নাটক
(প্রথম দৃশ্য)
স্টেজ
আলো-আঁধারি। শুধু চরিত্রের উপর আলোর ফোকাস। ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনও মিউজিক নেই। ঘরের কাজে ব্যস্ত রমলা। ওড়নাটা কোমরে বার দুয়েক
টেনে নিয়ে জড়িয়ে নিয়ে গিট বেধে হাতের কাজ সারা। কখনও আলনা গোছানো, কখনও বিছানার চাদর
ঠিক করা। সতীশের ইস্ত্রি করে আনা খাটের একপাশে রাখা তিন-চারটে শার্ট ধীরে ধীরে গুছিয়ে
তুলে রাখা। এইটুকুই রমলা কখনও কখনও করে ইচ্ছে হলে। রেডিওতে ধীরে আস্তে চলছে রবীন্দ্রসংগীত।
একসময় রমলা ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইত। বিয়ের পর সে অভ্যাস গেছে। আলসেমি বেড়েছে। বেড়েছে
টিভি দেখাও। শ্যাম, (সতীশের ভাই।) এই সময়ে
শ্যামের প্রবেশ—
শ্যাম
: বৌদি, ও বৌদি, আমায় একটু দাদার পারফিউমটা দাও না।
রমলা
: দাদা কিন্তু পছন্দ করে না যে ওর পারফিউমটা আর কেউ ব্যবহার করুক।
শ্যাম
: আরে কিছু হবে না। দাও না। আমারটা শেষ হয়ে গেছে।
রমলা
: কোথায় যাচ্ছিস শুনি? কার কাছে?
শ্যাম
: আরে কারও কাছে নয়।
রমলা
: হুম বুঝলাম। এমন জায়গায় যাচ্ছিস বলা যাবে না। তাই তো? তা, তিনি থাকেন কোথায়?
করেনটা
কি? বাড়িতে কে কে আছেন?
শ্যাম
: আরে কি যে বল, উফ্...
রমলা
: না, সম্বন্ধ করে আর না। তোর পছন্দ। তবু জানা দরকার। আরে বৌদিরা মাই ডিয়ার হয়।
শ্যাম
: আরে কেউ থাকলে বলব তো। (কথা বলতে বলতে দাদার আয়নায় চুল ঠিক করে)
রমলা
: আচ্ছা দেখা যাবে।
রমলা সতীশের
সেন্টটা হাতে করে এনে একুট ছড়িয়ে দিল শ্যামর শার্টে। শ্যাম হাত নাড়তে নাড়তে বেড়িয়ে
গেল। রমলা, বাড়ির চাকরানি ‘পলা’ ‘পলা’ বলে ডাকতে ডাকতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রান্না
ঘরের দিকে।
(দ্বিতীয় দৃশ্য)
রান্নাঘরে
পলা বাসনপত্র গোছাচ্ছে। রান্না শেষ। পলা বেশ সুন্দরী। যদিও আদিবাসী। রংটা কালো। ভদ্রঘরের
মেয়ে হলে অন্যরকম ঠাটবাট হত। তবুও বোঝা যায় না পলার চালচলনে বেশ একটু শরীরের খাঁজ দেখিয়ে
কায়দা করে চলার অভ্যেস আছে। রমলা লক্ষ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। আজকাল কাজের লোক
সহজে একেই পাওয়া যায় না। পলাকে চটালে মুশকিল। আর বাড়ির ছেলেদের উপর রমলার ভরসা আছে।
তাই সে নিশ্চিন্ত থাকে কিছুটা। পলা নিজের শরীর এবং সৌন্দর্য নিয়ে বেশ সচেতন। সতীশের
সাথে একটু-আধটু ন্যাকামো করে, যে চোখাচোখি হয় না তা নয়। তবে, পলা সেটা এনজয় করে। কথা
বলার ধরনটাও ন্যাকা ন্যাকা। কিন্তু মুখরাও প্রয়োজনে।
পলা :
কি বলছ? তাড়াতাড়ি বল বৌদি। সময় নেই।
রমলা
: সময় নেই। কেন? রান্না শেষ, বড়দা, ছোড়দা সব বেরিয়ে গেছে।
পলা :
আরে তা নয়। একটু রেস্ট নিতে হব তো। আবারও বিকেলে গা ধুয়ে, শাড়ি পরে, রান্নাঘরে জলখাবারের
আয়োজন করতে হবে।
রমলা
: গা ধোওয়া, শাড়ি পড়া আবার কাজ হল।
পলা :
হাত নেড়ে, হ্যাঁ, হল তো, এটাও তো করতে হবে।
পলার শাড়ি
পরার কায়দায় যে কোনও ছেলে প্রেমে পড়বে। কোমরের নীচে চেপে শাড়ি, আঁচলে সরু প্লিট দিয়ে
কোমর থেকে ঘুরিয়ে ঠিক নাভির পাশটায় গুজবে, যাতে কোমরের খাঁজ এবং নাভির সাইজটা দেখা
যায়। পিঠকাটা বড়ো ব্লাউজ। পাতলা জর্জেট, ব্রা হাতে স্পষ্ট রমলা না, না করে হয়রান।
পলা বলেছে, দেখ বৌদিদি, আশ মিটিয়ে সাজতে দিতে হবে তবেই আমি থাকব, হ্যাঁ। রমলা আর কিছু
বলে না। রমলাও কম সুন্দরী নয়। রংটা ভালোই ফর্সা। হাত, পায়ের দিকে তাকালে পুরুষ মানুষ
মজবেই। কিন্তু সভ্যতার শেষ মাত্রায় চলে। শাড়ি কম পড়ে। গা ঢাকা চুড়িদার বা কায়দার
ম্যাক্সিতে স্বচ্ছন্দ। তার মধ্য দিয়ে সুন্দর, সুঠাম শরীর বোঝা যায়।
রমলা
: আজ কি টিফিন করবি?
পলা :
চিড়ের পোলাও। অনেক দিন হয় না।
রমলা
: আচ্ছা। আমি শুতে গেলাম।
পলা :
যাও।
রমলা চলে
গেল। পলা নাকাড়া নাকাড়া নাকাড়া বাজা... গান গাইতে গাইতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর লম্বা চুল খুলে একটা সাদার উপর ফুল কাটা জার্জেট শাড়ি পরে রান্নাঘরে ঢুকে
খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে এসে নিজের খাটে একটু গা এলিয়ে দেয়।
(পাশের
ঘর থেকে শুধু গলা)
রমলা
: পলা, পলা। পাঁচটা বেজে গেল ওঠ। চা দে। এক্ষুনি বড়দা আসবে।
পলা আড়মোড়া
ভেঙে ওঠে। হাতে মুখে জল দিয়ে চুল আঁচরিয়ে ঘাড়ের খোপা বেধে, চায়ের জল বসাতে চলে গেল।
এক কাপ চা করে রমলার ঘরে দিয়ে। ঠাকুরঘরে গিয়ে সন্ধে দিতে দিতে, সতীশ ঢোকে। (শাঁখের
আওয়াজ) ঢুকতেই শাঁখ বাজানো শুনে জুতো খুলে ঠাকুরঘরে। ঠাকুর প্রমাণ করতে করতে আর চোখে
একবার বেশ করে দেখে পলার শরীরের সাজ। পলাও বুঝতে পারে যে সতীশ আজকাল তাকে একটু বেশি
করেই নজরে রাখে। তাতে পলা আরও ফুলেফেঁপে যায়। একটু বেশি করেই শরীর টান টান করে চলে।
সতীশের বেশি করে প্রয়োজনগুলো মেটায়। কখনও সতীশের জুতো পালিশ করে পায়ের কাছে বসে পরিয়ে
দিয়ে ফিতে বেধে দেয়, কখনওবা স্নান করে এলে বৌদির কাছে জেনে নিয়ে শার্ট, রুমাল হাতের
কাছে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রমলা অনেক নিশ্চিন্ত। তাকে বেশি কিছু কাজ করতে হয় না। বিয়ে
হয়েছে বছর পাঁচেক হল। সন্তান হয়নি এখনও। খুব যে বিশেষ চেষ্টা করেছে তারা তাও নয়। লোকের
কথায় রমলা, সতীশ কেউই কান দেয় না। সতীশ কাজ আর রমলা টিভি সিরিয়াল, আর মার্কেটিং নিয়ে
মশগুল।
রমলা
: পলা, দেখ তো সুচসুতোটা কোথায় আছে?
পলা :
কেন বৌদিদি?
রমলা
: আরে তোর বড়দা অফিস যাবে কিন্তু বোতাম ছিড়ে গেল শার্টের।
পলা :
(রান্নাঘর থেকে পলা বলে ওঠে) ঠিক আছে তুমি ভেবো না। আমার কাছে সুচ, সুতো আছে। আমি সেলাই
করে দিচ্ছি। তুমি জলখাবারটা খেয়ে নাও। টেবিলে দিয়েছি।
বলে পলা
রান্নাঘর থেকে শাড়িটা আরও একটু আকর্ষণীয় করে বেরিয়ে আসে। রমলা খেতে বসে টেবিলে। পলা
যায় সতীশের গায়ে পরা শার্টটার বোতাম লাগাতে। এই সুযোগ। পলা আস্তে আস্তে আলত করে সতীশের
বুকের বিতর একটা হাত ঢুকিয়ে নিয়ে উপরে আর একটা হাত দিয়ে সুচ সুতো দিয়ে বোতাম লাগাচ্ছে
ধীরে ধীরে। সতীশ তাকিয়ে আছে পলার শাড়ির ফাঁকে শরীরের খাঁজগুলোয়। একটু একটু করে ঘামও
জমছে সতীশের কপালে। পলা সতীশের দিকে একটু একটু করে তাকাচ্ছে। হাসছে আর বোতাম লাগাচ্ছে।
পলা :
কি দাদা ঘামছ কেন?
সতীশ
: সতীশ হাত দিয়ে কপালটা মুছে বলে, তোকে দেখলে সবাই ঘামবে।
পলা :
তাই নাকি? (বুকের কাছে মুখটা নিয়ে ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে আস্তে আস্তে বলে) কাছে এলেই যদি
এতো ঘাম হয় সবার, তবে গায়ে থাকলে না জানি কত ঘামবে, (বলেই হেসে ওঠে। মুখ দিয়ে পলা সেলাইয়ের
সুতোর শেষ টানটা ঠোঁট দিয়ে কাটার সময় ঠোঁট একটু ছুঁয়ে দিল সতীশের লোমওয়ালা বুকে। সতীশ
ওফ্ বলে ওঠে।)
পলা :
কি হল গো (খুব আস্তে) ভালো লাগল?
সতীশ
: (পলার কানের কাছে মুখ এনে) ভীষণ। একদিন পুরোটা চাই।
পলা :
হবে ক্ষণ একদিন। বলে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় পলা।
[রমলা
: কি রে হল? বোতাম লাগালি?
পলা :
হে গো বৌদি। তোমার খাওয়া হল?] (নেপথ্যেও হতে পারে)
রমলা
: হ্যাঁ, হয়ে গেছে। এই টেবিলে বসে কাগজটা একটু পড়ছিলাম।
(পলার
প্রবেশ)
পলা :
আচ্ছা পড়ো। আজও ইলিশ মাছ হবে, ভাজা, আর মাথা দিয়ে চচ্চরি। তাই তো?
রমলা
: একদম। (পলার প্রস্থান)
রাতে সতীশ,
রমলার বিছানা করতে করতে পলা সতীশের পাশ দিয়ে পাশবালিশটা জায়গায় রাখতে গিয়ে হাফ শুয়ে,
একটু দূরে ঠেলে দেয় বালিশটা। রমলা টিভিতে ব্যস্ত। সতীশ ঘরে কাগজ পড়ছিল। পলা বিছানা
করবে বলে পেপার হাতে উঠে দাড়িয়ে। পলার পাশবালিশ রাখার সুযোগে সতীশ আলতো করে হাতটা
দু-তিন বার কোমরে পেটে একবার বুলিয়ে দেয়। পলা চোখ বুজে একবার মুখে ‘আঃ’ বলে আওয়াজ করে
আস্তে। তারপর বিছানা করে যাওয়ার সময় সতীশকে বলে, আজ রাতে আর আমার ঘুম আসবে না বোধহয়।
সতীশের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।
সতীশ
: দরজাটা রাতে ভেজিয়ে রাখিস। পারলে যাব।
পলা :
একটু হেসে, সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে। (পলার প্রস্থান, রমলার প্রবেশ)
রমলা
: কি দারুণ সিরিয়ালটা জানো। দারুণ দারুণ।
সতীশ
: জমে উঠেছে বলছ তবে।
রমলা
: হুম। উফ, কী ঘুম পাচ্ছে আজ সারা দুপুর একটা দারুণ ছবি দেখেছি টিভিতে।
সতীশ
: বেশ তো ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি।
রমলা
: হুম, বলে একটা সার্টিনের আঁটোসাঁটো নাইটি পরে শুয়ে পড়ল সতীশের পাশে।
কিছুক্ষণ
বাদেই একেবারে অঘোরে ঘুম। সতীশও এই অপেক্ষাতেই ছিল। ধীরে ধীরে উঠে পলার ঘরে। পলার ঘরে
একটা নীল ছোটো নাইট ল্যাম্প জ্বালানো। শাড়ি উপর থেকে খোলা, কোমর থেকে পাশে পরে আছে
আঁচলটা, চৌকির নীচে ঘুমোচ্ছে পলা। সতীশ এসে পেটের উপর হাত রাখতেই চমকে ওঠে। কিন্তু
কিছু বলে না। সতীশ একটানে শাড়িটা খোলে। পলা সতীশের বুকে আলত করে আঙুলগুলো বোলাতেই
দুজনে এক হয়ে গেল। সতীশ পলাকে বলছে—
সতীশ
: তোর টান এড়ানো অসম্ভব পলা। মনে হয় সারাদিন তোর শরীরের মধ্যে সিটিয়ে থাকি।
পলা :
কিন্তু আমি তো কালো গো। তোমার বউ ফর্সা যে। তা ছাড়া তোমার বউ জানলে আর আস্ত রাখবে?
(বলে একটা মিষ্টি হাসে)
সতীশ
: তোর হাসিটাও খুব সুন্দর পলা।
পলা :
এখন সবই তোমার ভালো লাগবে আমার। পুরোনো হলে আর ভালো লাগবে না।
সতীশ
: কি যে বলিস। জানবি কালো চামড়াতেই আকর্ষণ বেশি। দূর, ও আর কি করে। সংসার ও তুই-ই
সামলাস। তার সঙ্গে আমার নজরকেও, শরীরের টান দিয়ে তৃপ্ত করিস। আসল বউ তো তুই।
পলা :
সতীশের বুকের উপর মুখ নিয়ে অর্ধেক খোলা গায়ে বলে— বলছ? কিন্তু আমি তো আদিবাসী মেয়ে
গো। লোকে জানলে তোমার জাত যাবে না? তবে, তোমাদের কাছে থাকতে থাকতে চার বছর ধরে তোমাদের
কথা, খাবার বানানো, টেবিল সাজানো, চলফেরা অনেক শিখে গেছি।
সতীশ
: তুই এইরকমই থাক। আমাদের মতো হতে হবে না। তবে তুইও আবার সংসার করতে ভুলে যাবি।
পলা :
হুম। আচ্ছা আমার আর তোমার যদি বাচ্চা হয় গো দাদাবাবু, আর দেখতে যদি আমার... কথা কেড়ে
নিয়ে সতীশ বলে তোর মতো সুন্দর। আমি সুন্দর ঠিক, কিন্তু কালো তো।
সতীশ
: সবসময় কালো কালো করবি না তো। ছেলে হলে তোদের জাতের মতো সুঠাম চেহারা আর মেয়ে হলে
তুই।
পলা :
কিন্তু সে তো হবে না দাদাবাবু, সাবধান হতে হবে। বিয়ে না করে বাচ্চা?
সতীশ
: তবে চল বিয়ে করি।
পলা :
না, দাদাবাবু, বৌদি খুব ভালো গো। রাত প্রায় শেষ হতে চলল, ২টো বেজে গেছে। নিজের ঘরে
যাও। বৌদিদি একা।
সতীশ
: হ্যাঁ, যাচ্ছি।
সতীশ তাড়াতাড়ি
উঠে খালি গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে ডাইনিং হল পেরিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে। সকালে রমলা ওঠবার
আগেই পলা বেডটি নিয়ে হাজির হয়। আজও তার ব্যতিক্রম নেই। দুজনের চা, একটা ট্রে-তে সাজিয়ে
দিতে গেল দুজনেই দুই মুখে ঘুমাচ্ছে দেখে। বেডের পাশের টেবিলটায় রাখতে গেল। টেবিলটা
থাকে সতীশের পাশে। সতীশ চোখ বুজে, পলার পেটে হাতটা ঢুকিয়ে একটু চাপ দিল।
পলা, আস্তে
করে বলে, জেগে?
সতীশ
: হুম।
পলা বেরিয়ে
যায়। সতীশ রমলাকে ডাকে চায়ের জন্য। পলা চলে যায় শ্যামের ঘরে। শ্যাম অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
শ্যামের ঘরে চা রেখে ওর পর্দা সরিয়ে দেয়, তবেই তিনি ওঠেন। পলা সকালের সব কাজ গুছিয়ে
এসে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। রমলা উঠে স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে ঢোকে। সতীশ স্নান করে এসে
জামাকাপড় পরে খেতে বসে। রমলার পুজোতে অনেক সময় লাগে। তাই খেতে দেয় পলাই। সতীশ খেয়ে
পলার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়। পলাও মিষ্টি হেসে রান্নাঘরে গিয়ে ঢোকে। রমলা পুজো
করে এসে সকালের জলখাবার খেয়ে মার্কেটিং-এ বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে। পলা ঘর গুছিয়ে স্নান
করে নিজের ঘরে এসে বসে। খাটের সামনে বসে পলা ভাবে নিজের গ্রামের কথা, মা-র কথা, ভাইয়ের
কথা। কতদিন দেখে না তাদের। আর এটাই বা কি করছে পলা। সতীশের সাথে এই যে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা
সম্পর্ক। কেনই বা হলো। পলার এতো উদ্ধত যৌবন। করবেই বা কি সে। নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়।
পলার মাথাটা যেন হঠাৎ করে গুলিয়ে যায় সব। এইসব ভাবতে ভাবতে হাত, পা এলিয়ে শুয়ে পড়ে
ক্লান্ত শরীরে। সারাদিনের খাটনি, আবার রাতেও ঘুমোতে দেবে না সতীশ। ঘুম ভাঙে রমলার ডাকে।
রমলা
: কিরে পলা ওঠ। ৬টা বাজে। সন্ধে হয়ে গেল। আমায় চা করে দে একটু। কখন এসেছি বাড়িতে।
তুই ঘুমোচ্ছিলি অঘোরে, তাই তেকে ডাকিনি। শ্যাম ফিরেছে?
পলা :
বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে, হ্যাঁ, ছোড়দা একবার এসেছিল। কিন্তু এসেই আবার যেন কোথায়
বেরিয়ে গেল, কখন কে জানে।
রমলা
: ঠিক আছে। কোন খবরই রাখিস না অথচ বাড়িতে থাকিস।
পলা :
বা রে, আমি কি সবসময় চৌকিদারি করব নাকি গো তোমাদের? অতসব পারবনি কিন্তু। তবে লোক দেখ।
রমলা
: আচ্ছা, আচ্ছা, নে, নে, এখন নিজের কাজ গোছাগে?
পলা :
এই নাও চা।
রমলা
: চায়ে চুমুক দিয়ে, টিভিটা একটু খুলে দে তো, ও ঘরে গিয়ে। আমি যাচ্ছি।
পলা :
রাতে কি রান্না হবে গো?
রমলা
: তুই বুঝে কিছু একটা করে দে।
সতীশ অফিস
থেকে ফিরে স্নান করে ঘরে এসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পলাকে ডেকে চা করে আনতে বলে। পাশের
ঘর থেকে রমলা বলে, চা খেয়ে এখানে এসো, একসাথে সিরিয়াল দেখি।
সতীশ
: না, না, আমার সিরিয়াল ভালো লাগে না। তুমি দেখো। আমি কাগজটা পড়ি। সকালে সময় পাই না।
পলা এসে
সামনে চা, বিস্কুট নিয়ে দাঁড়ায় সতীশের সামনে, ওর নিজস্ব কায়দায়। একটা পাতলা সুতির
একরঙা চিকনের শাড়ি। রমলাই যদিও পুরোনো শাড়িগুলো পলাকে দেয়। সেই পাতলা সুতির শাড়ির
মধ্য দিয়ে ব্লাউজের বোতাম স্পষ্ট। শাড়ির ভাঁজে কোমর খোলা। সতীশ চা-টা হাতে নিয়ে, নামিয়ে
রেখে পিছন দিক থেকে পলাকে একটু জড়িয়ে ধরে, বুক থেকে পলার পেট অবধি হাতটা শক্ত করে
বুলিয়ে, একটা জোরে কামড় দেয় কোমরে। পলার কোমরের খোলা অংশ লাল হয়ে ফুলে যায়। পলা তাড়াতাড়ি
সরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বার করে খানিকটা লাগিয়ে নেয়। সতীশ ঘর থেকে খাওয়ার বারান্দায়
তাকিয়ে দেখছিল পলার বরফ লাগানো। ভেজা কোমরটা। ইশারায় ডাকে পলাকে। পলা এলে বলে, রাতে
কিন্তু দরজা খোলা রাখবি। পলা একটু হেসে চলে যায়।
এরপর সতীশ,
রমলা টেবিলে খেতে বসলে পলা সব খাবার সাজিয়ে দিয়ে নিজে খেতে চলে যায় রান্নাঘরে। সারাদিনের
অফিসের দু-চারটে গল্প সতীশ বলে রমলাকে। রমলার যেন আগ্রহই নেই সতীশের কথা শোনবার। সে
আজ মার্কেটিং কি করেছে, আর কি পায়নি, সেটা শোনাতেই ব্যস্ত। এরপর সতীশ হতাশ হয়ে উঠে
পড়ে টেবিল থেকে। রোজগার নিয়মে রমলা বিছানায় আজ তাড়াতাড়ি আসে। রমলা একটু চাইছিল নিজের
মতো করে সতীশকে। সতীশ সেটা বুঝেছিল। কিন্তু তখন সতীশের টান তৈরি হয়েছে পলার উপর। তাই
সামান্য কিছু আদর করে, মাথায় হাত বুলাতেই রমলা ঘুমিয়ে গেল। সতীশ আজও পলার ঘরে গিয়ে
নিজের আবদার, ক্ষিদে সব মেটালো। শেষে পলার সারা শরীরে চুমু দিতে দিতে আদরের স্পর্শ
ছড়িয়ে মাঝরাতে উঠে গেল নিজের ঘরে রোজকারের মত। পলাও ঘুমিয়ে গেল।
এইভাবে
বেশ কয়েকটা মাসই কেটে গেল। হঠাৎ করে পলার শরীর দারুণ খারাপ লাগতে শুরু করল এই সপ্তাহ
খানেক হল। দেরি করে বিছানা থেকে ওঠে। রান্নার কাছে গেলে গা ঘুলিয়ে ওঠে। গা বমি ভাব।
রমলার বিষয়টা নজরে পড়তেই পলার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে।
রমলা
: কি হয়েছে রে তোর পলা। ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছিস। ঠিকমতো সাজিস না, কিছু খাস না। আজ আবার
বমি করছিস সকাল থেকে। কিছু কি খেয়েছিলি? ডাক্তার দেখাই তোকে চল।
পলা :(
কিছুক্ষণ রমলার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মুখে আঁচলটা চাপা দিয়ে কেঁদে ওঠে ফুপিয়ে।)
রমলা
: কি হয়েছে তোর? আমায় বল। (বলে হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।)
পলা কাঁদতে
কাঁদতে যা বলে শুনে রমলা ধপ করে বিছানায় বসে পরে। শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে রমলার। পলার
দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে—
রমলা
: কতদিন ধরে চলছে তোদের এসব। শান্ত কিন্তু শক্ত গলায়।
পলা :
(একটু ইতস্তত করে) এই মাস পাঁচেক হল।
রমলা
: চুপ। যা নিজের ঘরে যা। আজ আর কিছু রাঁধতে হবে না তোকে। (আমি রাঁধব। পলা তা-ও চুপ
করে বসে থাকে।)
রমলা
: একটু ধমকের সুরে, যা বলছি।
পলা চুপ
করে যায় ঘরে। রমলা খাটের উপর খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউয়ের
গর্জনের মত কি যেন আছড়ে পড়ছে। অথচ তীরে এসে ভেঙে যাওয়ার জায়গা নেই। কি করবে কিছুই
বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবে মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে হবে নিষ্কৃতির উপায়। মাথায় একটা
অন্য চিন্তা খেলে যায় রমলার। শুয়ে শুয়ে ভাবে সন্তানটি যদি পলার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া
যায়, কিছু টাকার বিনিময়ে।
আজ দুপুরে
রমলাই রান্না করেছে। শুধু আলু, পটল, কুমড়ো সেদ্ধ আর ভাত রাঁধল। সকালে তো যা খাবার
খেয়ে বেরিয়ে গেছে সতীশ আর শ্যাম। ডাল, মাছ ভাজা, বেগুন ভাজা, আগের দিন রাতের এঁচড়ের
তরকারি। বেলার দিকে রান্না হয়। রমলা আর পলা খায়। বাকি রাতের জন্য থাকে। এই নিয়ম এ বাড়িতে।
সেই শ্বাশুড়ির আমল থেকে। রমলাও মেনে চলেছে এতদিন। কিন্তু আজ আর রমলার কিছু ভালো লাগছে
না। কাকে বলা উচিত বিষয়টা। কিছুই বুঝতে পারছে না রমলা। উপরে থুতু ছেটালে নিজের গায়েই
পড়ে। দুপুরে মার্কেটিং-এও বেরোয়নি। দুপুর গড়িয়ে সন্ধে। পলা নিজের ঘরে। কিন্তু পলার
চিন্তা অন্যখানে। পলা চায়নি সতীশ আর রমলার সম্পর্ক ভেঙে যাক। কিন্তু নিজের শরীরের চাহিদাও
তো সে অস্বীকার করতে পারে না। আর তা ছাড়া সংসার বলতে গেলে, পলাই চালায়, সতীশকেও সামলায়।
রমলাও শুধু খায়-দায়, সাজগোজ করে আর টিভি নিয়ে ব্যস্ত। তা ছাড়া ওদেরও কোনও সন্তান হয়নি।
এ সবই ভাবতে থাকে পলা।
সন্ধেবেলা
সতীশের ফেরা অফিস থেকে। দরজা খোলাই। মানে ভ্যাজানো, তাই ঘরে ঢুকতে অসুবিধা হয়নি সতীশের।
সতীশ
: রমা, রমা, আরে কোথায় গেলে সব। সব অন্ধকার কেন? ঠাকুরঘরে শুধু আলো। ব্যাপার কি? (অবাক
হয়) কিন্তু কারও শব্দ নেই।
(সতীশ
নিজের ঘরে ঢুকে দেখে, রমলা একটা গল্পের বই হাতে, বিছানার পাশের চেয়ারটায় বসে।)
কি ব্যাপার?
আজ বাড়ি এত থমথমে কেন?
রমলা
: সতীশের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে, উত্তরটা আমি চাইছি তোমার কাছে। কি করে হল এসব? করতে
পারলে তুমি আমার সঙ্গে? কিসের জন্য করলে? দায়ী কে এর জন্য?
সতীশ
: আরে কিসের জন্য দায়ী এই কথাটা হঠাৎ কেনই বা বলছ?
রমলা
: কিছু বুঝতে পারছ না?
সতীশ
: সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না। তুমি আজ টিভিও দেখছো না।
রমলা
: কেন? টিভি দেখলে কি একটু বেশি সুবিধা হত। তোমার আর পলার আরও একটু বেশি ঘনিষ্ঠ হতে?
সতীশ
: কি, যা তা বলছ। তোমার মাথার ঠিক আছে তো? (চিৎকার করে)
রমলা
: আস্তে বলো। চোরের মায়ের বড়ো গলা মানায় না। মাথা আমার আগেই ঠিক ছিল না। এখন ঠিক হয়েছে।
খুব ভুল করেছি কোনও কিছু নজর আন্দাজ না করেই।
সতীশ
: আরে কি হয়েছে খুলে বলবে তো।
রমলা
: বলতে বাকি আর কি রেখেছ? পলা অন্তসত্ত্বা। পলা সব বলেছে আমায়।
সতীশ
: ধপ করে বিছানায় ব্যাগটা নিয়ে বসে পড়ল।
রমলা
: বল, এবার কি বলবে।
(সতীশ
রমলার কাছে গিয়ে রমলার হাত দুটো ধরে সতীশ মাথা নীচু করে, ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে। রমলা
হাত ছাড়িয়ে চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করে।)
রমলা
: তুমি পলাকে বিয়ে কর। আমি চলে যাব। ও আদিবাসী মেয়ে, গৃহকর্মে নিপুণা, তা ছাড়া নিজের
শরীর ঠিকঠাক সাজিয়েও রাখতে পারে।
রমলা
: পলা, পলা...(পলা ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে রমলাদের ঘরের কাছে দরজার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে
থাকে।) কি ব্যাপার? এখন আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে? এদিকে আয়।
পলা :
মাথা নীচু করে। আমি একটা কথা বলব বৌদি? আমার জন্য তোমাদের মধ্যে অশান্তি আমি চাই না
তোমাদের সাজানো সংসার ভেঙে যাক। আর আমার জাত ভাইবোনরা জানতে পারলে তোমরা বিপদে পড়বে।
আমি বরং দূরে চলে যাব। ভাববে না, তোমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখব না।
রমলা
: বা, সুন্দর কথা। আগে এটা মনে ছিল না।
পলা :
না, আমি চলে যাব বৌদি। আমায় ক্ষমা করে দাও। (বলে রমলার পায়ের কাছে বসে পড়ে)।
রমলা ভালো
করে পলার দিকে তাকিয়ে দেখে। পলার শাড়ির ফাঁক দিয়ে যেটুকু দেখা যাচ্ছে কোমার, পেটের
প্রায় অর্ধেক, ব্লাউজের ভেতর দিয়ে বুকের অপূর্ব খাঁজের অনেকটা অংশ। সত্যি অপূর্ব। রমলা
মহিলা হয়ে না তাকিয়ে পারছে না। পুরুষের সংযম থাকবে কি করে তবে। চোখ ফেরাতেই পারছে না
রমলাও। এতদিন এইভাবে সে দেখেনি পলাকে। একটা আদিবাসী কালো মেয়ের শরীর, চোখেও কি সাংঘাতিক
আকর্ষণ। ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। দোষ রমলারই। আরও আগে সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
রমলা
: যা বলব তাই করতে হবে। রাজি? (পলা ঘাড় নাড়ে) তুই আমার সাথে আমার বাপের বাড়ি রায়চক
যাবি। ওখানে কেউ নেই। আমার বাবা আর সিরাজুল কাকা ছাড়া। কাকা ছোটো থেকে আমায় মানুষ
করেছে। সারাজীবন আমাদের বাড়িই থেকে গেল। বাবার দেখাশোনা করে। তোর যতদিন না কিছু হচ্ছে
ততদিন আমার সঙ্গে তুই ওখানে থাকবি। তারপর ডেলিভারি হয়ে গেলে পর একসাথে এ বাড়িতে আসব।
একটু ঠোঁট বেঁকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসে (একটু থেমে) সবাই জানবে যে... জানবে যে... বাচ্চাটা
আমার।
সতীশ রমলার
দিকে তাকাল। রমলাও একটা শক্ত তীর্যক চাউনি দিল। পলা, উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।) রমলা,
বিছানার একপাশে, সতীশের থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে, বিষণ্ণ মুখ নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে
পড়ে।
সতীশ
: (কিছুক্ষণ পর বিছানার অন্যপ্রান্তে শুয়ে শুয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে রমলাকে) তোমরা
কবে যাচ্ছ?
রমলা
: (শক্ত ও কঠিন গলায় বলে) কালই। তোমায় শুধু একটা কাজ করতে হবে। সবাইকে বলতে হবে রমা
কনসিভ করেছে। তাই ওকে বাবার কাছে রেখে এলাম। একবারে বাচ্চা হলেই আনব। আর হ্যাঁ, কেউ
যেন আমার সাথে এখন দেখা করতে না চায় বা না যায়। এমনকি তুমিও না। খেয়াল রাখবার দায়িত্ব
তোমার।
(সতীশ
সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। সেদিন রাতে না কারও ঘুম না কারও খাওয়া হল। শ্যামকে রমলাই খেতে
দিয়েছিল সেদিন রাতে।)
শ্যাম
: আজ পলার কি হল বৌদি?
রমলা
: ওর শরীর ভালো নেই।
শ্যাম
: আচ্ছা।
রমলা
: আমি কাল বাপের বাড়ি যাচ্ছি শ্যাম। সাবধানে থাকবি। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবি।
শ্যাম
: কেন হঠাৎ?
রমলা
: চেঞ্জ-এ।
শ্যাম
: পলা তো থাকবে?
রমলা
: না, ও যাবে আমার সাথে।
শ্যাম
: ও, হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুমি কিচ্ছু ভেবো না। ভালো। যাও। ফিরে এসো তাড়াতাড়ি। আমি আর দাদা
ঠিক থেকে যাব।
পরদিন
ভোরে তোড়জোর করে গুছিয়ে পলাকে নিয়ে গাড়ি নিয়ে রমলা রায়চক চলে গেল। সতীশ সেদিন আর
অফিস গেল না। মনটা ভারাক্রান্ত। রেডিও এফএম শুনছে। বাবা মা হলে বাচ্চার সাথে কিরকম
আচরণ করা উচিত।
(তৃতীয় দৃশ্য)
রমলার
বাপের বাড়ি। সিরাজুল কাকা এসে ব্যাগপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে নিল। রমলা আর পলা। বাবাকে
প্রণাম করল। সিরাজুলকেও। বাবা ভালো করে কথা বুঝতেও পারেন না, শুনতেও পারেন না। বাবাকে
কিছু বলে লাভ নেই। সিরাজুল কাকাকে রমলা ওর নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে সব বলল।
সিরাজুল
: কিছু ভেবো না দিদিমণি। সব আমি ম্যানেজ করে নেব। পলার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
পলাকে পলার ঘর চিনিয়ে দিল, গেস্ট রুম।
পরদিন
পরিবারের ডাক্তারকাকাকে ডেকে পাঠাল রমা। সবকিছু বলে বলল ডেলিভারি বাড়িতেই হবে। ডাক্তার
কাকা যেন সেইভাবেই সব ব্যবস্থা করেন।
ডাক্তারকাকা
: (রোজ একবার পলাকে চেকআপ করে যান। খাওয়ার একটা চার্ট ও রমার হাতে দিয়ে যান।) চিন্তা
কোরো না রমা মা। সব ঠিক হবে।
এইভাবে
ন-টা মাস কেটে যায়। সতীশ ক্যালেন্ডারে দিন গুনে একটা দাগ দিয়ে রেখেছে। নিজের উপর দোষারোপ
করছিল সতীশ সেদিন। যেদিন রমা জেনেছিল। এখন ধীরে ধীরে বাচ্চাটার অপেক্ষা নিজেকে বাবা
বলে ভাবতেও একটু আধটু যে ভালো লাগছে না তা নয়। রোজ একবার করে ভেবে দেখে অফিস যাওয়ার
সময়, ফেরার সময়।
ডেলিভারির
দিন ডাক্তারকাকা বাড়িতে সব ব্যবস্থা করেন। পলার ডেলিভারি হয়ে যায়। ছেলে হয়। রমা এসে
একবার দেখে যায়। পলা ছেলেকে পাশে নিয়ে শুয়ে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু
খাচ্ছে। রমলা বেশি কয়েকবার ঘুরে দেখে গেছে। মা আর বাচ্চা ঠিক আছে। দেখতে পলার মতন দুটো
বড়ো বড়ো চোখ। কিন্তু গায়ের রংটা সতীশের পেয়েছে। পলার নয়। কিছুটা শান্তি পেল তাতে
রমলা।
(শেষ দৃশ্য)
পরদিন
সকালে রমলার ঘুম ভাঙে সিরাজুল কাকার চেঁচামেচিতে। রমলার কাছে ডেকে বলে—
সিরাজুল
: দিদিমণি ওঠ ওঠ।
রমলা
: কেন? কী হয়েছে?
সিরাজুল
: পলা, নেই। এই... এই যে.. দেখ, বাচ্রা বেবিকটের মধ্যে একটা চিঠি রেখে গেছে।
রমলা
: সে কি গো? কি বলছিস? কই কই দেখি, দেখি। কি লিখেছে।
— প্রিয় দাদা, বৌদি,
তোমাদের
কাছে বাবুসোনাকে রেখে গেলাম। জানি কোনও অযত্ন হবে না ওর। তোমরাই ওর মা, বাবা। মানুষ
কর তোমাদের মত। আর দোষ নিও না, একটা কথা বৌদিকে বলি— নিজের সংসার, নিজের করে রেখ। অন্যের
হাতে ছেড়ো না। সে যত গোছানো কাজের লোকই হোক না কেন। আর স্বামীর দায়িত্বও কারও উপর
ছেড়ো না কোনওদিন। দাদাবাবু এলে তার সঙ্গে সঙ্গে থেকো। ছোটো মুখে বড়ো কথা হয়ে গেল।
ভগবানের দয়ায় একটু-আধটু পড়াশোনা শিখেছিলাম কেলাস ফাইভ অবধি। তাই এটুকু লিখতে পারলাম।
নয়ত না লিখেই চলে যেতে হত। আমায় আর তোমরা কোথাও খুঁজ না। আমিও কোনওদিন আর তোমাদের কাছে
ফিরে আসব না। বাবুসোনার জন্য রইল আমার প্রাণের সবটা ভালোবাসা, আদর ও অনেক চুমু।
—পলা
(আবহসংগীত)
(রমলা ও সিরাজুলের দৃষ্টিবিনিময়)
স্টেজের
পর্দা আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসা শেষ দৃশ্যে।
শিবানী পাণ্ডে মুখার্জি: কপিরাইট লেখজ কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন