আদর্শহীন অন্ধকার এক আবর্তে আমরা ঘুরছি একটু আলোর জন্য, দিশার জন্য, তখন ওই নির্লোভ আপোষহীন সাচ্চা মানবতাবাদী শক্তিমান কবির মুখটা জন্ম শতবর্ষের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। তিনি জেগে উঠছেন আমাদের মধ্যে সময়ের পার থেকে  ভীষণ প্রয়োজনীয় আর নিশ্চিত হয়ে। 'মানুষের মুখ' কাব্যগ্রন্থের 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর' কবিতায় তিনি যা লিখেছেন, আমরাও তাঁর সম্বন্ধে সে কথাটাই বলতে পারি।


"মুখোশ ছিল না তাঁর

তাই তাঁর মুখের ওপর

দৃশ্যগুলি কুয়াশার

কান্না ছুঁয়ে অবশেষে ঝড় ;

যেন রুদ্র প্রলয়ের

রক্তস্নানে ক্রুদ্ধ দ্বিপ্রহর.

পোশাক ছিল না তাঁর

তাই যুদ্ধ বুকের ভিতর।

অথচ গভীরে তাঁর

শান্ত স্থির করুণাসাগর।   


ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হসপিটালের বেড়ে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতেও তিনি লিখে গেছেন---


"এ লড়াই মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের

আর হার-জিত দুটো কথাই যখন অভিধানে রয়েছে

বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে মাটি ছেড়ে দেবে না।

............

কেউ কেউ বাড়ি ফেরে না, কিন্তু যারা ফেরে, তাদের

কণ্ঠে আমরা শুনতে পাই নবজীবনের গান।''


কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই নবজীবনের গান গেয়েছিলেন।


রবীন বসু: কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন